নিজের চিকিৎসা করার প্রথম পদক্ষেপ, এর কোনো শেষ নেই। এটা বিটা, আলফা এবং থিটায় চর্চা করুন। ভালোবাসার পাত্র হতে বলা হয়েছে আপনাকে, বলা হয়েছে। ক্ষমাশীল হতে–দৈনন্দিন জীবনে তাই হোন। ওই ভাবে বাঁচুন। ভালোবাসার পাত্র এবং ক্ষমাশীল হওয়ার পথে দিনের বেলা যদি কোনো বাধা আসে, যদি মনোযোগ ছুটে যেতে চায়, শক্তি সঞ্চয়ের জন্যে তিন আঙুল এক করুন।
হোসে সিলভার অনেক ট্রেনিং স্কুল থেকে ছাত্রদের জন্যে রিপোর্ট ছাপা হয়। চিঠির আকারে এই রিপোর্টগুলো অন্যান্য শাখা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকেই আসে। সব চিঠিরই বিষয়বস্তু এক, মনকে নিয়ণ করা শিখে তারা কি ধরনের উপকার পাচ্ছে। মাথাব্যথা, হাঁপানি, তোতলামি, শারীরিক দুর্বলতা, আলস্য, হাই ব্লাডপ্রেশার, নার্ভাসনেস, আতঙ্ক, মৃত্যু ভয়, অতিভোজন, ধূমপানে আসক্তি, অনিদ্রা, এমন কোনো সমস্যা নেই যা সাফল্যের সাথে সমাধান করা না গেছে।
এখানে একটা রিপোর্টের কথা সবিস্তারে উল্লেখ করছি। এটি নির্বাচন করার কারণ, রিপোর্টটা লিখেছেন একজন ডাক্তার।
এগারো বছর বয়স থেকে মাইগ্রেন মাথাব্যথায় ভুগছি আমি। প্রথম দিকে মাঝে মধ্যে আক্রমণ হতো, তখন সেটা কমানোও যেতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যথাটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে লাগলো, এবং শেষ পর্যন্ত শিকার হয়ে পড়লাম ক্লাস্টার হেডেক-এর। তিন থেকে চার দিন থাকতো এই ব্যথা, প্রতিটি আক্রমণের মাঝখানে বিরতি থাকতো মাত্র দু’দিন। ভয়ঙ্কর মাইগ্রেন হেডেক আসন গেড়ে বসছিল সাধারণত আক্রমণটা হতো মুখ আর মাথার একটা পাশে। চোখ দুটো মনে হতো কেউ যেন ভেতর থেকে ঠেলে কোটরের বাইরে বের করে দিয়েছে। খোঁচানো ধরনের তীব্র ব্যথা, পেটের নাড়িভুড়ি সব ওলট-পালট হয়ে যেতে চাইতো। বিশেষ ভাবে তৈরি এক ধরনের ভ্যাসেকনস্ট্রিকটিং ড্রাগ দিয়ে মাঝে মধ্যে রেহাই পাওয়া যেতো, ব্যথা শুরু হওয়ার প্রথম দিকে যখন সেটা সহনীয় থাকতো তখন নিতে হতো ওই ওষুধ। শুরু হবার পর খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলে কোনো কিছুতেই আর কমাবার উপায় ছিলো না, একমাত্র সময় পূরণ হলে নিজে থেকেই থেমে যেতো। এমন একটা পর্যায়ের দিকে এগোচ্ছিলো ব্যথাটা, ওই বিশেষ ভাবে তৈরি করা ওষুধ প্রতি চার ঘন্টা পর পর নিলেও সেটাকে পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হতো না।
খুব নামকরা একজন মাথাব্যথা বিশেষজ্ঞের কাছে গেলাম। তিনি আমাকে সবদিক থেকে পরীক্ষা করে রায় দিলেন, ফিজিক্যাল বা নিউরোলজিক্যাল কোনো অস্বাভাবিকত্ব আমার মধ্যে নেই। তিনি আমাকে কিছু উপদেশ আর চিকিৎসা পদ্ধতি দিলেন। ওগুলো যে আমি অনেক আগে থেকেই মেনে চলছি আর ব্যবহার করছি তা আর তাঁকে বললাম না। ব্যথার আক্রমণ চলতে থাকলো।
আমার এক রোগী সিলভা ট্রেনিং স্কুলের ছাত্রী ছিলো, কোর্স শেষ করে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে। প্রায় বছর খানেক থেকে আমাকে ওই ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি করাবার চেষ্টা করছিল সে। প্রসঙ্গটা উঠলেই আমি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে তাকে বলতাম, রাখো তোমার মন নিয়ন্ত্রণ, ওসব ভাঁওতাবাজি আমি বিশ্বাস করি না! সব ভুয়া! কিন্তু তারপর একদিন, সেদিন আমার এক দফা মাথাব্যথার চতুর্থ দিন, দেখা করার জন্যে আমার কাছে এলো সে। আমার চেহারা দেখেই যা বোঝার বুঝে নিলো, মুখ ফুটে কিছু বলতে হলো না। আমাকে বললো সে, “এখনো আপনি জেদ ধরে থাকবেন? একবার চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি? উপকার না পেলে কোর্স কমপ্লিট করবেন না। নতুন একটা কোর্স শুরু হতে যাচ্ছে-”যাবেন আমার সাথে?”
গেলাম। দস্তখত করে ভর্তি হলাম কোর্সে। প্রথম হপ্তায় প্রতিটি ক্লাস করলাম, যা যা শেখানো হলো সব অন্তর দিয়ে শেখার চেষ্টা করলাম, কেন জানি না, ওই হপ্তায় মাথায় কোনো ব্যথা হলো না। কিন্তু কোর্সটা শেষ করার এক হপ্তা পর প্রচও একটা মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙলো আমার। ভাবলাম, পদ্ধতিটা সত্যি কাজ করে কিনা পরীক্ষা করে দেখার এই একটা সুযোগ। এক শো থেকে এক পর্যন্ত গুণে ধ্যানমগ্ন হলাম, তারপর আগে থেকে তৈরি করে রাখা সাজেশন দিলাম নিজেকে। সাজেশন দেয়া শেষ হয়েছে, বিটায় ফিরে এসেছি, একটু পরেই ব্যথাটা সেরে গেল। বিস্ময়ে, আনন্দ স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কিন্তু আবার মুষড়ে পড়তে বেশি সময় লাগলো না, কারণ কয়েক সেকেণ্ড পরই ফিরে এলো ব্যথাটা–এবার আরো জোরেশোরে। কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না, আরেকবার ধ্যানমগ্ন হয়ে সাজেশন দিলাম নিজেকে। এবারও দূর হলো ব্যথা, কিন্তু অল্প সময়ের জন্যে। যতোবার ব্যথা ফিরে আসে, আমিও নাছোড়বান্দার মতো ততোবার ধ্যানমগ্ন হয়ে নিজেকে মাথাব্যথার বিরুদ্ধে সাজেশন দিই। এই সময় একবারও আমি ওষুধ নিইনি। এভাবে এক এক করে দশবার ধ্যানমগ্ন হওয়ার পর ব্যথাটা সত্যি সত্যি হার মানলো, সেদিন আর মাথাচাড়া দিলো না।
পরদিন বা তার পরদিনও ব্যথাটা ফিরে এলো না। যেদিন এলো, মাত্র দু’বার ধ্যানমগ্ন হয়ে সাজেশন দিতেই পালিয়ে গেল সেটা। এরপর যদিও আরো তিন মাস মাথাব্যথায় ভুগতে হয়েছে আমাকে, কিন্তু প্রতিবার আক্রান্ত হতাম অল্প সময়ের জন্যে, পেইনকিলার ট্যাবলেট খাওয়ার প্রয়োজন বোধ করতাম না। মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখার পর থেকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ একবারও খাইনি আমি। শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস এলোঃ পদ্ধতিটি সত্যি কাজ করে!