মিঃ সোম একটু হেসে বললেন, নাইট ইজ দ্য ডার্কেস্ট বিফোর ভন।
প্রবাল বললো, ঠিক বলেছেন। কলকাতা থেকে রওনা হবার সময় আমার দুই বন্ধু আমাদের রেলের টিকিট কেটে দেয়। বাণীর এক বন্ধু ওর হাতে তিরিশটা টাকা গুঁজে দেয়। এ ছাড়া আমাদের দুজনের কাছে ঠিক নব্বই টাকা ছিল।
বাণী বললো, আমরা সারা রাস্তা শুধু শুকনো পাউরুটি আর চা খেয়েছি।
প্রবাল বললো, মাস দেড়েক ছোট মামার ওখানে কি অপমান সহ্য করেছি, তা ভাবলেও চোখে জল আসে। তারপর মামী একদিন সোজাসুজি চলে যেতে বললেন।
মিঃ সোম উৎকণ্ঠার সঙ্গে প্রশ্ন করেন, তখনও তোমার কোন চাকরি-বাকরি হয় নি?
না।
টাকাকড়িও নিশ্চয়ই ফুরিয়ে গিয়েছিল?
প্রবাল একটু হেসে বললো, মাত্র আঠারো টাকা সম্বল করে ছোট মামার বাড়ী থেকে বেরিয়ে এলাম।
তারপর কোথায় গেলে?
একটা ধর্মশালায় গেলাম।…
নিজেরাই রান্না করতে?
বাণী হেসে বললো, বাসন-কোসন তো কিছুই ছিল না। রান্না করব কিভাবে?
প্রবাল সঙ্গে সঙ্গে বললো, তাছাড়া পয়সাকড়িও তো ছিল না।
তাহলে কি করতে? প্রবাল একটু হেসে বললো, এক শিখ গুরুদ্বারে গিয়ে খেতাম।
রোজ?
হ্যাঁ, রোজ দুবেলা।
তারপর?
দিন দশ-বারো পরে ঐ গুরুদ্বারের এক বৃদ্ধ শিখ আমাদের বললেন–
আচ্ছা বেটা, তোমরা বাঙ্গালী, তাই না?
প্রবাল জবাব দেয়, হ্যাঁ।
তোমাদের নতুন সাধী হয়েছে?
হ্যাঁ।
বাড়ী কোথায়? কলকাত্তা?
হ্যাঁ।
হঠাৎ জব্বলপুর চলে এলে কেন?
প্রবাল সত্যি কথাই বললো, আমাদের বিয়েতে আমাদের বাড়ীর মত ছিল না। তাই…
বুঝেছি, বুঝেছি। বৃদ্ধ একটু থেমে প্রশ্ন করেন, তোমরা নিশ্চয়ই পড়ালিখা জানো?
তাঁ, দুজনেই গ্র্যাজুয়েট।
হ্যাঁ।
বহুত আচ্ছা, বহুত আচ্ছা। বৃদ্ধ শিখ আবার কি ভাবেন। তারপর জানতে চান, তোমরা কোথায় থাকো?
একটা ধর্মশালায়।
দুটো ছেলেমেয়েকে আংরেজি পড়াবে?
নিশ্চয়ই পড়াব।
ওরা তোমাদের থাকার ঘর আর কিছু টাকা দেবে।
তাহলে তো খুব ভাল হয়।