মারিয়া গ্রাউন্ড ফ্লোরের ড্রইং রুমের দরজায় উদ্বিগ্ন ভাবে দাঁড়িয়েছিল। দৃষ্টি বাইরে লনের ওপর। লনের মাঝখান দিয়ে একটা কংক্রিটের রাস্তা বন্ধ গেটে গিয়ে স্পর্শ করেছে। মারিয়ার দৃষ্টি বন্ধ গেটের ওপর গিয়ে বার বার আছড়ে পড়ছে।
মারিয়ার বাইরের চেয়ে ভেতরটা বেশী চঞ্চল। একটা অশুভ আশংকা এসে তার হৃদয়ে বার বার উকি দিচ্ছে। বড় কিছু ঘটেনি তো আহমদ মুসার? ভাবতে গিয়ে হৃদয় কেঁপে উঠল মারিয়ার। আহমদ মুসা যে মিশন নিয়ে কু-ক্ল্যাক্স-ক্ল্যানের হেড কোয়ার্টারে গেছে, তাতে বেশী সময় লাগার কথা নয়। বেশ রাত থাকতে এজন্যেই তিনি বেরিয়েছেন যাতে রাত শেষ হবার আগেই ফিরতে পারেন। রাত সাড়ে তিনটায় বেরোনা দেখে মারিয়া এটাই বুঝেছে। তিনি বার বারই বলেছেন, একটা বিষয় অনুসন্ধানের জন্যেই তিনি যাচ্ছেন, কোন সংঘাতে জড়াতে নয়। তাই তিনি যেমন রাতের আঁধারে গেছেন, তেমনি কাউকে সাথেও নিতে চাননি। কিন্তু এত দেরী হচ্ছে কেন? তিনি কি আর কোথাও গেলেন? না তা কেন হবে? যে বিষয়ের সন্ধানে তিনি গেছেন, সে জন্যে যদি কোথাও যেতে হয়, তাহলে ফিরে এসে সবাইকে বলে যাবেন সেটাই স্বাভাবিক। আবার সেই কাল উদ্বেগটা এসে জেঁকে বসল মারিয়ার হদয়ে। আর চিন্তা করতে পারেনা মারিয়া। হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে একটা বেদনা গুমরে উঠছে।
সিঁড়ি দিয়ে উপর থেকে নেমে এল, সুমানো। সুমানো মারিয়ার আত্মীয় এবং বান্ধবী। বেড়াতে এসেছে গতকাল।
সুমানো এসে দাঁড়াল মারিয়ার পেছনে। ধীরে ধীরে হাত রাখল মারিয়ার কাঁধে।
মারিয়া একটা হাত তুলে ধীরে ধীরে সুমানোর হাতটা ধরল। মুখ ফিরালোনা, চোখও তার ফিরালোনা পথের ওপর থেকে।
‘ওপরে চল, খাবে। ফুফু আম্মা অপেক্ষা করছেন।’ বলল সুমানো।
মারিয়া কিছু বলল না।
সুমানো মারিয়ার ঘাড়ে চাপ দিল। বলল, ‘মারিয়া চল।’
‘আমি ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’ না তাকিয়ে নিবির্কার কন্ঠে বলল মারিয়া।
‘সত্যিই ভাইয়ার জন্য?’ সুমানোর ঠোঁটের কোণে হাসি।
মারিয়া মুখ ফিরাল সুমানোর দিকে। অন্য সময় হলে মারিয়া হাসত কিংবা শাসন মূলক কোন কথা ছুড়ে দিত সুমানোর দিকে। কিন্তু এখন তেমন কিছুই করল না মারিয়া। একটা খবরের জন্য অপেক্ষা করছি।’
শুকনো কন্ঠস্বর মারিয়ার। চেহারাও তার পাংশু।
সুমানোর ঠোটের হাসি মিলিয়ে গেল। গম্ভীর হল সুমানো। বলল, ‘ফুফু আম্মার কাছে কিছু শুনলাম। তিনি কে মারিয়া? মারিয়া এমন উদ্বিগ্ন হয়ে কারো পথ চেয়ে থাকতে পারে ভাবতে আমার বিস্ময় লাগছে।’
‘তিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন, আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন সুমানো।’
সুমানো মারিয়ার গলা দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘শুধু সে জন্যই কি মারিয়া? আমিও তোমার মত মেয়ে, তোমার চোখ যে কথা বলছে তাতো আমি পড়ছি মারিয়া। সে জন্যই জানতে চেয়েছিলাম, কে তিনি? তিনি অবশ্যই সাধারণ মানুষ হবেন না।’
‘সত্যিই সুমানো আমার চোখে তা তুমি দেখছ! কিন্তু আমি তো চাইনি আমার চোখে তা আসুক। এ আমার ব্যর্থতা সুমানো।’ মারিয়ার কন্ঠ কান্নার মতই করুণ।
‘কেন মারিয়া, লুকানোর এ প্রয়াস কেন তোমার?’
‘থাক সুমানো।’
থামলো মারিয়া। পরক্ষণেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, ‘ঐযে ভাইয়ার গাড়ী, ভাইয়া আসছেন।’
গাড়ী ধীর গতিতে এসে গাড়ী বারাসায় দাড়াঁল।
মারিয়ার চোখ ছুটে গেল গাড়ীর ভেতরে। ড্রাইভিং সিটে একজনই মানুষ-মারিয়ার ভাই ফিলিপ। ধক্ করে উঠল মারিয়ার বুকটা। তার ভাইজান কি খবর নিয়ে আসছে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসতে চাইল মারিয়ার।
গাড়ী থেকে নামল ফিলিপ। তার সুন্দর চেহারার উপর একটি কাল মেঘ।
গাড়ী থেকে নেমেই দরজায় দাঁড়ানো বোনের দিকে তাকাল। বোনের স্লান মুখ ও চোখের শংকিত দৃষ্টির দিকে চোখ পড়তেই তার বুকের বেদনাটা আরও চিন্ চিন্ করে উঠল।
ঠোঁটের কোণে একটু হাসি টেনে এগুলো দরজার দিকে ফিলিপ। কিন্তু তার ঠোঁটের এই হাসিটা কান্নার মত করুণ মনে হলো।
মারিয়ার পাশে সুমানো নিবার্ক দাড়িঁয়েছিল। ফিলিপকে দেখে সেও একটা খারাপ খবর আঁচ করেছে।
দরজায় হেলান দিয়ে স্থানুর মত দাড়িঁয়ে থাকা বোনের একটা হাত ধরে ফিলিপ বলল, ‘চল বসি।’
সোফায় এসে বসল তারা। বসে সোফায় হেলান দিয়ে মুহূর্ত কয়েক মাথা নিচু করে থেকে বলল, ‘আমাদের আশংকা ঠিক মারিয়া, উনি আটকা পড়েছেন।’
মারিয়ার মুখে একটা কাল ছায়া নেমে এল।
‘ফিলিপ থেমেছিল।’ একটা বাক্য উচ্চারণ করে, একটু দম নিয়ে সে শুরু করল, ‘বুট পালিশ কারীর ছদ্মবেশে একজন লোক পাঠিয়েছিলাম ওদের হেড কোয়ার্টারে। তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি ভেতরে। গেটের প্রহরী বলেছে, ‘আজ অফিস বন্ধ। অফিসের লোক ছাড়া অন্য সকলের ঢোকা নিষিদ্ধ।’
‘কেন? কেন? জিঞ্জেস করেছিল আমার লোক।
‘রাতে বড়কর্তার ঘরে লোক ঢুকেছিল ধরা পড়েছে।’
‘তো কি হয়েছে, এমনতো কতই হচ্ছে। পুলিশে দিলেই তো ঝামেলা যায়।’
‘বড় কর্তার অফিস ঘরে চোর ঢুকবে নাকি, এটা অন্য ব্যাপার। যাও ভাগ।’
ফিলিপ থামল।
কিছুক্ষণ পর ধীর কন্ঠে মারিয়া বলল, ‘ভাইয়া এ নিয়ে উনি তিনবার ওদের হাতে পড়লেন। আর ট্রিয়স্টের ব্যাপার নিয়ে ওরা ওঁর ওপর ভীষণ ক্ষেপে আছে। আমার……’
কথা শেষ করতে পারলোনা মারিয়া। কন্ঠ তার রুদ্ধ হয়ে এল।
‘তুমি যে আশংকা করছ, ওমন কিছু ঘটেনি মারিয়া।’
একটু থামল ফিলিপ। তারপর আবার শুরু করল।
‘লোকটি ফিরে এলে একটা সাপ্লায়ার কোম্পানীর এজেন্ট ছদ্মবেশে আমি গিয়েছিলাম ওদের হেড কোয়ার্টারে। আমাকে রিসেপশন পর্যন্ত যেতে দিয়েছিল। রিসেপশনের লোকটিও আমাকে ঐ কথায় বলেছিল। শুনে আমি বলেছিলাম, এ নিয়ে এত রাখ-ঢাক কেন, পুলিশে দিলেই ঝামেলা চুকে যায়।’
রিসিপশনিস্ট লোকটি বলেছিল,‘পুলিশে দেব কেন? আমরা পুলিশের বাবা। ও রকম কত লোককে আমরা হজম করেছি।’
‘তাহলে আর সমস্যা কি?’ বলেছিলাম আমি।
‘সমস্যা হলো বড় কর্তা নেই। আমেরিকা গেছেন। তার নির্দেশ ছাড়া কিছুই এখানে হয় না।’
‘ও বুঝেছি, তিনি না ফেরা পযর্ন্ত চোরকে রাখতে হবে, তাই এই সতর্কতা।’
‘আঃ কি বললেন, ও ব্যাটা চোর না। চোর না হলে কি কোন মাথা ব্যাথা হতো।’ তাহলে?
‘সাংঘাতিক এক লোক সে। কি মুসা যেন নাম। আমাদের বহু লোককে খুন করেছে। বড় কর্তা এবার ওকে চিবিয়ে খাবে।’
‘সাংঘতিক লোক তো তাহলে, পালাবে না তো? আপনাদের কড়াকড়ি ঠিকই হয়েছে।’
‘দু’বার ও পালিয়েছিল। আর নয়। এবার মাটির নিচে অন্ধকুপে রাখা হয়েছে। স্বয়ং শয়তান এলেও উদ্ধার করতে পারবে না।’
‘অন্ধকূপ? সে আবার কি জিনিস? কোথায়?’
প্রশ্ন করেই ভেবেছিলাম এমন খোলামেলা প্রশ্ন বোধ হয় ঠিক হয়নি। আমার মতলব সে ধরে ফেলতে পারে।
কিন্তু সে পারেনি ধরতে, গল্প তাকে পেয়ে বসেছিল। সে যে অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ লোক, তা প্রকাশের একটা সুযোগ পাওয়ায় সে খুশী হয়ে উঠেছিল। বলল, ‘অন্ধকূপ সাংঘাতিক শত্রুর জন্য কয়েদ খানা। এই অফিসের মাটির নিচেই।’
এই সময় সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পেলাম। কে যেন নামছে। আমি চলে এলাম।’
‘সুতরাং,’ বলতে শুরু করল ফিলিপ। ‘মুসা ভাইয়ের ক্ষতি হয়নি নিশ্চিত, ভাসকুয়েজ না আসা পযর্ন্ত,তার কোন ক্ষতি হবারও সম্ভাবনা নেই।’
‘খবর পেলে ভাসকুয়েজ দেখো কালই চলে আসবে।’ম্লান কন্ঠে বলল মারিয়া।
‘জানি।কিন্তু কাল আসার আগেই আমারা কাজ সেরে ফেলব। আমি ওদের হেড কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে যিয়াদের ওখানে গেছিলাম। সব আলোচনা হয়েছে। আজ রাতেই আমারা হানা দেব।
মারিয়ার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তার চোখে ভেসে উঠল আহমদ মুসার চেহারা। সেই সাথে মনে পড়ল আহমদ মুসার সাথে নির্জন তার সময় গুলোর কথা। একজন মানুষ যে অমন অবিশ্বাস্য পবিত্র চরিত্রের হতে পারে, তা না দেখলে মারিয়ার কোন দিনই বিশ্বাস হতো না। তার হৃদয়ের এক গহীন প্রান্ত থেকে একটি পরিচিত বেদনা চিন চিন করে উঠল। কেঁপে উঠল মারিয়া। এই বেদনাকে সে প্রাণপণে চেপে রাখতে চায়।
ফিলিপ তাকিয়েছিল বোনের দিকে। ফিলিপ সব জানে। কিন্তু কোন দিন কিছু বলেনি অতি আদরের ছোট বোনটিকে। মারিয়া নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে এটা ফিলিপ জানে।
নিরবতা সুমানো। সে মারিয়ার পাশে বসেছিল। বলল, ‘ভাইয়া লোকটি দেখছি মারিয়াকে নিঃশেষ করেছে, তোমাকে ও পাগল করেছে। আবার অন্ধকুপে তার বন্দি হবার ভয়ানক সংবাদও তুমি দিলে। কে এই সাংঘাতিক লোকটি ভাইয়া?’
‘তুমি মারিয়ার কাছে শোন। আমার কাজ আছে যাই।’ বলে ফিলিপ উঠে দাঁড়াল।
‘মারিয়া মুখ খুলছেনা। জান ভাইয়া, মারিয়া এখন পর্যন্ত কিছু খায়নি, নিচে থেকে উপরে উঠেনি।’
ফিলিপ চলে যাচ্ছিল। থমকে দাঁড়াল। ঘুরে দাঁড়াল মারিয়ার দিকে।
মারিয়া মুখ নিচু করে আছে।
ফিলিপ দু’ধাপ এগিয়ে গেল মারিয়ার দিকে। নরম কণ্ঠে বলল, ‘বোন মারিয়া উনি শুনলে ভীষণ রাগ করবেন। চিন্তার কি আছে? তুমি তো জান, এর চেয়ে কত বড় বড় বিপদের তিনি মোকাবেলা করেছেন।’
বলে ফিলিপ আবার ঘুরে দাঁড়াল। চলতে শুরু করল সে।
ফিলিপের কথা শেষ না হতেই মারিয়া দু’হাতে মুখ ঢেকেছিল।
সুমানো ফিলিপের সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়েছিল। ফিলিপ চলে গেলে সুমালো মারিয়ার পাশে বসল।
ফিলিপের কথার প্রথম বাক্যটি মারিয়ার হৃদয়ের গহীনে লুকানো বেদনাকেই গিয়ে আঘাত করল। ‘তিনি ভীষণ রাগ করবেন’ কথাটা মারিয়াকে গত রাতের কথাটা স্মরণ করিয়ে দিল। ঐ রাতে সিড়ির গোড়ায় মারিয়াকে একা দাঁড়িয়ে থাকাকে আহমদ মুসা অন্য ভাবে নিয়েছিল। তার মনের এই ভাবটা কণ্ঠের কঠোরতার মধ্যে দিয়ে প্রকাশও পেয়েছিল। কোন কথা না বলে কান্না চেপে মারিয়া ছুটে ওপরে উঠে গিয়ে বিছানায় আছড়ে পড়ল। অনেক কান্দলো মারিয়া। এখন ফিলিপের কথায় মারিয়ার সেই কান্না উথলে উঠলো। তার মন যেন চিত্কার করে বলে উঠল, মারিয়ার না খেয়ে থাকার কথা শুনে ঐভাবে উনি ভুল বুঝবেন এবং রাগ করবেনই তো?
সুমানো মারিয়ার পাশে বসেই বুঝতে পারল মারিয়া কাঁদছে।
সুমানো মারিয়ার হাত দু’টি সরিয়ে নিল তার মুখ থেকে। অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে মারিয়ার মুখ।
মারিয়া তাড়াতাড়ি তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে ফেলল।
সুমানো মারিয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিয়ে বলল, ‘আমি শুধু তোর বোন না, বয়সে কিছু বড়ও। বলবিনা কি হয়েছে তোর? কিছু বুঝিনি তা নয়, কিন্তু এ কান্নার অর্থ আমি বুঝিনা।’
সোজা হয়ে বসল মারিয়া। বলল, ‘আমাকে মাফ কর সুমানো। এ কিছু না। আমার একটা অন্যায়। একটা অন্যায়ের আগুনে আমি জ্বলছি। চল উঠি।’
উঠতে চাইল মারিয়া।
কিন্তু সুমানো তাকে ধরে রাখল। বলল, জানি, তুমি না বললে আর হ্যাঁ বলানো যাবে না। কিন্তু উনি কে তাকি জানতে পারবনা?
‘তিনি যেমন মহৎ, যেমন বিরাট, যেমন বিস্ত্মৃত, তেমনি হতভাগা। সর্বক্ষণ বিপদ তাঁকে তাড়া করে ফিরছে।’ এক ধরণের উদাস কণ্ঠ মারিয়ার।
‘মারিয়া! এটা কারো কোন পরিচয় হলো? এ পরিচয় দিয়ে কাউকে চেনা যায়?’
মারিয়া সুমানোর দিকে ফিরল। নরম কণ্ঠ বলল, ‘আহমদ মুসাকে জান তুমি?’
সুমানো চোখ বন্ধ করল। ভাবল একটু। তারপর বলল, ‘এই কিছুদিন আগে টাইম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিন এক আহমদ মুসাকে নিয়ে কভারস্টোরী করেছিল। সেতো জগৎ কাঁপানো এক বিপ্লবী। তুমি কি তার কথা বলছ?’
‘আমি তোমার সেই জগৎ কাঁপানো বিপ্লবীর কথাই বলছি।’ মারিয়ার ঠোঁটের কোণে বেদনাময় এক হাসি।
‘কি বলছ মারিয়া, ইনি তিনি?’ সুমানোর কণ্ঠ কাঁপা এবং চোখে মুখে অপার বিস্ময়।
‘হাঁ সুমানো, ইনিই সেই তিনি।’
সুমানো কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলনা। যেন বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে তার।
মারিয়া কিছু বলার জন্যে মুখ খুলছিল। সুমানো বাধা দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘একটু ভাবতে দাও মারিয়া আমাকে। কোথায় কিংবদন্তীর নায়ক হয়ে ওঠা সেই আহমদ মুসা; কোথায় মাদ্রিদ, কোথায় আমার বোন মারিয়া- আমি অংক মিলাতে পারছিনা। আমি স্বপ্ন দেখছিনা তো?’
‘স্বপ্ন নয়, কিন্তু স্বপ্নের চেয়েও বিস্ময়কর।’ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল মারিয়া।
‘কিন্তু তোমার কান্নাকে আর বিস্ময়কর মনে হচ্ছে না আমার কাছে। শুধু এখন বড় বেশি জানতে ইচ্ছে করছে- তুমি যা বলতে চাও না সেই কাহিনী, কি করে এই অসম্ভব মিলন ঘটল। সেই কাহিনী।’
বলতে শুরু করল মারিয়া। ঘাড় ফিরিয়ে সুমানোর দিকে চেয়ে বলল, ‘দুনিয়াতে যত কাহিনী সৃষ্টি হচ্ছে তার অল্পই মানুষ জানে সুমানো।’
সুমানো কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু মারিয়া এক দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল।
পলায়নপর মারিয়ার দিকে চেয়ে হাসল সুমানো, কিন্তু সে হাসিতে আনন্দ নয় বেদনা ঝরে পড়ল। তার মুখ থেকে স্বগতঃ উচ্চারিত হলো, ‘বোন আমার কাছ থেকে পালালে, কিন্তু জীবন থেকে পালাতে পারবে না।’