সুব্রতকে না দেখলেও তার নামের সঙ্গে মৃণালের যথেষ্ট পরিচয় ছিল। সে হাত তুলে সুব্রতকে নমস্কার জানায়।
অতঃপর মিঃ চক্রবর্তী বলেন, কালকের সেই অ্যাক্সিডেন্ট কেসটা—মহেন্দ্র নাথের ব্যাপারটা তোমার কাছ থেকে উনি জানতে চান ডিটেলস-এ।
সুব্রত ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছিল। বলে, চলুন মিঃ সেন, আপনার অফিস ঘরে যাওয়া যাক।
বেশ তো চলুন।
দুজনে এসে মৃণালের অফিস ঘরে বসে।
আপনি কেসটা সম্পর্কে ইন্টারেস্টেড় নাকি সুব্রতবাবু? মৃণাল প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ।
কি ব্যাপার বলুন তো? সংবাদপত্রে news-টা পড়েই কি—
তা ঠিক নয়।
তবে?
আপনি বোধ হয় জানেন, মৃত ঐ মিঃ রায়ের একটি ছোট ভাই আছে!
আপনি সুরেন্দ্রনাথের কথা বলছেন তো?
হ্যাঁ।
তাকে আপনি চেনেন?
হ্যাঁ—তার সঙ্গে আমার অনেক দিন থেকেই পরিচয়। সে-ই আমায় কাল রাত্রে টেলিফোন করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে সব কথা বলে।
কি বলেছেন তিনি?
তার ধারণা ব্যাপারটা ঠিক একটা অ্যাক্সিডেন্ট নয়, ওর মধ্যে সুনিশ্চিত একটা কোন ফাউল প্লে আছে।
ফাউল প্লে!
হ্যাঁ—সে বলতে চায় এ আত্মহত্যাও নয়—দুর্ঘটনাও নয়—তাকে অর্থাৎ তার দাদাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে।
কেন-হঠাৎ তার একথা মনে হল কেন? আপনাকে তিনি বলেছেন কিছু সে সম্পর্কে?
সে বলতে চায়—তার মত মানুষ আত্মহত্যা করতে পারেন না কিছুতেই।
কেন?
তাছাড়া সে বলতে চায় আত্মহত্যা হঠাৎ করবার মতন তার কোন কারণ ছিল না।
কারণ ছিল না তিনি বুঝলেন কি করে?
সুব্রত হেসে বলে, তা তো জানি না। তবে সে বলতে চায়—তার দাদার কোন অর্থের অভাব বা দুশ্চিন্তা ছিল না। বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান। খুব ভাল করে না ভেবে কখনও তিনি কোন কাজ নাকি করতেন না। অবিশ্যি ছেলেদের ব্যাপারে তার মনে একটা অশান্তি ছিল, তবে সে অশান্তি কোনদিনই তাকে তেমন বিচলিত করতে পারেনি।
হুঁ–তা ব্যাপারটা অ্যাক্সিডেন্টও নয় যে, তাই বা তিনি বুঝলেন কি করে?
যে লোক তার মতে অত্যন্ত সাবধানী, হঠাৎ ঝোঁকের মাথায় কিছু কখনও করেননি, অমন একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাবে আদৌ নাকি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তাহলে তার ধারণাইটস এ কেস অফ মার্ডার—হোমিসাইড।
সুব্রত পুনরায় মৃদু হেসে বলে, কতকটা তাই সে বলতে চায়।
সুব্রতবাবু, কেন এখনও ঠিক বলতে পারছি না—আমারও কিন্তু ঠিক তাই ধারণা।
মানে?
আমারও কেন যেন মনে হচ্ছে ঐ ব্যাপারটার মধ্যে কোন ফাউল প্লে আছে।
আপনারও মনে হয় ব্যাপারটার মধ্যে ফাউল প্লে আছে মিঃ সেন?
হ্যাঁ।
কেন বলুন তো?
মৃণাল সেন সংক্ষেপে তখন গতকালের ব্যাপারটা পুনরাবৃত্তি করে।
সব শোনবার পর সুব্রত বলে, পোস্ট মর্টে তো আজ হবে?
হ্যাঁ—মোটামুটি একটা রিপোর্ট হয়ত আজই পেয়ে যাব।
তারপর একটু থেমে মৃণাল সেন ডাকে, সুব্রতবাবু?
উঁ।
সব তো শুনলেন, আপনার কি মনে হচ্ছে?
ব্যাপারটা সহজ বা স্বাভাবিক নয়, এইটুকু বলতে পারি আপাতত আপনাকে।
অ্যাক্সিডেন্ট বা আত্মহত্যা নয়?
তাই তো মনে হয়।
কেন?
আপনি বলেছেন মৃতের মুখটা এমন ক্ষতবিক্ষত ছিল যে চেনার উপায় ছিলনা।
হ্যাঁ।
ট্রেনের চাকার তলায় আত্মহত্যা করলে বা অ্যাক্সিডেন্ট হলে অমন করে মুখটা মিউটিলেটেড হবে কেন?
এজাক্টলি-আমারও তাই মত। কিন্তু আমি ঠিক এখনও বুঝতে পারছি না সুব্রতবাবু, অনুসন্ধানের ব্যাপারটা কি ভাবে কোথা থেকে শুরু করব–
মোটামুটি একটা পোস্টমর্ট রিপোর্ট তো আজই আপনি পাবেন! হয়ত সেই রিপোর্টেই কিছু পাওয়া যাবে।
আপনি তাই মনে করেন?
দেখুন না, যেতেও পারে। তাহলে এখন আমি উঠি মিঃ সেন, রিপোর্টটা পেলেই কিন্তু আমাকে জানাবেন।
নিশ্চয়ই।
০৬-১০. সেই রাত্রেই মৃণাল সেন
০৬.
সেই রাত্রেই মৃণাল সেন সুব্রতর গৃহে এসে হাজির হল।
কি ব্যাপার? মনে হচ্ছে আপনি যেন একটু উত্তেজিত? সুব্রত বলে।
আপনার কথাই ঠিক সুব্রতবাবু। মৃণাল জবাবে বলে, মৃত ব্যক্তির ব্রেনের মধ্যে রিভলভারের গুলি পাওয়া গিয়েছে একটা।
তাহলে তো আপনার অনুমানই ঠিক হল। অ্যাক্সিডেন্ট বা সুইসাইড নয়। ডেফিনিটলি এ কেস অফ মার্ডার-হোমিসাইড!
সুব্রত ধীরে ধীরে কথাগুলো বললে।
হ্যাঁ। কিন্তু—
চলুন কাল সকালেই একবার আগরপাড়ায় দেশবন্ধু কলোনীতে যাওয়া যাক।
দেশবন্ধু কলোনীতে!
হ্যাঁ–মিঃ গাঙ্গুলীর সঙ্গে একবার দেখা করা দরকার, মিঃ রায় যখন তার চিঠি পেয়ে সেখানে গিয়েই নিহত হয়েছেন।
বেশ—তাহলে কাল সকালেই আমি আসব।
মৃণাল সে রাত্রের মত বিদায় নেয়।
পরের দিন বেলা প্রায় নটা নাগাদ সুব্রতসহ মৃণাল সেন আগরপাড়া থানায় গিয়ে জলধরবাবুকে সঙ্গে নিয়ে দেশবন্ধু কলোনীর দিকে রওনা হল। অবশ্য সুব্রতর গাড়িতেই।
নতুন কলোনী। সবে গড়ার মুখে। এখানে-ওখানে বিক্ষিপ্ত ভাবে খান পনেরো-ষোল বাড়ি উঠেছে। কাঁচা রাস্তা।
কলোনীর একেবারে শেষপ্রান্তে খোলা মাঠের একধারে ছোট একতলা একটা সাদারঙের বাড়ি, সলিটারি কর্নার। সামনে ছোট একটা বাগান। লোহার গেট। গেটের একপাশে লেখা সলিটারি কর্নার, অন্য পাশে এস গাঙ্গুলী লেখা নেম প্লেট।
লোকটি সাহেবী-ভাবাপন্ন বোঝা যায়।
গেটের পরেই লাল সুরকীর রাস্তা। আর দুপাশে মেহেদীর কেয়ারী। শীতের রৌদ্রে ঘন সবুজ দেখায়।
গেটের বাইরেই গাড়ি রেখে সুব্রত, মৃণান ও জলধর চাটুজ্যে ভিতরে গিয়ে প্রবেশ করলেন।
সামনেই একটা বারান্দা। কয়েকটি বেতের চেয়ার ও টেবিল পাতা। পর পর ঘরগুলো দেখা যায়। তিনটে দরজা। দুটো বন্ধ, অন্যটায় একটা ঘন নীল রঙের পর্দা ঝুলছে।