প্রতিটি জোড়ার একজনকে বলা হয় সাইকো- ওরিয়েন্টোলজিস্ট, অপরজনকে বলা হয় সাইকিক অপারেটর।
সাইকো- ওরিয়েন্টোলজিস্ট একটা কার্ডে তার চেনা এক লোকের নাম, বয়স, সাধারণত কোথায় কোথায় তাকে দেখতে পাওয়া যায়, এবং তার বড় ধরনের কিছু শারীরিক ত্রুটি বা কষ্ট, এই সব লেখে। এবার সাইকিক অপারেটর, হয় নিজে অথবা। তার সাইকো-ওরিয়েন্টোলজিস্টের সাহায্য নিয়ে গভীর লেভেলে চলে যায়, সম্ভবত এই প্রথম এবং শেষবার এই সময় তার আত্মবিশ্বাস দোদুল্যমান অবস্থায় থাকে।
গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ল্যাবরেটরীতে পৌঁছে পরামর্শদাতাদের সঙ্গ পাবার পর, ইঙ্গিতে জানায় সে, রেডি। এবার সাইকো–ওরিয়েন্টোলজিস্ট তার কার্ডে লেখা নাম, বয়স, এবং লোকটাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে, ইত্যাদি পড়ে শোনায়। এই লোকের সাথে কখনো পরিচয় হয়নি সাইকিক অপারেটরের, কিংবা এই লোকের কথা কারো মুখে শোনেওনি কখনো। তার কাজ হলো, লোকটার কোথায় কি অসুবিধে আছে। খুঁজে বের করা।
লোকটার শরীর, ভেতর এবং বাইরে থেকে, পরীক্ষা করে সে। দেয়াল, ধাতব পদার্থ, পোষা প্রাণী ইত্যাদি আগেই পরীক্ষা করে দক্ষতা অর্জন করেছে সে, পদ্ধতিটাও অভ্যেস হয়ে গেছে, কাজেই এই লোকের ভেতর-বার পরীক্ষা করতে কোনো অসুবিধে হবার কথা নয় তার, হয়ও না। পরীক্ষার সময় প্রয়োজনে পরামর্শদাতাদের সাথে আলোচনা করে সে। হয়ত কথা বলে লোকটার সাথেও।
সাইকিক অপারেটর তার কাজে কিভাবে এগোচ্ছে, জানার জন্যে সাইকো ওরিয়েন্টোলজিস্টের কাছ থেকে অনুরোধ আসে, ‘থেমো না, কথা বলতে থাকো, যদি মনে হয় অনুমান করছে, তবুও।’ এ-ধরনের একটা অধিবেশনে সাধারণত যা ঘটে, নিচে তা তুলে দেয়া হলো (এটা একটা বাস্তব অধিবেশনের অংশবিশেষ) : আত্ম-উন্নয়ন।
সাইকো-ওরিয়েন্টোলজিস্টঃ আমি এই কার্ডে জন সামার্স নামে এক লোকের নাম লিখে রেখেছি। তার বয়স আটচল্লিশ, ইণ্ডিয়ানার এল্কহার্টে বাস করে। এক–দুই তিন-ইণ্ডিয়ানা এল্কহার্টের জন সামার্স এখন তোমার পর্দায় চলে এসেছে। চেতনা দিয়ে উপলব্ধি করো তাকে, অনুভব করো, দেখো, কল্পনা করো, তৈরি করো, জানো
সে ওখানে আছে, নিঃসন্দেহে ধরে নাও সে ওখানে আছে। তোমার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শরীরটা তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করো। তুমি জানো মাথাটা কোথায় থাকতে পারে, সেখান থেকে শুরু করো। তুমি জানো পা কোথায় থাকতে পারে, সেখানে পৌঁছে শেষ করো। এইভাবে, একবার, দু’বার, অনেক বার প্রতি সেকেণ্ডে একবার করে।
এই ভঙ্গিতে শরীরটা তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করার সময়, বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে এই রকম তিনটে অংশ নির্বাচন করার অনুমতি দাও তোমার কল্পনাকে। প্রতি সেকেণ্ডে একবার করে শরীর পরীক্ষা করাটা চালিয়ে যাও, এবং বিশেষ ভাবে যে অংশগুলো তোমাকে আকৃষ্ট করছে সেগুলোর কথা জানাও আমাকে। তোমার হয়ত মনে হবে, যেন নিজে থেকে বানাচ্ছো, তবু তোমার মাথায় যা আসে বলো আমাকে।
সাইকিক অপারেটরঃ তার ডান কাঁধটা একটু নিচু হয়ে আছে, সামনের দিকেও ঝুঁকে আছে একটু বাকি…সব ঠিক আছে বলেই মনে হয়, শুধু বাম গোড়ালিটা ছাড়া…এবার বুকের ভেতরটা দেখি সব কেমন উষ্ণ…ডান দিকে একটু ঠাণ্ডা ভাব…ঠাণ্ডা আর অন্ধকার একটু বেশি এদিকে আরে, ডান ফুসফুসটা দেখছি নেই…এবার সেই গোড়ালিটা…দেখে তো মনে হচ্ছে ঠিকই আছে, তবে সাদা একটা বাঁকা রেখা দেখতে পাচ্ছি…ঠাণ্ডার দিনে ব্যথা করে…কবে হয়ত ভেঙে গিয়েছিল বোধহয়, এইটুকুই থামো, আমার পরামর্শদাত্রী লোকটাকে ধরে ঘোরাচ্ছে, সম্ভবত আমাকে কিছু দেখাতে চাইছে। হ্যাঁ, ইঙ্গিতে লোকটার কানের পিছনটা দেখাচ্ছে সে…হাঁ, গভীর একটা ক্ষত চিহ্ন রয়েছে ওখানে…ওখানে একটা অপারেশন করা হয়েছিল…বেশ গভীর একটা দাগ রয়ে গেছে…ব্যস, আর কিছু বলার নেই আমার।
সাইকো- ওরিয়েন্টোলজিস্ট: ভেরি গুড। লোকটার ডান ফুসফুস নেই, আর একটা কানের পিছনে গভীর ক্ষতচিহ্ন আছে। গোড়ালি সম্পর্কে এখানে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এবার, ডান ফুসফুস আর কানের পিছনে গভীর ক্ষতটার কথা যখন তুমি আমাকে বললে তোমার তখনকার অনুভূতি আরেকবার অনুভব করো। এই অনুভূতিটাকে পরবর্তী কেসের জন্যে একটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে তুমি।
এক মুহূর্তের বিরতির পর সাইকিক অপারেটর তার ধ্যান থেকে উঠে এলো বিটায়, হাসছে। ‘মাগো! কি অদ্ভুত!’
.
অদ্ভুত যে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই পৃথিবীতে যতো রকমের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাই আমরা, সে-সবের সাথে এর কোনো মিল নেই। তবু, এই মাত্র যে দৃশ্যের বর্ণনা পড়লেন আপনি তার মধ্যে স্বাভাবিকত্ব বলে কিছু নেই। কেউ কেউ তাদের প্রথম কেসে সামান্য এক-আধটুর বেশি দেখতে পায় না, কেউ কেউ আবার প্রথম, দ্বিতীয় এবং এমনকি তৃতীয় কেসেও বিন্দুবিসর্গ কিছুই দেখে না। কিন্তু লেগে থেকে চর্চা করে চোলে, একদিন না একদিন সবাই সরাসরি এই অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়, তখন তারা বুঝতে পারে ব্যাপারটা স্রেফ কাকতালীয় নয়, অত্যন্ত বাস্তব কিছু একটা কাজ করছে এখানে।
অনেক সময় আমরা মনে করি কল্পনার দায়িত্বজ্ঞান বলতে কিছু নেই, যতো সব উদ্ভট আর অর্থহীন চিন্তা-ভাবনার জনক সে। কখনো সখনো তা সত্যি বটে। কিন্তু সুসংহত, সুসংগঠিত কল্পনাই জন্ম দেয় মহৎ শিল্পকর্মের। মানুষ তার সমাজের জন্যে যতো ভালো কাজ করেছে তার একটাও কল্পনার সাহায্য ছাড়া সম্ভব হতো না। অতীন্দ্রিয় কর্মকাণ্ডের ফলাফলও বিশেষ ভাবে ট্রেনিং পাওয়া কল্পনার ফসল। একজন। ছাত্র, প্রথম যখন সে অতীন্দ্রিয় জগতে বিচরণ করতে শুরু করে, তার মনে হয় যা সে দেখছে সবই স্রেফ তার কল্পনা। সেজন্যেই সাইকো-ওরিয়েন্টোলজিস্ট তাকে বলে, ‘থেমো না, কথা বলতে থাকো, যদি মনে হয় অনুমান করছে, তবুও থামতে নিষেধ করা হয় এই কারণে যে তার যুক্তিবাদী মন তার নিজের মানদণ্ডে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার সুযোগ পেয়ে যাবে, দমিয়ে রাখবে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাটাকে, দৈনন্দিন জীবনে যা সে করে অভ্যস্ত।