আরেকটা কথা এখানে উল্লেখ করতে হয়। আশাবাদী এবং হা-সূচক দৃষ্টিভঙ্গির কিছু লোক বাড়িতে ফেরার পর তাদের চিন্তা-ভাবনা এবং প্রবণতা সম্পূর্ণ উল্টো খাতে বইতে শুরু করায় তাদের অবস্থারও দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে। এ থেকে বোঝা যায়, রোগের ভয়াবহতার চেয়ে রোগীর মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ড, সিমনটন এবং তাঁর স্ত্রী সম্পর্কে মেনিনজার ফাউণ্ডেশনের ড. এলমার গ্রীন বলেছেন, ‘ফিজিওলজিকাল সেলফ-রেগুলেশনের জন্যে মনের পর্দায় ছবি দেখার পদ্ধতির সাথে ট্র্যাডিশনাল রেডিওলজি এক করে চিকিৎসা করায় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ফল পাচ্ছেন ড. সিমনটন এবং তাঁর স্ত্রী।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইউজিন পেনডারগ্রাস উনিশ শো উনষাট সালে বলেছিলেন, ‘মানসিক বিপর্যয় যে এই রোগের গতিবিধি প্রভাবিত করে তার কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। গবেষণার ক্ষেত্র আরো বাড়িয়ে আমাদের দেখতে হবে, মানুষের মনে এমন একটা শক্তি আছে কিনা যার সাহায্যে এই রোগ বাড়তে বা বাধা পেতে পারে।’
ফোর্ট ওর্থ-এর ক্যানসার কাউন্সেলিং অ্যাও রিসার্চ সেন্টারের মেডিকেল ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন ড. সিমনটন। কোথেরাপিস্ট হিসেবে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। রোগ সারাবার জন্যে মনের সাহায্য কিভাবে নেয়া যেতে পারে সে-বিষয়ে রোগীদের ট্রেনিং দেন তাঁরা।
যে-কোনো ধারার চিকিৎসায় ফল পাবার ব্যাপারে রোগীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রবণতা একটা ভূমিকা পালন করে, এই দৃষ্টিভঙ্গি আর প্রবণতা রোগের গতিবিধি বা মতিগতি নিয়ন্ত্রণেও প্রভাব রাখে–ট্রেনিং দেয়ার শুরুতেই এই কথাটা ভালো করে রোগীদের বুঝিয়ে দেন ড. সিমনটন। রোগীরা কিভাবে নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করবে তা শেখাবার জন্যে মন-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাহায্য নেন তিনি। তাঁর প্রথম কাজ হয় তাদের মন থেকে ভয় তাড়ানো। তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেন, আমাদের প্রত্যেকের শরীরেরই ক্যানসারাস সেল রয়েছে। শরীর যেমন ফরেন প্রোটিন ধ্বংস করে, তেমনি ক্যান সারাস সেলগুলোকেও ধ্বংস করে।– সবগুলো ক্যানসার সেলকে শরীর থেকে বের করে দেয়া সম্ভব নয়, কারণ শরীরের ভেতর আমরা সারাক্ষণ ওই সেল তৈরি করে চলেছি। সেলগুলোর সাথে যুদ্ধে শরীরকে জিততে সাহায্য করাই একমাত্র কাজ হতে পারে আমাদের।
আর তাঁর স্ত্রী রোগীদের বলেন, বেশিরভাগ লোকের ধারণা ক্যানসার সেল দেখতে খুবই কুৎসিত, নীচ, চোরাপথে চলাফেরা করে, এবং অত্যন্ত শক্তিশালী একবার বাড়তে শুরু করলে শরীরের আর কিছু করার থাকে না। ব্যাপারটা ঠিক এরকম না। আর সব সেলের মতোই ক্যানসার সেলও সাধারণ একটা সেল, পার্থক্য শুধু এইটুকু যে এই হারামজাদার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সত্যি কথা হলো, এটা একটা খুব বোকা সেল, সংখ্যায় এতো দ্রুত বেড়ে ওঠে যে প্রায় সময়েই নিজের রক্ত সরবরাহ সিস্টেমকে ঘেরাও করে অচল করে দেয়, ফলে অভুক্ত অবস্থায় নিজেই মারা পড়ে। ওটাকে কাটুন, বিকিরণের মধ্যে ফেলুন, কিংবা কেমোথেরাপি দিন। একবার যদি ওটা অসুস্থ হয়ে পড়ে, নিজের স্বাস্থ্য আর কখনো ফিরে পায় না। মারা যায়।
এবার স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যবান একটা সেলের কথা ধরুন। আপনার হাত কেটে গেল, ব্যাণ্ডে জ ছাড়া আর কিছু ব্যবহার করলেন না, তবু ক্ষতটা আপনা থেকেই সেরে যাবে। আমরা জানি, স্বাভাবিক টিস্যু নিজেই নিজেকে মেরামত করতে পারে–তারা তাদের রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় না।
ড, সিমনটন আর তাঁর স্ত্রী রোগীদেরকে তিনটে কাজ দেন। এক, মনের পর্দায় রোগ চাক্ষুষ করা। দুই, মনের পর্দায় চিকিৎসা চাক্ষুষ করা। তিন, শরীরের নিজেকে সারিয়ে তোলার যে ক্ষমতা, সেটা কল্পনা এবং অনুভব করা। সেই সাথে নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ, নিরোগ অবস্থায় চাক্ষুষ করা।
ধ্যান করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন তাঁরা। রোগীদের জিজ্ঞেস করেন, দিনে কতোবার ধ্যান করছেন? ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ঠিক মতো সবগুলো ছবি দেখছেন কিনা?
চর্চা করার জন্যে একটা অনুশীলন দিয়ে এই পরিচ্ছেদ শেষ করবো। এই অনুশীলনটা মাথাব্যথা সারাবার জন্যে। তবে সাজেশনের শব্দ বদলে অন্য কোনো বাধা সারাবার কাজেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল পাবেন। উদ্বেগ, উত্তেজনা বা দুশি কারণে যে মাথাব্যথা, সেটা সারাবার জন্যে এই পদ্ধতি একবার ব্যবহার করাই যশে। মাইগ্রেন ধরনের মাথাব্যথার জন্যে এই একই পদ্ধতি তিনবার ব্যবহার করবেন, পাঁচ মিনিট পর পর।
মাথাব্যথা দূর করার পদ্ধতিঃ
আপনার যদি মাথা ধরে, তিন–এক পদ্ধতির সাহায্যে নিজের লেভেলে পৌঁছান। তারপর নিজেকে বলুন, আমার মাথা ধরেছে; মাথায় আমি ব্যথা অনুভব করছি, আমি এই মাথাব্যথা চাই না; আমি মাথায় ব্যথা অনুভব করতে চাই না।
তারপর নিজেকে বলুন, এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুণতে যাচ্ছি আমি, পাঁচ পর্যন্ত গুণে চোখ খুলবো, চোখ খোলার সাথে সাথে সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় জেগে উঠবো, পুরোপুরি সুস্থ আর ঝরঝরে তাজা থাকবো; তখন আমার মাথায় কোনো ব্যথা থাকবে না; তখন আমার মাথায় আমি কোনো ব্যথা অনুভব করবো না।
এরপর আপনি ধীরে ধীরে গুণতে শুরু করবেন, এক–দুই-তিন। তিন পর্যন্ত গুণে মনে মনে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেবেন, পাঁচ পর্যন্ত গুণে চোখ খুলবো আমি, সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় জেগে উঠবো, পুরোপুরি সুস্থ আর ঝরঝরে তাজা থাকবো। তখন আমার মাথায় কোনো কষ্ট থাকবে না, তখন আমার মাথায় আমি কোনো ব্যথা অনুভব করবো না।