ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পৌঁছে আপনি যদি কোনো ধরনের বুদ্ধিমান অস্তিত্বকে দলে ভিড়িয়ে তাকে দিয়ে খারাপ কোনো কাজ করিয়ে নেয়ার কুমতলব আঁটেন, সেটা হবে রেডিওর নব ঘুরিয়ে অস্তিত্বহীন স্টেশনের গান শুনতে চেষ্টা করার মতোই নিষ্ফল।
কেউ কেউ ব্যাপারটা বিশ্বাস করে না। তাদের প্রশ্ন, অভিশাপ যদি সত্যি হয়, শয়তান উপাসকরা যদি মানুষের ক্ষতি করতে পারে, মনকে নিয়ন্ত্রণ করে আমরা কেন তা পারবো না? কেন পারা যায় না, সেটা বলা কঠিন, কিন্তু পারা যায় না সেটা গবেষণায় নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে। এসব কাজ বিটায় করা যায়, আলফাতে নয়, থিটাতে নয়, সম্ভবত ডেলটাতেও নয়।
সময় নষ্ট করানোর পক্ষপাতী নই আমরা, তবু যদি আপনার সন্দেহ থাকে, নিজেই ব্যাপারটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ধ্যানমগ্ন হোন, কারো মাথায় ব্যথা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে দেখুন। সফল হওয়ার জন্যে যে সব নিয়ম রীতি পালন করে তৈরি করা পর্দায় ছবি দেখতে হয়, সেগুলো যদি নির্ভুল, নিখুঁত ভাবে পালন করতে পারেন, ফল হবে দুটোর একটা হয় আপনি, আপনার সাবজেক্ট নয়, মাথাব্যথার শিকার হবেন অথবা আলফা লেভেলে থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না।
মনের ভালো এবং মন্দ দিক সম্পর্কে যে-সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন আপনি, সেসবের উত্তর এর মধ্যে পাবেন না। এ ব্যাপারে পরে আরো আলোচনা করবো। এখন, এমন একটা ঘটনা বেছে নিন যেটা কোনো সমস্যার সমাধান, যেটার সমাধান আপনি চান বা বাসনা করেন, আপনার মনে বিশ্বাস আছে ব্যাপারটা ঘটতে পারে। বাকি থাকলো, প্রতীক্ষা বা প্রত্যাশা করা। নিচের অনুশীলনের সাহায্যে, আসুন, প্রত্যাশা করাটাও শিখে নেয়া যাক।
আপনাকে অসুবিধের মধ্যে ফেলছে এই রকম একটা সমস্যা বেছে নিন, যে সমস্যার কারণ এখনো আপনার কাছে পরিষ্কার নয়। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনার বস্ কিছুদিন থেকে খুব বদমেজাজী হয়ে আছেন। আপনি আপনার লেভেলে রয়েছেন, এখন তিনটে কাজ করতে হবে আপনাকে।
প্রথম কাজ। আপনার মনের পর্দায় পরিষ্কার, উজ্জল ভাবে ফুটিয়ে তুলুন সম্প্রতি ঘটা একটি ঘটনা বা দৃশ্য, যেটার সাথে আপনার সমস্যা জড়িয়ে আছে।
দ্বিতীয় কাজ। এই ঘটনা বা দৃশ্যের ছবি ধীরে ধীরে ডান দিকে সরিয়ে পর্দা থেকে বের করে দিন। এবার বাঁ দিক থেকে পর্দার ওপর আরেকটা ঘটনা বা দৃশ্যের ছবি নিয়ে আসুন, যেটা আগামীকাল ঘটবে। এই দৃশ্যে আপনি দেখবেন আপনার বসের চারদিকে যারা রয়েছে তারা সবাই হাসিখুশি, আপনার বস্ একটা সুখবর শুনছেন। বোঝাই যাবে, তার মেজাজ এখন আগের চেয়ে ভালো। সমস্যার কারণটা কি তা যদি আপনি সঠিক ভাবে জানেন, সমাধান ঘটছে এই দৃশ্যটাও চাক্ষুষ করুন। সমস্যাটা যেরকম নিখুঁতভাবে মনের পর্দায় দেখেছিলেন, সমাধানটাও সেরকম নিখুঁত আর পরিষ্কারভাবে দেখুন।
তৃতীয় কাজ। এবার এই দৃশ্যটাও ডান দিকে সরিয়ে পর্দা থেকে বের করে দিন। বাঁ দিক থেকে আরেকটা দৃশ্য নিয়ে আসুন পর্দায়। আপনার বস্ এখন হাসিখুশি, আনন্দিত–যতোটা তিনি আনন্দিত হতে পারেন বলে মনে করেন আপনি, ততোটা। দৃশ্যটা এতো পরিষ্কার ভাবে দেখতে হবে আপনাকে, যেন বাস্তবে সেটা সত্যি ঘটেছে। বেশ একটু সময় নিয়ে দৃশ্যটা দেখুন, গভীরভাবে অনুভব করুন ব্যাপারটা।
এবার, এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুণে সম্পূর্ণ জেগে উঠবেন আপনি, আগের চেয়ে । ভালো বোধ করবেন। প্রয়োজনীয় সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। একটা শক্তিকে কাজে নামিয়ে দিয়েছেন আপনি। বিশ্বাস করুন, ওই শক্তি ঘটনাটা ঘটিয়ে ছাড়বে। দেখবেন সত্যিই ঘটছে!
এটা কি সব সময় কাজ করবে, প্রতিবার?
উহুঁ।
তবে, আপনি যদি এটা চর্চা করতে থাকেন, আপনার অভিজ্ঞতা হবে এই রকম।-ধ্যানমগ্ন অবস্থায় সমস্যা সমাধানের প্রথম প্রচেষ্টা সফল হবে। সফল হলেও, কে বলবে এটা একটা কাকতালীয় ঘটনা নয়? এ-কথা তো ঠিক যে সমস্যাটা সমাধানযোগ্য এই বিশ্বাস আপনার ছিলো বলেই ওটাকে আপনি বেছে নিয়েছিলেন। সমাধানের সম্ভাবনা ছিলো বলেই না আপনি বিশ্বাস করেছিলেন সমাধান হবে। তারপর, দ্বিতীয় বার চেষ্টা করে দেখলেন। এবারও আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। সমাধান হয়ে গেল তৃতীয় বা চতুর্থ সমস্যারও। এভাবে, কাকতালীয় ঘটনার সংখ্যা একের পর এক বাড়তেই থাকবে। কিন্তু ধ্যানমগ্ন হওয়ার অভ্যেস এবং অন্যান্য অনুশীলন চর্চা করা ছেড়ে দিন, কাকতালীয় ঘটনার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। আবার চর্চা শুরু করুন, সংখ্যায় ওগুলো বাড়তে শুরু করবে আবার।
চর্চা চালিয়ে গেলে ধীরে ধীরে নৈপুণ্য এবং দক্ষতা বাড়বে আপনার। সমাধানের সম্ভাবনা আগেরগুলোর চেয়ে একটু কম, এবার এই জাতের সমস্যা দূর করতে সক্ষম হবেন আপনি। তারপর সময়ের সাথে সাথে, চর্চা করতে থাকায়, আপনার সাফল্যগুলো হয়ে উঠবে বিস্ময়কর, অবিশ্বাস্য।
প্রতিটি সমস্যা নিয়ে কাজ করার সময়, শুরুতেই এর আগের সাফল্যের অভিজ্ঞতাটা মনের পর্দায় অল্প সময়ের জন্যে ফুটিয়ে তুলুন। পরে, এরচেয়ে উন্নত কোনো সাফল্যের অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে, এটাকে বাদ দিয়ে নতুনটাকে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করুন।
মেক্সিকোর একজন ছাত্র, অবসর সময়ে ট্যাক্সিও চালায়। আরোহী পাবার জন্যে ধ্যান পদ্ধতি নিয়মিত ব্যবহার করে সে। বাজার মন্দা, এই সময় একদিন চলে গেল। নিজের লেভেলে, ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মনে তৈরি করা পর্দায় স্যুটকেস হাতে একজন লোকের ছবি দেখলো, যে এয়ারপোর্টে যেতে চায়। প্রথম কয়েকবার কিছুই ঘটলো না। তারপর ব্যাপারটা ঘটলো, সুটকেস হাতে সত্যি সত্যি এলো একজন লোক, এয়ার পোর্টে যেতে চায়। পরের বার মনের পর্দায় এই লোকটার ছবি ফোঁটালো সে, সব ভালো ভাবে ঘটলে যেমন লাগে সেই রকম একটা অনুভূতি হলো তার, এবং সেই সাথে আরেকজন আরোহী এলো, সে- ও এয়ারপোর্টে যাবে।