–কি নাম তার?
–ডলি দত্ত, বোধ হয় তার নাম।
–আচ্ছা মালঞ্চ দেবী ধূমপান করতেন?
—কখনো দেখিনি
—হুঁ! আপনি এ বাড়ি থেকে বেরুতে চান মাঝে-মধ্যে-তাই না সুশান্তবাবু? কিরীটী বলল।
-মাঝে-মধ্যে না, আমি একেবারেই চলে যেতে চাই। আপনারা না আটকালে চলে যেতামও, সুশান্ত মল্লিক বলল।
–কিন্তু যাবেন কোথায়?
—হোক একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে থাকবার–
—কেন এই বাড়িটা তো আপনার স্ত্রীরই নামে।
দপ্ করে যেন সুশান্ত মল্লিক জ্বলে উঠল, কি বললেন? স্ত্রী কে আমার স্ত্রী—ঐ বাজারের বেশ্যাটা! হ্যাঁ, বলতে পারেন অবিশ্যি সেই স্ত্রীলোকটারই কাছে মুষ্টিভিক্ষা নিয়ে আজও বেঁচে আছি আমি, কিন্তু আর না। তারপর একটু থেমে ভাঙা গলায় সুশান্ত মল্লিক বলল, চলে যেতাম অনেক আগেই, কিন্তু কেন পারিনি জানেন? যখনই ভেবেছি ওই বোকা মেয়েটার দেহটাকে দশজনে খুবলে খুবলে খাচ্ছে তখনই মনে হয়েছে এই ঘেঁড়াছিড়ি একদিন ওকে শেষ করে দেবে। আর দেখলেন তো, হলও তাই। কিন্তু কি হল, একেবারেই পারলাম না তো ওকে রক্ষা করতে
শেষের দিকে কিরীটীর মনে হল যেন কান্না ঝরে পড়ছিল সুশান্ত মল্লিকের কণ্ঠ থেকে। কিরীটী বলল, সুশান্তবাবু, সেদিন সকালবেলা যখন মালঞ্চর ঘরের দরজা খুলছিল না, আপনি কেন তখন রতনকে বলেছিলেন মালঞ্চ দেবী শেষ হয়ে গিয়েছেন?
-বলেছিলাম নাকি! আমার ঠিক মনে নেই
-হ্যাঁ, আপনি বলেছিলেন। আচ্ছা, আর একটা কথা সুশান্তবাবু, কিরীটী বলল, ঐ দুর্ঘটনার আগে হঠাৎ কেন আপনি এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন?
–বুঝতে পেরেছিলাম এ বাড়িতে আর আমার থাকা হবে না, কারণ মালঞ্চ তা চায়। —
—মালঞ্চ কিছু বলেছিলেন? —
–হ্যাঁ–
—কি বলেছিলেন?
সুশান্ত মল্লিক সেই সন্ধ্যার ঘটনাটা বলে গেল। তারপর বলল, আপনিই বলুন মশাই, তারপরও কি থাকা যায়?
–তবে আবার এখানে ফিরে এলেন কেন?
—ফিরে আসতাম না, কিন্তু হঠাৎ কেন যেন আমার মন বলছিল, তার বড় বিপদ, আর আমার মন যে মিথ্যা বলেনি, সে তো প্রমাণিতই হয়েছে।
—তা বটে! দুটো রাত কোথায় ছিলেন আপনি?
–পথে পথে, আর কোথায় থাকব? আমার আবার জায়গা কোথায়?
—আচ্ছা সুশান্তবাবু, আপনার স্ত্রী হত্যার ব্যাপারে কাউকে আপনি সন্দেহ করেন? কিরীটীই পুনরায় প্রশ্নটা করল।
—না, তবে ঐ ধরনের মেয়েছেলেদের শেষ পরিণাম ঐ রকমই যে হবে অর্থাৎ অপঘাত মৃত্যু, তা আমার জানা ছিল।
—ঠিক আছে সুশান্তবাবু, আপনি বেরুতে পারেন—অবশ্যই যদি আপনি কথা দেন যে পুলিসের অনুমতি ছাড়া এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।
-তাই হবে। আর যাবই বা কোথায়-যতদিন না একটা আস্তানা মেলে মাথা গুজবার মত।
হঠাৎ সুশান্ত বলে ওঠে, ঐ মানদা, ওকে একদম বিশ্বাস করবেন না মশাই, she is a dangerous type.
কিরীটী মৃদু হাসে। সুশান্ত বলে, আপনি হাসছেন স্যার, ঐ ধরনের উয়োম্যানরা can do anything for money.
–তার মানে আপনি কি বলতে চান ওকে টাকা দিয়ে—
—কিছুই আমি বলতে চাই না স্যার, শুধু বলছিলাম ওর ওপর নজর রাখবেন। দুজনে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে উঠতে সুশীল বললেন, লোকটা মনে হচ্ছে একটা বাস্তুঘুঘু–
–সুশান্ত মল্লিকের ওপর নজর রেখেছ তো?
—হ্যাঁ, বিনোদকে বলেছি—
১০. মানদা আর রতন দোতলার বারান্দায়
মানদা আর রতন দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফিস ফিস করে কি সব কথাবার্তা বলছিল নিজেদের মধ্যে। ওদের দেখে চুপ করে গেল।
কিরীটীর ইঙ্গিতে সুশীল মানদাকে বললেন, মানদা, এই ভদ্রলোক তোমাকে কটা প্রশ্ন করতে চান, ঠিক ঠিক জবাব দেবে—
—কেন দেবো না বাবু, সত্যি কথা বলতে মানদা ডরায় না, তেমন বাপে জন্ম দেয়নি মানদাকে।
–রতন, তুমি নীচে যাও, ডাকলে এসো। সুশীল বললেন।
—যে আজ্ঞে। রতন নীচে চলে গেল।
–মানদা, তোমার মা তো নিজেই ড্রাইভ করতেন? কিরীটীর প্রশ্ন।
—হ্যাঁ, মা খুব ভাল গাড়ি চালাতে পারত বাবু।
—প্রায়ই তোমার মা গাড়ি নিয়ে বেরুত, তাই না?
–প্রায় আর বেরুবে কি করে, বাবু আসতেন তো সন্ধ্যার সময়, রাত এগারোটা। পর্যন্ত থাকতেন, তবে যদি কখনো তাড়াতাড়ি চলে যেতেন, মা গাড়ি নিয়ে বেরুত। তাছাড়া বাবু বাইরে-টাইরে গেলে বেরুত।
—তোমার মা কোথায় যেতো জানো?
—কি একটা ক্লাবে যেতো শুনেছি। নাম জানি না।
—কখন ফিরত?
–তা রাত সাড়ে বারোটা, দেড়টার আগে ফিরত না।
–তোমার মা মদ খেতো? —খেতো বৈকি, তবে খেতে দেখিনি।
—যদি দেখনি তবে জানলে কি করে তোমার মা মদ খেতো? কিরীটী শুধালো।
–আজ্ঞে বাবু, তা কি আর জানা যায় না। মাঝে মাঝে ক্লাব থেকে ফিরে এলে আমি যখন দরজা খুলে দিতাম, মার মুখ থেকে ভরভর করে গন্ধ বেরুত। তাছাড়া টলতেও দেখেছি মাকে—
—তোমার মা সিগারেট খেতে?
—হ্যাঁ, তবে বেশী নয়। মাঝে-মধ্যে কখনো-সখনো একটা-আধটা খেতে দেখেছি।
—ডাক্তার সমীর রায়কে তুমি চেনো মানদা?
—এখানে তো প্রায়ই এক ডাক্তারবাবু আসতেন, নাম জানি না, তবে মা তাকে ডাঃ রায় বলে ডাকতেন।
—তোমার বাবু জানতেন যে ঐ ডাক্তারবাবু এখানে আসতেন?
—জানবেন কি করে—বাবু যখন থাকতেন না তখনই তো ডাক্তারবাবু আসতেন।
–আর একজন মারোয়াড়ী–অল্পবয়স্ক ভদ্রলোক?
—হ্যাঁ, আগরওয়ালা বলে একজন আসতেন মাঝে-মধ্যে।
—ডলি দত্তকে জানো? ওই ফিল্ম-অ্যাকট্রেস, ছবি করে?
–হ্যাঁ, সেও তো আসত এখানে। ঐ ডাক্তারবাবুর সঙ্গেই আসত।
—আচ্ছা, যে রাতে তোমার মা খুন হয়, সে রাত্রে তো তোমার বাবু আর দীপ্তেনবাবু দুজনেই এ বাড়িতে এসেছিলেন, তাই না? কিরীটীর প্রশ্ন।