অনেক ভেবেই জেন সিন্ধান্ত নিয়েছে, বিষয়টা জোয়ানদের জানাবে না। ওরা যদি বিষয়টার সাথে জড়িত হয়, ডকুমেন্ট উদ্ধারের জন্যে ওরা জেনদের বাড়ীতে অভিযান চালায় বাইরে থেকে এসে, তাহলে তাদের বাড়ীতে বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার চেয়ে জেন একাই চেষ্টা করবে। সফল না হবার কোন কারণ সে দেখে না। তার নিজের বাড়ীর একটা জিনিস সে সরিয়ে ফেলতে পারবে না কেন?
এই সিন্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার পিতার দিকটা এবং পরিবারের দায়িত্বের প্রশ্ন তাকে কিছুটা দোটানায় ফেলে দিল। সে কার্ডিনাল পরিবারের মেয়ে। আজ তার দেশ স্পেন যে রাষ্ট্রীয় বুনিয়াদের ওপর দাঁড়িয়ে, সে বুনিয়াদ তার পূর্ব পুরুষের হাতে গড়া। তার ওপর এই বুনিয়াদকে পাকাপোক্ত করার জন্যে সে সংগঠন কাজ করছে সেই কু-ক্ল্যাস্ক-ক্ল্যান –এর উপদেষ্টা তার আব্বা। সুতরাং তেজস্ক্রিয় ক্যাপসুল স্থাপনের প্ল্যান ও ডায়াগ্রাম জোয়ানদের হাতে পাচার করে তাদের সাহায্য করার অর্থ হবে তার পিতা, তার পরিবার এবং রাষ্টীয় বুনিয়াদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা।
কিন্তু এই যুক্তি জেনের মনে বেশীক্ষণ টিকেনি। জেনের বিবেক এই যুক্তির বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে বলেছে, কোন অন্যায় সে করছে না, বরং অতি জঘন্য ও সর্বনাশা এক অন্যায়ের প্রতিবিধানই করতে যাচ্ছে। তার পিতা এবং তার পিতার সংগঠন একটা জাতি শুধু নয়, তার দেশের ঐতিহাসিক সম্পদের বিরুদ্ধেও এক হিংসাত্মক ও ধ্বসাত্মক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। এর প্রতিবাদ করা, একে বানচাল করার চেষ্টা করা মানুষ হিসেবেও তার নৈতিক দায়িত্ব। তাছাড়া সে শুধু মানুষ নয়, সে জেন। জোয়ানকে সে সর্বস্ব দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছে।
সিদ্ধান্ত নেবার পর জেন একটা অসুবিধা অনুভব করতে লাগল। সর্বক্ষণ তার মনে হতে লাগল এই বুঝি তার মনের কথা সবাই জেনে ফেলল, ধরা পড়ে গেল বুঝি সে। বাপ, মা সহ বাড়ীর লোকদের চোখের দিকে তাকাতে তার ভয় হতে লাগল। তার মনে হতে লাগল তার চোখ দেখে সবাই তাকে বুঝে ফেলবে। আগের মত সবার সাথে সে মন খুলে কথা বলতে পারে না। মনে হয় তাদের সাথে তার কত ব্যবধান। এই অবস্থায় শুয়ে শুয়ে অথবা পড়ার টেবিলে বসে সময় কাটাতে লাগল সে।
সেদিন শুয়ে আছে জেন। বাম হাতটা তার কপালে। চোখ দু’টি তার বোজা।
জেনের মা ঘরে ঢুকল। জেনের খাটের পাশে এসে কিছুক্ষণ দাড়াল। তার চোধ দু’টি নিবদ্ধ জেনের মুখে। জেনের মুখ ম্লান, ঠোঁট শুকনো। জেনের মা চিন্তিত মুখেই জেনের ঘরে প্রবেশ করেছে। তার চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
ধীরে ধীরে গিয়ে জেনের মা জেনের মাথার পাশে বসল।
সাড়া পেয়েই চোখ খুলল জেন।
‘আম্মা তুমি’ বলে সে উঠে বসতে গেল।
তার মা তাক হাত দিয়ে আটকে আবার শুইয়ে দিল। বলল, ‘শুয়ে থাক মা, আমি মাথায় হাত বলিয়ে দেই।’
‘আহা, আম্মা আমি ছোট নাকি যে, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে ঘুমিয়ে দেবে?’
‘খুব বড় হয়েছ না? তাই বুঝি মাকে কোন কথা কোন চিন্তার ভাগ দাওনা?’
মায়ের কথায় চমকে উঠল জেন। মা সব বুঝে ফেলল নাকি। মায়ের দিকে না তাকিয়েই একটু শাস্ত গলায় বলল, ‘তুমি কি বলছ আম্মা, আমি কোন চিন্তার ভাগ দেইনা?’
জেনের মা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছিল। বলল, ‘মায়ের চোখ ফাঁকি দেয়া যায় না জেন। অনেক দিন থেকে বিশেষ করে গত কয়েকদিন থেকে তোমাকে অত্যন্ত মন মরা দেখছি। সেই হাসি নেই, উচ্ছলতা নেই। কথাও তেমন বল না কারো সাথে। দেখলে মনে হয় পালিয়ে বেড়াচ্ছ। ক’দিন থেকেই বুঝছি, বড় একটা কিছু হয়েছে বা ঘটেছে। কি ঘটেছে মা?’
মনে মনে শংকিত হলো জেন। মায়ের আদরে, স্নেহ মাখা নরম কথায় তার মনটা ভিজে উঠল। জেন বলল, ‘সত্যি আমার তেমন কিছু ঘটেনি মা। এমনি শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।’
‘জেন তোমার অসুখ হলে মুখ দেখলেই আমি বুঝি, তোমার শরীর খারাপ হয়নি। আমি তোমার মন খারাপ দেখছি।’
জেনের মা থামল।’
জেন নিরব। কি উত্তর দেবে মায়ের কথার। সত্যিই মায়ের চোখ ফাকি দেয়া যায় না। পাকি সে দিতে পারেনি। এখন মাকে সে কি বলে বোছাবে। কোন কথাই তার মুখে এল না। চোখ বুজল সে।
জেনের মা একটু মাথা নিচু করল। তার কপালে চুমু খেল। বলল, মা জেন তুমি আমার একমাত্র সন্তান। তোমার মলিন মুখ যে আমি সইতে পারি না। আমি বুঝতে পারছি তুমি কষ্ট পাচ্ছ। তোমার এ কষ্ট যে আমাকে কষ্ট দেয় তোমার চেয়ে বেশী।
জেনের চোখ ফেটে অশ্রু নেমে এল। মাথা তুলে মায়ের কোলে মুখ গুজল। বলল, আম্মাগো, তুমি চিন্তা করো না, কষ্ট পেয়ো না। আমি মানুষ, মানুষের জীবনে কিছু চিন্তা ভাবনা, দুঃখ কষ্ট থাকেই।
তার মা তৎক্ষনাৎ কিছু বলল না। জেনের মাথায় তখনও তার মা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দৃষ্টিটা তার উদাস। তার উদাস, শূণ্য দৃষ্টিটা দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছে। এক সময় সে ধীরে ধীরে বলল, তুমি তোমার বাপের মত হয়েছ। একটা কথা বললে তা থেকে আর নড় চড় নেই।’
একটু থামল জেনের মা। থেমেই আবার শুরু করলো, ‘সোনার টুকরো ছেলে জোয়ান। তোদের দু’জন কে ঘিরে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম। সে স্বপ্ন নির্মম ভাবে ভেঙে গেল।’
জেন মুখ তুলে মায়ের দিকে একবার চাইল। দেখল মায়ের বেদনা পাংশু মুখ এবং শূণ্য দৃষ্টি। জেনের ভিতরের বিস্ময় ও আনন্দের একটা শিহরন। তার মাও ভেবেছে তাদের নিয়ে।
মায়ের কোলে আবার মাথা রেখে জেন বলল, ‘মাগো, তুমি সত্যিকার মা। কিন্তু আম্মা, স্বপ্নটা ভেঙে গেল কেন?’
‘সব স্বপ্ন সব সময় সফল হয় না, চাওয়ার সাথে পাওয়া সব সময় মেলে না’।
‘এই না মেলানোর অংকটা যদি গায়ের জোরে হয়, চাপিয়ে দেয়া হয়, অন্যায় হয়, তাহলেও কি সান্তনা নিতে হবে?’
‘অনেক সময় নিতে হয় মা। সবাইকে নিয়ে সমাজকে নিয়েই তো আমরা!’
‘অনেক নিতে পারে, কিন্তু সবাই তা নাও পারে।’
জেনের মা তার শূন্য চোখটা ফিরিয়ে আনলো বাইরে থেকে। তাকাল জেনের দিকে। জেনের মাথাটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল, ‘মা আমার, এমন কথা বল না। অনেক অংক আছে, কোনদিনই মেলানো যায়না।’
জেন কোন কথা বলল না।
জেনের মা জেনের মুখ ঘুরিয়ে তার দিকে নিল। বলল, ‘ক’দিন থেকে তোমার মুখে হাসি দেখিনি। একটু হাস মা।’
জেন হাসতে চেষ্টা করল। হাসিটা তার কান্নার চেয়েও করুণ দেখাল।
জেনের মা মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। বলল, ‘এত ব্যথা তোর বুকে, অথচ আমাকে কেন জানাস নি এতদিন?’ ভারি কাঁপা কণ্ঠস্বর জেনের মার।
জেনের চোখ ভরে উঠেছিল অশ্রুতে। তাড়াতাড়ি মুছে বলল, ‘আম্মা তুমি চিন্তা করো না, কষ্ট পেয়ো না আম্মা। আমাকে তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।’
‘কোন বাপ মা তা পারে বুঝি! যখন মা হবে…’
এই সময় পরিচারিকা দড়জায় এসে দাঁড়াল। বলল, ‘সাহেবের টেলিফোন মেম সাব।’
জেনের মা জেনের কপালে চুমু খেয়ে তাকে কোল থেকে নামিয়ে রেখে বলল, আসি মা, দেখি ওদিকে।
চলে গেল জেনের মা।
মায়ের সাথে কথা বলে, মাকে কিছু কথা বলতে পেরে অনেকটা হালকা অনুভব করছে জেন। ভালোই হলো, জোয়ানের সাথে তার ব্যাপারটা অন্তত তার মা জানে।
মন হালকা হওয়ার সাথে জেন আশংকাও অনুভব করল। তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে, বেশি দেরী করা ঠিক হবে না, কখন কি ঘটে বলা যায় না। আম্মা যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে ঊঠেছে তাতে যদি বলে বসে যে, যাও কিছুদিন বেড়িয়ে এস। আম্মা কিছু বললে তাঁকে ঠেকানো যায় না, কান্নাকাটি শুরু করেন।
সবদিক চিন্তা করে জেন ঠিক করল, আজ রাতেই সে তার মিশনে হাত দেবে।
জেন তার মিশন নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক চিন্তা ভাবনা করেছে।
তাদের ভূগর্ভস্থ কক্ষ তাদের বাড়ীর পেছন অংশে। আব্বা আম্মা ও তার শয়ন ঘর এবং কিচেনের নিচে বিস্মৃত জায়গা নিয়ে বিশাল ভূগর্ভস্থ কক্ষটি।
ভূগর্ভস্থ কক্ষে নামার দু’টি পথ। একটি সিড়ির গোড়ায়, অন্যটি তার আব্বার ঘরের মধ্য দিয়ে। সিড়িরগোড়ায় ভূগর্ভস্থ কক্ষে নামার যে পথ আছে, তা বিশাল এক লোহার পাল্লা দিয়ে বন্ধ। লোহার পাল্লাটি দেড় ইঞ্চি পুরু। দরজাটি স্বয়ংক্রিয়, এর সুইচ আছে জেনের আব্বার ঘরে দেয়ালের এক কেবিনে লুকানো সুইচ বোর্ডে। আরেকটি দরজা দেয়ালের সাথে তৈরী একটা আলমারির মধ্যে দিয়ে।
আলমারিটি খুললেই নিচে নামার সিড়ি বেরিয়ে পড়ে। এই পথ দিয়েই সাধারণ বা প্রাত্যহিক প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ কক্ষে নামা হয়। আর সিঁড়ির দরজাটি কোন বিপদকালীন সময়ে পরিবারের সকলের এক সাথে ব্যাবহারের জন্যে। সিঁড়ির দরজা দিয়ে নামা যাবেনা কোন ক্রমেই। সিঁড়ির দরজা খোলার যে সুইচ জেনের আব্বার ঘরে আছে তা অন করলে সংগে সংগে বাড়ির সব প্রান্তে ছড়িয়ে পরার মত একটা সাইরেন বেজে উঠে। অতএব ভূগর্ভস্থ কক্ষে নামার একটাই পথ খোলা। সেটা তার আব্বার ঘরের সেই আলমারির মধ্য দিয়ে।
জেন ঠিক করল তার আব্বার ঘরের এই পথই ব্যবহার করবে। আই পথ দিয়ে নামার অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। বিভিন্ন কারনে কখনও একা, কখনও অন্যের সাথে বহুবার সে ভূগর্ভস্থ কক্ষে এ দরজা দিয়ে নেমেছে।
কিন্তু কখন নামবে? তার আব্বার সামনে দিয়ে ভূগর্ভস্থ কক্ষে যাওয়া যাবেনা। অহেতুক কৌতুহলী হয়ে উঠতে পারেন অথবা সাথে তিনিও নামতে পারেন। সুতরাং নামতে হবে তার আব্বা যখন বাড়ী না থাকেন তখন এবং সব দিক দিয়ে সেই উপযুক্ত সময় সন্ধ্যারাত। জেনের আব্বা প্রায় সন্ধ্যারাতে বাইরে থাকেন। হয় কোন মিটিং এ যান, নয়তো ক্লাবে।
কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান এখনও জেন করতে পারেনি। তেজস্ক্রিয় পাতার প্ল্যান ও ডায়াগ্রাম ভূগর্ভস্থ কক্ষের কোথায় খুঁজে পাবে সে। এই প্রশ্নের সমাধান তখনও সে করতে পারেনি।
রাত তখন ৮টা।
তার ঘরে শুয়ে ছিল জেন।
তার আব্বা-আম্মা মার্কেটে যাচ্ছে। জেনকেও বলেছিল যেতে, কিন্তু জেন রাজী হয়নি। খুব খুশী হয়েছে জেন। তার আব্বা-আম্মা একসাথে যাওয়ায় তার দারুন সুবিধা হবে। নিরাপদে কাজ সারতে পারবে। জেন তার আব্বা-আম্মাদের যাওয়া টের পেয়ে উঠে দাঁড়াল।
এক পা, দু’পা করে দরজার দিকে পা বাড়াল, বুকটা তার কেঁপে উঠল। কেমন একটা আড়ষ্টতা ও ভয় এসে তাঁকে ঘিরে ধরল। মন বলল, যা সে করতে যাচ্ছে, তা প্রকাশ হওয়ার পর কিংবা ধরা পড়লে তার কি হবে।
কিন্তু ভয় ও পরিণতির কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলল সে। জোয়ানকে সাহায্য করার, আহমদ মুসাকে সাহায্যে করার, মজলুমদের সাহায্য করার এর চেয়ে বড় সূযোগ আর সে পাবে না।
জেন প্রস্তুত হয়ে তার আব্বার ঘরের দরজার নব ঘুরিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। প্রতিদিন শতবার করে এ ঘরে প্রবেশ করে কিন্তু আজকের প্রবেশটা তার সেরকম নয়। বুঝতে পারছে তার হার্ট বিট বেড়ে গেছে। গোটা দেহে অপরাধী সুলভ একটা আড়ষ্টতা।
মেঝেটা পার হয়ে ওয়াল আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়াল জেন।
হাতল ধরে টেনে দেখল আলমারি বন্ধ।
আলমারির কন্বিনেশন লকের কোড সে জানে। লক ঘুরিয়ে কম্বিনেশন মিলিয়ে সে খুলে ফেলল আলমারি। আলমারিতে প্রবেশ করল জেন। আলমারির পর নিচে নামার সিঁড়ির মুখে আরেকটা দরজা। দরজাটি পুরো স্টিলের, বোমায় ভাঙবে না এমন। সে দরজাতেও কম্বিনেশন লক। কিন্তু লক করা নেই দরজা।
জেন ভারি দরজা টেনে খুলে সিঁড়িতে নামল। সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল জেন। কিন্তু সিঁড়ির গোড়ায় গিয়ে আবার উঠে এল জেন ওপরে সিঁরির দরজায়। সিঁড়ির মুখের দরজা লাগিয়ে হুড়কো এটে দিল দরজায়। সে ভেতরে থাকা অবস্থায় কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্যেই এই ব্যবস্থা।
দরজা বন্ধ করে ভূগর্ভস্থ কক্ষে নেমে এল জেন।
বিশাল কক্ষ।
শুধু মূল্যবান জিনিসের স্টোর হিসাবে নয়, আপাতকালীন আশ্রয়স্থল হিসাবেও এই ভূগভস্থ কক্ষ তৈরী হয়েছে। বিশাল কক্ষটিতে ছয়টি শয্যাপাতা আছে। খাদ্য সংরক্ষণের জন্যে রয়েছে অনেক গুলো বিরাট রিফ্রেজারেটর। কাপড়-চোপড় রাখার জন্যে রয়েছে কয়েকটি আলমারি। কয়েকটি র্যাকে রাখা আছে বিভিন্ন তৈজসপত্র। র্যাক, আলমারি, রিফ্রেজারেটর সবগুলোই কক্ষের দেয়ালে নির্মিত কেবিনে রাখা।
কোথায় রাখা আছে ডকুমেন্টগুলো? কোথেকে খোঁজা শুরু করবে সে। হঠাৎ কক্ষের নিরাপত্তা-সিন্দুকের কথা মনে পড়ল জেনের। পরিবারের সকল মূল্যবান দলিল এবং দ্রব্য সেই নিরাপত্তা সিন্দুকে রাখা আছা। জেনের মুখ উজ্জল হয়ে উঠল, সন্দেহ নেই তেজস্ক্রিয় পাতার সেই অতিমূল্যবান ডকুমেন্ট ঐ নিরাপত্তা সিন্দুকেই থাকবে। খুশীতে তুড়ি বাজাতে গিয়ে হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল জেনের মুখ। এ নিরাপত্তা সিন্দুক কোথায় আছে, কিভাবে খুলতে হয় জানা নেই জেনের। এতক্ষনে তার মনে হল বিরাট ভূল করেছে সে। কিন্তু ফিরতেও আর মন চাইল না। সে আজ যে সূযোগ পেয়েছে, এ সূযোগ দু’চারদিনের মধ্যে আবার যে পাবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
সুতরাং এসে পড়েছে যখন তখন যে দায়িত্ব সে পালণ করতে চেয়েছে, তা সম্পূর্ন সে করবেই।
হঠাৎ তার মাথায় এলো, ওপরে সিঁড়ির গোড়ার ভূগর্ভস্থ কক্ষের দরজা খোলার ব্যবস্থা তো স্বয়ংক্রিয়। অন্য এক জায়গায় রক্ষিত একটা সুইচ টিপলেই সেই দরজা খুলে যায়। নিশ্চয় নিরাপত্তা সিন্দুক খোলার জন্যে সে রকম কোন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাই থাকবে। নিরাপত্তা সিন্দুকের সুইচ এ ঘরেরই কোথাও রয়েছে। তাকে এখন সে সুইচ খুঁজে বের করতে হবে।
কোথায় থাকতে পারে সে সুইচ? ঘরের দেয়ালে কোথাও সুইচ বক্স আছে কি? তৈজস পত্রের র্যাক থেকে একটা ছোট্ট হাতুড়ি নিয়া জেন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দেওয়াল পরীক্ষা করতে লাগল। ফাঁপা শব্দ কোথাও থেকে আসে কি না। সুইচ বাক্স খুঁজতে গিয়ে নিরাপত্তা সিন্দুকের সন্ধান সে পেল। নিরাপত্তা সিন্দুকের পাল্লার রং দেয়ালের মত হলেও হাতুড়ির ঘা পড়ায় তা ঠন্ ঠন্ করে উঠল। নিরাপত্তা সিন্দুকের আকার হবে চারফিট বাই দুই ফিটের মত। ভূগর্ভস্থ কক্ষের চার দেওয়াল জেন তন্ন তন্ন করে দেখল, কোথাও সুইচ বক্স পেল না। তারপর সে কক্ষের মেঝেতে পাতা শয্যাগুলোর তলাসহ মেঝের প্রতিইঞ্চি হাতুড়ি পিটিয়ে পরীক্ষা করল সেখানে কোন সুইচ বাক্স আছে কিনা। হতাশ হল জেন, মেঝেতে কোন সুইচ বক্স নেই।
পরিশ্রম ও উত্তেজনায় ইয়ার কন্ডিশন ঘরেও ঘেমে উঠেছে জেন। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল অনেক সময় খরচ হয়েছে। সময় নষ্ট করা যায় না। আবার লেগে গেল সুইচ বক্স তালাশে। এবার তৈজস্পত্রের র্যাক, কাপড় চোপড়ের আলমারি, একনকি বড় বড় রিফ্রেজারেটরের আশ-পাশ পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজল। না কোথাও কোন সুইচের নাম গন্ধ নেই।
ক্লান্ত জেন একটা বিছানায় এসে ধপাস করে শুয়ে পড়ল। হতাশা এসে তাকে ঘিরে ধরল। ঘরে কোন জায়গাই খুঁজতে সে বাকি রাখেনি। বহু সময় সে নষ্ট করেছে। তাঁর আব্বা আম্মা বাড়ী ফিরলে তাঁর মিশন পন্ড হয়ে যাবে। উদ্বেগ বোধ করল সে। তাহলে সে কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে!
জেন যে বিছানায় শুয়েছিল তার পাশেই নিরাপত্তা সিন্দুকের দেয়ালটি। জেন হতাশ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকাল। আহমদ মুসা হলে নিশ্চয় এটা খোলার বিকল্প কোন ব্যবস্থা করতে পারতো। কিন্তু তাঁর মাথায় তো কিছু আসছে না। পিটিয়ে তো পুরু ষ্টিলের নিরাপত্তা সিন্দুক ভাঙা যাবে না। একবার জেনের মনে হলো নিরাপত্তা সিন্দুকের সুইচ তাঁর আব্বার ঘরের কোথাও তো লুকানো থাকতে পারে! এ সম্ভাবনা জেন উড়িয়ে দিতে পারলো না। কিন্তু তাঁর আব্বার ঘর খুজে সুইচ বের করে সিন্দুক খোলার মত সময় আর নেই। তাহলে তাকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হবে? আবার কবে সুযোগ পাবে সে!
অস্থির ও ভাঙা মন নিয়ে শোয়া থেকে উঠল জেন। ধীর পায়ে আবার গিয়ে দাঁড়াল নিরাপত্তা সিন্দুকের সামনে। আবার তীক্ষভাবে নজর বুলাল সে নিরাপত্তা সিন্দুকের গায়ে। মেঝের দুই ইঞ্চি ওপর থেকে শুরু হয়েছে নিরাপত্তা-সিন্দুক ও মেঝের মাঝখানে দুই ইঞ্চি পরিমান জায়গার এক স্থান জুড়ে আঙুলের শীর্ষ ভাগের একটা ছবি দেখতে পেল জেন। কেও যেন সূক্ষ্ম পেন্সিল স্কেচে বুড়ো আঙুলের নখ এঁকে রেখেছে। ভালো করে বুঝা যায় না, দেখতে কতকটা ছায়ার মত।
জেন বসে পড়ল মেঝেয়। আরো ভাল করে নজর বুলালো স্কেচের ওপর। দেখল, অলস হাতের বিশৃঙ্খল আচড়ে কেউ বুড়ো আঙুলের শীর্ষ ভাগের স্কেচটি এঁকেছে। খুব যত্ন ও পরিষ্কার ছাপ এতে নেই। দেখলে মনে হয় খেয়ালি কেউ বসে বসে এই কাজ করেছে। হাত দিলেই যেন ওটা মুছে যাবে।
জেন স্কেচটার ওপর আঙুল দিয়ে ঘষা দিল। না মুছল না। পাকা কালির পারমানেন্ট একটা ছবি ওটা।
কেন এই ছবিটি আঁকা এখানে? এমনি এমনি কি কেউ এঁকে রেখেছে এটা এখানে? কেন?
হঠাৎ জেনের মনে হলো এটা কোন ইংগিত হতে পারে না কি? হাতের চাপ দেওয়ার কাজ একটু বড় হলে মানুষ বুড়ো আঙুল দিয়েইতো করে। আনন্দের একটা শিহরণ কেহ্লে গেল জেনের দেহে।
বুড়ো আঙুলের স্কেচের শীর্ষ ভাগ ওপরের দিকে। জেন তার বাম হাতের বুড়ো আঙুল ঠিক স্কেচের ওপর সেট করে প্রচন্ড এক চাপ দিল চোখ বন্ধ করে। উত্তেজনায় তার বুক টিপ টিপ করে উঠল।
আনন্দের সাথে চোখ খুলল জেন। দেখল, নিরাপত্তা সিন্দুকের সামনের পাল্লাটা পাশের দেয়ালের ভেতরে ঢুকে গেছে। বেরিয়ে পড়েছে নিরাপত্তা সিন্দুক। নিরাপত্তা সিন্দুক বহু কক্ষ বিশিষ্ট একটি আলমারি। কক্ষ গুলির কোনটায় কি আছে তাঁর সংকেত দেয়া নেই।
জেন ঘেমে উঠেছে। যার জন্যে তার এত চেষ্টা তাকি আসলেই এখানে আছে! পাবে কি সে!
নিরাপত্তা সিন্দুকের কক্ষগুলোর কোনটাই বন্ধ নয়। একে একে খুলতে লাগল জেন। কোনটাতে অলংকার, কোনটাতে স্বর্ণ, কোনটাতে টাকা ভর্তি। জেন খুজছে কাগজ, এসব নয়। মাঝখানে কয়েকটি কেবিনে কাগজপত্র পেল। সেগুলো জেনের আব্বার কোম্পানীর ও নানা ধরনের দলিলপত্র।
অবশেষে পেল জেন তেজস্ক্রিয় পাতার সেই প্ল্যান ও ডায়াগ্রাম। একটা কেবিনে বড় খামের মধ্যে পেল ডকুমেন্ট গুলো।
ডকুমেন্টগুলো আবার খামে ভরে ভাজ করে পকেটে পুরে উঠে দাঁড়াল জেন। ঠিক এই সময়ই তাঁর আব্বার ঘরের সাথে সংলগ্ন সিড়ি মুখের ষ্টিলের দরজায় ধাক্কা দেয়ার শব্দ হলো।
চমকে উঠলো জেন।
ধাক্কা অব্যাহত ভাবে হতে লাগল।
জেন বুঝল তার আব্বা এসেছে। কিন্তু বুঝতে পারলো না, এত তাড়াতাড়ি তাঁর তো বুঝার কথা নয়। সে আসার সময় আলমারি বন্ধ করে দিয়ে এসেছে। কেউ ভেতরে ঢুকেছে এটা তার বুঝার কথা নয়। কিন্তু আসার সংগে সংগে তিনি বুঝলেন কি করে।
হঠাৎ জেনের মনে পড়ল, নিরাপত্তা সিন্দুকের ওপেনিং সিষ্টেমের সাথে অনেক ক্ষেত্রে সাইরেন যুক্ত থাকে যা চোর ডাকাতদের ধরতে সাহায্য করে। এখানেও নিশ্চয় তাহলে সাইরেন যুক্ত আছে। সুইচ টেপার সংগে সংগেই তা বেজে উঠেছে। তাঁর প্রবেশ ধরা পড়ার এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা।
সিঁড়ি মুখের দরজায় এখন হাতুড়ী পেটার প্রচন্ড শব্দ হতে শুরু করেছে।
জেন সিদ্ধান্ত নিল এই ডকুমেন্ট সহ তাকে ধরা পড়া চলবেনা। আর ডকুমেন্ট সরাবার এই সু্যোগ ব্যর্থ হলে একে আর উদ্ধার করাও যাবে না। সুতরাং যে মিশনে সে এসেছে সেখান থেকে পিছপা হবে না।
কিন্তু কিভাবে বেরুবে সে এখান থেকে। তাঁর বেরুবার পথ বন্ধ। হঠাৎ জেনের মনে পড়ল, এই কক্ষের ছাদের পেছন দিকের প্রান্তে কক্ষ থেকে বেরুবার জরুরী দরজা আছে। সেটা ভেতর থেকে হুড়কো দিয়ে বন্ধ। এ দরজা দিয়ে বেরুলে তাদের বাড়ীর পেছন দিকের একটা করিডোরে পৌঁছা যায়।
বের হবার এ বিকল্প পথের কথা মনে হবার সাথে সাথে জেন সিদ্ধান্ত নিল এ পথেই সে বেরুবে। একবার তাঁর মনে হলো এ পথে যদি সে চোরের মত পালিয়ে যায়, তাহলে আবার সে ফিরবে কি করে! সে যে এখানে প্রবেশ করেছে তা ইতিমধ্যে প্রকাশ না হয়ে থাকলে প্রকাশ হয়ে পড়বেই। এছাড়া তার মনে হলো, বিকল্প পথে বেরুবার পথ বন্ধ করতেও কেউ আসতে পারে। কিন্তু জেন আবার ভাবল, হয়তো আসতে পারে, কিন্তু এছাড়া তো তার বেরুবার আর কোন পথ নেই। আবার তার মনে খোঁচার মত বিধল, সে এভাবে পালালে আবার ফিরবে কি করে? কিন্তু পরক্ষনে এ চিন্তা ঝেড়ে ফেলে জেন ভাবল পরিণতির চিন্তা আমি করি না। ট্রিয়েষ্টে জোয়ানকে বাঁচাবার জন্যে যখন পিস্তল হাতে বেরিয়েছিলাম, তখন মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হয়েই বেরিয়েছিলাম। আমি যদি জীবন দিয়েও ওদের উপকার করতে পারি, আমার পরিবারের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি, সেটাই হবে আমার জীবনের সার্থকতা।
সিদ্ধান্ত নিয়েই জেন সিঁড়ির গোড়ার দরজা দিয়ে এ কক্ষের প্রবেশের দ্বিতীয় দরজাটি হুড়কো দিয়ে বন্ধ করে কক্ষ থেকে বেরুবার জন্যে জরুরী দরজার দিকে ছুটল। যাবার সময় একটু আলমারি থেকে ওভারকোট নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নীল।
কক্ষের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে একটা সংকীর্ণ সিঁড়ি উঠে গেছে ছাদে বেরুবার জরুরী দরজা পর্যন্ত। সিঁড়ি বেয়ে উঠে জেন হুড়কো খুলে নিচে ফেলে দিল।
জরুরী দরজাটা বর্গাকার। এখানেও স্টিলের পাল্লা, একদম এয়ার টাইট। জেন সিড়িতে দাঁড়িয়ে দু’হাত দিয়ে পাল্লা আলগা করার চেষ্টা করল। কিছুই হলো না। পরে জেন সিড়ির আরও এক ধাপ উঠে ঘাড় বাঁকিয়ে মাথা নিচু করে কাঁধ লাগাল দরজার পাল্লায়। তারপর সর্বশক্তি লাগিয়ে কাঁধ দিয়ে ঠেলল দরজা। কাঁধ ব্যাথায় টন টন করে উঠল, কিন্তু দরজা সরা দূরে থাক সামান্য নড়লও না।
জেন সিড়ির একধাপ নিচে নেমে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ভাবল, দরজা মরিচা বা অন্য কোন ভাবে আপনা আপনি আটকে যাবার কথা নয়। নিশ্চয় হুড়কো ছাড়াও আর কিছু বাড়তি ব্যবস্থা আছে দরজা বন্ধ রাখার।
জেন দ্রুত নজর বুলাল বর্গাকার দরজা এবং তার দেয়ালের চারপাশে। অত্যন্ত শ্যেন দৃষ্টি জেনে যাতে তিল পরিমান কোন অস্বাভাবিকতাও তার নজর না এড়ায়। দরজার দেয়ালে একটি বালিকার ছোট্ট মুখাবয়বের ওপর গিয়ে জেনের চোখ আটকে গেল। এ মুখাবয়বটিও পেন্সিল স্কেচে করা মনে হল। মুখবয়বটির কপালে লাল একটি ফোঁটা। স্কেচের আয়তন অনুসারে ফোঁটাটা বেশ বড়।
ফোঁটাটির দিকে তাকিয়ে জেনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। চটকরেই তার মনে হল লাল, ফোটা বা বোতাম টিকে ক্যামফ্লেজ করার জন্যেই মুখায়বটি আঁকা হয়েছে।
চিন্তার সাথে সাথেই জেন তার ডান হাতের তর্জনি দিয়ে লাল বোতামটির ওপর চাপ দিল। সংগে সংগেই অস্পষ্ট একটা শিষ দিয়ে উঠে স্টিলের বর্গাকার দরজাটা সরে গেল তার মাথার ওপর থেকে।
প্রথমে একটু মাথা তুলে জেন দেখল চার দিকটা। না কেউ কোথাও নেই। করিডোর একদম ফাকা।
এই সময় জেনদের বাড়ীর ভেতরের অংশ থেকে, একটা পায়ের শব্দ এলো কেউ যেন এদিকে এগিয়ে আসছে।
জেন লাফ দিয়ে করিডোরে উঠে এল।
যে করিডোরে জেন এসে দাঁড়াল তার একটি মাথা দক্ষিণ দিকে জেনদের বাগানের দিকে চলে গেছে। অন্য মাথাটি বাড়ীর পূবদিকে ঘুরে গাড়ী বারান্দা অর্থাৎ উত্তরের লনে গিয়ে শেষ হয়েছে।
জেন করিডোরে উঠে ওভার কোট দিয়ে গা মাথা ভাল করে ঢেকে নিয়ে দৌড় দিল গাড়ী বারান্দার দিকে।
জেন কিছুটা এগিয়েছে, এই সময় বেছন থেকে চিৎকার উঠল, কে কে?
জেন চিনতে পারল তার আব্বার কণ্ঠস্বর।
জেন দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিল।
পেছন থেকে পায়ের শব্দ এল। জেন বুঝতে পারল তার আব্বাও ছুটছে তার পেছনে।
জেন শেষ মুহুর্তে ধরা পড়তে চায় না। খোয়াতে চায় না ডকুমেন্ট।
জেন করিডোরের মুখে পৌঁছে দেখল তার গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে সামনেই। জেন ছুটল গাড়ীর দিকে।
জেন গাড়ীর দরজা খুলেছে। এক পা ঢুকিয়েছে গাড়ীর ভেতরে, সেই সাথে মাথাটাও। একটা পা তখনও বাইরে।
এই সময় করিডোরের মুখ থেকে চিৎকার এল, পালাল, পালা। সেই সাথে এল গুলির শব্দ।
জেন তার বাইরের পাটি তুলতে যাচ্ছিল এই সময় গুলি এসে বিদ্ধ করল সে পা। গুলি লাগল হাটুর ঠিক নিচেই।
জেনের দেহ কেঁপে উঠলো। একটা চিৎকার বেরুল মুখ থেকে। কিন্ত তার পরেই জেন নিজেকে সামলে নিল। সে দাঁতে দাঁত চেপে দু’হাত দিয়ে পাটা তুলে নীল গাড়ীর ভেতরে। তারপর ডান হাত দিয়ে টেনে দরজা বন্ধ করে দিল গাড়ীর।
কম্পিত দেহটাকে জেন গাড়ীর সিটের সাথে সেঁটে রেখে গাড়ী স্টার্ট দিল।
জেনের নজরে এল সামনেই দারোয়ান বোবার মত দাঁড়িয়ে আছে। তার দু’টি চোখ ভয়ে বিস্ফারিত।
দারোয়ানের পাশ দিয়ে তীর বেগে জেনের গাড়ী খোলা গেট দিয়ে গিয়ে পড়ল রাস্তায়।