ভবেন্দ্র বলে, ফেড আপ-আই অ্যাম ফেড আপ—এভাবে কুকুরের মত পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে আর পারছি না।
সুব্রত হাসল।
না ভবেনবাবু, আপনি একটু ভুল করেছেন—পুলিশ আপনাকে একজন ডেজার্টার হিসেবে খুঁজে বেড়াচ্ছে ঠিকই এবং মিলিটারিও খুজছে, কিন্তু আমি–
সুব্রতকে বাধা দিয়ে ভবেন্দ্র বলে, জানি, জানি—আপনি পুলিসের গোয়েন্দা!
না, তাও আমি নই। পুলিসের বা মিলিটারির লোক আমি নই—আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি, আপনাকে আমি সম্পূর্ণ অন্য কারণে কয়েকটা প্রশ্ন করবার জন্যেই এসেছি।
প্রশ্ন?
হ্যাঁ, গত ২৩শে ডিসেম্বর সকাল আটটা থেকে রাত্রি এগারোটা পর্যন্ত কোথায় ছিলেন আপনি?
কোথায় ছিলাম? ভবেন্দ্ৰ তাকাল সুব্রতর মুখের দিকে।
হ্যাঁ, বলুন, কোথায় ছিলেন আপনি?
মানে আমি–
মিঃ রায়, আমি সেই রাত্রের কথাই বলছি যে রাত্রে আগড়পাড়ায় আপনার বাবা রিভলভারের গুলিতে নিহত হন।
হোয়াট? বাবা রিভলবারের গুলিতে নিহত হয়েছেন?
একটা যেন আর্ত চিৎকারের সঙ্গে প্রশ্নটা বের হয়ে আসে ভবেন্দ্রর কণ্ঠ থেকে।
হ্যাঁ, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তাই বলছে-বুলেটও তার ব্রেন ম্যাটারের মধ্যে ইমপ্যাকটেড় হয়ে ছিল-পাওয়া গিয়েছে এবং এক্সপার্টের মত হচ্ছে—গুলিটা ছোড়া হয়েছিল একটা ৩৮ আর্মি রিভলভার থেকে।
নো নো-ইউ মিন–
হ্যাঁ, আপনি একজন মিলিটারির লোক এবং সেই কারণেই ঐ ধরনের একটা রিভলভার আপনার কাছে থাকা সম্ভব বলেই প্রশ্নটা করছি। বলুন-দুর্ঘটনার দিন আপনি সকাল আটটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত কোথায় ছিলেন?
সুব্রতবাবু। কুন্তলা যেন কি বলবার চেষ্টা করে।
তাকে বাধা দিয়ে সুব্রত বলে, ওঁকে বলতে দিন মিস রায়, কোথায় উনি ঐ সময়টা ছিলেন সেদিন!
আমার-আমার এক বন্ধুর বাড়িতে।
বন্ধুর বাড়িতে! কোথায়?
সুব্রত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ভবেন্দ্রর মুখের দিকে।
দমদম সিঁথিতে—
সকাল আটটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত?
না, বিকেলবেলা শ্যামবাজারে এসেছিলাম সন্ধ্যার শোতে সিনেমা দেখতে একবার।
কেউ এর সাক্ষী আছে?
সাক্ষী? না-সাক্ষী আবার থাকবে কি!
আপনার সেদিনকার সন্ধ্যার শোতে সিনেমা দেখার ব্যাপারে কেউ সাক্ষী থাকলে হয়ত ভাল হত মিঃ রায়! আচ্ছা মিস রায়, আমি চলি—অসময়ে এভাবে আপনাদের এসে বিরক্ত করবার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।
কিন্তু ছোড়দাকুন্তলা তার কথাটা শেষ করতে পারে না।
সুব্রত বলে, উনি যেতে পারেন—আজকের মত ওঁকে কেউ আটকাবে না। তবে ওঁর প্রতি আমার একটা বিশেষ অনুরোধ, উনি যত শীঘ্র পারেন বেরিলিতে ওঁর ইউনিটে ফিরে যান। আচ্ছা চলি-নমস্কার।
সুব্রত ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
১৬-২০. চায়ের কাপ হাতে করে সুব্রত
১৬.
পরেরদিন সকালে।
চায়ের কাপ হাতে করে সুব্রত গতরাত্রের কথাটাই ভাবছিল।
একটা নির্দিষ্ট পথ ধরে সে এ কদিন এগুচ্ছিল, কিন্তু কাল রাত্রে অতর্কিতে ভবেন্দ্রর সঙ্গে নাটকীয়ভাবে সাক্ষাৎ হয়ে যাবার পর সুব্রতর যেন কেন মনে হচ্ছে মহেন্দ্রনাথের হত্যার ব্যাপারটার মীমাংসায় পৌঁছবার জন্য ঘটনাগুলোকে যেভাবে মনে মনে সে এ কদিন ধরে সাজিয়ে নিচ্ছিল হঠাৎ যেন সে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।
মনে হচ্ছে, আবার বুঝি প্রথম থেকে ভাবতে হবে—নতুন করে শুরু করতে হবে।
একটা সিগারেট ধরালো সুব্রত।
কিন্তু কোথা থেকে কি ভাবে শুরু করা যায়?
হঠাৎ মনে পড়ল কিরীটীকে।
কিরীটীর পরামর্শ নিলে কেমন হয়? কথাটা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুব্রত উঠে পড়ল। গায়ে জামা দিয়ে বের হয়ে পড়ল।
কিরীটীর ওখানে গিয়ে যখন পৌঁছল, কিরীটী তখন সবে প্রথম কাপ চা শেষ করে দ্বিতীয় কাপটা হাতে তুলেছে।
সামনে বসে কৃষ্ণা।
দিন দুই হল কিরীটীর ইনফ্লুয়েঞ্জা মত হয়েছে, কালও জ্বর ছিল, আর জ্বর নেই।
সুব্রতকে ঘরে ঢুকতে দেখ কিরীটী তার মুখের দিকে তাকাল।
সুব্রত এসে একটা সোফায় বসল নিঃশব্দে।
কৃষ্ণা জিজ্ঞাসা করে, চা দেবো?
দাও। মৃদুকণ্ঠে সুব্রত বলে।
কি রে, একটু যেন চিন্তিত মনে হচ্ছে! কিরীটী এইবার প্রশ্ন করে সুব্রতকে।
কৃষ্ণা চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে, কদিন আসনি যে?
সে-কথার জবাব না দিয়ে সুব্রত মৃদুকণ্ঠে ডাকে কিরীটী—
উঁ!
একটা মার্ডার কেস নিয়ে গত কদিন ধরে হিমসিম খেয়ে আছি ভাই।
গত দশদিনের মধ্যে কই মনে তো পড়ে না, সংবাদপত্রে একটিমাত্র বিশেষ মৃত্যুর ব্যাপার ছাড়া আর কোন দুর্ঘটনার কথা পড়েছি! কিরীটী বলে।
না না রে, দুর্ঘটনার নয়-রীতিমত একটা মার্ডার কেস—
মার্ডার কেস?
হ্যাঁ।
কবে ঘটল?
গত ২৩ শে ডিসেম্বর শনিবার রাত্রে
তুই কি সেই আগড়পাড়ার রেল স্টেশনের কাছে কে একজন ধনী বিজনেসম্যান–
হ্যাঁ, আমি মহেন্দ্রনাথ রায়ের হত্যার কথাই বলছি।
কিরীটী চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে, আমিও সংবাদপত্রে পড়েছি। পড়ে মনে হচ্ছিল সামথিং মিস্টিরিয়াস-তারপর শুনলাম আই জি-র কাছে ময়নাতদন্তে মৃতের মাথার মধ্যে নাকি বুলেট পাওয়া গিয়েছে!
হ্যাঁ, সমস্ত ব্যাপারটা শুনলে হয়ত তুই বুঝতে পারবি-হাউ ব্রট্যালি হি ওয়াজ মার্ডার্ড। মনে হচ্ছে অর্থের জন্যই লোকটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
সুব্রত একটানা কথাগুলো বলে যায়।
তোর ধারণা তাহলে ভদ্রলোককে সত্যি-সত্যিই নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে?
অন্তত আমার তো তাই ধারণা। ঘটনাটা তোকে খুলে বলি শোন। সব আগাগোড়া শুনলে হয়ত তুই বুঝতে পারবি।