সুব্রত কোন জবাব দেয় না। মৃদু হাসে।
.
১৩.
ময়না তদন্ত করে জানতে পারা গেল মৃত্যুর কারণ রিভলভারের গুলি-গুলিটা তার ব্রেন ম্যাটারের মধ্যে ইমপ্যাকটেড হয়েছিল-বেস্ অফ দি স্কাল ভেদ করে থ্যালামাসে গিয়ে পৌঁছেছিল এবং মৃত্যু তাতেই হয়েছে।
সেনের ধারণা, মহেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর কারণ অ্যাক্সিডেন্ট বা আত্মহত্যা কোনটাই নয়—তাকে হত্যা করা হয়েছে রিভলভারের গুলির সাহায্যে।
.
দিন দুই পরে।
শীতের ধোঁয়া যেন কলকাতা শহরের পথে একটা শ্বাসরোধকারী পর্দা টেনে দিয়েছে।
সুব্রত এসে তার গাড়ি থেকে নামল মিঃ রায়ের গড়িয়াহাটার বাড়ির পোর্টিকোর সামনে।
বেল বাজাতেই বেয়ারা এসে দরজা খুলে দিল।
কাকে চাই?
মিস রায় আছেন?
হ্যাঁ।
তাকে আমার সেলাম দাও, বল সুব্রতবাবু এসেছেন।
বসুন এসে ভেতরে। আমি খবর দিচ্ছি।
বেয়ারা সুব্রতকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে ভিতরে চলে গেল খবর দিতে।
হঠাৎ জুতোর একটা শব্দ শুনে সুব্রত মুখ তুলে তাকায়—ডাঃ নীরেন সান্যাল।
মিঃ রায়, না? নীরেন সান্যাল বলে।
হ্যাঁ, নমস্কার।
কুন্তলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বুঝি? সে আসছে। তারপর আপনাদের ইনভেসটিগেশন কতদূর এগুলো?
একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে—মার্ডার!
বলেন কি?
হ্যাঁ, পোস্টমর্টেমে ব্রেনে বুলেট পাওয়া গিয়েছে। রিয়েলি?
হ্যাঁ।
স্যাড! আচ্ছা মিঃ রায়, চলি। গুডনাইট।
গুডনাইট।
ডাঃ নীরেন সান্যাল চলে গেল।
একটু পরেই কুন্তলা এসে ঘরে ঢুকল। সমস্ত চোখেমুখে একটা ক্লান্তি যেন ব্যাপ্ত হয়ে আছে। চুল বোধ হয় বাঁধেনি আজ কুন্তলা। রুক্ষ তৈলহীন ভ্রমরকৃষ্ণ কেশদাম পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে। পরনে কালো ভেলভেটপাড় একটা শাড়ি ও সাদা ব্লাউজ। পায়ে চপ্পল।
নমস্কার, আপনাকে আজ আবার একটু বিরক্ত করতে এলাম কুন্তলা দেবী!
না না, বিরক্তির কি আছে!
কুন্তলা সামনের একটা সোফায় উপবেশন করল।
পুলিস বলছে, মানে তাদের মতে এটা একটা হত্যা—মানে মার্ডার কেস। সুব্রত বলে।
না না, এ আপনি কি বলছেন সুব্রতবাবু?
হ্যাঁ, ব্রেন ম্যাটারে গুলি পাওয়া গিয়েছে-রিভলভারের গুলি।
এ-এ যে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না! বাবাকে হত্যা করবে কে, আর—আর কেনই বা হত্যা করবে?
আচ্ছা মিস্ রায়-রিসেন্টলি আপনার ছোড়দা কি কলকাতায় এসেছিলেন?
না–না তো!
ঠিক জানেন?
হ্যাঁ, তবে—
তবে?
মাসখানেক আগে ছোড়দার একটা চিঠি আমি পেয়েছিলাম।
চিঠি!
হ্যাঁ।
কি লিখেছিলেন তাতে তিনি?
কুন্তলা একটু যেন চুপ করে থাকে, একটু যেন ইতস্তত করে, তারপর মৃদু কণ্ঠে বলে, ছোড়দা কিছু টাকার জন্য আমাকে লিখেছিল।
টাকা।
হ্যাঁ, বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা চেয়ে তাকে যদি পাঠাতে পারি তাই লিখেছিল।
কেন টাকার দরকার সে সম্পর্কে কিছু লিখেছিলেন চিঠিতে আপনাকে?
না—তবে ছোড়দা চিরদিনই একটু বেশি খরচে—একটু বেহিসাবী—হয়ত কিছু ধারদেনা হয়েছিল!
তা আপনি আপনার বাবাকে কথাটা বলেছিলেন?
হ্যাঁ।
কি বললেন তিনি?
গালাগালি করলেন। টাকা দেননি।
আপনি সে-কথা আপনার ছোড়দাকে জানিয়েছিলেন?
হ্যাঁ।
তারপর তার আর কোন চিঠি পাননি?
না। কিন্তু কেন—কেন এত কথা আপনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন সুব্রতবাবু?
কুন্তলার স্বরে গভীর উৎকণ্ঠা প্রকাশ পায়।
কুন্তলা দেবী, আপনি বোধ হয় জানেন না একটা কথা—
কি—কি জানি না?
আপনার ছোড়দা কিছুদিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন!
হঠাৎ যেন চমকে ওঠে কুন্তলা। বলে, কে আপনাকে একথা বলল?
মিঃ মুখার্জী।
মুখার্জী কাকা?
হ্যাঁ। এবং তিনি আপনার বাবার সঙ্গে গিয়ে অফিসে দেখাও করেন।
কুন্তলার মুখ যেন রক্তহীন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে তখন।
কুন্তলা দেবী!
সাড়া নেই।
মিস রায়!
অ্যাঁ! কুন্তলা মুখ তুলে তাকাল সুব্রতর দিকে।
আপনার সঙ্গেও তিনি দেখা করেছিলেন, তাই না?
হ্যাঁ।
তিনি কদিনের ছুটি নিয়ে এসেছিলেন, কবে কার্যস্থলে ফিরে যান, জানেন কিছু?
দুদিনের ছুটি নিয়ে এসেছিল—
কিন্তু এসেছিলেন কেন? টাকার জন্যে নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ।
টাকাটার খুব প্রয়োজন ছিল, তাই না?
হ্যাঁ।
কত টাকা?
প্রায় হাজার টাকা।
টাকাটার যোগাড় হয়েছিল কি?
বোধ হয় সবটা নয়।
সবটা নয় মানে?
আমি আমার জমানো টাকা থেকে শ’তিনেক টাকা ছোড়দাকে দিয়েছিলাম।
আর একটা কথা, আপনার ছোড়দা মিলিটারি ইউনিফর্মে এসেছিলেন কি?
হ্যাঁ।
সঙ্গে রিভলভার ছিল?
হ্যাঁ। কিন্তু কি-কি-কি আপনি বলতে চান মিঃ রায়?
কিছু না। আচ্ছা এবারে আমি উঠব মিস রায়!
এবং কুন্তলা কিছু বলবার আগেই ঘর থেকে বের হয়ে এসে সোজা গাড়িতে স্টার্ট দিল সুব্রত।
.
১৪.
সুব্রত গৃহে ফিরে দেখল মৃণাল সেন তার অপেক্ষায় বসে আছে।
মিঃ সেন! কি খবর—কতক্ষণ?
তা প্রায় আধ ঘণ্টাটাক হবে। মৃণাল সেন বলে।
চা দিয়েছে আপনাকে?
দিতে চেয়েছিল আপনার চাকর কিন্তু আমিই না করেছি।
সুব্রত ভৃত্যকে ডাক দিল।
ভৃত্য আসতেই তাকে দু কাপ চায়ের কথা বললে।
তারপর সোফার উপরে গা ঢেলে দিয়ে বসতে বসতে বললে, কাল থেকে আবার শীতটা কেমন জাঁকিয়ে পড়েছে মিঃ সেন! তারপর বলুন, খবর কি? আপনার মত কাজের মানুষ যখন আমার জন্য বসে আছেন, বুঝতে পারছি মিঃ রায়ের হত্যার ব্যাপারে আরও কিছু জানতে পেরেছেন।
আপনি বলছিলেন না—আর্মি হেড কোয়ার্টারে সৌরীন্দ্র ও ভবেন্দ্রর রিসেন্ট মুভমেন্টের পার্টিকুলারস্ সম্পর্কে জানবার জন্য টেলিগ্রাম করতে!