- বইয়ের নামঃ আত্ম-উন্নয়ন
- লেখকের নামঃ বিদ্যুৎ মিত্র
- প্রকাশনাঃ রকমারি কালেকশন
- বিভাগসমূহঃ আত্মজীবনী
০১. মন নিয়ন্ত্রণ
ভূমিকা
আত্ম-উন্নয়ন করতে হলে নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে আপনার। আর সেটা করতে হলে জানতে হবে মনটা কি, কতটা এর ক্ষমতা। মোটামুটিভাবে সবাই জানি মনের অনেক ক্ষমতা। তার অনেক প্রমাণও পেয়েছি আমরা বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষ অনেক এগিয়ে গেলেও আসলে মন নিয়ে গবেষণা তেমন। হয়নি বললেই চলে।
আমরা শুনেছি, অনেক দেখেওছি, এখানে বসে চোখ বুজে আউলিয়া-দরবেশ ঠিক ঠিক বলে দিচ্ছেন বহুদূরে এই সময়ে কি ঘটছে; বলে দিচ্ছেন কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এসে হাজির হবে এমন একজন যাকে কেউ আশা করছে না; বলে দিচ্ছেন অমুক জায়গায় গিয়ে অমুকের সুটকেস খুলে দেখো তোমার হারানো জিনিস রয়েছে ওর। মধ্যে। শুধু বলে দেয়াই নয়, এখানে বসে তিনি সারিয়ে দিচ্ছেন দূরের কারও রোগ বালাই। সত্যিই সে ভালো হয়ে উঠছে।
এসব কি করে করছেন তিনি? অলৌকিক কোনো ক্ষমতার বলে? নাকি স্রেফ আন্দাজ, বা ঝড়ে বক? যা-ই হোক, একটা ব্যাপার মানতেই হবে, ক্ষমতাটা জাগতিক হোক বা ঐশ্বরিক হোক, ব্যাপারগুলো ঘটছে, এবং এসব ঘটাচ্ছেন তিনি তাঁর মনের। সাহায্যে।
এই ক্ষমতাটা অর্জন করতে পারলে কেমন হয়? চমৎকার হয় না? কথাটা যে। হালকাভাবে বলছি না, সেটা বোঝাবার জন্যে নিজের জীবন থেকে একটি সত্য ঘটনার। উল্লেখ করছি।
ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছি, শেষ পরীক্ষার দিন হঠাৎ সকাল থেকে শুরু হলো ভয়ানক জ্বর। ম্যালেরিয়া। বাড়তে বাড়তে বেলা সাড়ে নটা নাগাদ জ্বর গিয়ে ঠেকলো একশো পাঁচ ডিগ্রিতে। আধঘন্টা পর পরীক্ষা, অথচ দুটো লেপ দিয়েও চেপে ধরে রাখা যাচ্ছে না। আমাকে, এমন হি-হি কাঁপুনি। সেইসাথে প্রলাপ বকছি সমানে। আমাদের প্রতিবেশী ডাক্তার জোহরা বেগম কাজীকে ডেকে আনা হলো। দেখেশুনে তিনি নির্দেশ জারি করলেন, পরীক্ষা দেয়ার তো প্রশ্নই উঠতে পারে না, এইরকম শারীরিক অবস্থায় মানসিক চাপ পড়লে মাথাটাই খারাপ হয়ে যেতে পারে-কাজেই পরীক্ষা বন্ধ।
মা তো মহাচিন্তায় পড়লেন। হঠাৎ তাঁর খেয়াল হলো, আমার এক বন্ধু বাবু (প্রয়াত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী জাহিদুর রহিম)-এর নানা এখন ঢাকায়। জানা আছে, তিনি দরবেশ মানুষ, ঝাড়ফুক জানেন। সাথে সাথেই খবর দেয়া হলো তাঁকে। বাবুদের বাড়ি পঞ্চাশ গজের মধ্যেই, খবর পেয়ে চলে এলেন নানা। নূরানী চেহারা, পাকা দাড়ি, মুখে সদা মিষ্টি হাসি।
অত জ্বরের মধ্যেও কিন্তু হুশ আছে আমার। প্রবল আপত্তি জানালাম–ওসব বুজরুকি আমি বিশ্বাস করি না, ঝাড়ফুক লাগবে না আমার, ওসবে কোনো কাজ হবে না। অনেক অনুনয়-বিনয় করলেন মা, অনেক করে বোঝালেন কুঁকে কাজ যদি না হয় কোনো ক্ষতি হচ্ছে না আমার; কিন্তু যদি কাজ হয়, পরীক্ষাটা দিতে পারছি, পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে না বন্ধুদের থেকে। অগত্যা নিমরাজি হলাম, যেন নেহায়েত দয়া পরবশ হয়েই।
মাথার কাছে বসে কিছু দোয়া-দরুদ পড়লেন নানা, তারপর তিনটে ফুঁ দিয়েই উঠে পড়লেন। একটি কথাও না বলে চলে গেলেন ঘর ছেড়ে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে উঠে বসলাম বিছানায়। কাঁপুনি বন্ধ হয়ে গেছে, নেমে গেছে। গায়ের জ্বর, পরীক্ষার হল পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে একেবারে নরমাল। পরীক্ষা দিলাম, এবং পাসও করলাম, প্রথম বিভাগে।
কী মনে হয় এ থেকে অনেক প্রশ্ন এসে ভিড় করে না? অলৌকিক শক্তি বলে কি সত্যিই কিছু আছে? এটা কি সম্মোহনের মাধ্যমে একজনের ওপর আরেকজনের মনের প্রভাব? নাকি এক্সট্রা সেনসরি প্রজেকশন? এসব যদি সত্যি হয় তাহলে কি পরকাল, স্বর্গ-নরক, সেসবও সত্যি? নাকি এটা সম্পূর্ণ জাগতিক বাস্তব কোনো শক্তি-সাধনার ফলে কিংবা দৈবাৎ কেউ কেউ জেনে যায় এর প্রয়োগ কৌশল?
আগেই বলেছি, মানুষের মন নিয়ে গবেষণা হয়েছে বডেডা কম। শুধু মানুষ কেন, পশু পক্ষী, গাছপালা সবারই মন আছে; তবে এ নিয়ে নাড়াচাড়া হয়নি তেমন; যদিও আমরা সবাই জানি, এরা ইচ্ছে ও প্রয়োজন মতো নিজেদের আকৃতি রঙ ও গঠন। পরিবর্তন করে নিয়েছে হাজার হাজার বছরের চেষ্টায়। শুষ্ক মরুভূমির গাছ পানি ধরে রাখার জন্যে মোটা করে নিয়েছে গায়ের চামড়া, খসিয়ে দিয়েছে পাতার বাহার; ছাগলে মুড়ায় বলে গোলাপ গাছ নিয়েছে কাঁটা; লুকোবার প্রয়োজনেই প্রজাপতির বিচিত্র রঙিন পাখা, বহুরূপী গিরগিটির রঙ পরিবর্তন। মানুষের মন এদের থেকে অনেক উন্নত, অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে–এভোই শক্তিশালী।
মানুষের মনের ভাব, বোধ, চিন্তা, স্মৃতি, ইচ্ছা, স্বপ্ন, কল্পনা ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একটা যোগসূত্র আবিষ্কার করে ফেললেন মেক্সিকোর এক স্বল্পশিক্ষিত রেডিও মেকানিক হোসে সিলভা (JoSE SILVA)। হঠাৎ করে তিনি বুঝে ফেললেন মনের কোন্ শক্তিটাকে কিভাবে ব্যবহার করে অলৌকিক ক্ষমতা লাভ করেন আউলিয়া-দরবেশ-সাধু-সন্ন্যাসীরা। কিছুদিন চর্চা করেই তিনি পরিষ্কার বুঝতে পারলেন, এজন্যে বিশেষ কোনো গুণের অধিকারী হওয়ার দরকার নেই, বিশ-ত্রিশ বছর বনে-জঙ্গলে-পাহাড়ে সাধনারও দরকার নেই–যে-কোনো সাধারণ মানুষ একটু ধৈর্য ধরে চর্চা করলে দু’তিন মাসেই আয়ত্ত করতে পারবে এ-বিদ্যা।