হ্যাঁ, যখন আমার কথায় সম্মত হলে না বুঝলাম সুব্রত তোমার মাথাটা রীতিমতই বিগড়ে দিয়েছে-সোজা আঙুলে ঘি গলবে না, তাই অন্য উপায়ে তোমাকে এখানে ধরে নিয়ে আসতে বাধ্য হলাম।
তাহলে এসব আপনারই কীর্তি!
উপায় কি?
কিন্তু জানতে পারি কি, এভাবে কৌশলে আমাকে ধরে নিয়ে এসে কি লাভ হবে আপনার?
লাভ? তা আছে বৈকি। নচেৎ এত ঝামেলা পোহাব কেন?
শুনুন নীরেনবাবু, ভাল চান তো আমার যাবার ব্যবস্থা করুন!
যাবে বৈকি। তবে অন্য কোথাও নয়—আমারই সঙ্গে আমারই ঘরে।
আপনার ঘরে!
হ্যাঁ। শোন, আমার একটা প্রস্তাব আছে—
প্রস্তাব?
হ্যাঁ। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
বিয়ে!
হ্যাঁ।
কুন্তলা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
ওদিকে যাচ্ছ কোথায়? নীরেন বলে, দরজা বন্ধ!
দরজা খুলে দিন নীরেনবাবু!
দেখ কুন্তলা, আমি তোমার সঙ্গে কোনরকম খারাপ ব্যবহার করতে চাই না। ধর্মত আইনসঙ্গতভাবে তোমাকে বিয়ে করতেই চাইছি—আর তাতে যদি তুমি না রাজী হও, তাহলে—
তাহলে? কুন্তলা গ্রীবা বেঁকিয়ে তাকাল নীরেনের দিকে।
তাহলে আজ রাত্রে জোর করে তোমাকে—
ইউ স্কাউন্ডেল!
স্কাউন্ড্রেলই বল আর যাই বল সুন্দরী, সুব্রতর আশা ছাড়! যা বলছি এখনও শোন–ট্রাই টু রিজন, রাশন্যাল–
আবার চাপা গর্জন করে ওঠে ঘৃণায় কুন্তলা, ইতর নীচ!
তার সর্বাঙ্গ তখন থরথর করে আক্রোশে উত্তেজনায় কাঁপছে।
শোন, আমার প্রস্তাবে যদি রাজী না হও তো জেনো আমি যা একটু আগে বলেছি তাও করব না। কেবল তোমার নারীত্বের—সতীত্বের দম্ভকে চূর্ণ করে ছেড়া জুতোর মতই রাস্তায় ফেলে দেবো। আই শ্যাল থ্রো ইউ ইন দি ডাস্ট!
নীরেনের কথা শেষ হল না, হঠাৎ কে যেন ঘরের দরজাটায় বার-দুই ধাক্কা দিল।
কে-কে এল দেখ তো ভামিনী! ঠাকুরমশাই বোধ হয়!
ভামিনী এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই হুঁড়মুড় করে প্রথমে কিরীটী, তার পশ্চাতে সুব্রত, মৃণাল সেন ও দুজন কনেস্টবল ঘরে এসে ঢুকে পড়ে।
মৃণাল সেনের হাতে উদ্যত পিস্তল, ডাঃ সান্যাল, হ্যান্ডস আপ! উই আর আন্ডার অ্যারেস্ট!
কে? ও আই সি-ইন্সপেক্টর! শান্ত গলায় নীরেন সান্যাল বলে, কি চান? হোয়াই ইউ হ্যাভ কাম হিয়ার?
তেওয়ারী হাতকড়া লাগাও!
দাঁড়ান, ইনসপেক্টর। আমি জানতে চাই এসবের অর্থ কি?
এখনও অর্থটা তাহলে পরিষ্কার হচ্ছে না। কিন্তু অর্থটা পরিষ্কার করতে হলে আপনার অপরাধের ফিরিস্তি দিতে হয়। সেটাও তো একটা নয়—আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও তা সম্ভব নয়।
কুন্তলা ও ঘটনার আকস্মিকতায় হঠাৎ যেন থমকে গিয়েছিল। হঠাৎ সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সুব্রতকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সুব্রত তাড়াতাড়ি কুন্তলাকে বুকে জড়িয়ে ধরে।
কিরীটী বলে, ওকে পাশের ঘরে নিয়ে হ্যাঁ, সুব্রত।
মৃণাল কিন্তু ডাঃ সান্যালের দিকেই স্থির দৃষ্টিতে তখনও তাকিয়ে আছে।
তাহলে শেষ থেকেই শুরু করি—তোমার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, কুন্তলা দেবীকে কিডন্যাপ–
কিডন্যাপ। কুন্তলাকে? কোন্ দুঃখে? সে নিজেই এসেছে।
ও, উনি নিজেই এসেছেন!
হ্যাঁ,। জিজ্ঞেস করলেই ওকে জানতে পারবেন সত্য-মিথ্যা।
নীরেনবাবু, আই মাস্ট প্রেজ ইওর নার্ভ! কিরীটী এবারে বলে ওঠে, কিন্তু ওতে করে শেষরক্ষা হবে না। জেল নয়—ফাঁসির দড়ি আপনাকে গলায় নিতেই হবে জানবেন।
তাই বুঝি?
হ্যাঁ। দু-দুটো হত্যা ও একটা কিডন্যাপ—
মশায় কি নেশা করেছেন?
নেশাই বটে, তবে মারাত্মক নেশা। মিঃ সেন, অ্যারেস্ট করুন।
মৃণাল সেন বলে, তেওয়ারী!
কিন্তু তেওয়ারী এগোবার আগেই আচমকা নীরেন সান্যাল পকেট থেকে কি একটা বের করে চট করে মুখে পুরে দেয় এবং ব্যাপারটা কেউ কিছু বোঝবার আগেই নীরেনের দেহটা সশব্দে মেঝেতে পড়ে যায়।
বার দুই আক্ষেপ-তারপরই সব স্থির।
ঘটনার আকস্মিকতায় ঘরের মধ্যে সবাই যেন বিমূঢ় হতবাক।
কিরীটী বলে, হ্যাঁ, মিঃ সেন। হি ইজ দি ম্যান—যে মহেন্দ্রনাথ ও মনীন্দ্র গাঙ্গুলীকে হত্যা করেছে!
২১-২২. কিরীটীর বাড়ি
২১.
কিরীটীর বাড়ি।
কিরীটী বলছিল, আপনারা হয়ত ভাবতেও পারেননি ইন্সপেক্টার যে ডাঃ সান্যালই ঐ দুজনের হত্যাকারী!–
না মৃণাল সেন বলে, নেভার ড্রেমট অফ ইট!
মনে আছে সুব্রত, যেদিন প্রথম তুই আমার কাছে কেসটা সম্পর্কে বলিস, আমি সব শুনে তোকে কয়েকটা কথা বলেছিলাম! এবং তার মধ্যে বলেছিলাম একটা কথা বিশেষ করে যা তা হচ্ছে ডাঃ চৌধুরীর ঐ দুই বন্ধুকে লেখা দুটো কাগজ-যার মধ্যে পর পর কতকগুলো লেখা রয়েছে এবং যে দুটো আমার কাছে রেখে যেতে বলেছিলাম!
হ্যাঁ, সে তো তোর কাছেই আছে। সুব্রত বলে।
হ্যাঁ, সেই কাগজই প্রথম আমাকে হত্যার মোটিভের ইঙ্গিত দেয়। কথাটা বলতে বলতে কিরীটী কাগজের টুকরো দুটো বের করে সামনের টেবিলের উপরে পাশাপাশি রাখল।
এই দেখ!
একটা কাগজের মাথায় লেখা ২৬ ইংলিশে, অন্যটার মাথায় লেখা অ্যালফাবেটসে অর্থাৎ ইংলিশ অ্যালফাবেটস, ইংরাজী বর্ণমালা—যার মধ্যে ২৬টি কথা আছে এ বি সি ডি করে। এখন ঐ অনুযায়ী ইংরাজী বর্ণমালা বসিয়ে দাও। তাহলে দেখ দাঁড়াচ্ছে কি–শ্রীরামপুর পর্ণকুটির গ্রাউন্ড ফ্লোর-সাউথ রুম। অর্থাৎ শ্রীরামপুরের পর্ণকুটিরের একতলার দক্ষিণের ঘর।
আশ্চর্য! মৃণাল সেন বলে, একবারও এসব মনে হয়নি তো আমাদের সুব্রতবাবু।