—তুমি—তুমি মালঞ্চর বাড়িতে গিয়েছিলে ডলি!
-হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। রাত তখন প্রায় পৌনে বারোটা হবে। তুমি আমায় দেখনি, আমি যখন পিছনের ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে বাথরুমের মধ্যে দিয়ে মালঞ্চর ঘরে গিয়ে ঢুকি, তখন she was dead!
–কি বলছ তুমি ডলি!
-হ্যাঁ, তার গলায় রুমালের ফাঁস লাগানো ছিল, and she was dead, আর যে চেয়ারটায় সে বসেছিল তারই সামনে, অল্প দূরে মালঞ্চর শয্যার ওপরে তোমার এই সিগারেট কেসটা আমি পাই। দেখ, চিনতে পারছ এই নাম এনগ্রেভ করা সোনার সিগারেট কেসটা? এটা বছর কয়েক আগে আমিই তোমার জন্মদিনে তোমাকে প্রেজেন্ট করেছিলাম। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম দীপ্তেন—-
—কি—কি তুমি বুঝতে পেরেছিলে?
—তুমি কিছুক্ষণ আগেও সেখানে ছিলে। রাত সাড়ে দশটায় তুমি আমাকে তোমার এই ঘর থেকে ফোন করেছিলে আধ ঘণ্টার মধ্যে তুমি ক্লাবে যাচ্ছ, আমি যেন সেখানেই চলে যাই। আমি চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু তার আগে রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ একবার তোমার বাড়িতে ফোন করে আমি তোমার চাকর বামাপদর কাছ থেকে জেনেছিলাম যে তুমি হিন্দুস্থান রোডে গিয়েছ। বলে গিয়েছ, তুমি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফিরবে।
—কিন্তু ডলি—
—শোন, আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। আমি সোয়া এগারোটা পর্যন্ত ক্লাবে তোমার জন্যে অপেক্ষা করে প্রথমে এখানে আসি, এসে শুনলাম সাড়ে নটা নাগাদ তুমি এসে আবার বের হয়ে গিয়েছ। তোমার এখান থেকে ট্যাক্সিতে দি রিট্রিট মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা, কাজেই ক্লাবে গেলে তোমার ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে যাওয়া উচিত ছিল—
–আমার অন্য জায়গায় কাজ ছিল, তাই–
-সে কাজ তোমার মালঞ্চর ওখানেই ছিল। সেই রকম সন্দেহ হওয়ায় আমি গাড়ি নিয়ে সেখানেই যাই। একটু দুরে গাড়িটা পার্ক করে পিছনের ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে মালঞ্চর ঘরে যাই। এখন বুঝতে পারছ, তুমি যে সেরাত্রে দুবার মালঞ্চর ঘরে গিয়েছিলে কি করে আমি বুঝেছিলাম।
–কিন্তু তুমি–তুমি বিশ্বাস কর ডলি, আমি, মালঞ্চকে হত্যা করিনি–
—কিন্তু তোমার এই সিগ্রেট কেস সেখানে কি করে গেল দীপ্তেন! আমি যদি পুলিসকে এটা জানিয়ে দিই, তাদের তুমি কি বলে বোঝাবে?
-শোন, তাহলে সব কথাই তোমাকে বলছি। সেরাত্রে দ্বিতীয়বার বিশেষ একটা কারণে মালঞ্চর ঘরে আমাকে যেতে হয়। সেরাত্রে সাড়ে দশটা নাগাদ আমার ফ্ল্যাটে তার আসার কথা ছিল, কিন্তু সোয়া এগারোটা নাগাদও যখন সে এলো না, তখন আমি দ্বিতীয়বার তার ওখানে যাই
–So you did! তুমি দ্বিতীয়বার ওখানে গিয়েছিলে, স্বীকার করছ দীপ্তেন?
-হ্যাঁ গিয়েছিলাম, but she was dead at that time, বিশ্বাস কর, I found her dead, strangled, রুমাল বাঁধা তার গলায়, ঘটনার আকস্মিকতায় I was so much perturbcd যে আমি ধপ করে বিছানাটার ওপরে বসে পড়ি, now what to do! আর ঠিক সেই সময়ে ঘোরানো সিঁড়িতে আমি কার যেন পদশব্দ পাই, পাছে কেউ এসে আমাকে ঐ সময় ঘরের মধ্যে দেখতে পায় সেই ভয়ে আমি খাটের নীচে ঢুকে পড়ি।
–A nice story–বল-বলে যাও।
—Story! Its a fact, সত্যি। তুমি ঘরে এলে, মালঞ্চকে মৃত দেখে তুমি অর্ধস্ফুট গলায় চেঁচিয়ে উঠলে, তারপরেই বের হয়ে গেলে ঘর থেকে, যে পথে এসেছিলে সেই পথে। আমিও সেই পথে তোমার পিছু পিছু বের হয়ে আসি। তারপর সেখান থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে রাত বারোটার দুচার মিনিট আগে ক্লাবে যাই, তুমি তখন সেখানে বসে ড্রিংক করছিলে। বিশ্বাস কর ডলি, আমি তোমাকে যা বললাম তার একবর্ণও মিথ্যা নয়। কি হল, উঠছ কেন——ডলি, সত্যিই কি তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ না, ডলি শোন—
টেপটা বাজিয়ে শুনছিলেন মিঃ চট্টরাজ, কিরীটী ও সুশীল চক্রবর্তী—লালবাজারে মিঃ চট্টরাজের অফিস কামরায়।
–শুনলেন তো সব মিঃ চট্টরাজ, কিরীটী বলল, এ থেকে অন্তত দুটো ব্যাপার প্রমাণিত হচ্ছে—প্রথমত, সোয়া এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যেই কোন এক সময় মালঞ্চ দেবীকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। আর দ্বিতীয়ত, সেরাত্রে সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে এগারোটা বা পৌনে বারোটা পর্যন্ত দীপ্তেন ভৌমিকের movement suspicious, ঐ সময়টা ওকে ঘিরে একটা সন্দেহের কুয়াসা জমাট বেঁধে আছে।
—আপনি কি মনে করেন মিঃ রায়, চট্টরাজের প্রশ্ন, ঐ দীপ্তেন ভৌমিক ডলি দত্তর কাছে মিথ্যা কথা বলেছে?
–শুধু সে কেন, ডলি দত্তও মিথ্যা বলে থাকতে পারে। যাক গে সে কথা আমার মনে হচ্ছে আমি যেন অন্ধকারের মধ্যে আলোর ইশারা দেখতে পাচ্ছি একটু।
–কি রকম?
—দেখা যাচ্ছে সেরাত্রে অকুস্থলে প্রথমে সুরজিৎ ঘোষালের আবির্ভাব ও নাটকীয় ভাবে প্রস্থান, তার আগে দীপ্তেন ভৌমিকের প্রথম আবির্ভাব ও পরে রাত্রি সোয়া এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে দ্বিতীয়বার আবির্ভাব ঘটেছিল, ঐ সময়েই আবির্ভাব ঘটেছিল আরো একজনের, যেটা আমরা শুনেছি একটু আগে টেপ থেকে, শ্ৰীমতী ডলি দত্তর এবং বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দ্বিতীয়বার দীপ্তেন ভৌমিক ও ডলি দত্তর আবির্ভাব ঘোরানো সিঁড়ির পথে। এখন আমাদের দেখতে হবে সে রাত্রে ঘোরানো সিঁড়িপথে ঐ তিনজন ছাড়া আর কার ঐ ঘরে আবির্ভাব ঘটেছিল। এবং আমার অনুমান যদি মিথ্যা না হয় তো জানবেন that is the person we are searching for, তাকেই আমরা খুঁজছি, মালঞ্চ হত্যারহস্যের মেঘনাদ।
—ঐ তিনজন ছাড়া সেরাত্রে ঐ ঘরে আর কে যেতে পারে বলে আপনার মনে হয় দাদা? হঠাৎ সুশীল চক্রবর্তী কিরীটীকে প্রশ্নটা করলেন।