আলী এফেন্দি বলল, যতদূর জানতে পেরেছি WRF এবং ‘মোসাদে’র সম্মিলিত তৎপরতায় এটা সম্ভব হয়েছে। টার্কিস সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, গতকাল তুরস্ক ইরাক সীমান্ত থেকে একটি কফিন ইরান দিয়ে কাস্পীয়ান সাগরে অপেক্ষমান একটি সাবমেরিনে উঠেছে। সে কফিনের আবরণে যদি হাসান তারিককে পাচার করা হয়ে থাকে, তাহলে বলা যায়, আমাদের এ অধিবেশন সংক্রান্ত সকল খবর ও তথ্য দিয়ে ডজঋ ‘মোসাদ’কে সাহায্য করেছে, বিনিময়ে ‘‘মোসাদ’’ হাসান তারিককে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।
-WRF এর এ তৎপরতার কথা আরও সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না হাসান তারিকের উপর WRF এর এ বিশেষ আগ্রহ কেন? বলল আহমদ মুসা।
একটু চিন্তা করে আলি এফেন্দি বলল, আপনার নিশ্চয় মনে আছে, দু’ বছর আগে জর্দানে বিদেশী কূটনীতিক মার্থাল খিরভ গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে ধরা পড়েছিলেন। একমাত্র হাসান তারিকের কৃতিত্বেই দলিল দস্তাবেজসহ খিরভ হাতে নাতে ধরা পড়ে এবং সে দুর্ঘটনার সময় বিশ্বব্যাপী বহু আলোচিত দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা কূটনীতিক ব্রিগেডিয়ার ক্লিমোভিচ হাসান তারিকের গুলিতেই নিহত হয়েছিল। আমার মনে হয় হাসান তারিকের উপর তারই প্রতিশোধ নিতে এসেছে বেসরকারী আন্তর্জাতিক কম্যুনিষ্ট সন্ত্রাসবাদী সংস্থা WRF। খিরভ ও ক্লিমোভিচ উভয়েই যে এ বেসরকারী কম্যুনিষ্ট সংগঠন WRF এরও সদস্য ছিল, তা আমরা আজ নিঃসন্দেহে ধরে নিতে পারি।
আলী এফেন্দি থামল। ধীরে ধীরে মুখ তুলল আহমদ মুসা। মনে হল চিন্তার কোন অতল থেকে জেগে উঠল সে। বলল ধীরে ধীরে, ক্লিমোভিচকে অনুসরণ করে তার গোপন আড্ডার হানা দিয়ে একটি পরিকল্পনার দুর্বোধ্য নক্সা পেয়েছিল হাসান তারিক। কিন্তু নক্সাটি হাসান তারিক রাখতে পারেনি। সে দিনই গভীর রাতে আক্রান্ত হয়েছিল সে। ক্লিমোভিচের লাশ পেছনে রেখে তারা নক্সাটি নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। কিছুক্ষণ থামলো আহমদ মুসা। আবার শুরু করল সে, পরিকল্পনার মূল কপি আমাদের কাছে না তাকলেও এর একটি ফটো কটি আমাদের কাছে আছে। এ কথা ওরা জানে কিনা জানি না, তবে আমার মনে হয় যদি প্রতিশোধ গ্রহণই WRF এর লক্ষ্য হত, তাহলে হাসান তারিককে ধরে না নিয়ে গিয়ে হত্যা করতে পারত। কিন্তু তা তারা করেনি। এ থেকে প্রমাণ হয়, পরিকল্পনার নক্সা সম্পর্কে হাসান তারিককে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। হাসান তারিক পরিকল্পনার কতদূর জেনেছে, আর কেউ এর কোন কিছু জানতে পেরেছে কিনা, ইত্যাদি জেনে না নেয়া পর্যন্ত তারা হাসান তারিককে কিছুতেই হত্যা করবে না।
-পরিকল্পনা কি সম্পর্কিত এবং আপনারা কি জানতে পেরেছেন তা থেকে? উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে মোস্তফা আমিন।
-পরিকল্পনাটির অর্থ আজও আমাদের কাছে পরিস্কার নয়। মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো থেকে আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত তানজানিয়া এবং মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত অধ্যুষিত মুসলিম বিশ্বের মানচিত্র। এর মাঝে অসংখ্য সাংকেতিক চিহ্ন এবং লাল ও কালো রেখার অসংখ্য সারি। সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে নিঃসন্দেহে আমরা বুঝতে পারছি, পরিকল্পনাটি আসলে WRF এর এবং তা যদি হয়, এর অর্থ আমাদের কাছে পরিস্কার, সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে ওরা চক্রান্তের জাল বিছিয়ে রেখেছে। পরিকল্পনাটির নক্সাটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। কিন্তু তার আগে হাসান তারিক সম্বন্ধে আমাদের … কথা শেষ হলো না আহমদ মুসার। ঘরে পাথরের দেয়ালে এক বিশেষ স্থানে লাল সংকেত জ্বলে উঠল। আহমদ মুসা সেদিকে তাকিয়ে বলল, আকাশে নিশ্চয় কোথাও হানাদার ইসরাইলী বিমান দেখা গেছে। আমাদের রাডারের সংকেত ওটা। আসুন বলে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। সবাই উঠে এল ছাদে। পশ্চিম আকাশ তখন লাল হয়ে উঠেছে।
জর্দান নদীর ওপারে বোমা ফেলেছে ইহুদিরা নিশ্চয়। বলল আহমদ মুসা।
ঘড়ি দেখে আব্দুর রশিদ বলল, আজ রাত ১২ টায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ইউনিট জেরুজালেমের তিন মাইল পশ্চিমে নতুন ইসরাইল ঘাঁটি আক্রমণ করেছে। মনে হয় তার দায়িত্ব পালন করে ইতিমধ্যেই নদীর ওপারে ফিরে এসেছে। ইসরাইলী বিমানগুলো মনে হয় তাদেরকেই তাড়া করে এসেছে। এসময় রাডার পর্যবেক্ষক আবদুল্লাহ মাসুদ এসে জানাল, জর্দান নদীর আড়াই মাইল পশ্চিমে আরব পল্লীর উপর বোমা ফেলেছে ইসরাইলীরা। সবাই চোখ ফিরাল লাল হয়ে ওঠা দিগন্তের দিকে। ঐ লাল আগুন কত অসংখ্য নারী পুরুষ আর অসহায় শিশুর রক্ত চুষে নিল কে জানে। কারো মুখে কোন কথা জাগলো না। বোধ হয় সবার মনে একই প্রশ্নঃ এ অগ্নি পরীক্ষা আর কতদিন চলবে? এ কোরবানীর শেষ হবে কবে?
৪
রাতের তেলআবিব। রাস্তার জন সমাগম কমে গেছে। পিচ ঢালা কালো মসৃণ রাস্তা। পাশে সরকারী বিজলি বাতিগুলো আলো আঁধারীর সৃষ্টি করেছে। বাতাস গায়ে লাগে না, কিন্তু কেমন যেন একটু ঠান্ডার আমেজ অনুভূত হয়। সাগর ভেজা বাতাসের স্বাদ এতে অনেকটা। এ বাতাসে নরম ঘুমের পরশ অনুভব করা যায়।
এক অভিজাত আবাসিক এলাকা। কদাচিত দু’একটি বাড়ির জানালা দিয়ে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। এ এলাকার রাস্তায় লোকের চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। ডি,বি, রোড। মাঝে মাঝে দু’একটা গাড়ী চোখ ধাঁধিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে চলে যাচ্ছে। ডি,বি, রোড থেকে একটা ছোট রাস্তা বেরিয়ে কিছু দক্ষিণে গিয়ে শেষ হয়েছে। রাস্তাটি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে সুন্দর একাট দু’তালা বাড়ী।