মিঃ সোম কোন মন্তব্য করলেন না, শুধু একটু হাসলেন।
এইভাবে আরো মাসছয়েক কেটে গেল।
তারপর একদিন বিকেলে হঠাৎ শিখা আর অলকবাবু এসে হাজির!
দু-পাঁচ মিনিট অন্যান্য কথা বলার পর শিখা বললো, আপনি ঠিকই বলেছিলেন, একলা একলা বেশীদিন থাকা যায় না।
মিঃ সোম বললেন, একলা থাকা তো মানুষের ধর্ম নয়।
শিখা একটু মুখ নীচু করে বললো, আমাদের অফিসের সবাই অলককে ভালবাসেন। আমারও ভাল লাগে; কিন্তু জানতাম না, ও আমাকে ভালবাসে।
মিঃ সোম ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, একটা কথা বলব?
অলকবাবু বললেন, নিশ্চয়ই।
মিঃ সোমের মুখে তখনও হাসি। উনি অলকের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা দুজনে যেদিন প্রথম আমার এখানে আসেন, সেদিন রাত্রেই আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিলেন
শিখার সঙ্গে যে ভদ্রলোক এসেছিলেন, তার নাম কী?
অলকবাবু।
ভদ্রলোককে দেখলেই মনে হয় খুব ভাল লোক। তাই নাকি?
হ্যাঁ। সাবিত্রী একটু থেমে বললো, ভাল লোক না হলে এমন সৌম্য দর্শন হয় না।
মিঃ সোম বললেন, হ্যাঁ, ওকে দেখতে ভারী সুন্দর।
শুধু সুন্দর নয়; ওর দুটো চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, ভদ্রলোক অত্যন্ত সৎ।
অলকবাবুর সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমারও বেশ লাগল।
সাবিত্রী এবার আক্ষেপ করে বলে, শিখা যদি সুবোধবাবুকে বিয়ে না করে এই ভদ্রলোককে বিয়ে করতো, তাহলে মেয়েটাকে এত দুঃখ ভোগ করতে হতো না।
মিঃ সোমের কাছে ওর স্ত্রীর কথা শুনে ওরা দুজনেই অত্যন্ত খুশি হলো কিন্তু লজ্জায় কেউই কোন কথা বললেন না।
মিঃ সোম জানতে চাইলেন, অলকবাবুর সঙ্গেই আপনার বিয়ে হচ্ছে তো?
শিখা মুখ নীচু করে বললো, হ্যাঁ, অলক আমার দায়িত্ব নিতে স্বাজী হয়েছে।
খুব ভাল কথা। আমি চাই, আপনি বিয়ে করুন, সুখে থাকুন।
সেদিনই ওরা বিয়ের নোটিশ দিয়ে গেলেন। তারপর একদিন ওদের বিয়েও হলো।
৪. রমেন সোমের জীবন
এইভাবেই রমেন সোমের জীবন চলে। ঘোট তিনখানা ঘরের ফ্ল্যাটে বাস করেও বিরাট সংসারের রূপ দেখেন। দুজনের ঘোট সংসার। এক মাত্র মেয়ে বিয়ের পরই জামাইয়ের সঙ্গে কানাডা চলে গেছে। তবু ওদের সংসার দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ঐ ছোট একটা সাইনবোর্ডের কল্যাণে এ সংসার বেশ বড় হয়েছে।
প্রবীরবাবুর প্রমোশন হয়েছে। তাকে মাঝে মাঝেই কলকাতায় যেতে হয়। ভি. আই. পি. রোডের ফ্ল্যাটে সুমিত্রা একলা থাকতে পারেন না বলে এখানেই চলে আসেন। সাবিত্রী এর আগে স্বামীকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারেন নি। এখন তিনি মাঝে মাঝে প্রবীরবাবুর সঙ্গে দুচার দিনের জন্য এদিক ওদিক চলে যান। সাবিত্রী সুমিত্রাকেও সঙ্গে টানতে চেষ্টা করেন কিন্তু উনি যান না। বলে, না বৌদি, বিয়ের আগে এত ঘুরেছি যে এখন আর ইচ্ছে করে না। আমরা ভাইবোনে বেশ থাকব, তুমিই ঘুরে এসো।
সাবিত্রী সাতাশ বছর বিবাহিত জীবনে স্বামীর সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর বেলুড় মঠ বাদ দিয়ে শুধু দার্জিলিং আর কাশী দেখেছেন, কিন্তু এই কবছরের মধ্যে প্রবীরবাবুর সঙ্গে ছোট বড় অনেক জায়গা ঘুরেছেন।–তাই তো উনি মাঝে মাঝেই ঠাট্টা করে বলেন, বুঝলে সুমিত্রা, তোমার দাদার হাতে না পড়লে আমার কিছুই দেখা হতো না।
মিঃ সোম বলেন, হিন্দুদের সবচাইতে পবিত্র তীর্থস্থান আর কুইন অব হিল স্টেশনস দেখবার পর এ দেশে আর কি দেখাব? সাবিত্রী বলেন, এ ছাড়া আর তো কোথাও বেড়াবার জায়গা নেই।
সুমিত্রা বলে, দাদার সঙ্গে বিয়ে না হলে তুমি তোমার প্রবীর ঠাকুরপোকে পেতে কোথায়?
সাবিত্রী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তোমার দাদার সঙ্গে বিয়ে না হলে তো আমি নিজেই ম্যারেজ অফিসার হতাম।
ওর কথায় সবাই হো হো করে হেসে ওঠেন।
প্রবীরবাবু অল্প কথার মানুষ। এতক্ষণ ওদের সবার কথা শোনার পর বললেন, বৌদি, এভাবে দাদার পিছনে লাগলে আমরা দাদার আবার বিয়ে দেব।
মিঃ সোম হাসতে হাসতে বললেন, আমি রাজী।
সাবিত্রী বললেন, তুমি রাজী হলেও তোমার মত টেকোকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে না।
ওর কথায় আবার সবাই হাসেন।
সুমিত্রা বলে, দাদার এমন কিছু টাক পড়েনি যে……
মিঃ সোম সঙ্গে সঙ্গে একটা হাত মাথায় দিয়ে বলেন, সত্যি, আমার এমন কিছু টাক পড়ে নি যে কোন মেয়ে
সাবিত্রী চুপ করে থাকতে পারেন না। বলেন, না, না, তোমাকে দেখে মধুবালা-মীনাকুমারী হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
এর উপর যেদিন নন্দিতা, সুবীর আর ঐ ছোট গুণ্ডা তুতুল আসে সেদিন এ বাড়ী আনন্দে ফেটে পড়ে।
তুতুলের জন্য নন্দিতা বা সুবীরকে কলিংবেল বাজাতে হয় না। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই তুতুল চিৎকার করে, নতুন দাদু, নতুন দিদি, দরজা খোলো। আমি এসেছি। নতুন দাদু…….
সাবিত্রী আর সুমিত্রা দরজা খুলতেই তুতুল এক গাল হাসি হেসে সুমিত্রাকে বলে, তুমিও এখানে? ছোট দাদু তো আজ দুপুরে আমাদের বাড়ী এসেছিল।
সুমিত্রা প্রায় লাফ দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, তোমার ছোট দাদুর সঙ্গে আমার আড়ি হয়ে গেছে।
তুতুল দুহাত দিয়ে সুমিত্রার গলা জড়িয়ে ধরে বলে, কেন? দাদু বুঝি তোমাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যায় নি?
না।
ছোট দাদু তো আমাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবে। সেদিন তুমিও যেও।
ঘরে ঢুকে তুতুলকে কোলে বসিয়ে সুমিত্রা বলে, ছোট দাদু যদি আমাকে বকে?
না, না, ছোট দাদু বকবে না। ছোট দাদুর সঙ্গে গেলে তোমাকে আইসক্রীম খাওয়াবে। তুমি আইসক্রীম ভালবাসো?