খুব ভালবাসি?
এবার তুতুল সাবিত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, নতুন দিদি, তুমি আইসক্রীম ভালবাসো?
সাবিত্রী ঠোঁট উল্টে মাথা নেড়ে বললেন, আমি আইসক্রীমও ভালবাসি না, তোমাকে ভালবাসি না।
তুতুল ঝাঁপ দিয়ে সাবিত্রীর কোলে গিয়ে বলে, তাহলে তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে সন্দেশ খাওয়াও কেন?
ঠিক আছে, আমি আর কোনদিন তোমাকে সন্দেশ খাওয়াব না।
কেন খাওয়াবে না? না খাওয়ালে আমি কাঁদব।
সাবিত্রী ওর মুখের উপর মুখ রেখে বলেন, আমি কি আমার ঘোট দাদাকে সন্দেশ না খাইয়ে থাকতে পারি?
বাইরে থেকে ঘুরে এসে মিঃ সোম এঘরে ঢুকেই বলেন, ঘোট দাদা, আমি ট্রামে চড়ে বেড়িয়ে এলাম।
ব্যস। সঙ্গে সঙ্গে তুতুল ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাকেও ট্রামে চড়াতে হবে।
নন্দিতা আর সুবীর ওকে প্রণাম করে, কিন্তু মিঃ সোম তুতুলকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে ওদের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদও করারও অবকাশ পান না। ট্রামে চড়তে তুতুলের খুব ভাল লাগে। তাই মিঃসোম ওকে নিয়ে সত্যি সত্যি ট্রামে চড়তে যান।
মিঃ সোম ছোট মামার বন্ধু বলে নন্দিতার নতুন মামা হয়েছেন, সাবিত্রী নতুন মামী। প্রবীরবাবু আর সুমিত্রাকে দেখতে অত্যন্ত সুন্দর বলে তারা হয়েছেন সুন্দর মামা-সুন্দর মামী। তবে তুতুল বলে ছোট দিদি।
তুতুলকে নিয়ে মিঃ সোম বেরিয়ে যাবার পরই নন্দিতা সুমিত্রাকে বলে, তুমি ছেলেটার স্বভাব এমন করে দিয়েছ যে রোজ রাত্রে আমাকে জ্বালাতন করে মারে।
সুমিত্রা একটু হেসে জিজ্ঞাসা করে, কেন, আমি কী করলাম?
তোমার ওখানে গিয়ে ও তোমার কাছে এত সুন্দর সুন্দর গল্প শোনে যে সব সময় আমাকে বলবে, ছোট দিদির মত গল্প বলল।
সাবিত্রী চা করতে গিয়েছেন। সুবীর পাশের ঘরে বসে বই পড়ছে।
সুমিত্রা বলে, ওকে গল্প শোনাবি।
আমি গল্প জানি নাকি?
বাচ্চাদের গল্প জানতে হয় নাকি?
তুমি সুন্দর মামাকে পাবার সাধনায় পঞ্চাশ বছর বাচ্চাদের পড়িয়েছ বলে তুমি গল্প জানতে পারে কিন্তু আমি পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্রী। গল্প জানব কেমন করে?
সুমিত্রা হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করে, তাহলে কি করিস?
সুর করে খবরের কাগজ পড়ে ভোলাবার চেষ্টা করি কিন্তু……
সুমিত্রা ওর কথায় খুব জোরে হাসে। তারপর হাসি থামলে হঠাৎ একটু গম্ভীর হয়ে নন্দিতাকে বুকের কাছে টেনে নেয়। নন্দিতার মাথায় হাত দিতে দিতে বলে, একদিন ভগবান আমার সব সুখ-শান্তি একসঙ্গে কেড়ে নিয়েছিলেন কিন্তু তখন ভাবতে পারি নি, এমন করে সব ফিরিয়ে দেবেন।
শুধু তুমি কেন? আমিও কোন দিন স্বপ্নেও ভাবি নি, এতখ, এত শান্তি, এত ভালবাসা…
সাবিত্রী এক প্লেটভর্তি খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, তোমরা যে যাই বলো, সবচাইতে বেশী লাভ হয়েছে আমার। ওরা দুজনেই প্রায় একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে, কেন? কেন?
সাবিত্রী খাবার প্লেট নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন, আমি তোমাদের মত ম্যারেজও করি নি, ম্যারেজ অফিসারও না। অথচ আমি একটা লক্ষণ দেওর পেলাম, তোমার মত কুৎসিত আর হিংসুটে জা পেলাম, সুন্দর মেয়ে জামাই ছাড়াও তুতুলকে বোনাস পেলাম।
সাবিত্রীর কথায় ওরা হাসে।
সাবিত্রী একটু হেসে বলে, তোমাদের না পেলে কবে আমি ঐ টেকো রমেন সোমকে ডিভোর্স করে……
সুমিত্রা দুম করে ওর পিঠে একটা কিল মারে।
সাবিত্রী তবু দমে যায় না। বলে, হাজার হোক সাবিত্রী। রক্ত মাংসের মধ্যে পতিভক্তি মিশে আছে। তা নয়ত কবে গণেশ উল্টে দেবানন্দের কাছে ছুটে চলে যেতাম।
ওরা তিনজনেই হাসিতে ফেটে পড়ে।
.
নীতা চৌধুরী আর কনক ঘোষের বিয়ে হয়ে যাবার পর ওদের অফিসের মিঃ ঘোষাল হাসতে হাসতে মিঃ সোমকে বললেন, আমাদের অফিসে যে কটি ঘোষ ব্যাচেলার ছিল, তাদের সবার বিয়েই আপনি দিলেন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। এবার মিঃ ঘোষাল বললেন আরো মজার কথা। প্রত্যেকটি মেয়েই ব্রাহ্মণ।
মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, আমার এখানে যাদের বিয়ে হয়েছে, তারা সবাই ভাল আছেন?
হ্যাঁ, প্রত্যেকটা বিয়েই সাকসেসফুল। এবার মিঃ ঘোষাল একটু আত্মপ্রসাদের হাসি হেসে বললেন, আমাদের অফিসের ছেলেমেয়েরা আমাদের মত বুড়োদের বেশ সম্মান করে। তাই প্রত্যেক বিয়ের আগেই আমরাও একটু দেখাশুনা-খোঁজখবর নিই।
শ্ৰীধরবাবু বললেন, আমাদের অফিসে আমরাই অনেক নিয়ম কানুন তৈরী করেছি।……
মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করেন, কিসের নিয়মকানুন?
শ্রীধরবাবু বলেন, আমরা নিয়ম করেছি, আমাদের অফিস-স্টাফের বাড়ীতে অন্নপ্রাশন, পৈতেতে আমরা সবাই দু-টাকা করে চাঁদা দেব, অফিস-স্টাফের ভাইবোন বা ছেলেদের বিয়েতে পাঁচ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। আর অফিস-স্টীফের বা তাদের মেয়ের বিয়েতে দা দিই দশ টাকা করে।
মিঃ সোম চুপ করে শোনেন।
এইসব টাকা আমরা নগদ দিই। কোন জিনিসপত্র প্রেজেনটেশন দিই না।
খুব ভাল!
মিঃ ঘোষাল বললেন, সবাই চাদা দিলেও সবাই নেমন্তন্ন খেতে যাই না। অন্নপ্রাশন-পৈতে বা ভাইবোনের বিয়েতে পাঁচ থেকে দশ জন আর স্টাফের বিয়েতে কুড়িজন নেমন্তন্ন খেতে যায়।
বেশ ভাল লোগ।
মিঃ ঘোষাল বললেন, আসল কথা, আমরা সবাই অত্যন্ত মধ্যবিত্ত। একটু হিসেব-টিসেব না করে চললে বাঁচব কি ভাবে?
অমূল্যবাবু নীতাকে দেখিয়ে বললেন, ওর বাবা পোস্ট অফিসের ক্লার্ক। তিন বোনই বেশ বড় হয়েছে, কিন্তু বিধবা পিসীর পুরো সংসার সামলাতে গিয়ে নীতাদের দু বোনকে চাকরি করতে হচ্ছে। মিঃ সোমের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বললেন, আপনিই বলুন, বিশ পঁচিশ হাজার টাকা খরচ করে কি এসব মেয়েদের বিয়ে দেওয়া সম্ভব?