আজকাল আলফা সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। এটা ব্রেন ওয়েভের একটা প্যাটার্ন। ইলেকট্রোএনকেফ্যালোগ্রাফের (Electroencephalograph) সাহায্যে মাপ-জোখ করে স্পন্দনের সাইকেল অনুযায়ী ব্রেন- ওয়েভকে ভাগ করা হয়েছে চারটি লেভেলে। প্রতি সেকেণ্ডে কম্পন যদি চোদ্দ বা তারচেয়ে বেশিবার হয় তাহলে তাকে বলা হয় বিটা ওয়েভ। সেকেণ্ডে সাত থেকে চোদ্দবার হলে আলফা, চার থেকে সাত হলে থিটা, এবং চারের নিচে হলে ডেলটা ওয়েভ।
আপনি যখন সম্পূর্ণ জেগে রয়েছেন, দুনিয়াদারির কাজে রত, সচেতন, তখন আপনি বিটা লেভেলে রয়েছেন। যখন আপনি দিবাস্বপ্ন দেখছেন বা ঘুমিয়ে পড়তে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করেননি; কিংবা ঘুম ভাঙতে যাচ্ছে কিন্তু এখনো পুরোপুরি ভাঙেনি; তখন আপনি আলফা লেভেলে রয়েছেন। যখন ঘুমিয়ে পড়লেন, তখন আপনি আলফা থেকে নেমে থিটা লেভেলে এমনকি কখনও কখন ও ডেলটা লেভেলে চলে যাচ্ছেন।
থিটা ও ডেলটা লেভেল নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করবো না আমরা। প্রথম দিকে অনুশীলনগুলোর মাধ্যমে আমরা আপনাকে শেখাবো কিভাবে ইচ্ছে করলেই সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন অবস্থায় যে-কোনো সময়ে আলফা লেভেলে চলে যেতে পারবেন। আপনি। এতেই দেখবেন আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। থিটা বা ডেলটা। লেভেলে যদি সচেতনভাবে পৌঁছতে পারেন তাহলে একজন মানুষের ক্ষমতার সম্ভাব্য চূড়ান্ত পর্যায়ে উপস্থিত হবেন। এ সম্পর্কে বইয়ের শেষদিকে কিছু পথ নির্দেশ থাকবে।
এবার কাজে নেমে পড়া যাক। কেমন?
০২. ধ্যান কি করে করতে হয়
প্রথমেই আপনি শিখতে যাচ্ছেন কিভাবে ধ্যান করতে হয়। এটা যখন শেখা হয়ে যাবে, মনের এমন একটা লেভেলে পৌঁছুবেন আপনি, যেখানে পৌঁছে সমস্যা সমাধানের জন্যে মুক্ত করে দিতে পারবেন আপনার কল্পনাশক্তিকে। প্রথমে আপনি ধ্যান করা শিখবেন, সমস্যা সমাধান করতে শিখবেন পরে।
হোসে সিলভার চারদিনের ট্রেনিং কোর্সে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এসব শেখাবার জন্যে অভিজ্ঞ লেকচারার থাকেন, কিন্তু বই পড়ে শেখার সময় আপনি কোনো গাইড পাচ্ছেন। না। তাই এই পদ্ধতিটা চারদিনের মধ্যে শিখতে পারবেন না, শিখবেন একটু দেরিতে। তবে সমস্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করা হবে, কাজেই শিখতে আপনার কোনো অসুবিধে হবে না।
আপনি শুধু যদি ধ্যান করা শেখেন, এবং তারপর আর সামনে না বাড়েন, তাহলেও কিন্তু এক ধরনের সমস্যার সমাধান আপনা থেকেই হতে থাকবে। ধ্যানমগ্ন। অবস্থায় অদ্ভুত সুন্দর একটা ব্যাপার ঘটে, সেটাকে আমরা সুখপ্রদ প্রশান্তি বলতে পারি। যতো বেশি ধ্যানমগ্ন হবেন, নিজের ভেতর যতো গভীরে ডুবে যাবেন, ততোই ওই সুখপ্রদ প্রশান্তি আর পরমানন্দের একটা অনুভূতি আপনার সমগ্র অস্তিত্বে এমন। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে জীবনের কোনো সংকটই সেটাকে নষ্ট করতে পারবে না।
আপনার শরীরও তাতে উপকৃত হবে। প্রথমে আপনি উপলব্ধি করবেন, ধ্যানমগ্ন অবস্থায় উদ্বেগ আর অপরাধবোধ একেবারেই থাকছে না। ধ্যান করে আলফা লেভেলে পৌঁছুবার ভালো দিকগুলোর একটা হলো, চেষ্টা করেও নিজের ভেতর আপনি রাগ বা অপরাধবোধ আনতে পারবেন না। হঠাৎ কোনোভাবে এই সব বোধ যদি অনুপ্রবেশ করেও, সাথে সাথে আলফা থেকে বিটা লেভেলে অর্থাৎ ধ্যানমগ্ন অবস্থা থেকে জাগ্রত অবস্থায় উঠে আসবেন আপনি। তাতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। চর্চা করতে থাকুন, ধীরে ধীরে ধ্যানমগ্ন অবস্থার মেয়াদ বাড়তে থাকবে। প্রথমবার যতোক্ষণ ধ্যানমগ্ন থাকবেন, দ্বিতীয়বার তারচেয়ে একটু বেশিক্ষণ থাকবেন, এই ভাবে এক সময় রাগ বা অপরাধ বোধের হামলা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে ধ্যানও আর আপনি না চাইলে ভাঙবে না।
এই বোধগুলো উপস্থিত না থাকার অর্থ হলো, মনের যেসব ক্ষতিকর আচরণ বা তৎপরতা শরীরকে অসুস্থ ও দুর্বল করে তোলে, ধ্যানমগ্ন অবস্থায় সেগুলো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। শরীরের ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে ওটাকে সুস্থ রাখার জন্যে। তার নিজেরই রয়েছে নিরাময় ও উপশম ব্যবস্থা। মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মনই সে ব্যবস্থা বানচাল করে দেয়। তাই মনকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর মনকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রথম পদক্ষেপ হলো ধ্যান। একক ভাবে শুধু ধ্যানই তার নিজস্ব গতিপথ ধরে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যায়, যাবার পথে শরীরের নিরাময় এবং উপশম ব্যবস্থাকে পুনর্বাসিত করে। একদা উত্তেজনা আর উদ্বেগের কারণে যে শক্তি ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় ব্যবস্থাটি অচল হয়ে পড়েছিল, সেই শক্তি ফিরে পাওয়ায় আবার সেটা পুরোদমে। কাজ শুরু করে।
এবার জেনে নিন আলফা লেভেলে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পৌঁছুতে হলে কি করতে হবে।
সকালে আপনার ঘুম ভাঙলো। বাথরুমে যাবার তাগাদা থাকলে যান, তারপর আবার ফিরে আসুন বিছানায়। পনেরো মিনিট সময় বেঁধে নিন অ্যালার্ম ক্লকে, যাতে অনুশীলন করবার সময় ঘুম এসে পড়লেও সেটা সময়মতো ভেঙে যায়। চোখ বন্ধ করে বন্ধ পাতার ভেতর দিয়ে ওপর দিকে তাকান, বিশ ডিগ্রি উঁচুতে। কারণটা এখনো পরিষ্কার জানা সম্ভব হয়নি, তবে দেখা গেছে, চোখের এই পজিশনই আলফা সৃষ্টির জন্যে সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
এবার, ধীরে ধীরে, প্রতিবার দু’সেকেণ্ড করে বিরতি নিয়ে, একশো থেকে নিচের দিকে গুণতে থাকুন, এক পর্যন্ত। একশো, নিরানব্বই, আটানব্বই, সাতানব্বই:. এইভাবে। যখন গুণবেন, সম্পূর্ণ মনোযোগ এই কাজের ওপর স্থির রাখুন। আশা করা যায় প্রথমবার গোণা শেষ করলেই আপনি আলফা লেভেলে পৌঁছে যাবেন।