দিলীপ বললো, আমাদের একটু তাড়া আছে। যদি এবার ফর্মটা দেন…
মিঃ সোম সঙ্গে সঙ্গে একটা ফর্ম এগিয়ে দিয়ে বললেন, এই নিন। দিলীপ সঙ্গে সঙ্গে ফর্মে ওদের নাম-ধাম লিখতে শুরু করল। সবকিছু লেখা হবার পর দুজনে সই করল। মিঃ সোম ফর্মটি হাতে নিয়ে বললেন, কোন ভুল বা মিথ্যা বৃত্তান্ত থাকলে ইণ্ডিয়ান পেনাল কোডের ১৯৯ ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত…
দিলীপ বললো, সব ঠিক আছে।
তিরিশ দিনের মধ্যে কোন আইনসঙ্গত আপত্তি না উঠলে তার পর এলেই আপনাদের বিয়ে হতে পারবে।
দিলীপ এবার ওর বন্ধুদের বললো, তোরা একটু বাইরে যা।
বন্ধুর দল বাইরে যেতেই দিলীপ আর মায়া একটু এগিয়ে এসে দাঁড়াল। দিলীপ বললো, হাজার হোক আপনিই আমাদের বিয়ে দেবেন। আপনার কাছে কিছুই লুকোবার নেই। তাই বলছিলাম…
দিলীপ কথাটা শেষ না করেই মায়াকে ইশারা করে।
মায়া বলে, আমাদের এই বিয়েতে আপনাকে একটু সাহায্য করতে হবে।
মিঃ সোম বললেন, আইনের মধ্যে আমি সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।
মায়া বলে, আমাদের এই বিয়েতে বাড়ির মত নেই বলে…
তাতে কিছু হবে না।
এবার দিলীপ বললো, আমাদের এই বিয়ের খবরটা যদি বাইরের কেউ না জানতে পারে তাহলে…
আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকেই কিছু জানাব না; তবে যদি কেউ ম্যারেজ নোটিশ বুক দেখতে চান, তাহলে আমি দেখাতে বাধ্য। আর আমার দরজার পাশের নোটিশ বোর্ডে এই নোটিশের কপি লাগানো থাকবে।
দরজার পাশের নোটিশ বোর্ডে…
দিলীপকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই মিঃ সোম মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, নোটিশ বোর্ডে নোটিশ লাগাতেই হবে; তবে তার জন্য আপনাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।
দিলীপ একটু চিন্তিত হয়ে বললো, ভয় শুধু একটাই।
কীসের ভয়?
জানাজানি হয়ে গেলে মায়ার বাবা নিশ্চয়ই মায়াকে দূরে সরিয়ে দেবেন।…
আপনি তাহলে পুলিসের সাহায্য নেবেন।
পুলিসের সাহায্য নিতে চাই না।
কেন?
মায়ার বাবা লোকাল থানায় কাজ করেন।
দিলীপ আবার মায়াকে চোখের ইশারা করল। এবার মায়া সঙ্গে সঙ্গে মিঃ সোমের পায়ের উপর পাঁচ-দশ টাকার কয়েকটা নোট রেখে প্রণাম করতেই উনি চমকে উঠলেন।
মায়া বললো, আপনার উপর আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করছে।
মিঃ সোম গোল করে পাকানো দশ টাকার নোটগুলো তুলে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে দিলেন। বললেন, আপনাদের সাহায্য করাই আমার কাজ। আমার সাহায্যের জন্য টাকা লাগবে না।
মায়া বলল, আমরা আপনার ভরসায় রইলাম।
মিঃ সোম একটু হেসে বললেন, আমি ভরসা দেবার কে? ভরসা করুন ভগবানের উপর।
ওরা বেরিয়ে যাবার উদ্যোগ করতেই মিঃ সোম বললেন, আমি একটা পাঁচ টাকার নোট নিয়ে নিয়েছি। বাকি টাকা নিয়ে যান। দিলীপ বললো, প্রণামীর টাকা তত ফেরত নিতে নেই।
আমি কি ঠাকুর-দেবতা যে আমাকে প্রণামী দিচ্ছেন? এ টাকা আপনারা নিয়ে যান।
না, না, এ টাকা আমরা নিতে পারব না।
না, না, তা হয় না। এ টাকা আপনারা…
ওরা তর তর করে সিঁড়ি দিয়ে নামে। মিঃ সোম একটু জোরেই বলেন, পরের দিন এলে এ টাকা নিতেই হবে। নয়ত
দিলীপ আর মায়া চলে যাবার পরই সাবিত্রী বাইরের ঘরে এসে মিঃ সোমকে জিজ্ঞাসা করলেন, চা খাবে?
খাব।
সাবিত্রী রান্না ঘরে চা করতে যাবার পরই আবার কলিংবেল বাজল। মিঃ সোম দরজা খুলতেই দেখলেন চারজন বয়স্ক ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা। তাঁদের পিছনে ছটি ছেলেমেয়ে। একজন ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, আপনিই কী মিঃ রমেন সোম?
হ্যাঁ।
আমরা কি ভেতরে আসতে পারি?
নিশ্চয়ই।
মিঃ সোম ওঁদের বাইরের ঘরে নিয়ে গেলেন। বসালেন।
এবার একজন প্রবীণ ভদ্রলোক বললেন, আমার নাম এস, কে, রায়চৌধুরী।
মিঃ সোম সঙ্গে সঙ্গে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন।
এবার মিঃ রায়চৌধুরী অন্যদের পরিচয় করিয়ে দিলেন, মিসেস বাসু, মিসেস রায়চৌধুরী, ডাঃ বাসু, আমার ছেলে সুব্রত, আমার ভাবী পুত্রবধূ অঞ্জলি বসু।
ওঁদের সবার সঙ্গে পরিচয় হতেই মিঃ সোম খুশীর হাসি হাসেন।
ডাঃ বাসু বললেন, সুব্রত আর অঞ্জলি একসঙ্গে এঞ্জিনিয়ারিং পড়তো। এবারই পাস করল।…
খুব ভাল।
মিসেস বাসু বললেন, ওরা বিয়েতে বাজে টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে কানাডায় যাবে বলেই…
মিঃ সোম সুব্রত আর অঞ্জলির দিকে তাকিয়ে বললেন, এইতো চাই।
মিঃ রায়চৌধুরী বললেন, আমাদের একটা আর্জি আছে।
বলুন, বলুন।
আজ তো বিয়ের নোটিশ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু বিয়ের দিন আপনাকে একটু কষ্ট করে ডাঃ বাসুর বাড়িতে যেতে হবে।
নিশ্চয়ই যাব।
ডাঃ বাসু বললেন, কোন বড় অনুষ্ঠান আমরা করতে চাই না; তবে দু-চারজন আত্মীয়বন্ধুর সামনে শুভকাজ সম্পন্ন হলে…
এত করে বলার কোন প্রয়োজন নেই। আমি নিশ্চয়ই…
মিসেস রায়চৌধুরী বললেন, আমরা কেউ এসে আপনাকে নিয়ে যাব।
মিঃ সোম বললেন, তবে একটু আগে থেকে আমাকে জানাবেন, কবে কখন…
ডাঃ বাসু বললেন, এরপর এদিকে এলেই আমি নিজে আপনাকে জানিয়ে যাব।
মিঃ সোম ফর্ম বের করতে করতে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি আপনাদের মতো উদার ও আধুনিক হত তাহলে কত গরীব মধ্যবিত্ত যে বেঁচে যেতো তার ঠিক-ঠিকানা নেই।
ডাঃ বাসু হাসতে হাসতে বললেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা মুখেই ইনকিলাব-জিন্দাবাদ বলে চিৎকার করে কিন্তু পুরনো সংস্কার বিসর্জন দেবার সাহস তাদের নেই।
মিঃ সোম বললেন, তা ঠিক।
মিঃ রায়চৌধুরী ফর্মটা সুব্রতকে দিয়ে বললেন, এটা তোমরা ফিল-আপ করো।