হোসে সিলভা একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এর পর। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষকে ট্রেনিং দিয়েছেন অর্থের বিনিময়ে। সেই অর্থ ব্যয় হচ্ছে আরও ব্যাপক গবেষণার কাজে।
সিলভার দেখাদেখি উন্নত বিশ্বের চারদিকে সাড়া পড়ে গেছে এরপর। অনেক বিজ্ঞানী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন গবেষণার কাজে, নানান ধরনের আশ্চর্য ফলাফল বেরিয়ে আসছে একের পর এক। বেরিয়ে আসছে সহজতর পদ্ধতি। এই বইয়ের মাধ্যমে আমরা এসব পদ্ধতি শেখাবো পাঠককে, কিভাবে কি চর্চা করলে নিজেই এসব ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায় শিখিয়ে দেবো একে একে। যে-কোনো ধর্মের মানুষ, বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী, সবাই চর্চা করতে পারেন; এর মধ্যে কারও ধর্ম বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি কথাও নেই।
শিখবেন?
আগামী পরিচ্ছেদ থেকেই শুরু হয়ে যাবে কাজের কথা। কিন্তু তার আগে একটা। কথা জানিয়ে রাখিঃ মোটেও হালকা ভাবে নেবেন না এ-বইটিকে নিঃসন্দেহে ধরে নিন, আজ পর্যন্ত জীবনে আপনি যতো বই পড়েছেন, এটি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই। কোনো সন্দেহ নেই, এ-বই পড়ে শেষ করার পর আপনার জীবনের মোড়ই ঘুরে যাবে, আপনি আর আগের সেই মানুষটি থাকবেন না। থাকতে পারবেন না। কারণ, আত্ম-উন্নয়নের এমন সুযোগ হাতে পেয়ে ছেড়ে দেয় কোন্ বোকা! উন্নতি আপনাকে করতেই হবে।
ভূমিকা শেষ করার আগে একটু কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নেয়া যাক। এ বইটি লেখা সম্ভব হয়েছে আমার পি. এইচ. ডি. শ্যালিকা ড. নাজমা ইয়াসমিন হক ও তাঁর স্বামী ড. ফজলুল হকের নিঃস্বার্থ, সহৃদয়, সক্রিয় সহযোগিতায়। এরা দু’জন হোসে সিলভার চারদিনের ‘মাইও কন্ট্রোল ট্রেনিং কোর্স সম্পূর্ণ করেছেন মালয়েশিয়ায়, এদেশী মুদ্রামানে এগারো হাজার টাকার বিনিময়ে। এ-বই রচনার কাজে পদে পদে সাহায্য পেয়েছি আমি এঁদের কাছে, নিজেদের অনেক মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন এঁরা আমার সাথে সুদীর্ঘ আলোচনায়, বইপত্র পড়তে দিয়েছেন যখন যা চেয়েছি। এরা চেয়েছেন। এদেশের মানুষকে এ-বিদ্যা শিখে কাজে লাগাবার সুযোগ করে দিতে।
বাঙালী পাঠক যদি এ-বই থেকে উপকৃত হতে পারেন, আমাদের সবার পরিশ্রম সার্থক হবে।
.
০১. মন নিয়ন্ত্রণ
অনেক ভাবেই মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করা যায়। তার একটি হলো সম্মোহন। সম্মোহনের সাহায্যে নিজেকে প্রভাবিত করে অটো সাজেশনের মাধ্যমে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু সম্মোহিত অবস্থায় কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এসে যায় বলে স্বাধীনভাবে চিন্তা ও কল্পনার ক্ষমতা অনেকখানি লোপ পায়। অথচ নতুন এই পদ্ধতিতে কল্পনাকে ব্যবহার করতে হবে আপনার নিজের প্রয়োজনে। সেইজন্যে সম্মোহনের কাছাকাছি আর একটি স্তর আবিষ্কার করা হয়েছে, যেখানে পৌঁছে স্থিত হবে মানুষ, কিন্তু তার প্রখর কল্পনাশক্তি যথেচ্ছ ব্যবহারে কোনো বাধা থাকবে না।
আমরা জানি, আমাদের ব্রেন ইলেকট্রিসিটি তৈরি করে। এই বিদ্যুতের সাইকেলকে বৈজ্ঞানিকেরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নাম দিয়েছেন বিটা, আলফা, থিটা ও ডেলটা রিদম। যাঁরা ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাঁরা জানেন, সবচেয়ে ভালো সার্কিট সেটাই যার প্রতিরোধ ক্ষমতা (resistance) সবচেয়ে কম; কারণ ওই সার্কিটই নিজের বৈদ্যুতিক শক্তিকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে পারে। মস্তিষ্কের ব্যাপারেও কথাটা সত্যি। ব্রেনটা যখন সবচেয়ে কম তৎপর থাকে তখন তার ক্ষমতা থাকে সবচেয়ে বেশি। কম ফ্রিকোয়েন্সিতে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ ও জমা করে রাখতে পারে ব্রেন।
ধ্যানের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো বিটা লেভেল থেকে আলফা, থিটা ও ডেলটা লেভেলে ওঠানামা করতে শিখে নিয়েছেন সাধু-সন্ন্যাসীরা। সম্মোহন-জাতীয় পদ্ধতিতে শারীরিক ও মানসিক শিথিলতা সৃষ্টি করছেন তাঁরা, সেইসাথে, মানসচক্ষে পরিষ্কার ছবি ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা, অর্থাৎ কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাচ্ছেন নিজের মধ্যে সচেতনভাবে।
আমরাও যদি এই ধ্যান করাটা শিখে নিতে পারি তাহলে তাঁদের মতোই ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই ক্ষমতা আমরা কে কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবো সেটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। সমস্ত সম্ভাবনাই তুলে ধরা হবে আপনার সামনে।
বইটা একবার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলুন। প্রথমবার পড়বার সময় কোনো অনুশীলনই চর্চা করতে যাবেন না। একবার সবটা পড়ে নিয়ে তারপর এক এক করে চর্চা শুরু করুন প্রথম থেকে। আগেরটা ভালোমতো রপ্ত না করে পরের অনুশীলনে যাবেন না।
সবগুলো পরিচ্ছেদ শেষ করার পর আপনি আবিষ্কার করবেন, সম্পূর্ণ নতুন এক জগতে প্রবেশ করেছেন আপনি, সম্ভব-অসম্ভবের বেড়া আর ততোটা কঠিন মনে হচ্ছে। না, আশ্চর্য এক বিদ্যা চলে এসেছে হাতের মুঠোয়, নিজের ভেতর অনুভব করছেন এক অসাধারণ ক্ষমতা।
বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে। কারণ পদ্ধতিটা এমনই যে এটা কারও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ধার ধারে না। যেভাবে যা করতে বলা হবে। করুন, নাহয় অবিশ্বাস নিয়েই করুন, যখন নিজের ভেতর ক্ষমতা অনুভব করবেন স্পষ্টভাবে, যখন বিদ্যাটা কাজে লাগিয়ে ফল পেতে শুরু করবেন, তখন আপনিই আসবে বিশ্বাস, সাধতে হবে না।
অনুশীলন শুরু করবার আগে লেভেল সম্পর্কে দু একটি কথা।