মিঃ রায় ও মিঃ গাঙ্গুলীর সঙ্গে আপনার নিশ্চয়ই যথেষ্ট পরিচয় ছিল, জানাশোনাও ছিল। তাদের মুখে শোনেননি কিছু ঐ চিঠি সম্পর্কে কখনও?
না।
আচ্ছা ডাঃ চৌধুরী মারা যাওয়ার আগে কি নিয়ে রিসার্চ করছিলেন?
স্নেকৎ ভেনাম নিয়ে।
আচ্ছা আপনার আর এক মামা ছিলেন না বর্মায়?
হ্যাঁ, বড়মামা জীবন চৌধুরী বরাবর বর্মাতে ছিলেন।
শোনা যায় তিনি যুদ্ধ বাধার সঙ্গে সঙ্গেই প্রভৃত অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
সেই রকম একটা কানাঘুষা শুনেছিলাম বটে।
কার কাছে?
তা ঠিক মনে নেই।
ব্যাপারটা আপনি বিশ্বাস করেননি বুঝি?
না।
কেন?
বড়মামাকে দেখলে ও তার চালচলন দেখলেই বুঝতে পারতেন কেন—তাছাড়া যে লোকটা কোনদিন লেখাপড়া করেনি, অল্প বয়সে জাহাজের খালাসী হয়ে পালিয়ে যায়, তার পক্ষে বড়লোক হওয়া একমাত্র আলাদীনের প্রদীপ হাতে পাওয়ারই সামিল।
কিন্তু আমি শুনেছি-আপনার বড়মামা প্রচুর অর্থ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং সেই অর্থ তিনি তাঁর ছোট ভাইকে অর্থাৎ ডাঃ নলিনী চৌধুরীকেই দিয়ে যান মৃত্যুর পূর্বে।
কার কাছে শুনলেন এ আরব্য উপন্যাসের গল্প?
যার কাছেই শুনে থাকি না কেন, তিনি যে একটা নেহাত গল্প বানিয়ে বলেননি–তাই আমাদের ধারণা।
নীরেন সান্যাল প্রত্যুত্তরে হাসল। কোন জবাব দিল না।
সুব্রত আবার বলে, ডাঃ চৌধুরী যখন হাসপাতালে তখনই খবরটা পান তিনি। কথাটা আপনার না জানার কথা নয় হয়ত।
না, আমি কিছু জানি না।
আপনার ছোটমামা আপনাকে কিছু বলেননি?
না।
আচ্ছা আপনাদের আইন-পরামর্শদাতার নামটা জানতে পারি?
কালীপদ চক্রবর্তী। জোড়াবাগানে থাকেন তিনি-হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন।
আচ্ছা আপনার বড়মামার কোন আইন-পরামর্শদাতা ছিলেন?
তা জানি না।
আচ্ছা ডাঃ সান্যাল, আপনাকে বিরক্ত করলাম, কিছু মনে করবেন না—এবারে আমরা উঠব।
না, না—মনে করব কেন? কিন্তু কি ব্যাপার বলুন তো-এসব কথা কেন জিজ্ঞাসা করছিলেন?
কারণ পুলিসের ধারণা মহেন্দ্রনাথের মৃত্যুর ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয়।
বলেন কি!
হ্যাঁ, ব্যাপারটা মার্ডার বলেই মনে হয় আমার। মৃণাল সেন বলে।
ও নো-ইউ ডোক্ট একজ্যাক্টলি মিন ইট!
সুব্রত সে কথার জবাব না দিয়ে বলে, আচ্ছা চলি-নমস্কার।
সুব্রত অতঃপর মৃণাল সেনকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
১১-১৫. ঐ দিনই রাত্রে
১১.
ঐ দিনই রাত্রে।
কুন্তলা তার ঘরে একটা রকিং চেয়ারে বসেছিল। ঘরের আলো নিভানো অন্ধকার।
খুব শীত পড়েছে। গায়ে একটা শাল জড়িয়ে বসেছিল কুন্তলা।
ভৃত্য এসে দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে ডাকে, দিদিমণি!
কে রে?
আমি। ডাক্তারবাবু এসেছেন।
ডাক্তারবাবু!
আজ্ঞে, নীরেনবাবু।
নীরেনের গলা শোনা গেল, কুন্তলা!
কুন্তলা তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে সুইচ টিপে ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দেয়।
নীরেন এসে ঘরে ঢুকল।
আবার মরোজ হয়ে বসে আছ?
কুন্তলা সোজা হয়ে বসে, কোন কথা বলে না।
তুমি এক কাজ করে কুন্তলা—
নীরেনের মুখের দিকে তাকাল কুন্তলা।
তুমি বরং কিছু দিন তোমার মামার বাড়িতে গিয়ে থেকে এস। এই পরিবেশ থেকে তোমার সরে যাওয়া দরকার, অন্তত কিছুদিনের জন্য, আমার মনে হয়।
কুন্তলা কোন জবাব দেয় না।
নীরেন একটা চেয়ার টেনে নিয়ে কুন্তলার মুখোমুখি বসে।
বাবা-মা চিরকাল কারও বেঁচে থাকে না—
তা নয় নীরেন!
তবে কী?
বাবার মৃত্যু হয়েছে একটা দুর্ঘটনায়, কিছুতেই যেন কথাটা ভুলতে পারছি না!
দুর্ঘটনা বলতে তুমি কি বলতে চাও?
কেন—তুমি কি কিছু শোননি?
কি?
পুলিসের ধারণা তাকে কেউ হত্যা করেছে!
ননসেন্স! কে তাকে হত্যা করতে যাবে বল তো! যত সব কক অ্যান্ড বুল স্টোরি, যেমন পুলিস তেমনি তাদের বুদ্ধি। ইফ আই অ্যাম নট রং, তিনি আত্মহত্যা করেছেন ট্রেনের তলায় ঝাপিয়ে পড়ে।
কিন্তু কেন বাবা আত্মহত্যা করতে যাবেন?
শোন কথা, আত্মহত্যা লোকে করে কেন? কোন কারণ হয়ত তার ছিল।
তুমি বাবাকে জান না কিন্তু আমি জানি। তার মত ধীর-স্থির প্রকৃতির লোক আত্মহত্যা করতে পারে আমি বিশ্বাসই করি না।
আমাদের জীবনে বিশ্বাসের বাইরেও অনেক সময় অনেক কিছুই ঘটে কুন্তলা।
তা হয়ত ঘটে—তবু–
বেশ তোমার কথাই না হয় মেনে নিলাম, কিন্তু যা হয়ে গিয়েছে তা তো আর ফিরবে না—তখন মিথ্যে ভেবে কি হবে!
সত্যি বাবার জন্য ভারি দুঃখ হয়—হি ওয়াজ সোলোনলি!
দেখ কুন্তলা, একটা কথা তোমাকে এতদিন আমি বলিনি—কিন্তু আজ তোমার কথাটা শুনে কেন যেন মনে হচ্ছে
কি?
তোমার বাবার বন্ধু ঐ মণীন্দ্র গাঙ্গুলী লোকটা—
কি?
মনে হয় ওর এই ব্যাপারের মধ্যে হাত আছে!
না না, এসব তুমি কি বলছ নীরেন?
ভুলো না, অনেকগুলো টাকা তোমার বাবার কাছে ধরতো লোকটা।
কিন্তু সে টাকার জন্য তো বাবা কোনদিন তাকে তাগাদা দেননি!
দেননি—তাহলেও একদিন তো তাকে শোধ করতেই হবে, এই কড়ারেই তো সে। টাকা ধার নিয়েছিল! তাছাড়া–
কি?
আজ পুলিশ ইন্সপেক্টার মিঃ সেন আমার কাছে আসার পর থেকে কেন যেন আমার একটা কথা মনে হচ্ছে
কি কথা?
আমার বড়মামার চিঠির মধ্যে সত্যিই হয়ত কোন গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত ছিল। যদিও এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না—
কি?
বড়মামা কোন টাকাকড়ি নিয়ে আসতে পারেন বর্মা থেকে-ব্যাপারটা অত্যন্ত অ্যাবসার্ড-অসম্ভব যেন মনে হয় এখনও!
.
ঐদিন রাত্রে—সুব্রতর গৃহে।
আহারাদির পর সুব্রত একটা আরামকেদারায় বসে একটা সায়েন্স ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাচ্ছিল। ভৃত্য এসে বললে, আগরপাড়ার স্টেশন মাস্টার রসময়বাবু দেখা করতে এসেছেন।