সাইকিক হীলিং (PSYCHIC HEALING) সম্পর্কে হোসে সিলভার অভিজ্ঞতা ব্যাপক। মনকে ব্যবহার করে নিজেরাই নিজেদেরকে সুস্থ করে তুলেছে এই রকম হাজার হাজার রোগীর সাথে সরাসরি আলাপ করেছেন তিনি, তাদের সুস্থ হয়ে ওঠা সম্পর্কে লিখিত রিপোর্টেও গভীর মনোযোগের সাথে চোখ বুলিয়েছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন, ‘এ-ধরনের অসংখ্য ঘটনার কথা জানা আছে আমার, কিন্তু কোথাও শুনিনি বা দেখিনি যে অমুকে নিজের চিকিৎসা করতে গিয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অন্য কোনো অসুবিধের মধ্যে পড়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা থেমে নেই, সে সব গবেষণার ফলাফল থেকে এই ধারণাই ক্রমশ আরো দৃঢ় হচ্ছে যে শরীরের সাথে গভীর একটা সম্পর্ক রয়েছে মনের। শরীরটা আমাদের, মনটাও আমাদের, কাজেই ধরে নেয়া চলে এই দুটোর সমস্ত শক্তি আমাদের কল্যাণেই ব্যবহার হওয়ার কথা ঠিক হয়ে আছে।
জানা কথা, নিজেকে সারিয়ে তোলার ব্যাপারে যতোই আপনি দক্ষতা অর্জন করবেন ততোই আপনার ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে যাবার প্রয়োজন কমে। আসবে। তবে, মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখার এই পর্যায়ে যতোটুকু আপনি উন্নতি করবেন বলে ধারণা করা যায়, তাতে ডাক্তার সম্প্রদায়কে এখুনি অবসর গ্রহণ করতে হবে বলে মনে হয় না। আপনি ডাক্তারের কাছে যাবেন বৈকি, এখন যেমন যাচ্ছেন, এবং তাঁর পরামর্শও গ্রহণ করবেন। কিন্তু আপনার তরফে প্রথম করণীয় হবে, আশ্চর্য অল্প সময়ের মধ্যে রোগ থেকে সেরে উঠে ডাক্তারকে তাক লাগিয়ে দেয়া। একদিন হয়ত তিনি ভাববেন, লোকটা গেল কোথায়!
মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে, এমনি কিছু ছাত্রের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সংকট মুহূর্তে তারা রক্তপাত এবং ব্যথা কমাতে সফল হয়েছে। এখানে মিসেস ডোনাল্ড উইন্ডোক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। তখন একটা কনভেনশনে যোগ দেয়ার জন্যে স্বামীর সাথে টেক্সাসে রয়েছেন মহিলা। নরউইচ, কানেকটিকাট বুলেটিন পত্রিকার খবর অনুসারে, একটা সুইমিং পুলে ঝাঁপ দিয়ে তিনি তাঁর একটা কানের পর্দা (এয়ারড্রাম) ফাটিয়ে ফেলেন।
কাছাকাছি শহরটাও অনেক দূরে ছিলো, তাছাড়া, আমি চাইনি আমার স্বামী কনভেনশনে অনুপস্থিত থাকুক, পত্রিকার সাংবাদিককে তিনি বলেছেন, তাই কারো কোনো সাহায্যের আশা না করে আমি নিজেই নিজেকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। আলফা লেভেলে চলে যাই আমি, একটা হাত রাখি কানের ওপর, ব্যথার ওপর একাগ্র মনোযোগ রেখে বার বার বলতে থাকি, চলে যাও, চলে যাও, চলে যাও!
ফলাফল?
প্রায় সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল রক্তপাত, ব্যথাটা কমতে কমতে একেবারে চলে গেল। তারপর যখন ডাক্তারের কাছে গেলাম, বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
নিজেই নিজের চিকিৎসা করার সহজ সরল ছ’টা নিয়ম আছে, এখানে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করছি।
প্রথম কাজ, বিটা লেভেলে, নিজেকে একজন ভালোবাসার পাত্র হিসেবে অনুভব করা। নিজেকে আপনি বিশ্বাস করানঃ মানুষকে আপনি নিঃশর্তভাবে ভালোবাসেন, আপনাকেও সবাই পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। মনে মনে নিজেকে জানান, আপনি ক্ষমাশীল। তারপর ক্ষমাশীল হিসেবে অনুভব করুন নিজেকে। এসব করতে হলে সম্ভবত আপনার মনের ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করার দরকার হবে (ছয় নম্বর পরিচ্ছেদ দুষ্টব্য)। ৪–আত্ম-উনয়ন
দ্বিতীয় কাজ, নিজের লেভেলে চলে যান। শুধু ধ্যানমগ্ন হওয়াটাই রোগ সারানোর দিকে বিরাট একটা পদক্ষেপ, একথা আগেই আমরা বলেছি। এই লেভেলে মনের নেতিবাচক বা না-সূচক তৎপরতা থাকে না, থাকে না কোনো রাগ বা অপরাধ বোধ, তাই প্রকৃতি শরীরকে যা করার দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে সেটা নির্বিঘ্নে করতে পারে সে। আপনার মনে রাগ, ঘৃণা, অপরাধবোধ ইত্যাদি সত্যি সত্যি থাকতে পারে, কিন্তু সেটা শুধু বিটা লেভেলে। মন-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চর্চা করতে থাকলে ধীরে ধীরে এই লেভেল। থেকেও ওগুলো বিদায় নেবে।
তৃতীয় কাজ, মনে মনে প্রথম কাজগুলো সম্পর্কে নিজের সাথে কথা বলুন। মনের ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করার জন্যে আপনার যে বাসনা আছে, সেটা আন্তরিকতার সাথে প্রকাশ করুন। নিজেকে বলুন, আপনি হা-সূচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে চান। বলুন, আপনি আপনার চিন্তা-ভাবনা হাঁ-সূচক করতে চান। বলুন, আপনি সবার ভালো বাসার পাত্র হতে চান। বলুন, আপনি ক্ষমাশীল হতে চান।
চতুর্থ কাজ, যে অসুস্থতা আপনাকে ভোগাচ্ছে মনে মনে সেটা অনুভব করুন। এখানে আপনি পর্দা পদ্ধতি কাজে লাগাবেন। পর্দায় নিজের অসুস্থতা ফুটিয়ে তুলে সেটা। চাক্ষুষ করুন এবং অনুভব করুন। এটা অল্প সময়ের মধ্যে সারবেন।
পঞ্চম কাজ, আপনার অসুস্থতার ছবি পর্দা থেকে সরিয়ে দিয়ে এরপর আনুন আপনার রোগমুক্ত সুস্থতার ছবি। সুস্থ থাকার যে আনন্দ আর স্ফুর্তি, সেটা অনুভব করুন। উপভোগ করুন মুহূর্তগুলো, যতোক্ষণ খুশি। মনে মনে জানুন, এই সুস্থতা আপনার প্রাপ্য।
ষষ্ঠ কাজ, আরেকবার মনের ঘর-দুয়ার পরিষ্কার অর্থাৎ শুদ্ধি অভিযান চালান। সবশেষে নিজেকে বলুন, ‘প্রতিদিন সবদিক থেকে উন্নতি করছি।’
কতোক্ষণ সময় লাগবে এতে, সারা দিনে ক’বার করতে হবে?
পনেরো মিনিট ধরে করা সবচেয়ে ভালো। যতো বার করবেন ততোই তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন, তবে দিনে একবারের চেয়ে কম যেন না হয়। যতোবারই করুন, সেটা বেশি হয়ে যাবার কোনো ভয় নেই।