শহীদ সাহেব ও হাশিম সাহেবের কামরায় দুইটা মাইক্রোফোন লাগিয়ে দেওয়া হল। হাওড়া থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রায় সমস্ত স্টেশনেই শহীদ সাহেব ও তার দলবলকে সম্বর্ধনা জানাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশে মুসলিম লীগের জয়ে সমস্ত ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে একটা বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। জহিরুদ্দিনকে হাশিম সাহেবের কামরার কাছেই থাকার বন্দোবস্ত হয়েছিল। কারণ, তাকে সমস্ত পথে উর্দুতে বক্তৃতা করতে হবে। সেই একমাত্র বক্তা যে উর্দু, বাংলা ও ইংরেজিতে সমানে বক্তৃতা করতে পারত। কলকাতার কোনো মহল্লায় সভা হলে জহির উর্দু ও আমি বাংলায় বক্তৃতা করতাম! নূরুদ্দিন, জহিরুদ্দিন, নূরুল আলম, শরফুদ্দিন, কিউ. জে. আজমিরী, আনোয়ার হোসেন (এখন ইস্টার্ন ফেডারেল ইস্যুরেন্স কোম্পানির বড় কর্মকর্তা), শামসুল হক সাহেব, খোন্দকার মোশতাক আহমদ ও অনেক লীগ কর্মীর মধ্যে মুর্শিদাবাদের কাজী আবু নাছের, আমার মামা শেখ জাফর সাদেক আরও অনেকে পূর্ব থেকেই প্রস্তুত হয়েছিলেন, দিল্লি যাবার অনুমতিও পেয়েছিলেন। এছাড়া যে সকল ছাত্র আমাদের হাওড়া স্টেশনে বিদায় দিতে এসেছিল, তারাও স্পেশাল ট্রেনে ভাড়া লাগবে না শুনে এক কাপড়েই ট্রেনে চেপে বসল। প্রায় আটদশজন হবে, তাদের না’ বলার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। তারা ভাল কর্মী। নারায়ে তকবির’, মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জিন্দাবাদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ’ ধ্বনির মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিল।
সমস্ত ট্রেনে মাইক্রোফোনের হর্ন লাগানো ছিল। জহির, আজমিরী ও আমি বেশি শ্লোগান দিতাম মাইক্রোফোন থেকে। প্রত্যেক স্টেশনে আমাদের গাড়ি থামাতে হত যদিও সব জায়গায় গাড়ি দাঁড় করাবার কথা ছিল না। হাজার হাজার লোক শহীদ সাহেবকে ও বাংলার মুসলিম লীগকে সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য হাজির হয়েছিল। সকালে যখন পাটনায় পৌঁছালাম তখন দেখি সমস্ত পাটনা স্টেশন লোকে লোকারণ্য। তারা বাংলাকা মুসলমান জিন্দাবাদ’, শহীদ সোহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’, এই রকম নানা শ্লোগান দিতে থাকে। আমাদের প্রত্যেকের খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে বিহার মুসলিম লীগ এবং প্রত্যেককে একটা করে ফুলের মালা উপহার দিয়েছে। আমাদের ট্রেন যে সময় মত দিল্লিতে পৌঁছাতে পারবে না এটা আমরা বুঝতে পারলাম। অনেক দেরি হবে। আমরাও যেখানেই কিছু লোক স্লোগান দেয়, সেখানেই ট্রেন থামিয়ে দেই। এজন্য শহীদ সাহেব রাগ করলে আমি বললাম, কয়েক ঘণ্টা ধরে লোকগুলি দাঁড়িয়ে আছে। আপনাকে দেখার জন্য কত দূর দূর থেকে এরা এসেছে! আর আমরা এক মিনিটের জন্য। ট্রেন না থামালে কত বড় অন্যায় হবে। যাহোক, এমনি করে সারা রাত জনসাধারণ ছোট ছোট স্টেশনেও জমা হয়ে আছে। আমাদের ট্রেন দেখলেই তারা বুঝতে পারত। এলাহাবাদ স্টেশনে আমাদের সমস্ত ট্রেনটাকে নতুন করে ফুল দিয়ে তারা সাজিয়ে দিয়েছিল। পথে পথে বিহার ও ইউপি থেকে অনেক ছাত্র আমাদের ট্রেনে উঠে পড়েছিল। তাদের অনেকের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল, পাকিস্তান হওয়ার পরেও আমাদের বন্ধুত্ব বজায় ছিল। এদের অনেকে পাকিস্তানে চলে এসেছে।
দিল্লি যখন পৌঁছালাম তখন দেখা গেল, যেখানে সকালে আমরা পৌঁছাব সেখানে বিকালে পৌঁছালাম। আট ঘণ্টা দেরি হয়েছে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কনভেনশন বন্ধ করে রেখেছেন আমাদের জন্য। সকাল ন’টায় শুরু হবার কথা ছিল, আমাদের ট্রেন থেকে সোজা সভাস্থলে নিয়ে যাওয়া হল। দিল্লির লীগ কর্মীরা আমাদের মালপত্রের ভার নিলেন। আমরা বাংলায় শ্লোগান দিতে দিতে সভায় উপস্থিত হলাম। সমস্ত সদস্য জায়গা থেকে উঠে সম্বর্ধনা জানাল। জিন্নাহ সাহেব যেখানে বসেছেন, তাঁর কাছেই আমাদের স্থান : যখন উর্দু শ্লোগান উঠত, আমরাও তখন বাংলা স্লোগান শুরু করতাম।
জিন্নাহ সাহেব বক্তৃতা করলেন, সমস্ত সভা নীরবে ও শান্তভাবে তাঁর বক্তৃতা শুনল। মনে হচ্ছিল সকলের মনেই একই কথা, পাকিস্তান কায়েম করতে হবে। তার বক্তৃতার পরে সাবজেক্ট কমিটি গঠন হল। আট তারিখে সাবজেক্ট কমিটির সভা হল। প্রস্তাব লেখা হল, সেই প্রস্তাবে লাহোর প্রস্তাব থেকে আপাতদৃষ্টিতে ছোট কিন্তু মৌলিক একটা রদবদল করা হল। একমাত্র হাশিম সাহেব আর সামান্য কয়েকজন যেখানে পূর্বে স্টেটস’ লেখা ছিল, সেখানে স্টেট’ লেখা হয় তার প্রতিবাদ করলেন; তবুও তা পাস হয়ে গেল।১৫ ১৯৪০ সালে লাহোরে যে প্রস্তাব কাউন্সিল পাস করে সে প্রস্তাব আইনসভার সদস্যদের কনভেনশনে পরিবর্তন করতে পারে কি না এবং সেটা করার অধিকার আছে কি না এটা চিন্তাবিদরা ভেবে দেখবেন। কাউন্সিলই মুসলিম লীগের সুপ্রিম ক্ষমতার মালিক। পরে আমাদের বলা হল, এটা কনভেনশনের প্রস্তাব, লাহোর প্রস্তাব পরিবর্তন করা হয় নাই। জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে ঐ প্রস্তাব পেশ করতে জনাব মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অনুরোধ করলেন, কারণ তিনিই বাংলার এবং তখন একমাত্র মুসলিম লীগ প্রধানমন্ত্রী।
কাউন্সিল প্রস্তাব
Whereas in this vast subcontinent of India a hundred million Muslims are the adherents of a faith which regulates every department of their life educational, social, economic and political–whose code is not confined merely to spiritual doctrines and tenets or rituals and ceremonies and which stands in sharp contrast to the exclusive nature of Hindu Dharma and Philosophy which has fostered and maintained rigid caste system for thousands of years, resulting in the degradation of 60 million human beings to the position of untouchables, creation of unnatural barriers between man and man and superimposition of social and economic inequalities on a large body of the people of this country and which threatens to reduce Muslims, Christians and other minorities to the status of irredeemable helots, socially and economically;