বড় রহস্য!–হ্যাঁ, চোরাকারবার–হ্যাসিসের চোরাকারবার।–না না, তা কখনই হতে পারে না কিরীটীবাবু।
–ঐ হিন্দুস্থান রোডের নীচের একটা ঘর সর্বদা তালা দেওয়া থাকত, আপনার নজরে পড়েনি? কিরীটীর প্রশ্ন।
–-পড়েছে। কিন্তু আমি ভেবেছি এমনিতেই বুঝি তালা দেওয়া থাকে ঘরটায়।
—সেই ঘরেই একটা দেওয়াল-আলমারির মধ্যে থাকত চোরাই মাল। ঐখানেই এসে জমা হত, তারপর ওখান থেকেই পাচার হত তার উদ্দিষ্ট পথে।
–মালঞ্চ ঐসব করত?
–একা মেয়েমানুষ কি তা করতে পারে, না তাই সম্ভব! ঐ দলে আরো কে কে আছে জানি না, তবে তাদের মধ্যে দুজনকে আমরা জানতে পেরেছি। তারা হলেন দীপ্তেন ভৌমিক আর শ্রীমতী ডলি দত্ত। আর বাদবাকী যারা আছে এখনো তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
-তাই–তাই ইদানীং টাকার কথা কখনো বলত না মালঞ্চ, আমি ভেবেছি দীপ্তেন ভৌমিক ওকে টাকা দিচ্ছে দুহাতে। উঃ, এখন মনে হচ্ছে আমিই যদি ওকে খুন করতে পারতাম—
জেলহাজত থেকে একসময় বের হয়ে এলেন কিরীটী ও চট্টরাজ। এবং চট্টরাজের গাড়িতেই লালবাজারে যেতে যেতে কিরীটী বললে, বর্তমান হত্যা মামলার একটা জটিল পয়েন্টের সমাধান আজ পেয়ে গিয়েছি মিঃ চট্টরাজ।
–কি করে সমাধান হল? চট্টরাজ শুধালেন।
–ঐ ড়ুপলিকেট চাবি।
—যেটা হারিয়েছেন ঘোষাল?
—হারায়নি। তবে?
—সেটা চুরি গিয়েছে।
—কে চুরি করেছে? মালঞ্চ?
–হ্যাঁ। এক ফাঁকে সুরজিৎ ঘোষালের পকেট থেকে মালঞ্চই সরিয়ে ফেলেছিল চাবিটা। কিন্তু বেচারী ভাবতেও পারেনি যে ঐ চাবিই শেষ পর্যন্ত হবে তার মৃত্যুবাণ।
–তাহলে কি মিঃ রায়–
-হ্যাঁ মিঃ চট্টরাজ, ঐ চাবির সাহায্যেই হত্যাকারী সেরাত্রে কোন এক সময়ে মালঞ্চর ঘরে ঢুকে তার কাজ শেষ করে বের হয়ে এসেছিল সকলের অলক্ষ্যে—যখন সম্ভবত সে পেথিডিনের নেশায় বুদ হয়ে ছিল—
–সত্যি বলছেন!
-হ্যাঁ। আমার অনুমান যদি মিথ্যা না হয় তত সাড়ে এগারোটা থেকে পোঁনে বারোটার মধ্যে কোন এক সময় ব্যাপারটা ঘটেছিল। মালঞ্চ নিশ্চিন্ত ছিল সুরজিৎ ঘোষালের পকেট থেকে চাবিটা হাতিয়ে নিয়ে, কিন্তু সে বুঝতে পারেনি যে, যে নাগরের হাতে সে চাবিটা তুলে দিয়েছিল সে সেই চাবির সাহায্যেই তার ঘরে ঢুকে তার গলায় মৃত্যু ফাঁস দেবে। চলুন মিঃ চট্টরাজ, একবার হিন্দুস্থান রোডের বাড়িটা হয়ে যাওয়া যাক। সুশান্ত মল্লিককে কয়েকটা প্রশ্ন করব।
চট্টরাজকে নিয়ে কিরীটী যখন হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে পৌঁছাল তখন সুশান্ত মল্লিক তার ঘরেই খাটের উপর বসে একা একা নিশ্চিন্ত মনে সিগ্রেট টানছিল। ওদের দুজনকে ঘরে ঢুকতে দেখে উঠে দাঁড়াল।
–বসুন, বসুন সুশান্তবাবু, আপনার কাছ থেকে একটা জিনিস নিতে এসেছি।
—জিনিস! কি জিনিস?
—এই বাড়ির সদরের আর মালঞ্চর ঘরের দরজার ড়ুপলিকেট চাবি দুটো?
–ড়ুপলিকেট চাবি?
–হ্যাঁ, যেটা মালঞ্চ হাতিয়েছিল সুরজিৎ ঘোষালের পকেট থেকে, তারপর চোরের ওপর বাটপাড়ি করে তার কাছ থেকে আপনি যেটা হাতিয়েছিলেন?
–কি বলছেন কিরীটীবাবু! আমি সে চাবির সম্পর্কে কিছুই জানি না।
—অস্বীকার করে কোন লাভ নেই সুশান্তবাবু, আমি জানি সে চাবি আপনিই হাতিয়েছিলেন কোন এক সময়–
–বিশ্বাস করুন, সত্যিই সে চাবি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।
কিরীটী উঠে দাঁড়াল-চলুন মিঃ চট্টরাজ। তারপর একটু এগিয়েই কিরীটী ফিরে দাঁড়াল, হ্যাঁ একটা কথা সুশান্তবাবু, মিঃ চট্টরাজ কিন্তু জানতে পেরেছেন মালঞ্চর হত্যাকারী কে?
—কে? কে মালঞ্চর হত্যা করেছে?
—আপনি তো জানেন।
—আমি জানি!
-হ্যাঁ, আপনি জানেন সুশান্তবাবু, কিরীটীর গলার স্বর গম্ভীর। আপনি বলতে চান সেরাত্রে আপনি তাকে দেখেননি?
—আমি দেখব কি করে, আমি তো সে-সময় এ বাড়ির ত্রিসীমানাতেও ছিলাম না।
–You are telling lie—আপনি মিথ্যা কথা বলছেন সুশান্তবাবু, আপনি ঐ সময়টা এই বাড়িরই আশেপাশে বা বাড়ির মধ্যেই কোথাও ছিলেন, নচেৎ আপনি। জানলেন কি করে যে মালঞ্চকে হত্যা করা হয়েছে? সে আর সাড়া দেবে না?
-বিশ্বাস করুন, আমি তাকে হত্যা করিনি।
-তবে সেরাত্রে আপনি কেন ঘোরানো সিঁড়িপথে চোরের মত মালঞ্চর ঘরে ঢুকেছিলেন?
—হ্যাঁ আমি গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু she was dead at that timeshe was dead.
–সেরাত্রে চোরের মত কেন এসেছিলেন এ বাড়িতে?
—সেদিন তাঁকে আমি দুপুরে ফোন করেছিলাম, বলেছিলাম তার প্রস্তাবেই আমি রাজি, আপাতত দশ হাজার টাকা পেলে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে প্রস্তুত আছি। সে বলেছিল রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ এসে টাকাটা নিয়ে যেতে। আর ওই পিছনের সিঁড়ি দিয়েই ওপরের ঘরে গিয়ে সে টাকা নিয়ে আসতে বলেছিল আমায়। কিন্তু ঘরে ঢুকে যখন দেখলাম সে মৃত, তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে পালাই
—হুঁ। তাহলে আপনিও সেরাত্রে তাকে ঘরের মধ্যে মৃত অবস্থায় দেখেছিলেন?
–হ্যাঁ।
—মিঃ চট্টরাজ, ওঁকে অ্যারেস্ট করুন, কিরীটী গম্ভীর গলায় বললে।
–বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি বলছি, মলিকে আমি খুন করিনি-খুন করিনি। কান্নায় ভেঙে পড়ল সুশান্ত মল্লিক।
১৬. পরের দিন সংবাদপত্রে বড় বড় হরফে প্রকাশিত হল
পরের দিন সংবাদপত্রে বড় বড় হরফে প্রকাশিত হল–মালঞ্চ মল্লিকের স্বামী সুশান্ত মল্লিক স্ত্রীহত্যার অপরাধে গ্রেপ্তার।
বেলা তখন সকাল সাড়ে নটা। লালবাজারে মিঃ চট্টরাজের অফিস ঘরে এসে ঢুকল কিরীটী।