ওপার থেকে একটি কণ্ঠ ভেসে এল, ‘আমি ফারুক আমিন বলছি।’
-কি খবর বল।
-বাংলাদেশ সিক্রেট সার্ভিস একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের দিয়েছে। আমি এক্ষুণি আসতে চাই।
– এস। ৪০১১ অপারেশনের খবর?
– পনর মিনিট হল ফিরেছে। জেরুজালেমে ক্ষেপনাস্ত্র ঘাঁটি তৈরীর সাধ ওদের অনেক দিনের জন্য মিটে গেছে। মাউন্ট গুলিভিয়রের ক্ষেপণাস্ত্র বেদিটি ধূলা হয়ে গেছে প্রচন্ড ডিনামাইটের বিষ্ফোরণে। আর ইহুদী ক্ষেপণাস্ত্র বিশারদ মাইকেল শার্পের দেহটিও উড়ে গেছে তার সাথে।
মুহূর্তের জন্য আহমদ মুসার চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, বিজয়ী ভাইদের আমার সালাম দাও ফারুক। আর শোন-কোন প্রকার আত্মতৃপ্তির অবকাশ আমাদের নেই। লক্ষ্য আমাদের বহুদূর পথ অত্যন্ত দূর্গম। এ পর্যন্ত যা আমরা করেছি তার চেয়ে ভবিষ্যতে যা আমাদের করতে হবে তা হাজারো গুণ বেশী। আচ্ছা , তুমি এস।
এবার অয়্যারলেসটির কাঁটা ঘুরিয়ে আর একটি চ্যানেল তৈরী করল। নতুন ঠিকানায় কয়েকবার যোগাযোগ করতে চেষ্টা করল। সফল হলো না। উঠে দাঁড়ালো আহমদ মুসা। ভ্রুদু’টি তার কুঞ্চিত হয়ে উঠল। টেলিফোনটি তুলে নিয়ে একটি পরিচিত নাম্বারে ডায়াল করে বলল, শফিক তুমি একটু উপরে এস।
আহমদ মুসা খস্ খস্ করে একটি কাগজে লিখলঃ
‘‘হাসান তারিকের অয়্যারলেস অস্বাভাবিকভাবে নীরব।
সে কোথায় খোঁজ নাও। এখন নয়, আগামিকাল ভোর পাঁচটায় আমাকে হেডকোয়ার্টারে পাবে।’’
একটু পরেই নীল বাতি জ্বলে উঠল ঘরে। পর্দা ঠেলে প্রবেশ করল শফিক। সামনের চেয়ারটায় বসতে ইংগিত করল আহমদ মুসা। তারপর চিঠিটি ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, পররাষ্ট্র দফতরের ঠিক বিপরীতে রাস্তার উত্তর পার্শ্বে ৩২২ নং বাড়ী। বাড়ীটিতে ঢুকে সোজা তিন তলায় উঠে যাবে। তাঁর এ চিঠি। সাবধানে যেয়ো।
২
আম্মানের অভিজাত এলাকার একটি দ্বিতল বাড়ী। চারপাশে কোন বাড়ী নেই। আট ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা বাড়ীটি। বাড়ীর বাইরের সব আলো নিভানো হলেও রাস্তার সরকারী আলোতে বাড়ীর উত্তর দিকের সম্মুখ ভাগটা উজ্জ্বল। রূপালী রং করা লোহার গেটে আলো পড়ে চিক চিক করছে।
আহমদ মুসার চিঠি নিয়ে গেট দিয়ে ধীর পদে বেরিয়ে এল শফিক। গাড়ী ষ্টার্ট নিতেই শফিক চকিতে একবার পিছনে ফিরে দেখল, কালো রংএর একটি ল্যান্ড রোভার পাশের অন্ধাকারের বুক থেকে বেরিয়ে এল তাদের পিছনে। সন্দেহ সম্পর্কে নিশ্চত হবার জন্য শফিক ড্রাইভারকে ফুলস্পীডে গাড়ী ছাড়তে বলল, ড্রাইভার আপত্তি জানিয়ে বলল, এ আঁকা বাঁকা রাস্তায় এর চেয়ে বেশী স্পীড দেওয়া সহজ নয় সাহেব।
শফিক ড্রাইভারের চোখের সামনে সাংকেতিক চিহ্ন তুলে ধরে বলল, এর প্রয়োজন আছে ড্রাইভার। ড্রাইভার সাইমুমের সাংকেতিক চিহ্ন দেখে মাথা ঝাঁকিয়ে একটি সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে বলল, এ গাড়ীকে এবং আমাকে এখন থেকে নিজের মনে করুন জনাব।’
শফিক রিয়ারভিউয়ে চোখ রেখে বলল, তোমার মত কি এমনি করে সবাই ভাবে ড্রাইভার?
-সবাই আরও সুন্দর করে ভাবে। আমার মত হতভাগ্য আর কেউ নেই। একমাত্র পেট পূজা ছাড়া জাতির এই সংকট মুহূর্তে আমার দ্বারা কিছুই হল না।
শফিক ড্রাইভারের পিঠে একটি হাত রেখে বলল, কে বলল কিছু করছ না ভাই? তোমাদের সমর্থন আর ভালোবাসাই তো আমাদের শক্তি ও প্রেরণা যোগাচ্ছে।
শফিক রিয়ারভিউ থেকে চোখ সরিয়ে বলল, পিছনের গাড়ীটি আমাদের অনুসরণ করছে ড্রাইভার।
ড্রাইভার একবার চিন্তিত মুখে ‘রিয়ারভিউ’ এর দিতে তাকিয়ে বলল, শহরের প্রতিটি গলি কুজো পথ আমার নখদপর্ণে, যদি বলেন তো ৫ মিনিটে ওদের এড়িয়ে বেরিয়ে যাব, আমরা।
– না তা হয় না ড্রাইভার। শত্রুকে পিঠ দেখানো আমাদের ঐতিহ্যের বিপরীত। সাইমুমের কোন সদস্যই শত্রুকে জীবিত রেখে সামনে এগোয় না। তুমি সামনের গাছটার কাছে মোড় ঘুরবার সময় গাড়ির গতি একটু কমিয়ে দিবে। আমি নেমে গেলে তুমি গাড়ী চালিয়ে যাবে। সুলতান সারাহ উদ্দিন রোডের মুখে আমার জন্য অপেক্ষা করো।
গাছটির কাছে একটু অন্ধকার মত জায়গায় খোলা দরজা দিয়ে চলন্ত গাড়ী থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল শফিক। পিছনে তাকিয়ে আশ্বস্ত হল সে। পিছনের গাড়ীর হেড লাইট এখনো অনেক পিছনে। নিশ্চিন্ত মনে পকেট থেকে একটা হ্যান্ড গ্রেনেড বের করে সেফটিপিন ঠিক করে রাখল। অন্য হাতে রিভলভার।
সামনের গাড়ী লক্ষ্য করে পিছনের গাড়ীটি নিশ্চিন্তে এগিয়ে যাচ্ছে। গাছের নীচে একটি পাথরের আড়ালে লুকিয়ে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে শফিক।
গাড়ী গাছের সমান্তরালে আসতেই সাইলেন্সার লাগানো রিভলভার থেকে ধীরে সুস্থে প্রথম গুলিটি ছুঁড়লো সে। দুপ করে মৃদু শব্দ উঠল। প্রচন্ড শব্দে পিছনের একটি টায়ার বার্ষ্ট করল। কিছুদূর যেয়ে থেমে গেল গাড়ীটি।
শফিকের ধারণা সত্য হ’ল। সাধারণ টায়ার বার্ষ্ট মনে করে গাড়ীর দু’ধারের দরজা খুলে দু’জন বেরিয়ে এল। একজন বেঁটে ধরণের। নাক চেপ্টা, মুখ গোল, রং হলুদ একবার চাইলেই বোঝা যায় চীনা লোক। আর একজন লম্বা। রং সাদা। দু’জনের পরনে কালো প্যান্ট, কালো কোট। ওরা টায়ার পরীক্ষা করেই চমকে উঠল। মুহুর্তে হাত পকেটে চলে গেল ওদের। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে তখন। শফিকের রিভলভার দু’বার মৃদু শব্দ করে উঠল। ঢলে পড়ল দু’টি দেহ।