প্রথম দিকে তারা ধাতুর তৈরি সহজ সরল আকার আকৃতির জিনিসের ভেতর ঢোকে, তারপর ধীরে ধীরে বেছে নেয় জটিল সব জিনিস। প্রথম দিকে হয়ত সিলিণ্ডার, পেরেক, আলপিন বা কিউবের ভেতরে ঢোকে। তারপর হয়ত বেছে নেয়, গ্রিল, তৈজসপত্র, যন্ত্রপাতি, মেশিন ইত্যাদি। এর পর ধাতব পদার্থ ছেড়ে বেছে নেয় ফলবান কোনো গাছ। একটা গাছ চার ঋতুতে চার রকম চেহারা পায়, তার প্রতিটি চেহারাতেই প্রবেশ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। ফল এবং পাতার ভেতরও তারা ঢোকে। এর আগে অন্য কিছুর মধ্যে ঢুকে যা যা করেছে তারা, এবারও গাছ, ফল আর পাতার ভেতর ঢুকে ঠিক সেই কাজগুলোই করে। অর্থাৎ গভীর ভাবে অনুভব করে, উপলব্ধি করে এসবকে ওপর ওপর নয়, একেবারে ভেতর থেকে।
এরপর তারা এক লাফ দিয়ে অনেক সামনে চলে যায়। ঢুকে পড়ে পোষা কোনো প্রাণীর শরীরে।
এই পর্যায় পর্যন্ত এতোই সাফল্যের সাথে কাজগুলো করে তারা, ব্যাপারটা সম্ভব। কি সম্ভব নয় এই সন্দেহ প্রায় কারো মনেই আর অবশিষ্ট থাকে না। সত্যিই কি এই কাজ করছি আমি? এই প্রশ্ন মাত্র দু’ একজন ছাত্রের মনে উঁকি দেয়। এবার তারা। আত্মবিশ্বাসের সাথে মনের পর্দায় পরীক্ষা করে, খুটিয়ে দেখে পোষা একটা প্রাণীকে। এই দেখার সময়ও প্রাণীটির রঙ বারবার বদলে নেয় তারা। এবং তারপর, দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে, এবার তারা প্রাণীটির খুলির ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ে তাজা ব্রেনে। ব্রেনট্রাকে কয়েক মিনিট পরীক্ষা করে বেরিয়ে আসে তারা, বাইরে থেকে প্রাণীটিকে আবার একবার ভালো করে দেখার জন্যে। এবার তারা ওটার শুধু বুক পরীক্ষা করে। পরীক্ষা শেষ করে ঢুকে পড়ে বুকের ভেতর। ওখানে ঢুকে তারা এক এক করে পরীক্ষা করে পাঁজরগুলো, শিরদাঁড়া, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস আর লিভার। বুকের ভেতর জিনিস গুলো পরীক্ষা করে বেরিয়ে আসে তারা। ইতিমধ্যে জমা হয়েছে অনেকগুলো সাফল্য, সেগুলো পুঁজি করে জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা এবার তারা ঘটাতে যাবে–ঢুকে পড়বে একজন মানুষের শরীরে। কিন্তু তার আগে প্রস্তুতি নিতে হয় ওদেরকে।
ধ্যানের বিশেষ গভীর একটা স্তরে পৌঁছে, কখনো থিটার নিচের লেভেলও হতে পারে সেটা, উজ্জীবিত কল্পনাশক্তির সাহায্যে ছাত্র-ছাত্রীরা মনের পর্দায় তৈরি করে একটা ল্যাবরেটরী। এই ল্যাবরেটরী তাদের পছন্দ আর রুচি অনুসারে যে কোনো আকারের, যে-কোনো আকৃতির এবং যে-কোনো রঙের হতে পারে। নিজেদের পছন্দ করা ডিজাইন মতো সেই ল্যাবরেটরীতে একটা ডেস্ক আর একটা চেয়ার থাকবে। থাকবে একটা টেবিল বা দেয়াল ঘড়ি। থাকবে একটা ক্যালেণ্ডার, তাতে বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যতের তারিখ থাকা চাই। আর, হ্যাঁ, একটা ফাইলিং কেবিনেটও থাকতে হবে। কিন্তু ল্যাবরেটরীতে বেমানান কিছু থাকতে পারবে না। তবে কেউ যদি এক গোছা ফুল রাখতে চান, রাখতে পারবেন। ফুল তো কোথাও বেমানান নয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ বুঝতে হলে, আরেকবার উপলব্ধি করা দরকার, আমাদের সাইকিক (অতীন্দ্রিয়) সেনসিং অ্যাপারাটাস ভাষা এবং যুক্তি থেকে কতোটা দূরে, উপলব্ধি করা দরকার প্রতিবিম্ব আর প্রতাঁকের কোটা কাছাকাছি। কারণ ছাত্র ছাত্রীদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে মনের পর্দায় তেরি করা ল্যাবরেটরীটাকে ‘ইনমেন্ট’ দিয়ে সাজানো। মানুষের শরীরের ভেতর ঢুকে এটা সেটা পরীক্ষা করা অভ্যেস হয়ে যাবার পর একদিন তারা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বিশেষ একটা কাজে হাত দেবে। কাজটা দু’ভাগে ভাগ করে নেবে তারা। প্রথম কাজ, নির্দিষ্ট একজন মানুষের ভেতর ঢুকে খুঁজে বের করা তার শরীরের ভেতর কোথাও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা। কিংবা এমন একজন মানুষের শরীরে ঢুকবে তারা যার শরীরের ভেতর কোনো রোগ আছে বলে আগে থেকেই ধারণা করা যায়। ত্রুটি-বিচ্যুতি আবিষ্কারের পর দ্বিতীয় কাজে হাত দেবে, ইনস্ট্রমেন্টের সাহায্যে সারিয়ে তুলবে সেই ত্রুটি বা রোগ।
ওদের বেশিরভাগ ইনমেন্ট দেখতে হবে অদ্ভুত, অন্য কোনো ল্যাবরেটরীতে এসব দেখতে পাওয়া যায় না। এই যন্ত্রপাতিকে সিমবোলিক বা প্রতীকী ইনমেন্ট বলা। যেতে পারে।
ল্যাবরেটরীতে একটা চালুনি বা ঝাঁজরি অবশ্যই থাকবে। এর সাহায্যে তারা রক্তে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বা ভেজাল দূর করবে। আরো থাকবে একটা ঝাঁটা। কারো যদি গেঁটেবাত থাকে, অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার সাহায্যে সেটা দেখতে পাওয়া যাবে, তখন ওই ঝাঁটা দিয়ে ঝেটিয়ে সেটা দূর করা হবে। ঘা যাতে তাড়াতাড়ি শুকায় তার জন্যে দরকার হবে মলম। আর দরকার হবে ডিসটিলড ওয়াটার, হোস পাইপ। এই দুটো লাগবে অপরাধবোধ ধুয়ে সাফ করার কাজে। উত্তেজনা, উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা থেকে নিষ্কৃতি দেয়ার জন্যে থাকবে প্রচুর ক্যাসেটসহ টু-ইন-ওয়ান বা মিনি ডেক। প্রত্যেকেরই একটা করে ল্যাবরেটরী থাকবে, এবং যে যার ল্যাবরেটরী নিজেই পছন্দমত যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজাবে। যে-কোনো দুই সেট যন্ত্রপাতি কোনো ভাবেই হুবহু এক রকম দেখতে হবে না। ওগুলো তারা সংগ্রহ করবে এমন এক জায়গা থেকে, যেখানে সবকিছুই সম্ভব মনের গভীর স্তর। এবং এই সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করার। পর ছাত্র-ছাত্রীরা উপলব্ধি করে, অতীন্দ্রিয় জগতে পৌঁছে তারা যে কাজগুলো করবে সেসব কাজের সুনির্দিষ্ট প্রভাব পড়বে বস্তুগত দুনিয়ায়।