প্রথম সাফল্য অর্জিত হলে ছাত্রটি জানতে পারে, যা সে দেখছে একে শুধু কল্পনা বলা যায় না। সে কল্পনা করছে, এবং মনে যে জিনিসটা প্রথম আসে তার ওপর আস্থা আর বিশ্বাস রাখতে শিখছে। এভাবেই অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার ফসল আসতে শুরু হয়।
এখানে আসলে কাজ করছে প্রকৃতির নিখুঁত আইন। মানুষের মন মানুষের মাথার ভেতর বন্দী নয়। সে বেরিয়ে আসে। তার এই বেরিয়ে আসাটা সুষ্ঠু এবং নির্বিঘ্ন করার জন্যে তাকে বাসনার দ্বারা উজ্জীবিত, বিশ্বাসের দ্বারা উৎসাহিত এবং প্রত্যাশার দ্বারা উদ্বেলিত করতে হবে।
প্রথম কেসে ছাত্রদের প্রত্যাশা খুব বেশি একটা থাকে না। তাকে যদি আদৌ জানানো হয়ে থাকে এবং সে যদি মুক্তমনের অধিকারী হয়, তাহলে তার ভালো করেই জানা আছে যে ই. এস. পি, বলে একটা ব্যাপার আছে, কিন্তু এতোদিন তাকে শেখানো হয়েছে ওটা আর কারো ক্ষমতা, তার নয়। কিন্তু এই ভুল যখন ভাঙে, প্রথমবার যখন সে সফল হয়, তখন তার প্রত্যাশী লাফ দিয়ে বেড়ে ওঠে, সমস্ত সংশয় কাটিয়ে উঠে রওনা হয়ে যায় নিজের পথে।
‘আমি তো দেখছি, ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায়ই রোগ ধরতে পারছে,’ লিখেছেন মিড নাইটের বিল স্টার। তাঁর প্রবন্ধটার নাম ছিলো, “মাইও কন্ট্রোল ক্লাসেস ক্যান ইমপ্রুভ ইওর মেন্টাল পাওয়ার”। এই প্রবন্ধে একটা কঠিন কেসের কথা বর্ণনা করেছেন তিনি। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বা আর কেউ রোগটা কি তা জানতেন না। তাঁর ধারণা ছিলো, এই কেসের উপসর্গ দেখে রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন হবে।
এর আগে, সেদিনই সকালে, মি. থমাস নামে একজন ছাত্র তাঁর ছেলেকে দেখার জন্যে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কামরায় আরেকজন রোগী ছিলো। মি. থমাস এই রোগীর নাম ছাড়া আর কিছুই জানতে পারেননি।
সাইকিক অপারেটর সেই রোগী সম্পর্কে কি কি জানতে পারে, এখানে তার বিবরণ দেয়া হলো।
১। কেসের ডান পা এক রকম বলতে গেলে প্যারালাইজড হয়ে গেছে।
২। হাত আর কাঁধ আড়ষ্ট।
৩। পিছনের কয়েকটা হাড় ক্ষয়ে গেছে, সম্ভবত কোনো রোগ হয়েছিল।
৪। কেসের গলায় ঘা আছে।
৫। পেটে জ্বালা-পোড়া হয়।
৬। সে সাড়ে পাঁচ ফিট লম্বা। একশো পাঁচ পাউণ্ড ওজন।
হাসপাতালে ফিরে এলেন মি. থমাস। এখানে এসে রোগী আর তার ডাক্তারের সাথে কথা বলে তিনি জানতে পারলেন, রোগী ছোটোবেলায় একবার পোলিও-য় আক্রান্ত হয়েছিল। একবার হুইল চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়া আর ডান কোমরে আঘাত পেয়েছিল। আর সব ব্যাপারেও সাইকিক অপারেটর যা যা বলেছে, সব ঠিক–শুধু গলার ক্ষত আর পেটে জ্বালা-পোড়া বাদ। ওগুলো মি. থমাসের ছেলের রোগ।
প্রথমদিকে এই রকম ছেটোখাটো ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। তার জন্যে ঘাবড়াবার কিছু নেই। চর্চা করতে করতে লক্ষ্যভেদে নৈপুণ্য এসে যায়, তখন আর টার্গেট মিস হয় না।
আরো চর্চা করার পর সাইকিক অপারেটর শুধু মানুষের রোগ নয়, যে কোনো বস্তুর বৈশিষ্ট্য বা তার অবস্থানও নির্ণয় করতে পারবে।
ডিক মাজা, নিউইয়র্কের একজন অভিনেতা-গায়ক। লেখক এবং প্রকাশকদের পাণ্ডুলিপি টাইপ করে দিয়ে কিছু উপরি রোজগার করে সে। একদিন একটা সর্বনাশ ঘটে গেল, অত্যন্ত মূল্যবান একটা পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেললো সে। উদভ্রান্তের মতো সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজলো, কিন্তু পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেল না। একজন ছাত্রের সাথে পরিচয় ছিলো তার, উন্মাদের মতো চেহারা নিয়ে হাজির হলো তার কাছে। সমস্যাটা কি শোনার পর ছাত্রটি তাকে সাহায্য করতে রাজি হলো।
রিহার্সেল দেয়ার জন্যে ছোটো একটা চার্চ অডিটোরিয়ামে ঢুকেছিল সে, মনে আছে ঢোকার সময় পাণ্ডুলিপিটা তার হাতেই ছিলো। ওই সময় যুবকদের একটা দল বেরিয়ে যাচ্ছিলো চার্চ থেকে, গ্র্যাজুয়েশন এক্সারসাইজের জন্যে এসেছিল তারা। পাণ্ডুলিপিটা ছিলো একটা সাদা এনভেলাপের ভেতর, এনভেলাপে ডিকের নাম ঠিকানা লেখা ছিলো, আর চার অক্ষরের একটা শব্দ–আর-ইউ-এস-এইচ।
ছাত্রটির পরামর্শদাতাদের মধ্যে একজন, মহিলাটি, ছিলেন বোবা। হ্যাঁ এবং না সূচক ভঙ্গিতে মাথা দোলাতেন তিনি, মাঝে মধ্যে আকার-ইঙ্গিতে মনের ভাব প্রকাশ করতেন। পুরুষ পরামর্শদাতা ভদ্রলোক প্রয়োজনে এই সব আকার-ইঙ্গিতের ব্যাখ্যা করে দিতেন। তিনি নিজে তো পরামর্শ দিতেনই।
ডিকের বর্ণনা অনুযায়ী পাণ্ডুলিপিটা মনের পর্দায়, ল্যাবরেটরীতে চাক্ষুষ করলো ছাত্রটি। বিরাট একটা ডেস্ক দেখতে পেলো সে, ডেস্কের ওপর অগোছাল হয়ে রয়েছে। রাজ্যের কাগজ-পত্র, সেই কাগজপত্রের স্তূপে পড়ে রয়েছে ডিকের পাণ্ডুলিপি।
পাণ্ডুলিপিটা ওখানে কি নিরাপদ?” তার মহিলা পরামর্শদাত্রীকে জিজ্ঞেস করলো ছাত্র।
মহিলা নিঃশব্দে মাথা কাত করে জানালেন, হ্যাঁ।
যারা আজ গ্র্যাজুয়েশন এক্সারসাইজের জন্যে চার্চে গিয়েছিল, পাণ্ডুলিপিটা কি তাদের কারো কাছে রয়েছে?
না।
ওই ডেস্কটা কি চার্চে?
না।
পাণ্ডুলিপিটা কি অচিরেই ফেরত দেয়া হবে?
হ্যাঁ।
পাণ্ডুলিপিটা এখন কার কাছে রয়েছে?
মহিলা পরামর্শদাত্রী হাত তুলে ছাত্রটিকে দেখালো।
আমার কাছে আছে? ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলো ছাত্র।
না।
ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার জন্যে এবার এগিয়ে এলেন পুরুষ পরামর্শদাতা। উনি বলতে চাইছেন, পাণ্ডুলিপিটা আপনার বয়েসী একজন ভদ্রলোকের কাছে আছে। ভদ্রলোক এক যুবতী মেয়েকে নির্দেশ দেন, তার সব কাগজ-পত্র যেন তুলে নিয়ে গিয়ে অফিসে রাখা হয়, কারণ ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে তিনি অন্য এক জায়গায় চলে যাচ্ছেন। যুবতী মেয়েটি তার সব কাগজপত্রের সাথে ভুল করে পাণ্ডুলিপিটাও তুলে নিয়ে গেছে। ভদ্রলোকের ডেস্কে রয়েছে সেটা, দেখতেই পাচ্ছেন। চিন্তার কিছু নেই, ভদ্রলোক ওটা দেখলেই ডিকের কাছে ফেরত পাঠাবেন।