মুহতারাম মুসা ভাই। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
দুতাবাসের মাধ্যমে আপনার সব খবরই পাচ্ছি, তবে আপনি ভাইদের কোন খোঁজ খবর রাখেননা। যে দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে দিয়ে গেছেন তা পালন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনার মাধ্যমে স্পেনে আমাদের যে অকল্পনীয় সাফল্য দান করেছেন, সেজন্যে তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি। ভাইদের সবাইকে আমাদের মোবারকবাদ দেবেন।
এই আনন্দের পাশাপাশি আরেক বড় বিপদের খবর আপনাকে জানাতে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। সিংকিয়াং-এ যে সুন্দর জীবন সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তা ভেঙে পড়েছে। পিকিং-এ রাজনৈতিক সংস্কার বিরোধী জাতীয়তাবাদী হানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে কম্যুনিষ্ট ‘ফ্র’ এবং ‘রেড ডাগন’ ভীষণ ভাবে মাথা তুলেছে সিংকিয়াং-এ। বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে সিংকিয়াং-এর গভর্ণর লি-ইউয়ান বন্দী হয়েছে। তাঁর সাথে বন্দী হয়েছে নেইজেন ও আহমদ ইয়াং। আমাদের সকলের সম্মানিতা বোন, মেইলিগুলি অর্থাৎ আমিনা নিখোঁজ। তাঁর আব্বা আম্মা তাঁর বাড়িতেই নিহত হয়েছেন। গোটা ইসংকিয়াং আজ গনহত্যা, গুপ্ত হত্যা ও সন্ত্রাসে আবার ভরে উঠেছে। এসব করছে জাতীয়তাবাদী হানদের নাম ভাঙিয়ে ‘ফ্র’ এবং ‘রেড ড্রাগন।’
মেইলগুলি নিখোজ এবং লী-ইউয়ানরা বন্দী হবার খবর পেয়েছি আমি দু-ঘন্টা আগে। সংগে সংগেই আমলা-আতায় কাজাখিস্তানের গভর্ণরকে খবর পাঠিয়েছি, আজই তাকে উরুমচি রোডের মুখে সিংকিয়াং সীমান্তে আমাদের শহর হারজেস -এ চলে যাবার জন্যে। সেখানে গিয়ে তাকে সব রকম খোঁজ খবর নেয়া এবং যা করণীয় তা করার নিদেশ দিয়েছি। আমি আগামীকাল আমলা-আতায় যাব। কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়ে আমার কাছে ছুটে এসেছিল আমাদের গোয়েন্দা চীপ আলদর আজিমভ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যুবায়েরভ। এসেই দুটি দাবী করে বসল, তারা এখুনি সিংকিয়াং যাত্রা করবে। সেই মুহূর্তে ছুটি না পেলে তারা চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে বলে জানায়। তাদের আবেগে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, ‘আমি কি আহমেদ মুসার সৈনিক নই? আমি কি তাদের মত চাকরী ছেড়ে দিয়ে সিংকিয়াং যেতে পারিনা?’ আমার এ কথায় তারা শান্ত হয়েছিল। চাকরী ছাড়ার কথা বলার জন্যে মাফ চেয়েছিল। তারা তিনজন ঘন্টাখানেক আগে সিংকিয়াং রওনা হয়েছে।
মুসা ভাই, ‘আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে বলার মত ধৃষ্ঠতা আমার নেই। শুধু আমি বলব, আমরা আপনার সৈনিকরা এই সংকটে যা করার সব কিছুই করব’।
আপনার ভাই
কুতাইবা
শুকনো নির্বিকার কন্ঠে চিঠি পড়া শেষ করল আহমেদ মুসা।
ঘরে তখন পিন পতন নীরবতা।
বেদনার মালো ছায়া সবার মুখে। উদ্বেগ আর বেদনার ভারে ঠোঁট কাঁপছে ফিলিপ, যিয়াদ, আবদুর রহমানের। বোবা হয়ে গেছে তারা। মেইলিগুলি যে আহমেদ মুসার কি, নেইজেন ও আহমদ ইয়াং যে আহমদ মুসার কাছে কতখানি, তারা তা জানে। সর্বোপরি সিংকিয়াং-এর মুসলমাদের গণহত্যার খবর।
মিটিং -এ উপস্থিত কেউ কোনো কথা বলতে পারলনা বহুক্ষন।
আহমদ মুসাই নিরবতা ভাঙল, ‘আমি আপনাদেরকে ডেকেছিলাম একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য এবং একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।’
একটু থামল আহমদ মুসা। থেমেই আবার শুরু করল, ‘গত পরশু এবং তার আগের দিন তিনটি খবর পড়লাম। একটা কাঠালানিয়া প্রদেশের তারাশায়, অন্যটি স্পেনের ভেল্লাদলিদে এবং তৃতীয়টি দক্ষিণ স্পেনের গ্রানাডায়। ঘটনা প্রায় একই রকম। তারাশায় কয়েকজন মুসলমান তাদের বলে দাবী করে খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটা দোকান দখল করেছে। ভেল্লাদলিতে কয়েকজন মুসলমান গিয়ে তাদের বলে দাবী করে একটা বাড়ী দখল করেছে। আর গ্রানাডায় কয়েকজন মুসলমান কর্তৃক কৃষি জমি দখল করার ঘটনা ঘটেছে। তিন জায়গাতেই মারপিট হয়েছে। এর জন্যে অভিযুক্ত হয়েছে মুসলমানরা। এই তিনটি ঘটনা আমাকে উদ্বিগ্ন করেছে। তিনটি ঘটনা দেশের তিন প্রান্তে ঘটেছে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে গোটা দেশে একই মানসিকতা বিরাজ করছে। অর্থাৎ এই ধরণের অসহনশীল, হিংসাত্মক ও বেআইনি ঘটনা গোটা দেশে আরও ঘটবে।
ঘটনাগুলোকে ঘনিষ্টভাবে আমি জানি না। ঘটনা তিনটি পড়ার সংগে সংগেই আমার মনে হয়েছে এ গুলো বিরাট ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত মাত্র।’
‘কিন্তু তিনটি ঘটনাই ঘটিয়েছে মুসলমানরা এবং তা তারা ঘটিয়েছে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে।’ কথার মাঝখানে বলে উঠল শেখুল ইসলাম।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘ষড়যন্ত্র সব সময় ছদ্মবেশ ধরেই আসে।’
‘কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটাবার ষড়যন্ত্র কে করবে, কেন করবে?’ প্রশ্ন করল আবদুর রহমান।
‘বলছি।’ বলে শুরু করল আহমদ মুসা, ‘আমাদের ভুললে চলবে না যে, স্পেন সরকার মুসলমানদের দাবী কিছু মেনে নিয়েছে বেকায়দায় পড়ে, আন্ত্মর্জাতিক চাপে। কিন্তু কতখানি বিক্ষুব্ধ তারা সেটা বুঝা যাচ্ছে জেন, জোয়ান ও আমার উপর হিংসাত্মক আচরণ থেকে। তারা চেষ্টা করবে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবার জন্যে। তাদের এ চেষ্টা সফল করার জন্যে প্রথমেই তারা চাইবে স্পেনের মুসলমানদের ওপর বাইরের দুনিয়ায় যে সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছে সেটা নষ্ট করতে। এর সহজ পথ হলো মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী ও দাংগাবাজ হিসেবে চিহ্নিত করা। তিনটি ঘটনায় আমি সন্ত্রাস ও দাংগার সূত্রপাত লক্ষ্য করছি। আরো একটা জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে। সরকারের মতই সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এই পরিবর্তন মেনে নেয়নি। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারবে। এই ছোবল মারার সুযোগ সৃষ্টি করবে ঐ তিনটি ঘটনার মত ঘটনা। দেশব্যাপী যদি দাংগা সৃষ্টি করা যায় এবং যদি প্রমাণ করা যায় যে, দাংগার কারণ মুসলমানরা, তাহলে এক ঢিলে স্পেন সরকার দুটি নয় তিনটি পাখি মারতে পারবে। বাইরের বিশ্বকে সরকার বুঝ দেবে মুসলমানদের সন্ত্রাস ও দাংগা মানসিকতার কারণেই দাংগা-হাংগামা ঘটছে। দ্বিতীয়তঃ দাংগার আড়ালে সরকার মুসলিম নিধনের কাজ সারতে পারবে। দাংগায় যারা মরবেনা তাদের জেলে পুরতে পারবে। তৃতীয়তঃ মুসলমানদের স্পেন সরকার যে সুযোগ দিয়েছে তা সবার চোখের আড়ালে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। এই অবস্থায় মুসলমানরা অত্যাচার ও বৈষম্য থেকে বাঁচার জন্যে আগের মতই পরিচয় গোপন করে ফেলতে বাধ্য হবে।’
থামল আহমদ মুসা।
ফিলিপ, যিয়াদ, আবদুর রহমান সহ উপস্থিত সকলের মুখ মলিন। তাদের চোখে মুখে উদ্বেগ।
‘আমি বুঝতে পেরেছি মুসা ভাই। আমার মনে হচ্ছে, এটা আপনার অনুমান নয়। আপনি ভবিষ্যতে যা ঘটতে যাচ্ছে তার নিখূঁত একটা ছবি তুলে ধরেছেন। আপনি হয়তো লক্ষ্য করেননি মুসা ভাই আজকের ‘দি স্পেনিয়া’ কাগজের শেষ পাতায় ঐ ধরণের আরেকটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে টলেডোর পাশে একটা গ্রামে। মুসলমানরা একটা গীর্জা দখল করতে গিয়েছিল, তারা দাবী করেছিল মসজিদের দেয়ালের ওপর ঐ গীর্জাটি তৈরী হয়েছে। সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি কোন দলের তা খবরে বলা হয়নি।’
‘মারা গেছে একজন?’ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল আহমদ মুসা।
‘হ্যাঁ।’ ফিলিপ বলল।
‘আমরা বুঝতে পারছি মুসা ভাই আমরা একটা ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি। কিন্তু বুঝতে পারছিনা, মুসলমানরা নিজেরা কেন এ ধরনের সংঘাত বাধাতে যাচ্ছে?’ বলল যিয়াদ।
‘বন্ধু সেজে কেউ অথবা সরকারী এজেন্টরা ভেতর থেকে মুসলমানদের উস্কানি দিয়ে হিংসাত্মক পথে ঠেলে দিচ্ছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘এই সময় উত্তর স্পেনের ভেল্লাদলিদ থেকে আসা মুসলিম নেতা আবদুল্লাহ মারকিস উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘জনাব আপনার কথা শুনে আমাদের ভেল্লাদলিদের কথা মনে পড়েছে। সেখানে বাড়ী দখলের ঘটনায় বাড়ী সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেন যিনি তিনি গোয়েন্দা বিভাগের একজন চাকুরে। তিনিই কাগজপত্র এনে দেখান যে ভেল্লাদলিদের উপকণ্ঠে একটি বিশাল চারতলা বাড়ির মালিক একজন মুসলমান। তার দাদার কাছ থেকে বাড়ীটা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। এই কাগজ পত্রের জোরেই বাড়ীটি দাবী করা হয় এবং ঐ ঘটনা ঘটে। আমরা তাকে সবাই আমাদের শুভাকাঙ্খী বলেই মনে করেছি। এখন বুঝতে পারছি ব্যাপারটা ষড়যন্ত্রই ছিল।’
‘এধরণের একটা খবর’, বলতে শুরু করল শেখুল ইসলাম, ‘আমার কাছেও আছে। আজ থেকে চার পাঁচদিন আগে কয়েকজন লোক গিয়েছিল আমার কাছে। আমি তাদের চিনি না। তারা পরিচয় দিল হিউম্যান রাইটস গ্রুপের লোক বলে। তারা বলল, মাদ্রিদে মুসলমানদের বেশ সম্পত্তি আছে। সেগুলো দখল করার এটাই সময়। আন্তর্জাতিক জনমত পক্ষে আছে। আর স্পেন সরকারও চাপের মধ্যে আছে। সম্পত্তিগুলোর একটা তালিকা আমাদের কাছে আছে। আপনারা এগিয়ে এলে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। শুধু দাবী দাওয়া করলে সরকার শুনবে না। কিছু শক্তি প্রদর্শনের দরকার আছে।’ আমি তাদের কথায় খুশী হয়েছিলাম। তাদের সম্পত্তির তালিকা ও দলিল দস্তাবেজ দিয়ে সাহায্য করতে বলেছি। এখন আমাদের মনে হচ্ছে এটা আমাদের জন্য একটা ফাঁদ।’
থামল শেখুল ইসলাম।
‘আল্লাহ আপনাকে মুসলিম উম্মার জন্যে অনেক দীর্ঘজীবি করুন মুসা ভাই। স্পেনের নবজীবন লাভকারী মুসলমানদের ধ্বংস করার ভয়াবহ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আপনি আমাদের সচেতন করলেন, সতর্ক করলেন। এজন্যে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। যে ঘটনাগুলোকে আমরা স্পেনে মুসলিম জাতির জন্যে শুভ সংবাদ মনে করছিলাম, মুসলমানদের জেগে ওঠার প্রতীক মনে করছিলাম, তা যে মুসলমানদেরকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দেবার ষড়যন্ত্র, সেটা আমরা সর্বনাশ হয়ে যাবার আগে বুঝতাম বলে মনে হয় না। আল্লাহ আপনার তীক্ষ্ম দৃষ্টিকে আরও শক্তিশালী এবং আপনার দূরদৃষ্টি আরও প্রসারিত করুন। এখন বলুন মুসা ভাই এই সংকটে আমাদের করণীয় কি?’ বলল ফিলিপ।
‘সে কথা বলার জন্যেই’, শুরু করল আহমদ মুসা, ‘আজ রাতে সবাইকে এখানে ডেকেছি। আগামী কাল সকাল থেকে তোমাদেরকে কয়েকটা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গোটা স্পেনে ছড়িয়ে পড়তে হবে। সব মুসলমানকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করতে হবে এবং সব রকমের শক্তি প্রদর্শন ও হিংসাত্মক ঘটনায় জড়িয়ে পড়া থেকে মুসলমানদের বিরত রাখতে হবে।’
একটু থামল আহমদ মুসা। তারপর আবার শুরম্ন করল, ‘স্পেনের মুসলমানদের শীর্ষ নেতাদের সকলে এখানে হাজির আছ। তোমরা ভাল করে শোন, বুদ্ধি-বিবেচনাহীন আবেগ প্রসূত হটকারী পদক্ষেপ স্পেনের সংখ্যালঘু মুসলমানদের জীবনে আবার হতাশার কালোরাত ডেকে আনতে পারে। সুতরাং অত্যন্ত সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সামনে এগুতে হবে। স্পেনের সংখ্যাগুরু জনগনকে আমাদের জয় করতে হবে, তাদের সাথে সংঘাত নয়। এজন্যে স্পেনের মুসলমানদের প্রথম কাজ হলো, যে আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার তারা লাভ করেছে তাকে সংহত করার এবং যুক্তি ও বুদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে আরও আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার অর্জন করা। দ্বিতীয় কাজ হলো, প্রচার ও ব্যাপক ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষা ও সৌন্দর্য্য সংখ্যাগুরু জনগনের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সাথী অথবা সহযোগীতে পরিণত করা এবং তৃতীয় কাজ হলো, দ্বিতীয় কাজটিকে আমরা যখন সম্পূর্ণতা দিতে অথবা সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে পারবো, তখন রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে পা বাড়াতে হবে। তবে এই তিনটি কাজ, বিশেষ করে শেষের দু’টি কাজ সফল হবার জন্যে স্পেনের মুসলমানদেরকে প্রথমে খাঁটি মুসলমান হতে হবে। মনে রাখতে হবে স্পেনে মুসলমানদের পতন ঘটেছিল অর্থের অভাবে নয়, শক্তির অভাবে নয়, পতন ঘটেছিল ইসলামের অভাবে। সুতরাং স্পেনে মুসলমানদের নতুন যাত্রা সফল করতে হলে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামকে ফিরিয়ে আনতে হবে পরিপূর্ণ ভাবে।’
থামল আহমদ মুসা।
ঘরে উপস্থিত সকলে একযোগে ‘আল হামদুলিল্লাহ’ বলে উঠল।
‘আমরা সকলে আপনার এ নির্দেশকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করব মুসা ভাই।’ আবেগ কম্পিত কণ্ঠে বলল যিয়াদ বিন তারিক।
‘আল হামদুলিল্লাহ।’ বলল আহমদ মুসা।
একটু থেমে আহমদ মুসা আবার বলল, ‘আর একটি কথা আজ তোমাদের কাছে বলার আছে, তোমাদের কাছ থেকে আজ আমি বিদায় চাইছি।’
‘বিদায়, আজ?’ ফিলিপ, যিয়াদদের কণ্ঠ আর্ত-চিৎকার করে উঠল।
‘ফিলিপ, যিয়াদ, আবদুর রহমান আহমদ মুসার পাশেই বসে ছিল। আহমদ মুসার কথা শুনে তাদের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেছে, চুপসে গেছে যেন এক মুহুর্তেই। ফিলিপ ও যিয়াদ দু’দিক থেকে আহমদ মুসার দুটি হাত চেপে ধরে বলল, ‘একি বলছেন মুসা ভাই? আজ চলে যাবেন?’
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘আমার কাজ শেষ ভাই। যে টুকু বাকি ছিল এখন শেষ করলাম। এখন আমার যাবার সময় হয়েছে।’
‘যাবেন জানি, কিন্তু হঠাৎ করে এই ভাবে?’ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল যিয়াদ।
‘নতুন এক কাজের দায়িত্ব দিলেন, তার তো কিছুই এখনও হয়নি।’ ভারি গলায় বলল ফিলিপ।
‘আমি জানি এ দায়িত্ব তোমরা পালন করতে পারবে।’ বলল আহমদ মুসা ম্স্নান হেসে।
‘কিন্তু এ হয়না, আপনি হাজির থেকে এ কাজ শেষ করে দিন।’ কান্না চাপার কসরত করে বলল আবদুর রহমান।
কক্ষে উপস্থিত সকলেই আবদুর রহমানের কথা সমর্থন করল।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। সকলের দিকে চোখ বুলিয়ে বলল, ‘তোমরা আমাকে ভালবাস, তোমাদের ছাড়তে আমার খুব কষ্ট হবে। কিন্তু আমাকে যেতে হবে। সিংকিয়াং-এর অবস্থা কি তোমরা শুনেছ। সেখানেও আমার যাবার প্রয়োজন হবে। তোমরা এখন আমাকে বিদায় দাও। আমাকে তৈরী হতে হবে, আজ রাতেই আমি যাত্রা করব। তোমাদের সকলের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।’
কথা শেষ করে আহমদ মুসা ফিলিপ, যিয়াদদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমরা এস, আমি উপরে গেলাম।’
বলে আহমদ মুসা ধীর গতিতে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে গেল।
ঘরে কারোমুখে কোন কথা নেই। বজ্রাহতের মত সবাই বসে। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে সকলের।