কিরীটী সুশীল চক্রবর্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কী মনে হয় সুশীল, who else–সুরজিৎ ঘোষাল?
—না, তিনি যাননি। তুমি নিশ্চিন্ত মনে তোমার ঐ তালিকা থেকে তাকে বাদ দিতে পারো! দেখ সুশীল, সাধারণ কমন সেন্স অনুযায়ী ভেবে দেখ—সেটা সুরজিৎ ঘোষালের রক্ষিতার ঘর, এবং মালঞ্চ সুরজিৎ ঘোষালেরই রক্ষিতা ছিল। সেক্ষেত্রে নিজের রক্ষিতাকে হত্যা করার প্রয়োজন হলে প্রথমত ঐ রকম crude ভাবে তিনি মালঞ্চকে হত্যা করতেন না এবং দ্বিতীয়ত সেজন্য নিজের রুমালটা তিনি নিশ্চয়ই ব্যবহার করতেন না, অন্যতম exhibit হিসাবে যেটি আদালতে পেশ করা যেতে পারে। তৃতীয়ত এবং lastly, ঐ ধরনের একটা কাজ সুরজিৎ ঘোষালের মত একজনকে দিয়ে সম্ভব হতে পারে বলে মন আমার সায় দেয় না। না, তুমি অন্য কাউকে ভাবো–
—তবে কি ঐ ডাঃ সমীর রায়?
সুশীল চক্রবর্তীর কথা শেষ হল না, তাকে একপ্রকার বাধা দিয়েই কিরীটী বললে, he is a doctor, মানুষকে হত্যা করবার অনেক উপায় জানা আছে তার, সুতরাং একজনকে ঐ ভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে সে মারবে না।
—তবে কি ডলি দত্ত?
–হতে পারে। She had a strong motive also, তার দিক থেকে imotive ও provocation দুই-ই ছিল—তারপরই হঠাৎ উঠে দাঁড়াল কিরীটী।–মিঃ চট্টরাজ, আমি চলি; সুশীল তুমি যেমন এগোচ্ছিলে এগিয়ে যাও, ব্যাপারটা আদৌ খুব একটা জটিল কিছু নয়—
কিরীটী ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
আদালত কারোরই জামিন দেয়নি।
তদন্তসাপেক্ষে সুরজিৎ ঘোষাল ও মানদাকে জেলহাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত এবং পরবর্তী শুনানীর তারিখ পড়েছে আবার দশদিন পরে।
সোমনাথ ভাদুড়ীর চেম্বারে বসে কিরীটীর সঙ্গে সোমনাথ ভাদুড়ীর আলোচনা হচ্ছিল মালঞ্চ হত্যা-মামলা নিয়েই।
সোমনাথ বলছিলেন, রায়মশাই, একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না, দীপ্তেন ভৌমিক
আর ডলি দত্তকে কেন আপনি সুশীল চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করবার পরামর্শ দিচ্ছেন না।
–প্রথমত, ওদের গ্রেপ্তার করলে উপযুক্ত প্রমাণ ও তথ্যাদির অভাবে ওদের আপনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবেন না।
—কিন্তু ঐ ট্রেপটা
–ওতে কেবল প্রমাণ করতে পারবেন দুর্ঘটনার দিন রাত্রে আগে ও পরে দীপ্তেন ভৌমিক দুবার হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে গিয়েছিল আর ডলি দত্ত একবার গিয়েছিল— তার দ্বারা প্রমাণ হবে না তারাই দুজন অথবা দুজনের একজন হত্যাকারী! ওদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে চোরাকারবারী বলে চিহ্নিত করে, এবং তারপর ঐ চোরাকারবারকে কেন্দ্র করে হত্যার ব্যাপারে আপনি আসতে পারবেন বটে, কিন্তু তখনো ঐ একই কথা থেকে যায়, প্রমাণ কই।
–আমার কিন্তু ওদের দুটিকেই সন্দেহ হয়, হত্যারহস্যের সঙ্গে ওরাও লিপ্ত।
—সেটা হতে পারে একমাত্র যদি প্রমাণ করা যায় যে ঐ চোরাকারবারকে কেন্দ্র করেই ঐ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
–সেটা কি আদালতে প্রমাণ করা যাবে না?
—সবটা আপনার জেরার উপর নির্ভর করছে। কিন্তু একটা কথা তত আমাদের। ভুললে চলবে না ভাদুড়ীমশাই, দীপ্তেন ভৌমিক, ডাঃ সমীর রায় এবং ডলি দত্ত—কাউকেই এখনও আমরা চোরাকারবারী বলে প্রমাণ করবার মত উপযুক্ত তথ্যাদি পাইনি।
–আচ্ছা রায়মশাই, আপনি সুশান্ত মল্লিককে একেবারে বাদ দিচ্ছেন কেন?
—না, বাদ দিইনি। বরং বলতে পারেন আমার একটি চোখ সর্বক্ষণ তার ওপরে। রয়েছে। যেহেতু তার দিক থেকে হত্যার মোটিভ অত্যন্ত strong ছিল, তেমনি তার দিক। থেকে possibilityও যথেষ্ট ছিল, সর্বশেষে ওর একটা strong alibi রয়েছে—-হত্যার দুদিন আগে থাকতে ভদ্রকে হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতেই ছিলেন না, পুনরায় আবির্ভাব হয় তার হত্যার পরদিন সকালে রীতিমত নাটকীয় ভাবে–
–লোকটা এখন কি– ২ন রোডের বাড়িতেই আছে, তাই না রায়মশাই?
মৃদুহেসে কিরীটী বললে, যাবেই বা কোথায়, তার কোন আস্তানা নেই, সংস্থান নেই, দুমুঠো পেটের ভাতের, নেই কোন ভবিষ্যৎ, completely wrecked!
১৫. সোমনাথ ভাদুড়ীর ওখান থেকে ফিরতে
সোমনাথ ভাদুড়ীর ওখান থেকে ফিরতে বেশ রাতই হয়ে গিয়েছিল কিরীটীর, প্রায় পৌনে এগারোটায় ঘরে ঢুকেই থমকে পড়ে কিরীটী—একটা চেয়ারে বসে ডাঃ সমীর রায়—
—কি ব্যাপার ডাঃ রায়, কতক্ষণ?
—তা প্রায় ঘণ্টা দেড়েক তো হবেই।
–কিন্তু বাড়ির সামনে আপনার গাড়ি তো দেখলাম না
–না, আমি গাড়ি নিয়ে আসিনি, ট্যাক্সিতে এসেছি–স্নান কণ্ঠে বললেন ডাঃ রায়, আমি আপনার সঙ্গে বিশেষ কারণে দেখা করতে এসেছি কিরীটীবাবু।
-বলুন—যা আমি পুলিসের কাছে বলতে পারিনি তা আপনার কাছে বলব।
—বেশ তো, যা বলবার বলুন। আমার দ্বারা যদি আপনার কোন উপকার বা সাহায্য করা সম্ভব হয় নিশ্চয়ই করব।
–মিঃ রায়, আপনি নিশ্চয় বুঝবেন, মালঞ্চর হত্যা মামলার সঙ্গে আজ যদি আমার নামটা জড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমার পক্ষে আর এ শহরে বাস করা সম্ভব হবে না। তারপর একটু থেমে বললেন, আজ সকালে আমার বাড়ি ইনকাম ট্যাক্সের লোকেরা raid করেছে এবং সেটা যে পুলিসেরই নির্দেশে, তাও আমি বুঝতে পেরেছি। সেজন্যে অবশ্য আমি ডরাই না, ইনকাম করে tax হয়তো পুরোপুরি দিইনি, তার জন্যে হয়তো punishment হবে, তা হোক, কিন্তু ঐ scandal-এর সঙ্গে আমার নাম জড়ালে my future will be doomed! তাই ভেবে দেখলাম, আপনাকে সব কথা খুলে বলাই ভাল।
—তা বলুন না—