একটা বড় প্রাইভেট কনসার্নে অ্যাসিসট্যান্ট একাউন্ট্যান্ট। তবে নগদ চায় দশ হাজার।
দশ হাজার।
হ্যাঁ ভাই। যদি হাজার পাঁচেকে রাজী করাতে পারি, তাহলে বোধহয় এখানেই ভাগ্নীর বিয়ে ঠিক করে ফিরব।
কিন্তু এই ছেলের জন্য দশ হাজার?
ওঁরা বলছেন, গৌহাটিতে গিয়ে বিয়ে দিতে হলে অনেক খরচ—
ওঁদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে?
দীপেনবাবু তাড়াতাড়ি সুটকেশ থেকে একটা ফটো বের করে বললেন, তুমিই বলো, এ মেয়েকে কেউ অপছন্দ করবে?
ফটোটা দেখেই মিঃ সোম চমকে উঠলেন। কোন মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, এইসব শিক্ষিত সুন্দরী মেয়েরা যদি আমাদের মত ম্যারেজ অফিসারের কাছে এসে বিয়ে করে
তাহলে তো ফ্যামিলিটা রক্ষা পেতো, কিন্তু নন্দিতা সে ধরনের মেয়ে নয়।
মিনিটখানেক চুপ করে থাকার পর মিঃ সোম বললেন, একটা কথা বলব তোমাকে?
নিশ্চয়ই বলবে।
তুমি তোমার ভগ্নীপতির হালিশহরের সম্পত্তি বিক্রি করো না, বেহালাতেও যেতে হবে না।
কেন?
আমি কথা দিচ্ছি, এ মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা আমি করে দেব।
কিন্তু–
আমার উপর একটু বিশ্বাস রাখো। এ মেয়েকে সৎ পাত্রের হাতে দেবার দায়িত্ব আমার।
কিন্তু যদি তুমি ফেল করো–
মিঃ সোম একটু হেসে বললেন, চিন্তা করো না। এত বড় কলকাতা শহরে একটা ভদ্র শিক্ষিত ছেলে ঠিকই খুঁজে বের করব। একটু থেমে উনি বেশ জোরের সঙ্গে বলেন, এবং তুমি জেনে রাখো এমন ছেলের সঙ্গে তোমার ভাগ্নীর বিয়ে দেব, যে তোমার ভগ্নীপতির হাজার টাকাও খরচ করাবে না।
তুমি যদি তা পারো তাহলে সত্যি বড় উপকার হবে।
এর মধ্যে কোন যদি নেই, এ কাজ আমি করবই। মিঃ সোম একটু থেমে বললেন, তোমার ভগ্নীপতি ও ভাগ্নীর সব ডিটেলস আমাকে লিখে দিয়ে যাবে। আর তোমার ভাগ্নীকে আমার বিষয়ে কিছু বলল না, শুধু বলে যেও তোমার এক বন্ধু যোগাযোগ করতে পারে।
তোমার নামও বলব না?
না। হাজার হোক বিয়ের ব্যাপারে আগের থেকে কাউকেই সব কিছু না জানানোই ভাল।
তা ঠিক।
কলকাতার অন্যান্য কাজকর্ম সেরে দিন দুই পরে দীপেনবাবু কুচবিহার ফিরে গেলেন। তার পরের দিনই মি, সোম ম্যারেজ নোটিশ বুক থেকে সুবীরের ঠিকানা দেখে চিঠি দিলেন-তোমাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে। একদিন সময় করে এসো। খুব খুশী হবে।
তিন-চারদিন পরেই সুবীরের জবাব এলো–আপনার চিঠি পেয়ে খুব ভাল লাগল। ইতিমধ্যে আপনাদের সঙ্গে দেখা করা উচিত ছিল, কিন্তু ফাইন্যাল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম বলে যোগাযোগ করতে পারি নি। সেজন্য ক্ষমা করবেন। যাই হোক, রবিবার দুপুরে দুজনেই আসছি। মাসীমাকে বলবেন, দুপুরে দুজন খাবে।
.
রোজ ঠিকে ঝি মানদাই বাজার করে দেয়, কিন্তু রবিবার সকালে উঠেই মিঃ সোম নিজে বাজার গেলেন। শাকসবজি মাছভর্তিথলে রান্না ঘরের সামনে রেখে সাবিত্রীকে বললেন, হ্যাঁগো, আলুবখরা এনেছি।
খুব ভাল করেছ। তুমি বেরিয়ে যাবার পরই আমার মনে পড়ল।
খানিকটা পরে দুটি ছেলেমেয়ে এসে বিয়ের নোটিশ দিয়ে গেল। ওরা চলে যাবার দশ-পনের মিনিট পরেই সুবীর আর নন্দিতা এসে হাজির।…
বহুদিন পরে ছেলে আর পুত্রবধু এলে যেমন আনন্দ হয়, ঠিক সেই কম আনন্দে ঝলমল করে উঠলেন মিঃ সোম আর সাবিত্রী।
বাইরের ঘরের চেয়রে-টেবিলে না, ভিতরের ঘরে বিছানার উপর বসেই চা খেতে খেতে চারজনে মিলে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলেন। তারপর সাবিত্রী বললেন, তোমরা বাইরের ঘরে গিয়ে গল্প করে। আমি আর নন্দিতা রান্না সেরে নিই।
বাইরের ঘরে এসে ওঁরা দুজনে পাশাপাশি বসলেন। মিঃ সোম বললেন, একটু জরুরী কথাবার্তা বলার জন্যই তোমাকে ডেকে এনেছি।
সুবীর উৎকণ্ঠার সঙ্গে ওর দিকে তাকাতেই উনি হেসে বললেন, না, না, চিন্তার কিছু নেই।
এবার সুবীর নিশ্চিন্ত হয়ে একটু হাসে। মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো?
সুবীর বলে, এককালে আসামের তিন-চারটে চায়ের বাগানের মালিক ছিলেন নন্দিতার বাবা-কাকারা। তারপর পারিবারিক শত্রুতার জন্য একে একে সব বাগান মারোয়াড়ীদের কাছে বিক্রি হয়ে গেল। এখন ওর বাবার অবস্থা সত্যি খুব খারাপ। সুবীর একটু হেসে বললো, আমাদের দেশে বা সমাজে অর্থ না থাকলেও ঐতিহ্য থাকে। এখন পারিবারিক মর্যাদা মত নন্দিতার বিয়ে দিতে হলে ওর বাবাকে সর্বস্ব খোয়াতে হতো।
তোমাদের এবিষয়ে সম্বন্ধ করলো কে?
ইন্দিরা গাঙ্গুলী। সুবীর একটু হেসে বললো, আমার ছোড়দির নাম ইন্দিরা। তাই ও আমার সঙ্গে পড়লেও ওকে আমি ছোড়দি বলি।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। ছোড়দি আর নন্দিতা হস্টেলের একই ঘরে থাকে।
তোমার বাবা কী করেন?
আমার বাবা মারা গিয়েছেন।……
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
বাড়ীতে আর কে কে আছেন?
দিদি ও ছোড়দির বিয়ে হয়ে গেছে। এখন বাড়ীতে আমি আর মা আছি।
তোমাদের সংসার কে চালান?
আমাদের বাড়ীটা নিজেদের। একতলার দুটি ফ্যামিলি ছাড়াও চারটি দোকানঘর আছে…
তাহলে ত ভাড়ার টাকাতেই সংসার চলে যায়।
আপনাদের আশীর্বাদে ভালভাবেই চলে যায়। এই বাড়ীভাড়া ছাড়াও বড় বড় কোম্পানির কিছু শেয়ার আছে।
তোমার বিয়ের কথা মা জানেন?
না, তবে মা জানেন, নন্দিতাকে বিয়ে করব।
মার মত আছে?
সুবীর হসে বললো, নন্দিতাকে মার খুব পছন্দ।
নন্দিতার বাবা-মাও নিশ্চয়ই বিয়ের কথা জানেন না?
না। আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুবার পর সবাইকে জানান হবে। সুবীর মুখ নীচু করে বললো, আমাদের বিয়ে হলেও আমরা আগের মতই আছি।