—আমার খোঁজে আপনি আমার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। দীপ্তেন বললেন।
–হ্যাঁ, আপনি জানেন নিশ্চয়ই, মালঞ্চদেবী খুন হয়েছেন—
–জানি। যেদিন আমি পাটনায় যাই, সেদিন পাটনাতেই সংবাদপত্রে newsটা পড়েছিলাম।
—আপনার সঙ্গে মালঞ্চদেবীর ঘনিষ্ঠতা ছিল?
-তা কিছুটা ছিল।
—যে রাত্রে মালঞ্চদেবী নিহত হন সেদিন সন্ধ্যারাত্রে আপনি ঐ মালঞ্চদেবীর হিন্দুস্থান রোডের বাড়িতে গিয়েছিলেন?
–গিয়েছিলাম।
–সেখান থেকে কখন চলে এসেছিলেন?
–আধঘণ্টাটাক পরেই, কারণ আমার ট্রেন ছিল রাত নটা চল্লিশে—
কিরীটী ঐ সময় বললে, কিন্তু মিস্টার ভৌমিক, আপনাকে ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে রতন বা মানদা কেউ দেখেনি–
–না দেখে থাকতে পারে।
আবার কিরীটীর প্রশ্ন : সদর দিয়েই বের হয়ে এসেছিলেন বোধ হয়?
-তা ছাড়া আর কোথা দিয়ে আসব। কিন্তু ব্যাপার কি বলুন তো? আপনাদের কি ধারণা ঐ জঘন্য ব্যাপারের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ আছে?
—মনে হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক মিঃ ভৌমিক? সুশীল চক্রবর্তী বললেন।
How fantastic-তা হঠাৎ ঐ ধরনের একটা absurd কথা আপনাদের মনে হল কেন বলুন তো অফিসার?
কিরীটী বললে, যে স্ত্রীলোক একই সঙ্গে দুজন পুরুষের সঙ্গে প্রেমের লীলাখেলা চালাতে পারে এবং সেখানে যাদের যাতায়াত, তাদের প্রতি ঐ ধরনের সন্দেহ জাগেই যদি–
কিরীটীকে বাধা দিয়ে দীপ্তেন ভৌমিক বললেন, থামুন। একটা কথা ভুলে যাচ্ছেন, সে রাত্রে আমি নটা চল্লিশের ট্রেনে কলকাতা ছেড়ে যাই। আমি কি চলন্ত ট্রেন থেকে উড়ে এসে তাকে হত্যা করে হাওয়ায় উড়তে উড়তে আবার চলন্ত ট্রেনে ফিরে গিয়েছি? সত্যি মশাই, আপনাদের পুলিসের উর্বর মস্তিস্কে সবই বোধ হয় সম্ভব। ঐ সব আবোল-তাবোল কতগুলো প্রশ্ন করার জন্যেই কি আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন?
–Listen দীপ্তেনবাবু, যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ করতে পারছেন, কিরীটী বললে, সে সত্যিই সে রাত্রে আপনি হিন্দুস্থান রোডের বাড়ি থেকে আধঘণ্টার মধ্যে বের হয়ে এসেছিলেন, পুলিসের সন্দেহটা ততক্ষণ আপনার ওপর থেকে যাবে না।
—আমি একজন ভদ্রলোক, আমি বলছি, সেটাই কি যথেষ্ট নয় মশাই?
—না মিঃ ভৌমিক, যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট হত যদি ঐ রাত্রেই আপনার বিশেষ ভাবে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ একজন ঐ ভাবে না নিহত হত।
-মালঞ্চর সঙ্গে আলাপ ছিল ঠিকই কিন্তু সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
-আচ্ছা দীপ্তেনবাবু, কিরীটীর প্রশ্ন, আপনি জানতেন নিশ্চয়ই, যে মালঞ্চদেবী, অনেকদিন ধরে সুরজিৎ ঘোষালের রক্ষিতা হিসাবে ছিল—
—জানব না কেন? জানতাম।
—সে ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে মালঞ্চর ঘনিষ্ঠতাটা সুরজিৎ ঘোষাল যে ভাল চোখে দেখতে পারেন না সেটা তো স্বাভাবিক
-আমি অতশত ভাবিনি মশাই, তাছাড়া ভাববার প্রয়োজনও বোধ করিনি।
–ভাবাটা বোধ হয় উচিত ছিল, যাক সে কথা। আপনি ভাল করে ভেবে বলুন, কখন। কোন্ পথ দিয়ে সে রাতে আপনি সেই বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন এবং কিসে করে ফিরেছিলেন?
—আমি ফিরেছিলাম ট্যাক্সিতে—
–কেন, আপনার তো গাড়ি আছে
—গাড়ি আমি আগের দিন গ্যারাজে দিয়েছিলাম repair-এর জন্যে, আর আগেই বলেছি, আমি সদর দিয়েই বের হয়ে এসেছিলাম।
—দীপ্তেনবাবু, আপনি কি মালঞ্চদেবীকে একটা মুক্তোর হার দিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ।
–কত দাম সেটার? কিরীটী জেরা করতে থাকে।
—হাজার তিনেক-
-ঐ রকম দামী জিনিস আরো দিয়েছেন কি তাকে?
–দিয়েছি অনেক কিছু, কিন্তু অত দামী জিনিস আগে দিইনি।
—তা হঠাৎ অত দামী হার, অন্য একজনের রক্ষিতাকে দিতে গেলেন কেন?
–খুশি হয়েছিল দিয়েছি। আর কিছু আপনাদের জিজ্ঞাস্য আছে?
–আচ্ছা, আপনার নাম তো দীপ্তেন ভৌমিক, আর কোন নাম নেই আপনার?
—মানে?
–মানে অনেকের দুটো নাম থাকে, যেমন ডাকনাম, পোশাকী নাম, আলাদা আলাদা–
—আছে। আমার ডাকনাম সুনু, মা বাবা আমাকে সুনু বলে ডাকতেন, আর দাদাকে মনু বলে ডাকতেন।
–আপনার দাদা বেঁচে আছেন?
–হ্যাঁ, ইংলন্ডে সেটেল্ড—
–আপনি নিশ্চয়ই রুমাল ব্যবহার করেন?
–নিশ্চয় করি। আর কিছু জিজ্ঞাস্য আছে আপনাদের? একটু যেন বিরক্তির সঙ্গেই কথাটা উচ্চারণ করলেন দীপ্তেন ভৌমিক।
-না, আপনি আপাতত যেতে পারেন মিঃ ভৌমিক। সুশীল চক্রবর্তী কিরীটীর চোখের ইশারা পেয়ে ভৌমিককে বললেন।
–ধন্যবাদ। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালেন দীপ্তেন, তারপর ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন একটু যেন দ্রুত পদেই।
ভদ্রলোক থানা থেকে বের হয়ে যেতে সুশীল চক্রবর্তী বললেন, আমি দীপ্তেন ভৌমিকের ওপর constant watch রাখব ভাবছি দাদা
–ওয়াচ রাখতে হলে শুধু দীপ্তেন ভৌমিক কেন, সে তালিকা থেকে সুশান্ত মল্লিকও বাদ যাবেন না। কিন্তু আমি কি বলছি জানো ভায়া—আজকের সমাজের মানুষ এ কি এক সর্বনাশা পথে ছুটে চলেছে। না আছে কোন সংযম—কোন যুক্তি—কেবল to achieve, এবং মজা হচ্ছে, কি তারা চায়, কি পেলে তারা সুখী-সন্তুষ্ট, সেটা ওদের নিজেদের কাছেও স্পষ্ট নয়। ঐ মালঞ্চ দেবীর কথাই ভাবো না, সুরজিৎ ঘোষালকে নিয়ে সে সন্তুষ্ট হতে পারেনি, দীপ্তেন ভৌমিককেও টেনেছিল—যাকগে, আজ উঠি। হ্যাঁ, ভাল কথা, কাল একবার তোমাদের অকুস্থলটা ঘুরে এলে মন্দ হত না।
—বেশ তো, কখন যাবেন বলুন, আমি আপনাকে তুলে নেবখন। বাড়িটা তো এখন পুলিস পাহারাতেই আছে।
–রতন আর মানদা?
—তারাও আছে।
—আর কেউ নেই?
—আছে বৈকি, মালঞ্চর স্বামী সুশান্ত মল্লিকও তো ঐ বাড়িতেই আছে এখনো।