ভাসকুয়েজ ভীষণ উত্তেজিত।
পায়চারি করছে তার অফিসে। ঘরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত। দু’টি হাত তার পেছনে মুষ্টিবদ্ধ।
সন্ধ্যায় খবর পাওয়ার পর থেকে পাগলের মত হয়ে গেছে ভাসকুয়েজ।
Euro World News Agency (ইউরো ওয়ালর্ড নিউজ এজেন্সী-EWNA) এর প্যারিস অফিসের কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যানের একজন এজেন্ট ভাসকুয়েজকে টেলিফোনে সব জানিয়েছে। বলেছে, সমস্ত ডকুমেন্ট এজেন্সী কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরী হয়ে ট্রান্সমিশন এডিটরের কাছে এসেছে।
খবরটা জানার পর ভাসকুয়েজের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, কি ঘটতে যাচ্ছে। EWNA নিউজটি ক্রিট করার অর্থ বিশ্বের সমস্ত দৈনিকে তা প্রকাশিত হবে এবং স্পেনে মুসলিম স্থাপনা ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো ধ্বংস করার কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যানের ষড়যন্ত্র গোটা দুনিয়ায় ফাঁস হয়ে যাবে। তাতে তাদের উদ্দেশ্যই শুধু মাঠে মারা যাবে না, কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যান বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হবে, এমনকি স্পেন সরকারের রোষদৃষ্টিতে পড়বে তারা। এ অবস্থা ঠেকাবার একমাত্র পথ EWNA কে ঐ খবর প্রচার থেকে বিরত রাখা।
সন্ধ্যার পর থেকে ভাসকুয়েজ এই চেষ্টাই করেছে। আমেরিকায় কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যানের সাহায্য চেয়েছে সে। আমেরিকান কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যান এর প্রধান বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসের সভাপতি আইজাক আব্রাহামকে ধরেছে। আইজাক আব্রাহাম কথা দিয়েছে, EWNA এর চেয়ারম্যান মিখাইল এ্যাঞ্জেলোকে বলে দেবে যেন নিউজটি EWNA থেকে প্রচার না করা হয়। আইজাক আব্রাহাম কি করল কি করতে পারল তারই অপেক্ষা করছে ভাসকুয়েজ। ভাসকুয়েজের আশা জাগছে, EWNA-এর প্রধান মিখাইল বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসের সভাপতির কথা নিশ্চয় ফেলতে পারবে না।
ওদিকে ভীষণ অবস্থা তখন EWNA –এর সদর দফতরে।
বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসের সভাপতির টেলিফোন পাওয়ার পর মাথায় ঘাম দেখা দিল EWNA এর প্রধান মিখাইল এ্যাঞ্জেলোর। নিউজ তো অলরেডি ট্রান্সমিশন টেবিলে চলে গেছে। ওটাকে ফিরাবে কোন যুক্তিতে। আর এতবড় চাঞ্চল্যকর নিউজ EWNA তার জীবনে পায়নি। অন্যদিকে আইজাক আব্রাহামের অনুরোধ ফেলবে কি করে। তার অনুরোধ অনেকটা নির্দেশের মতই।
মিখাইল এ্যাঞ্জেলো ঠিক করলো একা এ সিদ্ধান্ত সে নেবে না। সাংবাদিকদের বুঝাবার প্রশ্ন আছে। তাদের মধ্যে যারা প্রফেশনাল এবং তার সংবাদ সংস্থার প্রাণ, তারা ঐ নিউজ পেয়ে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত খুশী হয়েছে।
বোর্ডের মিটিং বসল রাত আটটায়।
EWNA-এর পরিচালনা বোর্ডের মিটিং। মিটিং-এ মিখাইল সব ঘটনা উপস্থাপন করল।
পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ৭ জন। সদস্যদের প্রত্যেকেই ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের ও রাজনীতিক।
সব শুনে জার্মানীর হেনরী হারজল বলল, ‘মিটিং না ডেকেও চেয়ারম্যান নিউজ বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কারণ আইজাক নিষেধ করার পর এ নিউজ সার্ভিসে দেয়া যায় না। কিন্তু মিটিং ডাকা দেখে আমার মনে হচ্ছে, চেয়ারম্যান বোধ হয় আইজাকের অনুরোধের ব্যাপারে অন্য রকম চিন্তা করছেন’।
থামল হেনরী হারজল।
হেনরী হারজল থামতেই কথা বলে উঠল জার্মানীরই আরেকজন সদস্য হের গোয়োরং। বলল, সম্মানিত সদস্য হারজলের কথা শুনে মনে হচ্ছে আইজাকের কথাই যেন EWNA-এর জন্যে শেষ কথা। কিন্তু তা কিছুতেই হতে পারে না। আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে EWNA –এর স্বার্থ সামনে রেখে। যেহেতু বিষয়টা দু’দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই সম্মানিত চেয়ারম্যান সাহেব মিটিং ডেকে যথার্থ দায়িত্ব পালন করেছেন’।
‘মনে হয় কোন তর্কে না গিয়ে বিষয়টা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করে আমাদের সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত। বিষয়টা আসলেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিউজের দিকে থেকে এমন মূল্যবান নিউজ EWNA কখনও পায়নি। আবার EWNA আইজাকের মত লোকের কাছ থেকে এমন অনুরোধ কখনও পায়নি। আমি সম্মানিত সদস্যদের সুচিন্তিত মত দেবার জন্যে অনুরোধ করছি’। বলল EWNA এর চেয়ার্যম্যান মিখাইল।
এবার কথা বলল ফ্রান্সের পিয়েরো মিঁতেরা। বলল, ‘সংবাদ সংস্থা হিসেবে নিউজ পেয়েছি, তা আমরা প্রচার করবো, এটাই আমাদের দায়িত্ব, গ্রাহকদের কাছেও এটা আমাদের কমিটমেন্ট। এখন দেখতে হবে প্রথমঃ নিউজটা নির্ভরযোগ্য কি না, দ্বিতীয়তঃ ছাপলে কি কি মন্দ দিক আমাদের জন্যে আছে। এ দু’দিকের বিচার করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার মত হলো, নাম কিনতে যেয়ে যদি আমরা ক্ষতির মধ্যে পড়ি, তা’হলে আমরা নিউজ প্রচার থেকে বিরত থাকতে পারি’।
বৃটেনের সদস্য জেমস কিট বলল, ‘আমি পিয়েরেকে সমর্থন করছি। ক্ষতিকর দিকগুলোই আমাদের বিশেষ ভাবে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের সংবাদ মাধ্যম একদিকে ব্যবসায়, অন্যদিকে আমাদের রাজনীতিও। ব্যবসার অর্থ এর মাধ্যমে আমরা লাভ করতে চাই, লাভ করার জন্যে এর ক্রমবর্ধমান প্রসার চাই। আর আমাদের রাজনীতির অর্থ হলো, আমাদের ইউরোপ, আমাদের পাশ্চত্যের স্বার্থের সংরক্ষণ আমরা করতে চাই। এই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচ্য নিউজটি আমাদের মিত্রদেশ স্পেন এবং স্পেনের খৃষ্টান জনগণের ক্ষতি করবে। আমাদের জাতীয়তাবাদী ও জাতির সেবায় নিবেদিত কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যানের ভীষণ ক্ষতি করবে। সম্ভবত আইজাক এই দিক গুলো সামনে রেখেই অনুরোধ করেছেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা কঠিন। কঠিন নানা কারণে। বাস্তবতা হলো, আমাদের কোম্পানী যে ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে, তা বন্ধ করার ক্ষমতা আইজাক রাখেন, এ কথা আমরা সকলেই জানি। দ্বিতীয়তঃ আইজাক চাইলে EWNA-কে অচল করে দিতে পারেন। সকলেরই জানা আছে, আমাদের সংবাদ সংস্থার ৬০ভাগ সদস্য ইহুদি। তারা ঐক্যবদ্ধ এবং সক্রিয়। সুতরাং আইজাককে ক্ষেপালে আমাদের কোম্পানীর চাকাই অচল হয়ে যাবে। অন্যদিকে লাভটা হবে এই, গ্রাহকদের কাছে আমাদের সুনাম বাড়বে, ব্যবসায়ের সম্প্রসারণও হতে পারে। কিন্তু এই লাভের চেয়ে আমাদের ক্ষতির পাল্লা অনেক ভারি হবে। সুতরাং নিউজটা প্রচার না করার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।
জেমস কিটের দীর্ঘ বক্তব্য শেষ হতেই হের গোয়েরিং বলল, ‘জেমস যে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে, তাতে ইহুদিদের স্বার্থরক্ষা করে চলা ছাড়া EWNA –এর আর কোন পথ নেই। এই যদি আমাদের কোম্পানীর ব্যবস্থা হয়, তা’হলে কোম্পানীর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবা দরকার। আমাদের ব্যবসায়, আমাদের সংবাদ সংস্থা কোন এক গ্রুপের হাতে জিম্মি হয়ে থাকবে-তা হতে পারে না। কথাটা যখন জেমস তুলেছেই তখন বলতে চাই, ইউরোপে খৃষ্টানদের সংখ্যা ৪শ’ কোটিরও বেশী অথচ এখানে ইহুদিদের সংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৪৬ লাখ। অথচ আমাদের কোম্পানীতে ইহুদি জনসংখ্যার হার ৬০ শতাংশ। এটা হলো কি করে?’
গোয়েরিং এর কথা শেষ হতেই হেনরী হারজল গোয়েরিং-এর তীব্র প্রতিবাদ করে বলল, ‘গোয়েরিং সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন তুলেছে। নাজীদের কবর হওয়ার পর এ সাম্প্রদায়িক প্রশ্নেরও কবর হয়েছে। যোগ্যতার ভিত্তিতেই আমাদের কোম্পাণীতে লোক রিক্রুট হয়, এতে আপত্তি করার কিছু নেই।’
‘যোগ্যতা ইহুদিদের মনোপলি আমি তা মানিনা। হারজল সাম্প্রদায়িকতার কবর হওয়ার কথা বলেছেন, কিন্তু আমি বলব যে বৈষম্য আমরা দেখছি, তা সাম্প্রদায়িকতাকে কবর থেকে আবার টেনে তুলবে। কোথাও কোথাও হয়েছে তা হারজল স্বীকার করবেন। সুতরাং উল্লেখিত ক্ষতির ও আমাদের ব্যবসায়িক সততার দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।’ বলল আবার গোয়েরিং।
কথা বলল ইটালির সদস্য আলফন সো। বলল, ‘আমি গোয়েরিং এর প্রস্তাবের প্রশংসা করছি। কিন্তু অস্তিত্বের প্রশ্ন যেখানে, সেখানে সততার প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। তাছাড়া আরেকটা প্রশ্ন আমাদের বিবেচ্য, এ নিউজ প্রচার থেকে প্রকৃত অর্থে লাভবান হবে মুসলমানরা, ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্পেনের খৃষ্টান স্বার্থ। এ সরল হিসেব থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’
আলোচনা চলল আরও। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি উঠল অনেক। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো নিউজ প্রচার না করার।
মিটিং তখনও শেষ হয়নি। তর্ক-বিতর্ক শেষে তাদের স্বাস্থ্যপান চলছে।
রাত তখন ৯টা ৩০ মিনিট।
একটা নোট এল EWNA-এর প্রশাসকের হাত থেকে মিখাইলের হাতে।
নোটটা পড়ল মিখাইল।
পড়তে পড়তে তার চেহারা মলিন হলো।
নোট থেকে মুখ তুলে মিখাইল বলল, ‘আমাদের মিটিং এখনও শেষ হয়নি। নতুন একটা ডেভলাপমেন্ট আছে ঐ নিউজ সম্পর্কে। আপনারা চাইলে বিষয়টা আমি মিটিংয়ে পেশ করতে পারি।’
সবাই একবাক্যে সম্মতি দিল।
মিখাইল বলল, ‘কথা ছিল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে আমরা নিউজটা প্রচার করব।’
মাঝখান থেকে হারজল প্রশ্ন করল, ‘কার সাথে কথা হয়েছিল?’
মিখাইল মুখ তুলে হারজলের দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘আমাদের সোর্সের সাথে এই কথা হয়েছিল।’
উত্তর দেয়ার পর একটু থেমে আবার মিখাইল শুরু করল, ‘৯টার সময় সীমা পার হবার পর নিউজ প্রচার হতে না দেখে তারা জানতে চেয়েছে আমরা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাত ১০টার মধ্যে যদি কিছু না জানাই, তা’হলে তারা ধরে নেবে আমরা নিউজটা প্রচার করছিনা। সে ক্ষেত্রে তাদের অন্য একটা এজেন্সীর সাথে কথা হয়েছে তারা নিউজটা আজই প্রচার করবে। রাত দশটার পর ওদেরকেই ডকুমেন্ট দিয়ে দেয়া হবে। সেই সাথে ওয়ার্ল্ড প্রেসকে তারা জানিয়ে দেবে যে, EWNA নিউজটি করার পরও ট্রান্সমিশন টেবিলে তা পাঠাবার পরও ইহুদী ও ক্লু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যানের চাপে নিউজটি প্রচার করেনি।’
থামল মিখাইল।
সে থামতেই হারজল বলল, ‘সে সংবাদ সংস্থা কোনটা যাদের সাথে ওদের কথা হচ্ছে?’
‘আমি জানি না, তবে অনুমান করতে পারি সে সংস্থা WNA (World News Agency) অথবা TWNA (Third World News Agency) হবে। আমরা চাপে পড়ে নিউজটা গ্রহণ করিনি জানলে WNA নিউজটা লুফে নেবে।’ বলল মিখাইল।
‘তাতে আমাদের কি ক্ষতি হবে?’ জিজ্ঞাসা করল আলফন সো।
‘ক্ষতি হবে, আমাদের বার্তা সংস্থাকে ইহুদী এবং ক্লু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যানের মত হিংসাত্মক সংগঠনের স্বার্থের সংরক্ষক বলে ধরে নেয়া হবে, যা আমাদের নিরপেক্ষতা ও সুনামকে ধুলিস্মাৎ করে দেবে।’ মিখাইল বলল।
‘শুধু তাই না, গোটা ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড’ এর দেশগুলো থেকে আমাদের পাততাড়ি গুটাতে হবে।’ বলল গোয়েরিং। সে আরও বলল, তাছাড়া একটা কথা আমাদের ভাববার বিষয়। সেটা হল, আমরা নিউজটা প্রচার না করলেও তা বন্ধ থাকছেনা। কেউ না কেউ তা প্রচার করবেই যখন, তখন আমরা পেছনে থাকব কেন?
একমাত্র হারজল ছাড়া সকলেই বলল, ‘গোয়েরিং এর কথায় যুক্তি আছে। একটা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা কোন গ্রুপের স্বার্থ রক্ষাকারী বলে চিহ্ণিত হলে সংবাদ সংস্থাটির ভূমিকা অকার্যকর হয়ে পড়বে। নিউজটি যখন প্রচার হচ্ছেই, তখন আমরা তা করলেই ভাল।’
‘যদি তা করতেই হয়, চেয়ারম্যান সাহেব আইজাক আব্রাহামের সাথে আলোচনা করুন। আমাদেরকে বাস্তববাদী হতে হবে।’ বলল হারজেল।
হের গোয়েরিং ছাড়া সকলেই হারজলকে সমর্থন করল। গোয়েরিং বলল, ‘একটি স্বাধীন সংস্থার সিদ্ধান্তকে বাইরের একজন লোকের মতামত নির্ভর করে তোলা আমি ঠিক মনে করিনা।’
শেষে বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেসের সভাপতি আইজাক আব্রাহামের সাথে আলোচনা করারই সিদ্ধান্ত হলো।
মিখাইল তুলে নিল টেলিফোন।
সংগে সংগেই পাওয়া গেল আইজাক আব্রাহামকে।
সংক্ষেপে ঘটনা বলার পর মিখাইলের সাথে কথা শুরু হলো আইজাক আব্রাহামের।
‘সব তো শুনলেন এখন বলুন কি করা যায়।’ বলল মিখাইল।
‘আপনারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?’
‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিউজটা প্রচার না করার।’
‘সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকুন, এটাই আমার কথা।’
‘কিন্তু নিউজটা তো বন্ধ হচ্ছে না। তাছাড়া আমরা বিরাট অপপ্রচারের সম্মুখীন হব।’
‘নিউজটা প্রচার হওয়ার কথা ওদের একটা ব্লাফও হতে পারে। পশ্চিমের সংবাদ মাধ্যম এটা প্রচার করবে বলে মনে হয় না। WNA এর সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাল না, কিন্তু ওখানে আমার লোকরাই মেজরিটি মনে রেখ। আমি ছাড়বোনা ওদের।’
‘কিন্তু ব্যাপারটা আপনার ব্যক্তিগত ভাবে নেয়া কি ঠিক হচ্ছে?’
‘ব্যক্তিগত ভাবে তো নয়, আমি জাতীয় ভাবে নিয়েছি। কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যান আমার বন্ধু সংগঠন। কারণ তারা লড়াই করছে আমার শত্রুর সাথে। ঐ নিউজটা প্রচার হলে আমার বন্ধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, লাভবান হবে আমার শত্রু। ইহুদী ও খৃষ্টানদের শত্রুকে EWNA সাহায্য করবে?’
‘প্রশ্নটা সাহায্য করার নয়, প্রশ্ন হলো, নিউজটা যখন বন্ধ করা যাচ্ছে না, তখন আমরা প্রচার করার মধ্যে ক্ষতি কতটুকু।’
‘শত্রুকে সাহায্য করা কি ক্ষতি নয়? পশ্চিমী একটা সংবাদ মাধ্যম এ আত্মঘাতি কাজ করবে কেন?
‘স্যরি, মিঃ আইজাক, আমরা ব্যাপারটাকে ঐ দৃষ্টিতে দেখছিনা।
‘কি দৃষ্টিতে দেখছেন? সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে? এ সাংবাদিকতা কোত্থেকে পেয়েছেন? কিভাবে চালাচ্ছেন তা একবার মনে করুন মিঃ মিখাইল।’
‘থ্যাংকস মিঃ আইজাক, আপনার কথা আমি বুঝেছি, আমার বোর্ডকে আমি তা বলব।’
‘থ্যাংকস মিঃ মিখাইল’ বলে আইজাক তার টেলিফোন রেখে দিল।
মিখাইলও টেলিফোন রাখল। তার মুখ গম্ভীর। আইজাকের শেষ কথায় মিখাইল দারুণভাবে অপমান বোধ করেছে।
আইজাক শেষে যা বলেছেন তা মিখাইল বোর্ডকে জানাল।
একমাত্র হারজল ছাড়া সকলের মুখেই একটা অস্বস্থি ফুটে উঠল। আইজাকের ক্ষমতা আছে, তবে তা এইভাবে প্রকাশ করা শোভন হয়নি। উত্তেজিত হয়ে উঠল গোয়েরিং। বলল, আইজাক যত বড়ই হোন, একটা সংবাদ সংস্থার চীফের সাথে এই ভাবে কথা তিনি বলতে পারেন না।’
মিখাইল গোয়েরিংকে শান্ত হবার অনুরোধ করে বলল, ‘আমি জানি আইজাক অত্যন্ত ক্ষমতাশালী, তার সাথে ঝগড়া করে আমরা ব্যবসা চালাতে পারব না। অন্যদিকে এরপর চেয়ারম্যান হিসেবে তার সাথে আলাচনায় যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং আমি এই মুহূর্ত থেকে পদত্যাগ করছি।’
হেনরি হারজল ছাড়া অন্য সবাই মিখাইলের এই কথার পর বলল, ‘এ অপমান আপনার নয় চেয়ারম্যান, গোটা কোম্পানী অপমানিত হয়েছে, আমরা অপমানিত হয়েছি। আপনি যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে আমাদেরও পদত্যাগ করতে হবে।’
‘দেখুন, আমরা ব্যবসা করছি। মাথা গরম করলে চলবে না। দেখি আমি আলোচনা করছি আইজাকের সাথে।’ বলল হারজল।
একটু থেমেই উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে হারজল বলল, ‘মাফ করুন আমাকে, আমি একটু একান্তে তার সাথে আলোচনা করতে চাই। তাকে মতে আনতে হবে।’
বলে হারজল টেলিফোন করার জন্য পাশের কক্ষে চলে গেল।
ফিরে এল মিনিট দশেক পরে।
মুখে হাসি। বলল, মধ্যবর্তী একটা ব্যবস্থা হয়েছে। ১০টার মধ্যে আমরা সোর্সকে কিছু জানাবোনা। তাতে তারা বুঝবে আমরা নিউজ প্রচার করছিনা। এরপর যা তারা বলেছে সেই মোতাবেক অন্য নিউজ এজেন্সীকে তারা ডকুমেন্টগুলো দেবে। যদি দেয়, নিশ্চয় সে এজেন্সী নিউজ প্রচার করবে। সেটা দেখার পর আমরাও নিউজটা প্রচার করব।’
‘আমরা তো তা’হলে পেছনে পড়ে যাব।’ বলল গোয়েরিং।
‘ঠিক আছে ক্ষতি নেই একটু পেছনে পড়লে’, বলল মিখাইল।
মিখাইলের মুখে হাসি। বলল, ‘ভয় নেই গোয়েরিং WNA এবং EWNA, নিউজ তাদের টেলিপ্রিন্টারে তোলার সংগে সংগেই আমি জানতে পারব। আমাদের সব রেডি আছে। আমরা খুব পেছনে পড়ব না।’
‘মিখাইল তা’হলে গোয়েন্দা পুষছ না?’ বলল জেমস কিট।
‘ব্যবসায় আজ একটা কঠিন প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় গোয়েন্দা পুষলে, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় গোয়েন্দা থাকবে না কেন?’
সবাই হেসে উঠল।
মিটিং শেষ হলো।
হাসি মুখে বেরিয়ে এল সবাই। শুধু ইহুদী হেনরী হারজলের মুখটাই ভার।