–তবে কি তার মত্যুর পিছনে ঐ চোরাকারবারের কোন—-
—হলে আশ্চর্য হব না সুশীল। যাক, আমি এখন উঠব। তোমাদের ডি.সি. ডি.ডি. আমাকে ফোন করেছিলেন, সেখানে একবার যেতে হবে।
১১. পরের দিন বেলা নটা নাগাদ
পরের দিন বেলা নটা নাগাদ কিরীটী লালবাজারে ডি.সি. ডি.ভি, মিঃ চট্টরাজের অফিস ঘরে প্রবেশ করে দেখে একজন মধ্যবয়সী সুদর্শন ভদ্রলোক, পরনে দামী সুট, চট্টরাজের মুখোমুখি বসে।
চট্টরাজ কিরীটীকে চোখের ইঙ্গিতে চেয়ারে বসতে বললেন।
–ডাঃ রায়, আপনার ঐ হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে যাতায়াত ছিল সে কথা আমরা গতকালই জানতে পারি—ডি.সি. ডি.ডি. বলতে থাকেন।
–যাতায়াত ছিল বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন?
–মানে প্রায়ই আপনি ওখানে যেতেন।
—হ্যাঁ যেতাম, মালঞ্চ দেবী আমার পেসেন্ট ছিলেন।
–I see, তা তার রোগটা কি ছিল ডাঃ রায়?
—নানা ধরনের অসুখ ছিল। তবে প্রায়ই মাইগ্রেন আর পেটের কলিকে ভুগতেন। হঠাৎ ঐ সময় কিরীটী প্রশ্ন করল, excuse me ডাঃ রায়, একটা কথা, আপনি কি জানতেন ঐ মহিলাটি গাঁজা জাতীয় কোন নিষিদ্ধ নেশা করতেন?
-না, আমি জানি না।
–মালঞ্চ দেবী কখনো বলেন নি?
—না।–
-আপনি সাধারণত রাত্রের দিকেই সেখানে যেতেন শুনেছি–
–বাজে কথা। যখনই দরকার পড়ত তখনই যেতাম, আমরা ডাক্তার, কল এলে যেতেই হয়।
—ডাক্তার হিসাবেই তো যেতেন! তবে আপনাকে দরকারটা বেশীর ভাগ রাত্রের দিকেই হত–তাই নয় কি?
—বললাম তো, যখন দরকার হত তখুনি যেতাম।
—তা মিঃ সুরজিৎ ঘোষাল ব্যাপারটা জানতেন?
—জানতেন বৈকি, আর তার কল পেয়েই তো প্রথমে আমি সেখানে যাই—
–সুরজিৎ ঘোষালের সঙ্গে মালঞ্চর সম্পর্কর কথাটা নিশ্চয় আপনি জানতেন অর্থাৎ মালঞ্চ তার keeping-য়ে ছিল?
—আমার জানার দরকার হয়নি and that was none of my business.
—ডাঃ রায়, আপনি দীপ্তেন ভৌমিককে জানেন?
—হ্যাঁ, পরিচয় আছে। সমীর ডাক্তার বললেন।
—তিনি হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে যেতেন জানেন নিশ্চয়ই?
–না, তাকে সেখানে আমি কখনো দেখিনি।
–ডাঃ রায়, বালিগঞ্জ সারকুলার রোডে একটা নাইট ক্লাব আছে, socalled সোসাইটির অভিজাত নরনারীরা যেখানে রাত্রে মিলিত হয়। ক্লাবটা জানেন আপনি?
—জানি।
—আপনিও তো সেখানে প্রায়ই যেতেন। সেখানে আপনার দীপ্তেন ভৌমিকের সঙ্গে দেখা হত না?
—মনে করতে পারছি না।
–আর মিঃ সুরজিৎ ঘোষালের সঙ্গে?
–না, তাকে কখনও সেখানে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
—মালঞ্চ দেবী–তাকে নিশ্চয়ই ঐ নাইট ক্লাবে দেখেছেন?
—হ্যাঁ, দেখেছি। তিনি মাঝে মধ্যে সেখানে যেতেন।
—ডাঃ রায়, আপনি অভিনেত্রী ডলি দত্তকে চেনেন?
–না, ও নাম শুনিইনি আমি কখনো।
ডি.সি. ডি.ডি. প্রশ্ন করলেন, ব্যাঙ্কে আপনার কোন ভল্ট নেই?
–না মশাই, নেই। আমাদের আয়টাই আপনারা কেবল দেখেন, ব্যয়ের দিকটা কখনো ভেবে দেখেন না। আমার আয় যেমন তেমন খরচও অনেক।
-আচ্ছা আর একটা কথা, আবার কিরীটীর প্রশ্ন, আপনি তো মালঞ্চ দেবীর ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান ছিলেন, তিনি গাঁজা ছাড়া অন্য কোন রকম নেশা করতেন বলে জানেন?
–হ্যাঁ, করতেন। She was addicted to pethidinc! প্রথমে abdominal colic-এর জন্যে নিতেন, পরে সেটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল।
–নিজে নিজেই ইজেকশন নিতেন বোধহয়?
–শেষের দিকে তাই নিতেন জানি।
—আপনি তাকে ঐ মারাত্মক বিষ শরীরে নিতে নিষেধ করেননি?
–বহুবার করেছি, কিন্তু পেথিডিনের নেশা বড় মারাত্মক নেশা, একবার ঐ নেশার কবলে পড়লে রেহাই পাওয়া দুষ্কর–
–আর একটা নেশাও তিনি করতেন, আমরা যতদূর জেনেছি। জানেন কিছু?
-কিসের নেশা?
—হ্যাসিস–
—Good Lord! না, আমি জানতাম না। and I dont think so, প্রশ্নোত্তরের পর ডাভার রায়কে মিঃ চট্টরাজ যাবার অনুমতি দিলেন।
অভিনেত্রী ডলি দত্তকে কিন্তু তার টালার বাড়িতে খোঁজ করে পাওয়া গেল না। তার স্বামী জীবন দত্ত বললেন, ছবির ব্যাপারে সে বোম্বাই গিয়েছে।
সুশীল চক্রবর্তী ডলি দত্ত সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলেন।
বয়স ত্রিশের মধ্যে, খানতিনেক ছবিতে কাজ করেছে বেশ কয়েক বছর আগে, এবং কোন ছবিই দাঁড়ায়নি। বর্তমানে তিন-চার বৎসর তার হাতে কোন কাজ নেই। তার স্বামী জীবন দত্ত ব্রোকার, বেশ ভালই রোজগার করে। সচ্ছল অবস্থা। ডলি দত্ত গ্র্যাজুয়েট এবং হাই সোসাইটিতে তার যাতায়াত ও মেলামেশা আছে। নিজের একটা ফিয়াট গাড়ি আছে, সেটা নিয়েই ঘুরে বেড়ায়।
ডলি দত্ত একদিন নিজেই লালবাজারে এসে হাজির হল। গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে একেবারে চট্টরাজের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দরজার গোড়ায়
প্রহরারত সার্জেন্ট ডলি দত্তকে বাধা দিল।—কাকে চাই?
—মিঃ চট্টরাজের সঙ্গে দেখা করব। বলুন ফিল্ম অ্যাকট্রেস ডলি দত্ত এসেছেন।
সার্জেন্টের নামটা শোনা ছিল, বললে, অপেক্ষা করুন, আমি খবর দিচ্ছি-বলে সার্জেন্ট ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। পরমুহূর্তেই বেরিয়ে এসে বললে, যান, ভিতরে যান—
চট্টরাজ তার নিজের অফিস ঘরে বসে একটা রিপোর্ট দেখছিলেন। ডলি দত্ত ভিতরে ঢুকতেই তিনি বললেন, বসুন—
–শুনলাম থানা থেকে আমার বাড়িতে কেউ আমার খোঁজে গিয়েছিলেন, আমি কলকাতায় ছিলাম না—ডলি দত্ত বললে।
চট্টরাজ চেয়ে ছিলেন ডলি দত্তর দিকে। বয়েস যা-ই হোক দেখতে সাতাশ-আটাশের বেশী বলে মনে হয় না। স্লিম ফিগার, বগল-কাটা বুক-খোলা ব্লাউজ গায়ে, পরনে একটা। ডিপ ব্লু রঙের দামী জর্জেট শাড়ি। গলায় একটা সোনার সরু চেন, দু কানে দুটো হীরার ফুল। হাতে কিছু নেই, ডান হাতে ছোট একটা দামী সোনার ঘড়ি। মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা, শ্যাম্পু করা।