আশা করা যায় এই পুনরাবৃত্তি তার জীবনে বার বার ঘটতেই থাকবে, চর্চা যদি বন্ধ না করে।
অন্যান্য অনুশীলন আর টেকনিকে যাবার আগে একটা কথা। প্রশ্নটা সম্ভবত আপনার মনেও উঁকি দিয়েছে। বলেছি, ছবিগুলোকে বাঁ দিক থেকে পর্দায় নিয়ে এসে ডান দিক দিয়ে বের করে দেবেন। কেন?
কারো কারো গবেষণায় দেখা গেছে, গভীর লেভেলে পৌঁছে আমাদের মন উপলব্ধি করে, সময় বাঁ দিক থেকে ডান দিকে বয়ে যাচ্ছে। অন্য কথায়, ভবিষ্যৎ আমাদের বাঁ। দিকে আর অতীত আমাদের ডান দিকে, এই ধারণা জন্মায়। সম্ভব হলে পরে এটা নিয়ে আরো আলোচনা করবো আমরা। তার আগে হাতের অন্যান্য কাজ সারতে হবে।
০৩. স্মরণশক্তি ও তিন আঙুলের কেরামতি
মন-নিয়ন্ত্রণ টেকনিকের সাহায্য নিলে, টেলিফোন গাইড ব্যবহার করার দরকার হবে না আপনার, সবগুলো টেলিফোন নাম্বার মনে থাকবে। স্বভাবতই, আপনার এই ক্ষমতা দেখে তাজ্জব হয়ে যাবে বন্ধুরা। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আসছে, আপনি কি আসলেও টেলিফোন নাম্বার মনে রাখতে চান? আমি জানি, অনেকে চায় না। কোনো নাম্বার দরকার হলে গাইডের বা নোট বুকের পাতা উল্টে সেটা বের করে নেয় তারা। আগেই বলেছি, ফল পেতে হলে বাসনা থাকা চাই। টেলিফোন নাম্বার স্মরণ রাখার বাসনা অনেকের ততোটা জোরালো নয়। কিন্তু টেলিফোন নাম্বার দরকার হলেই যদি প্রতিবার শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটতে হতো, বাসনাটা তাহলে জোরালো না করে উপায় থাকতো না।
বাসনা, বিশ্বাস আর প্রত্যাশা এই তিন বিধির কারণে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কাজে ছাড়া এই টেকনিক ব্যবহার করা উচিত নয়। এই তিন বিধি ঠিকমতো পালন না করলে কোনো কাজে সাফল্য আশা করা বোকামি হয়ে যাবে। আমরা অনেকেই আমাদের স্মরণশক্তি বাড়াতে চাই, কারণ এই শক্তিটা যথেষ্ট পরিমাণে নেই বলে মনে করি। কিন্তু এই অভাববোধটাই যথেষ্ট নয়। কোন্ বিশেষ ক্ষেত্রে স্মরণশক্তি বাড়লে আপনি সত্যি উপকৃত হবেন, উপকৃত হতে চান, সেটা আগে নির্ধারণ করতে হবে আপমাকে। ভেবে চিন্তে দেখুন, কি ধরনের বিষয় স্মরণ করতে না পারার দরুন আপনাকে বিপদে বা অসুবিধায় পড়তে হয়। তারপর পরিমাপ করুন, এই অক্ষমতা দূর করার জন্যে নিজের মধ্যে কতোটুকু আগ্রহ এবং বাসনা রয়েছে। পরিমাণ যদি কম হয়, বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন।
আগের পরিচ্ছেদের অনুশীলন গুলো আপনি যদি চর্চা করে দক্ষতা অর্জন করে থাকেন, হয়ত অপ্রত্যাশিতভাবে আপনার স্মরণশক্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। আলফায় পৌঁছে মনের পর্দায় ছবি দেখতে এবং অতীতের ঘটনা জ্যান্ত করে তুলতে শেখা, এগুলো আপনাকে নতুন যোগ্যতা এনে দিয়েছে। আলফা লেভেলের এই কাজকর্ম বিটা লেভেলের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে, কাজেই আপনি আলাদা ভাবে চেষ্টা না করলেও আপনার মন হয়ত নানা ভাবে আপনার উপকারে লাগাতে চাইছে। তবু, আরো অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।
আপনি যা ভুলে গেছেন বলে বিশ্বাস করছেন সেটা নিশ্চয়ই কোনও ঘটনার সাথে জড়িত। সেটা যদি একটা নাম হয়, এখানে ঘটনা হবে সময়, যখন নামটা আপনি। শুনেছেন বা পড়েছেন। হারিয়ে যাওয়া একটা জিনিস মন থেকে খুঁজে বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়। মনের পর্দা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে তো আপনি জানেনই। আপনাকে শুধু সংশ্লিষ্ট ঘটনাটা মনের পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হবে, তাহলেই যেটা মনে করতে চাইছেন, মনে পড়ে যাবে।
আসলে আমরা বোধহয় কেউই কিছু ভুলে যাই না। বড়জোর বলা যেতে পারে, মনে করতে পারি না। দুটোর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।
বিজ্ঞাপন জগত ভুলে যাওয়া আর মনে করতে না পারার পার্থক্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরে। টিভির বিজ্ঞাপন আমরা অনেকেই দেখি। সংখ্যায় ওগুলো এতো বেশি আর এতো অল্প সময়ের জন্যে দেখানো হয় যে গত হপ্তায় যেগুলো দেখেছি সেগুলো থেকে দশটার একটা তালিকা তৈরি করতে বললে আমরা হয়ত বা তিন কি চারটের বেশি মনে করতে পারবো না।
ধরুন, সিগারেট, লিপস্টিক আর ব্যাটারীর কথা আপনার মনে আছে। আপনি মার্কেটে গেলেন, নারকেল তেল কিনবেন। দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই টি, ভিতে দেখা নারকেল তেল কোম্পানির বিজ্ঞাপনটার কথা মনে পড়ে গেল আপনার। আসলে বিজ্ঞাপনগুলো আমাদের সচেতন মনে যতোটা তারচেয়ে বেশি ছাপ ফেলে অবচেতন মনে, সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গ না এলে অবচেতন মন থেকে তথ্যটা সচেতন মনে সহজে উঠে আসে না।
তা সে যতই তুচ্ছ আর নগণ্য হোক, প্রতিটি বিষয় আর ঘটনারই ছাপ নেয় আমাদের ব্রেন। বিষয়টা আমাদের কাছে যতো গুরুত্বপূর্ণ আর ছাপটা যতো স্পষ্ট হয়, ততো তাড়াতাড়ি আর সহজে সেটা আমরা মনে করতে পারি।
সার্জিক্যাল অপারেশনের সময় একটা ইলেকট্রোড ব্রেনকে আলতোভাবে স্পর্শ করলো। জাদুর কাঠির ছোঁয়া পেয়ে বহুকাল আগে ভুলে যাওয়া একটা ঘটনা খুঁটিনাটি বিবরণসহ পুরোটাই মনে পড়ে গেল, এতোই পরিষ্কার ভাবে যে আওয়াজ শুনতে, ঘ্রাণ নিতে এবং ছবি দেখতে পাওয়া গেল। ছোঁয়া হলো ব্রেনকে, মনকে নয়। অতীত ঘটনা ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে রোগীকে সচেতন করে তোলা পর্যন্ত সমস্ত প্রস্তাবই আসছে ব্রেনের কাছ থেকে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে (ব্রেন) জানতে পারে, কিছু একটা বলে দেয় তাকে–আসলে, এগুলো সে নিজে উদ্ধার করছে না। এখানেই কাজ করছে। মন–মহা-পর্যবেক্ষক, মহাশক্তিশালী, সবই যে ব্যাখ্যা করতে পারে–কখনো। কোনো ইলেকট্রোড যাকে স্পর্শ করতে পারেনি বা পারবে না। আমাদের নাকের ডগার। মতো মন নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় বিরাজ করে না।