–আমরা কিন্তু জেনেছি আপনি প্রায়ই হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে যেতেন—
—প্রায়ই নয়, কখনো-সখনো যেতাম।
-ঘনিষ্ঠতা ছিল বলেই যে সেখানে আপনি যেতেন সেটা কিন্তু আমরা জেনেছি মিঃ ভৌমিক। শুধু সেখানেই নয়, দি রিট্রিট নাইট ক্লাবেও আপনি মালঞ্চ দেবীর সঙ্গে যেতেন। মিঃ ভৌমিক, বিভিন্ন সোর্স থেকে আমরা যথাসম্ভব খবরাখবর সংগ্রহ করেই আপনার কাছে এসেছি। অতএব বুঝতেই পারছেন, অস্বীকার করে কোন লাভ নেই!
সুশীল চক্রবর্তীর স্পষ্ট কথায় ও গলার স্বরে মনে হল দীপ্তেন ভৌমিক যেন একটু থমকেই গিয়েছে।
হঠাৎ শয়নঘরের দরজা খুলে গেল এবং অভিনেত্রী ডলি দত্ত ঘর থেকে বের হয়ে এলো। ডলি দত্তর সঙ্গে পূর্বেই কথাবার্তা হয়েছিল সুশীল চক্রবর্তীর, তাই ডলি দত্ত সুশীল চক্রবর্তীকে দেখে যেন একটু থমকে দাঁড়াল। কিন্তু পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে দীপ্তেনের দিকে তাকিয়ে বললে, দীপ্তেন, যাচ্ছি—
–এসো—মৃদুকণ্ঠে দীপ্তেন বলল।
ঘরের মধ্যে একটা বিদেশী সেন্টের সৌরভ ছড়িয়ে ডলি দত্ত বের হয়ে গেল।
—বেশ স্বীকার করলাম না হয় ছিল, কিন্তু তাতে কি হয়েছে? দীপ্তেন বলল।
—সুরজিৎ ঘোষাল যে সেটা পছন্দ করতেন না তাও নিশ্চয় আপনার অজানা ছিল না?
–Dont talk about that old fool!
—কিন্তু সুরজিৎ ঘোষালেরই রক্ষিতা ছিলেন মালঞ্চ দেবী, আপনার ও মালঞ্চ দেবীর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা, বিশেষ করে তার অবর্তমানে, সুরজিৎ ঘোষালের না পছন্দ হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি?
—ওসব কথা ছাড়ুন মিঃ চক্রবর্তী, আমার কাছে কি জানতে চান বলুন?
—যে রাত্রে দুর্ঘটনাটা ঘটে সে রাত্রে আপনি মালঞ্চ দেবীর বাড়ি গিয়েছিলেন?
—সে তো আগেই বলেছি।
—হ্যাঁ, আপনি বলেছেন এবং আপনি এও বলেছেন যে সদর দিয়েই বের হয়ে এসেছিলেন আপনি!
—এখনও তাই বলছি, এবং বের হয়ে সোজা আমি ট্রেন ধরি।
-না, সে রাত্রে আপনি তখনই কলকাতা ছেড়ে যাননি, এবং সে রাত্রে আবারও আপনি হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে গিয়েছিলেন, I mean second time!
—What nonsense! কি সব আবোল-তাবোল বকছেন মিস্টার চক্রবর্তী?
—যথেষ্ট প্রমাণ হাতে না পেয়ে আপনাকে আমি কথাটা বলছি না মিঃ ভৌমিক। আপনাকে আর ডলি দত্তকে সেই রাত্রে বারোটা নাগাদ নাইট ক্লাব দি রিট্রিটে ড্রিংক করতে দেখা গিয়েছে।
—হতেই পারে না।
-বললাম তো, আমাদের হাতে তার প্রমাণ আছে। এবার বলুন মিঃ ভৌমিক, সেদিন সন্ধ্যারাত্রে মালঞ্চ দেবীর হিন্দুস্থান রোডের বাড়ি থেকে বের হয়ে ঐ নাইট ক্লাবে যাবার আগে পর্যন্ত আপনি কোথায় ছিলেন? কি করেছিলেন?
—আমি নাইট শোতে সিনেমা গিয়েছিলাম।
–তাহলে সে রাত্রে আপনি কলকাতা ছেড়ে যাননি স্বীকার করছেন?
—হ্যাঁ, কলকাতাতেই ছিলাম।
—আপনি সেকেন্ড টাইম আবার হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে গিয়েছিলেন। বলুন কেন গিয়েছিলেন?
–দরকার ছিল।
-–কি এমন দরকার পড়ল যে সেকেন্ড টাইম সেখানে যেতে হল মিঃ ভৌমিক?
—সেটা সম্পূর্ণ আমার পার্সোনাল ব্যাপার, ব্যক্তিগত।
-তা কখন গিয়েছিলেন? মানে কটা রাত্রি তখন? যদিও একটু আগে বললেন সিনেমায় গিয়েছিলাম।
—বই দেখতে আমার ভাল লাগছিল না, তাই ইন্টারভ্যালের আগেই বের হয়ে আসি সিনেমা হাউস থেকে।
–ট্যাক্সিতেই বোধহয় গিয়েছিলেন?
—হ্যাঁ।
—তখন রাত কটা হবে?
—পৌনে এগারোটা হবে। ঠিক সময় দেখিনি।
—আচ্ছা, মানদা বা রতন কেউই দ্বিতীয়বার আপনাকে সেখানে যেতে দেখেনি, তাহলে ধরতে হয় আপনি নিশ্চয়ই মেথরদের যাতায়াতের জন্য পিছনের সিঁড়ি পথে উঠে বাথরুমের দরজা দিয়েই গিয়েছিলেন?
—হ্যাঁ।
—ওই দরজা দিয়ে আপনি মাঝে মধ্যে যেতেন তাহলে?
—যেতাম।
–ঘরে ঢুকে কি দেখলেন আপনি? মানে মালঞ্চ দেবী কি করছিলেন সে সময়?
–ঘরের দরজা বন্ধ করে চুপচাপ একটা সোফায় বসেছিল সে।
–তারপর?
–দশ মিনিটের মধ্যেই আমি আমার কাজ সেরে চলে আসি। পরে সেখান থেকে নাইট ক্লাবে যাই।
—মালঞ্চ দেবী তখন তাহলে জীবিত ছিলেন?
—হ্যাঁ।–মালঞ্চ দেবী যে একজন স্মাগলার ছিলেন আপনি জানেন?
—স্মাগলার! না তো? কে বললে? ইমপসিবল!
—হ্যাসিসের চোরাকারবার ছিল তাঁর, আপনি জানতেন না বলতে চান?
—না, বিশ্বাস করুন, সত্যিই আমি জানতাম না। I never knew that she was a smuggler!
–হুঁ। তিনি কি পেথিডিন অ্যাডিক্টেড ছিলেন তাও জানতেন না বোধহয়?
—না তো!
—তাঁর সঙ্গে এতদিন ঘরে এত ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও ঐ দুটি সংবাদ আপনার অবিদিত ছিল মিঃ ভৌমিক, এটা কি একটা বিশ্বাসযোগ্য কথা হল? আপনি জানতেন, জানতেন কিন্তু এখন স্বীকার করছেন না। ঠিক আছে, আপনি ডাঃ সমীর রায়কে চেনেন নিশ্চয়ই?
—চিনি।
—তারও সঙ্গে মালঞ্চ দেবীর যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল, তাই না?
ডাঃ রায় ওর ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান ছিলেন এইটুকুই জানি, তার বেশী কিছু জানি না।
–আপনি কি ব্র্যান্ড সিগারেট খান?
–কেন বলুন তো?
—দেখি আপনার সিগারেট কেসটা—
দীপ্তেন ভৌমিক নাইট গাউনের পকেট থেকে একটা দামী সিগারেট কেস বের করে দিলেন সুশীল চক্রবর্তীর হাতে। কেসটা খুলে দেখলেন সুশীল চক্রবর্তী, স্মাগল করা সিগারেট স্টেট এক্সপ্রেস ৫৫৫—এবং আরও একটা ব্যাপার নজরে পড়ল ভিতরের দিকে ডালার গায়ে এনগ্রেভ করে লেখা—To Dipten-Mala.
সিগারেট কেসটা ফেরত দিতে দিতে সুশীল চক্রবর্তী বললেন, এই মালাটি কে দীপ্তেনবাবু? Who is she?
—এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার মিঃ চক্রবর্তী।