ম্যাথুজ সাহেব আপন মনে বলে যান, একদিন নয়, দুদিন নয়, দীর্ঘ পাঁচটি বছর কমলা আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ভরে রেখেছিল। তারপর হঠাৎ একদিন মনে হলো, আমাদের দুজনের সম্পৰ্ক এত গভীর, এত নিবীড় হয়ে উঠেছে যে এবার আমাদের বিয়ে না হলে হয়ত কোন কেলেঙ্কারী ঘটে যাবে।
এতক্ষণ পরে মিঃ সোম প্রশ্ন করেন, এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আপনাদের বিয়ে হলো না?
মিঃ ম্যাথুজ হেসে বললেন, আমি যে ক্রিশ্চিয়ান আর কমলা যে হিন্দু!
কি দুঃখের কথা।
মিঃ ম্যাথুজ আবার একটু হাসেন। বলেন, না, না, মিঃ সোম, একটুও দুঃখের কথা নয়। এ সংসারের অধিকাংশ মানুষই লুকিয়ে চুরিয়ে সব কিছু করতে রাজী কিন্তু প্রকাশ্যে অনেক কিছুই করবে না।
যাগে ওসব কথা ভুলে যান।
না, না, মিঃ সোম, এসব কথা কিছুতেই ভুলে যাওয়া যায় না।
কিন্তু তাই বলে আপনি বেশ্যাবাড়ী যেতেন কেন?
রাগে, দুঃখে, হতাশায়।
নিয়মিত যেতেন?
হ্যাঁ।
তারপর?
তারপর একদিন পকেটে বিশেষ টাকাকড়ি ছিল না কিন্তু তবু সেই পুরানো বেশ্যার কাছে গেলাম এ্যাণ্ড সী ইনসালটেড মী লাইক এনিথিং।
মিঃ সোম হাসেন।
ঐ বেশ্যার কাছে অপমানিত হয়ে মনে মনে ঠিক করলাম, আর কোনদিন কোন মেয়েকে স্পর্শ করব না। এইটুকু বলেই মিঃ ম্যাথুজ টাই-এ নট ঢিলা করলেন, পট পট করে জামার বোম খুললেন। তারপর গলায় ঝোলান ক্রশ বের করে হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে বললেন, ফাদার জিসাসের নামে শপথ করে বলছি, তারপর আর কোন মেয়ের কাছে যাই নি।
পাত্রী এতক্ষণ চুপ করে বসেছিল। এবার সে মিঃ সোমের দিকে তাকিয়ে বললো, ইয়েস স্যার, হি ইজ ভেরী অনেস্ট।
এবার মিঃ সোম হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
মিঃ ম্যাথুজ এবার এক গাল হাসি হেসে বললেন, ইয়েস। নাউ আই মাস্ট টেল দ্যাট। এবার উনি আয়াকে দেখিয়ে বললেন, কান্তম্মার দেশ মাদ্রাজ। চোদ্দ বছর বয়সে বিয়ে হয়। স্বামী বছর খানেক স্ফুর্তি করেই পালিয়ে যায়। তার দু-তিন বছর পর ওদের দেশের একটা ছোঁড়া কলকাতা থেকে মাদ্রাজ গেল। কান্তম্মাকে দেখে তার খুব ভাল লাগল। ও বিয়ে করবে বলে ওকে কলকাতা নিয়ে এলো।
বিয়ে করল?
মিঃ ম্যাথুজ মাথা নেড়ে বললেন, এমনিই যদি ফুর্তি করা যায় তহেলে বিয়ে করবে কেন? সে হারামজাদা বছর খানেক মধু খাবার পর কোথায় উড়ে গেল।
তারপর?
তারপর থেকেই ও আমার পাশের ফ্ল্যাটে আয়ার কাজ করছে। যতদিন ও বাড়ীর বুড়ো-বুড়ী বেঁচে ছিল ততদিন কান্তম্মা ভালই ছিল কিন্তু বুড়ো-বুড়ীর ছোট দুটো ছেলে বড় বদ। ও বাড়ীতে কান্তম্মার কাজ করা সত্যি নিরাপদ নয়…….
তাই আপনি ওকে বিয়ে করছেন?
না, না, শুধু এজন্য ওকে বিয়ে করছি না। আজ যে বারো বছর কান্তম্মা আমার পাশের ফ্ল্যাটে কাজ করছে, তার মধ্যে আমার তিন চারবার মারাত্মক অসুখ হয়েছে এবং এই মেয়েটার জন্যই আমি বেঁচে উঠেছি।
মিঃ সোম মুগ্ধ হয়ে ওদের দুজনকে দেখেন।
এবার মিঃ ম্যাথুজ বলেন, আই এ্যাম ফর্টিনাইন এ্যাণ্ড শী ইজ থার্টিফোর। একবার ভেবেছিলাম, ওকে বোনের মত আমার কাছেই রাখব কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, তাতে দুজনেরই বদনাম।…….
ঠিক বলেছেন।…..
আই ডোন্ট কেয়ার ফর মাই রেপুটেশন কিন্তু মেয়েদের মর্যাদা নিয়ে ছেলেখেলা করা ঠিক নয় বলেই ঠিক করলাম, কান্তাম্মাকে বিয়ে করব এবং আমি গ্রেটফুল যে কান্তাম্মা আমার কথা মেনে নিল।
মিঃ সোম ওদের দুজনকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, আচ্ছা মিঃ ম্যাথুজ, আপনি এত ধার্মিক হয়েও চার্চে গিয়ে বিয়ে করলেন না কেন?
আই কান্ট। আমি খ্ৰীষ্টান কিন্তু কান্তাম্মা তো হিন্দু। এবার উনি একটু হেসে বললেন, আমি ওকে বিয়ে করছি বলেই ওর ধর্ম পরিবর্তন করারো কেন?
ঠিক।
ওরা বিয়ের নোটিশ দিয়ে চলে যাবার সময় মিঃ সোম ম্যাথুজকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আপনাকে দেখে আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে খুব ভাল লাগল। ভগবান নিশ্চয়ই আপনাদের সুখী করবেন।
মিঃ ম্যাথুজ ওর একটা হাত নিয়ে কান্তাম্মার মাথায় দিয়ে বললেন, মিঃ সোম, আপনি এই মেয়েটাকে আশীর্বাদ করুন আর আপনাদের গডেস মা কালীকে বলুন, এই মেয়েটাকে যেন আমি সুখী করতে পারি।
আপনি নিশ্চয়ই ওকে সুখী করতে পারবেন।
.
বিয়ের দিন ওদের দুজনকে দেখেই মিঃ সোম অবাক। মিঃ ম্যাথুজ নতুন স্যুট পরেছেন। সঙ্গে নতুন জামা, নতুন টাই, নতুন জুতত। দেখে মনেই হয় না, ওর বয়স ঊনপঞ্চাশ, মনে হয় বড় জোর পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ। নতুন সিল্কের শাড়ী-ব্লাউজ পরে কান্তাম্মাকেও অপূর্ব লাগছে। দুজনেরই মুখে হাসি, চোখে বিদ্যুৎ, হাতে ফুল।
যে তিনজন সাক্ষী দিতে এসেছেন, তারাও যেন বিয়ে বাড়ীর নেমন্তন্ন খেতে এসেছেন। তিনজনেই বিশিষ্ট ভদ্রলোক ও ম্যাথুজ সাহেবের অফিসেই কাজ করেন।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হলো। মিঃ সোম টেবিলের ড্রয়ার থেকে ছোট্ট দুটো প্যকেট বের করে ম্যাথুজ আর কান্তাম্মার হাতে দিয়ে বললেন, মাই টোকন প্রেজেনটেশন…
মিঃ ম্যাথুজ মাথা নত করে উপহার গ্রহণ করেই আঙ্গুল দিয়ে বুকের উপর ক্রশ একে বললেন, আমরা সত্যি সুখী হবে। তা না হলে ঈশ্বর আমাদের আপনার কাছে পাঠাতেন না।
মিঃ সোম একটু হাসেন।
এবার ম্যাথুজ জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি সবাইকেই প্রেজেনটেশন দেন?