তবে কি মিঃ গাঙ্গুলী মরার আগে ঐ অঙ্কগুলো থেকে কোন কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছিলেন?
রহস্য যেন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
আবার মনে হয় সুব্রতর, মৃণাল সেন যা বলেছে তাও তো হতে পারে, হয়ত মিঃ গাঙ্গুলী আত্মহত্যাই করেছেন। কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হয়, আত্মহত্যাই বা হঠাৎ তিনি করতে যাবেন কেন? তিনি তো মিঃ রায়ের হত্যাকারী নন? তবে?
আরও কতকগুলো প্রশ্ন ঐ সঙ্গে মনের মধ্যে জাগে। বইটা মাটিতে কেন? পোড়া কাগজগুলো কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? ঘরের দরজাটা ও সদর দরজাটা খোলা ছিল কেন? ঘরটা অন্ধকার ছিল কেন?
আরও কিছুক্ষণ পরে মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্যে পাঠাবার ব্যবস্থা করে এবং সলিটারি কর্নারে পুলিস প্রহরা রেখে মৃণাল ও সুব্রত ফিরে এল।
মিঃ গাঙ্গুলীর ভৃত্যকে আরেস্ট করা হল।
.
গৃহে ফিরে প্রথমেই সুব্রত কিরীটীকে ফোন করল।
কি খবর? কিরীটী শুধায়।
সলিটারি কর্নারের ব্যাপারটা সুব্রত বললে।
কি মনে হয় তোর কিরীটী, আত্মহত্যা?
না, আত্মহত্যা নয়।
আমারও তাই মনে হয়েছে। আর একটা মার্ডার!
তোর অনুমান মিথ্যা নয় বলেই মনে হয় সুব্রত।
.
পরের দিনই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেল।
পুলিস সার্জেন ডাঃ মজুমদার রিপোর্ট দিয়েছেন, মৃণাল সেন রিপোর্টটা নিয়ে এসেছেন। মৃত গাঙ্গুলীর ব্রেনের মধ্যে বুলেট পাওয়া গিয়েছে।
বুলেট! সুব্রত বলে।
হ্যাঁ, দেখুন। পকেট থেকে একটা বুলেট বার করে দেয় মৃণাল সেন।
সুব্রত দেখল একই ধরনের বুলেট।
মিঃ সেন! সুব্রত ডাকে।
বলুন?
মৃণাল সেন তাকাল সুব্রতর মুখের দিকে।
মৃতদেহের হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যে রিভলবারটা পাওয়া গিয়েছিল সেটা কোথায়?
লালবাজারে আছে।
চলুন, সেটা নিয়ে একবার মেজর সিনহার ওখানে যাওয়া যাক।
বেশ তো, চলুন।
দুজনে উঠে পড়ে। সোজা দুজনে লালবাজারে যায়।
সেখান থেকে রিভলবারটা নিয়ে মেজর সিনহার গৃহে যায়।
.
মেজর ওদের দেখে বলেন, কি ব্যাপার? সুব্রতবাবু, উনি—
ইন্সপেক্টার মৃণাল সেন। আপনাকে আবার একটু বিরক্ত করতে এলাম।
কি ব্যাপার!
সেই বুলেটটার কথা আপনার মনে আছে, মেজর?
আছে বৈকি! রিভলবারটা ট্রেস করতে বলেছিলাম, পাওয়া গেল?
হ্যাঁ।
পাওয়া গেছে?
সুব্রত তখন রিভলবার ও দ্বিতীয় বুলেটটা বের করে মেজরের হাতে দিয়ে বলে দেখুন তো মেজর এ দুটো পরীক্ষা করে!
মেজর সিনহা প্রথমে বুলেটটা পরীক্ষা করলেন-তারপর রিভলবারটা।
হুঁ এ তো দেখছি ৩৮ ওয়েবলি রিভলবার। আর এখন বুঝতে পারছি—
কি?
কেন-কেন-হোয়াই–বুলেটটার গায়ে দাগ পড়েছিল!
কেন? রিভলবারের ব্যারেলের ভিতরটা কোন কারণে ড্যামেজড হয়েছে।
ড্যামেজড।
হ্যাঁ, মনে হয় অ্যাসিড বা ঐ জাতীয় কোন কিছুর অ্যাকশনে ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে, তাইতেই এই রিভলবার থেকে নিক্ষিপ্ত বুলেটের গায়ে অমন খাঁজ কেটে গিয়েছে।
তার মানে, মেজর আপনি বলতে চান—দিস ইজ দি রিভলবার
হ্যাঁ, সুব্রতবাবু। আমার স্থির ধারণা, এই রিভলভার থেকেই ঐ দুটো বুলেট ছোড়া হয়েছে।
ধন্যবাদ মেজর। আমি নিশ্চিন্ত হলাম।
সুব্রত বললে। তারপর মৃণাল সেনের মুখের দিকে তাকিয়ে বললে, চলুন মিঃ সেন, ওঠা যাক। মে
জরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুজনে বাইরে এসে গাড়িতে উঠে বসে।
মিঃ সেন! সুব্রত ডাকে।
বলুন।
আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।
কি?
আজই বেরিলিতে ভবেন্দ্র রায়ের ইউনিটে একটা জরুরি তার পাঠান। ঐ রিভলবারের নম্বরটা দিয়ে ৫৬৩৭৭৯ সুবেদার মেজর ভবেন্দ্র রায়ের যে রিভলবারটা হারিয়েছে সেটারও ঐ নম্বর কিনা এবং ভবেন্দ্ৰ ইউনিটে ফিরে গিয়েছে কিনা খবর নিন।
নিশ্চয়ই-আজই পাঠাব।
দুদিনের মধ্যেই তারের জবাব এল।
যে রিভলবারটা ভবেন্দ্রর কাছ থেকে খোয়া গিয়েছে তার নম্বর ঐ একই অর্থাৎ ৫৬৩৭৭৯ এবং ওয়েবলি ৩৮ রিভলবার।
আর জানালেন ভবেন্দ্ৰ ইউনিটে ফিরে গিয়েছে গতকালই। সে এখন ওপন অ্যারেস্ট আছে। কোর্ট অফ এনকোয়ারি শীঘ্রই বসবে।
মিঃ সেন প্রশ্ন করে, তবে কি ঐ ভবেন্দ্ৰই, সুব্রতবাবু–
কি?
তার বাপকে হত্যা করেছে?
না। সুব্রত মৃদু হাসল।
না—তবে কে?
দু-একদিনের মধ্যেই আশা করি জানতে পারবেন।
আমি তাহলে এবারে উঠি।
আসুন।
মৃণাল সেন অতঃপর বিদায় নিল।
.
সুব্রত বলেছিল, হত্যাকারী কে দু-একদিনের মধ্যেই জানা যাবে কিন্তু তার প্রয়োজন হল না।
ঐদিনই রাত্রে ঘটনাটা ঘটল। সুব্রত একাকী তার ঘরের মধ্যে বসে একটা রহস্য উপন্যাস পড়ছিল।
সন্ধ্যার সময় অনেকক্ষণ ধরে কিরীটীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। অনেক আলোচনা হয়েছে।
সবশেষে কিরীটী বলেছে, অঙ্কগুলোর রহস্য বোধ হয় সভ করতে পেরেছি।
সুব্রত শুধিয়েছিল, কি রহস্য?
কিরীটী জবাব দিয়েছে, আর দুটো দিন ভাবতে চাই। তারপর—
সুব্রতবাবু!
কে? সুব্রত চমকে সামনের দিকে তাকায়।
এ কি, আপনি! এত রাত্রে, কি ব্যাপার। আসুন আসুন, দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে কেন, ভিতরে আসুন।
সুব্রত সাদর আহ্বান জানায়।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কুন্তলা। কখন সে এসে দাঁড়িয়েছে সুব্রত টেরই পায়নি।
গায়ে একটা দামী কাশ্মীরী শাল। শালটা মাথায় ঘোমটার মত করে তুলে দেওয়া। কুন্তলা এসে ঘরে ঢুকল।
বসুন।
কুন্তলা সামনের খালি চেয়ারটার উপরে বসে।
ছোড়দাকে আপনি বাঁচান সুব্রতবাবু—কথাটা বলতে বলতে দুহাতের মধ্যে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলে কুন্তলা।
.
১৮.
কুন্তলা কাঁদছে। সুব্রত ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেকে যেন অত্যন্ত বিব্রত বোধ করে। কি বলবে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।