বিটা লেভেলে মনের মিল ততোটা শক্তিশালী হতে পারে না। শত বিপদেও ছিঁড়বে না, এই রকম শক্ত বাঁধন যদি চান, ধ্যানমগ্ন হয়ে পরস্পরের মনের মিল ঘটান। দেরি করবেন না।
১১. ই. এস. পি. প্র্যাকটিস
ই. এস. পি, মানে এক্সট্রাসেনসরি পারসেপশন।
ই. এস. পি, কি সত্যি আছে? আজ প্রায় সব অভিজ্ঞ ব্যক্তিই স্বীকার করেন, হা, সত্যি আছে। সম্ভাব্যতার নিরিখে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে, পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যম ছাড়াও অন্য মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য পাওয়া সম্ভব, আমরা পাই। এই তথ্য অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ থেকে আসতে পারে। আসতে পারে কাছাকাছি কোথাও বা বহু দূর থেকে। সময়, মহাশূন্য বা অন্য কিছুই এর আসার পথে বাধা হতে পারে না।
ই. এস. পি.-এর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে ‘অনুমান করো’ ধরনের অনুশীলনের মধ্যে যাবো না। এ ধরনের অনুশীলন করানো হয় মানুষ অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী কিনা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু আমাদের প্রমাণ করার দরকার নেই, আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, মানুষের ওই ক্ষমতাটা আছে। কাজেই নিজেদের জন্যে আরো বড় কাজ বেছে নেবো আমরা। সেই কাজটা কি? কাজটা হলো, বাস্তব জীবনের সাথে অতীন্দ্রিয় জগতের সমন্বয় ঘটানো। আমরা এর সাহায্যে এমন সব কাজ করতে চাই যা আমাদের বাস্তব জীবনে উপকার বয়ে আনবে।
এই বইতে যতোগুলো টেকনিক দেয়া আছে সেগুলো চর্চা করে দক্ষতা অর্জন করে থাকলে আপনি ই. এস. পি. চর্চা করার জন্যে প্রস্তুত হয়েছেন। মনের গভীর স্তরে চলে গিয়ে আপনার পক্ষে সম্পূর্ণ সচেতন থাকা সম্ভব হবে, সেই সাথে মনের পর্দায় বস্তু এবং ঘটনার ছবি চাক্ষুষ এবং উপলব্ধি করতে পারবেন। এই দুটো হলো অতীন্দ্রিয় জগতে ঢাকার দরজা।
বিদেশে অনেক স্কুল আছে যেখানে মনকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়, সেই সাথে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ই, এস, পি, ও চর্চা করানো হয়। মনকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি আয়ত্ত করার পর অতীন্দ্রিয় লেভেলে বিচরণ শুরু করে তারা-শরীরের বাইরে আরোপ করে তাদের সচেতনতা। একে বলে এক্সট্রা সেনসরি প্রজেকশন।
মনের পর্দায় ছবি দেখার সহজ পদ্ধতি দিয়ে শুরু করে তারা। অত্যন্ত গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পৌঁছে যে যার বাড়ির সামনে দেখতে পায় নিজেদের। নিজেদের ওখানে দেখতে পাওয়া সম্ভব করে তুলতে কল্পনার আশ্রয় নেয় তারা। সামনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে লিভিং রুমে দক্ষিণ দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াবার আগে গভীর একাগ্রতার সাথে একটাই কাজ করতে হয় তাদেরকে, বাড়ির সামনে যা যা আছে সব অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খুটিয়ে লক্ষ্য করা। প্রথমে এই কামরাটাকে রাতের বেলা আলো জ্বালা অবস্থায় দেখে, তারপর দেখে দিনের বেলা, যখন জানালা দিয়ে রোদ আসছে। এই ঘর সম্পর্কে যা যা মনে পড়ে, সব দেখতে হয় তাদেরকে। এরপর তারা দক্ষিণ দেয়াল স্পর্শ করে, এবং ঢুকে পড়ে দেয়ালের ভেতর।
অনেকের কাছে ব্যাপারটা অবাস্তব বলে মনে হতে পারে, কিন্তু মনের পর্দায় ছবি দেখায় যারা দক্ষতা অর্জন করেছে তাদের কাছে সম্পূর্ণ বাস্তব একটা ব্যাপার এটা।
দেয়ালের ভেতর জায়গাটা, এমন একটা জায়গা যেখানে জীবনে কখনো আসেনি তারা, তাই আলো দেখে, গন্ধ শুঁকে, উত্তাপ অনুভব করে এবং দেয়ালের বাইরের দিকে টোকা দিয়ে দেয়ালের নিরে–টত্বসহ নতুন পরিবেশটাকে তারা পরীক্ষা করে নেয়। দেয়ালের বাইরে আবার বেরিয়ে এসে দেয়ালের দিকে মুখ করেই দাঁড়ায় তারা, তারপর ৪টার রঙ বদলে একবার কালো, একবার লাল, একবার সবুজ, একবার বেগুনি এবং সব শেষে ওটার নিজস্ব রঙে ওটাকে দেখে। এরপর তারা একটা চেয়ার তুলে নিয়ে এই পরিস্থিতিতে যার কোনো ওজন নেই–দেয়ালের পাশে রেখে আবার একবার দেয়ালের রঙ বদলের সাথে সাথে চেয়ারটার আকার আকৃতি বা রঙের কি পরিবর্তন হয় না হয় লক্ষ্য করার জন্যে বিশেষ মনোযোগ দেয়। শুধু চেয়ার নয়, এই অনুশীলন তারা একটা তরমুজ, একটা লেবু, একটা কমলা, তিনটে কলা, তিনটে গাজর এবং শাক নজির সাহায্যেও চর্চা করে।
এই অধিবেশন শেষ হওয়া মানে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়ে গেল। যুক্তিবাদী মনকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে পিছনের আসনে, আর কল্পনাপ্রবণ মনটাকে এগিয়ে নিয়ে এসে বসানো হয়েছে সামনের আসনে, যেখানে কন্ট্রোল প্যানেল রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের যুক্তিবাদী মন তাদেরকে বলে, ‘না, এসব কথা আমাকে বলো না! একটা দেয়ালের ভেতর ঢুকেছে বা এই রকম অবাস্তব আর কোথাও গেছো, এ আমি বিশ্বাস করি না। তুমি ভালো করেই জানো, এ সম্ভব নয়। তুমি আসলে এখানেই বসে আছো।
কিন্তু কল্পনাপ্রবণ মন, পর্দায় ছবি দেখতে যে দক্ষতা অর্জন করেছে, যুক্তিবাদী মনের এই কথা অগ্রাহ্য করতে পারবে। কল্পনাশক্তি যতই জোরালো হয়ে উঠবে, ততোই শক্তিশালী হয়ে উঠবে অতীন্দ্রিয় (সাইকিক) ক্ষমতা। এই ক্ষমতাটা চুপি চুপি গা। ঢাকা দিয়ে থাকে কল্পনাপ্রবণ মনের ভেতরই।
পরবর্তী অধিবেশনে ছাত্র-ছাত্রীরা কল্পনা আর মনের পর্দার সাহায্য নিয়ে নিজেদেরকে ধাতব পদার্থের ভেতর প্রবেশ করায়। এই ধাতব পদার্থ হতে পারে লোহা, স্টেনলেস স্টীল, সীসা, তামা বা পিতল। এসবের ভেতর ঢুকে আগের মতোই তারা আলো, গন্ধ, রঙ, টেমপারেচার এবং নিরেটত্ব পরীক্ষা করে। কাজগুলো দ্রুত সারতে চেষ্টা করে তারা, যাতে যুক্তিবাদী মন কাছে ঘেষতে না পারে।