–মালঞ্চর সঙ্গে পেসেন্ট আর ডাক্তারের সম্পর্ক ছাড়াও অন্য সম্পর্ক ছিল আমার—বললে শুরু করলেন সমীর রায়, কিন্তু বিশ্বাস করুন, সে সম্পর্কটা কোন ভালবাসা বা প্রেমের সম্পর্ক নয়, she had a tremendous sex, প্রচণ্ড একটা যৌন আবেদন ছিল মালঞ্চর আর বলতে সংকোচ করব না, তাতেই আমি trapped হয়েছিলাম। প্রায়ই রাত বারোটার পর আমি লুকিয়ে লুকিয়ে হিন্দুস্থান রোডে ওর বাড়িতে যেতাম, তারপর পিছনের লোহার ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে যেতাম। বুঝতে পারতাম কি জঘন্য নেশায় আমি জড়িয়ে পড়েছি, but I couldnt get out of it! হত্যার রাত্রে ক্লাব থেকে বের হয়ে সোজা আমি হিন্দুস্থান রোডে মালঞ্চর বাড়িতে যাই
–রাত তখন কটা হবে ডাঃ রায়?
—ঠিক মনে নেই, তবে round-about সাড়ে বারোটা পৌনে একটা হবে, যে পথে আমি রোজ যাই সেই পথেই ওপরে গেলাম—
—বাথরুমের দরজাটা খোলাই পেয়েছিলেন?
–হ্যাঁ।
–তারপর?
–বাথরুম অন্ধকার ছিল, চেনা পথ, ঘরে পা দিয়ে দেখি ঘরও অন্ধকার–
–পরের দিন সকালে দরজা ভেঙে কিন্তু সুশীল চক্রবর্তী ঘরের আলোটা জ্বলছিল দেখতে পায়–
–আমি ঘরের আলোটা জ্বালাই এবং জ্বালাতেই দেখলাম মালঞ্চ চেয়ারে বসে আছে আর তার গলায় ফাঁস, বুঝতে আমার কষ্ট হয়নি she was dead! বুঝতেই পারছেন আমার তখনকার মনের অবস্থা, কি ভাবে যে ঘর থেকে বের হয়ে বাথরুমে ঢুকেছি জানি না–তারপর সিঁড়ি দিয়ে নেমে ছুটতে ছুটতে এসে গাড়িতে স্টার্ট দিতে গিয়ে দেখি সদরে একজন দাঁড়িয়ে আছে।
–-কে সে?
–জানি না, ভাল করে তাকাইনি, তবে সে যে আমায় ছুটে গাড়িতে গিয়ে উঠতে দেখেছিল সেটা ঠিকই–
–দরজার কাছে যে দাঁড়িয়ে ছিল সে পুরুষ না নারী?
–পুরুষ।
মনে হল কিরীটী যেন একটু অন্যমনস্ক হয়ে কি বুঝি ভাবছে—
—রাত সোয়া বারোটার সময়ও বাথরুমের দরজাটা তাহলে খোলাই ছিল—পরে someone সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল, আশ্চর্য, কথাটা আমার মাথায় আগে আসেনি কেন,—কিরীটী কথাগুলো যেন কতকটা আত্মগতভাবে বলে।
–কিছু বলছেন, কিরীটীবাবু?
-–একটা চাবির কথা ভাবছি।
—-চাবি!
—হ্যাঁ, মালঞ্চর শয়নকক্ষে ইয়েল লকের ড়ুপলিকেট চাবিটার কথা ভাবছি ডাঃ রায়। সেটাও ছিল সুরজিৎ ঘোষালের কাছে?
–হ্যাঁ, তার কাছেই থাকত সেটা।
—ঠিক আছে ডাঃ রায়, আপনি এখন বাড়ি যান।
পরের দিনই কিরীটী চট্টরাজকে সঙ্গে নিয়ে হাজতে গেল সুরজিৎ ঘোষালের সঙ্গে দেখা করতে। দেখা গেল সুরজিৎ ঘোষাল একটা খাটিয়ার ওপর বসে আছেন। প্রচণ্ড গরম ঘরটার মধ্যে, ঘামছিলেন সুরজিৎ ঘোষাল। এই কয়দিনেই তার চেহারার যেন অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
–মিঃ ঘোষাল—
কিরীটীর ডাকে সুরজিৎ ঘোষাল বিষণ্ণ দৃষ্টি তুলে তাকালেন।
—হিন্দুস্থান রোডের বাড়ির সদরের আর মালঞ্চর ঘরের ইয়েল লকের ড়ুপলিকেট চাবি দুটো আপনার কাছেই থাকত না?
—হ্যাঁ। কিন্তু যে চাবির রিংয়ে ঐ চাবি দুটো ছিল, সেটা ঐ ঘটনার দিন সাতেক আগে হারিয়ে যায়—
—কি করে হারাল?
—জানি না। আমার মনে হয়, যাতে আমি যখন-তখন সেখানে না যেতে পারি, surprise visit না দিতে পারি সেইজন্যে মালঞ্চই রিংটা সরিয়েছিল।
-কেন আপনি surprise visit দিতেন?
—আগে কখনো দিতাম না, দেবার প্রয়োজনও বোধ করিনি। কিন্তু মানদার কাছ থেকে যখন জানতে পারলাম আমি চলে আসার পর প্রায়ই রাতে মালঞ্চর ঘরে দীপ্তেন ভৌমিক আসে, তখন আমি দুচারবার surprise visit দিয়েছি।
–আচ্ছা, আপনি কোনদিন কি দীপ্তেন ভৌমিককে মালঞ্চর ঘরে পেয়েছেন?
—না, কিন্তু আমি দুত্রে অন্তত টের পেয়েছি, তার ঘরে লোক ছিল—কথাবার্তা শুনেছি, ঘরে আলো জ্বলতে দেখেছি। কিন্তু নিঃশব্দে তালা খুলে ঘরে ঢুকে দেখেছি ঘরের আলো নেভানো—মালঞ্চ ঘুমোচ্ছে।
কিরীটী মৃদু হেসে বলল, চোরের ওপর বাটপাড়ি–
—আপনি কি বলতে চান, তাহলে–
–হ্যাঁ, আপনার আসার আগেই তার কাছে সংবাদ পৌঁছে যেত যে আপনি আসছেন, সঙ্গে সঙ্গে ঘরের লোক বাথরুম-পথে পিছনের ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে সটকে পড়ত, আপনি তাই কোনদিনই পাখিকে খাঁচার মধ্যে দেখেননি।
—কি বলছেন মিঃ রায়!
If I am not wrong মিঃ ঘোষাল, ঐ মানদাই দুপক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে দুপক্ষের দৌত্যগিরি করত
—মানদার মানদার এই কাজ!
–আচ্ছা মিস্টার ঘোষাল, আপনিই কি ডাঃ সমীর রায়কে ঐ বাড়িতে প্রথম নিয়ে যান?
–হ্যাঁ, ডাঃ রায়ের সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। মাঝে মধ্যে মালঞ্চর পেটে প্রচণ্ড কলিক হত, তাই আমি একবার ডাঃ রায়কে ডেকে আনি, ডাঃ রায় তাকে তখন পেথিডিন ইনজেকশন দেন, ক্রমশ সেই পেথিডিনে মালঞ্চ অ্যাডিক্টেড হয়ে যায়
-আপনি তাহলে পেথিডিনের ব্যাপারটা জানতেন?
—জানতাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি কি করে মালঞ্চ পেথিডিন জোগাড় করত—
—শুনলে আপনি হয়তো অবাক হবেন মিঃ ঘোষাল, কিরীটী বলল, আমার ধারণা আপনার ঐ বন্ধু ডাক্তার সমীর রায়ই তাকে পেথিডিন সাপ্লাই করতেন।
-না না, মিঃ রায়, এ আপনি কি বলছেন! অ্যাবসার্ড! আমি জানি ডাঃ রায় ওকে পেথিডিনের অভ্যাস ছাড়াবার জন্যে সর্বদাই চেষ্টা করতেন, ওকে বকাঝকা করতেন–
–আবার গোপনে তিনিই পেথিডিন জোগাড় করে দিতেন মালঞ্চকে। কারণ ডাঃ সমীর রায়ের মালঞ্চকে প্রয়োজন ছিল।
—কি বলছেন আপনি।
–ঠিকই বলছি, যদিও আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না। কিন্তু ঐ পেথিডিন রহস্যের চাইতেও বড় রহস্য আপনার অজ্ঞাতে ঐ হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতেই দানা বেঁধে উঠেছিল।