ডলি দত্ত চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসতে বসতে বলল, তা আমাকে হঠাৎ আপনাদের কি প্রয়োজন হয় বলুন তো?
—আপনি নিশ্চয়ই সংবাদ পেয়েছেন হিন্দুস্থান রোডের মালঞ্চ দেবীকে হত্যা করা হয়েছে?
—হ্যাঁ, নিউজপেপারে পড়েছি—
—আমরা শুনেছি তিনি আপনার একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন।
–বান্ধবী! Not at all, সামান্য পরিচয় ছিল। আমার একজন admirer ছিলেন তিনি। একটা ফাংশনে আলাপ হয়েছিল ওঁর সঙ্গে।
—আপনি প্রায়ই তার হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে যেতেন?
—প্রায়ই নয়, বার দুই বোধহয় গিয়েছি।
বালিগঞ্জ সারকুলার রোডের নাইট ক্লাব দি রিট্রিটে আপনার যাতায়াত আছে—মালঞ্চ দেবীকে আপনি সেখানে দেখেছেন!
–দেখেছি।
—ডাঃ সমীর রায়কে চেনেন? এই শহরের নামকরা ফিজিসিয়ান?
—নাম শুনেছি, পরিচয় নেই।
—কিন্তু ডাঃ রায় বলেছেন, সেই নাইট ক্লাবেই তার সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়। আপনারা উভয়েই উভয়ের পরিচিত এবং আপনি প্রায়ই ডাঃ রায়ের সঙ্গে মালঞ্চ দেবীর হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে যেতেন।
–ডাক্তার রায় বলেছেন ঐ কথা?
—হ্যাঁ। নচেৎ আমরা জানব কি করে?
—All bogus! দু-একদিন সামান্য একটু কথাবার্তা বললেই যদি যথেষ্ট পরিচয় হয়, তাহলে তো যাদের সঙ্গে কখনো দু-চারটে কথা বলেছি, তারা সকলেই আমার যথেষ্ট পরিচিত।
–আপনি লেক রোডের দীপেন ভৌমিককে চেনেন?
–সামান্য পরিচয় আছে।
—তার সঙ্গে, তার গাড়িতে মাঝে মধ্যে আপনি বালিগঞ্জ সারকুলার রোডের নাইট ক্লাবে যেতেন আমরা জানতে পেরেছি–
—মাঝে মধ্যে নয়, বার দুই হয়তো গিয়েছি–
–And you stayed there till midnight—কথাটা সত্যি?
—তা মাঝে মধ্যে একটু বেশী সময় থাকতাম।
—গতকাল evening flight-এ বম্বে থেকে ফিরেই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা ট্যাক্সি করে আপনি তার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন?
ডলি দত্তর মুখের দিকে তাকিয়ে মিঃ চট্টরাজের মনে হল হঠাৎ যেন ডলি দত্ত একটু বিব্রত বোধ করছে। ডলি দত্ত কোন জবাব দেয় না। চুপ করে থাকে।
—কি ভাবছেন মিসেস দত্ত? সংবাদটা তাহলে মিথ্যে নয়?
–হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। মানে—
–নিশ্চয়ই কোন জরুরী ব্যাপার ছিল—নচেৎ বাড়িতে না গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা একেবারে তার লেক রোডের ফ্ল্যাটে চলে গেলেন কেন?
—হ্যাঁ একটু কাজ ছিল, মানে তার এক বন্ধু বম্বে থেকে একটা প্যাকেট তাকে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন। জরুরী। তাই সোজা সেখানেই গিয়েছিলাম।
–জরুরী প্যাকেট! তা কি ছিল তার মধ্যে জানেন?
–না, আমি তা জানব কি করে?
—কিন্তু আমি বোধহয় অনুমান করতে পারি-প্যাকেটটার মধ্যে ছিল নিষিদ্ধ নেশার বস্তু, হ্যাসিস সিগারেট–
–Oh Christ! কি বলছেন আপনি?
—মিসেস দত্ত-গম্ভীর গলায় চট্টরাজ বললেন, if I am not wrong, কথাটা আপনি জানতেন।
—নিশ্চয়ই না, কখনোই না।
–জানতেন, আপনি জানতেন। আর আপনি বোম্বাই গিয়েছিলেন কোন ফিল্মের contract-এর ব্যাপারে নয়, ঐ প্যাকেটটাই নিয়ে আসতে
–What do you mean!
–মিসেস দত্ত, আপনি নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমতী, কিন্তু অস্বীকার করে কোন লাভ নেই। আপনি জানতেন হিন্দুস্থান রোডের বাড়িটা একটা ডেন ছিল, আর ঐখানেই ঐ নিষিদ্ধ বস্তু হ্যাসিসের লেনদেন চলত–
-Believe me officer, আ—আমি ওসব ব্যাপারে কিছুই জানতাম না, জানলে ঐ বাড়ির ত্রিসীমানাতেও যেতাম না।
—মিসেস দত্ত, কোন ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্ট আছে?
–ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট?
–হ্যাঁ, কারণ আমরা খবর পেয়েছি, রোজগার আপনার ভালই, এবং সেটা ঐ ফিল্ম লাইন থেকে নয়—
—আপনি জানেন না আমার স্বামী একজন ব্রোকার এবং সে যথেষ্ট রোজগার করে। সে প্রতি মাসে আমাকে অনেক টাকা হাতখরচ দেয়। Film-এ অভিনয় করাটা আমার পেশা নয়, নেশা। হ্যাঁ, নেশাই বলতে পারেন। ব্যাঙ্কে আমার সামান্য একটা অ্যাকাউন্ট আছে। ব্যাঙ্কের নাম দিচ্ছি, আপনারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন
—ঠিক আছে, আপনি যেতে পারেন। তবে আপনাকে হয়তো ভবিষ্যতে আবার আমাদের প্রয়োজন হবে। আমাদের না জানিয়ে আপনি কলকাতার বাইরে যাবেন না।
—কিন্তু কেন, আপনারা কি মালঞ্চর হত্যার ব্যাপারে আমাকে সন্দেহ করছেন?
—সন্দেহ সকলের প্রতিই হওয়া স্বাভাবিক, বিশেষ করে যারা মালঞ্চ দেবীর সঙ্গে। ঘনিষ্ঠ ছিল, যাদের ওখানে যাতায়াত ছিল। আচ্ছা, আপনি আসুন।
ডলি দত্ত আসার সময় যেভাবে গটগট করে এসেছিলেন, বেরুবার সময় কিন্তু তেমন নয়, গতিটা মনে হল শ্লথ। একটু পরে ডলি দত্তর গাড়িটা লালবাজারের গেট দিয়ে বের হয়ে গেল।
১২. ডলি দত্ত বের হয়ে যাবার পর
ডলি দত্ত বের হয়ে যাবার পর চট্টরাজ কিরীটীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলেন– রায়সাহেব একবার আমার অফিসে আসতে পারেন?
কিরীটী বলল, সন্ধ্যার পর যাব।
ফোনের রিসিভারটা নামিয়ে রেখে কিরীটী তখুনি বেরুবার জন্যে প্রস্তুত হল। একবার সুশীল চক্রবর্তীর ওখানে যেতে হবে।
কৃষ্ণা জিজ্ঞাসা করল, বেরুচ্ছ নাকি?
-হ্যাঁ, একবার সুশীলের ওখানে যাব।
—যেতে হবে না দাদা, আমি এসে গিয়েছি–বলে হাসতে হাসতে সুশীল চক্রবর্তী ঘরের মধ্যে এসে ঢুকলেন।
—আরে এসো এসো সুশীল, তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম।
—বৌদি, কফি—
কৃষ্ণা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
সুশীল বললেন, আপনার অনুমানই ঠিক দাদা, ওগুলো হাসিস সিগারেট–
—তোমাকে যে বলেছিলাম মালঞ্চর ঘরটা আর একবার ভাল করে সার্চ করতে?
–করেছি। কিন্তু ঘরটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জ বা পেথিডিন অ্যাম্পুল তো পেলাম না।