এই বিয়ে হবার কয়েক দিন পরে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক এসে হাজির।
আমার নাম নিবারণ ঘোষ। একটু বিপদে পড়েই আপনার কাছে এসেছি।
মিঃ সোম বললেন, বলুন, আমি কি করতে পারি।
আপনি রেজিস্ট্রি বিয়ে দেন?
মিঃ সোম শুধু মাথা নাড়লেন।
ইদানীংকালে শিবনাথ ঘোষ নামে কোন ছেলের বিয়ে দিয়েছেন?
মিঃ সোম রেজিস্ট্রার দেখে বললেন, না, ঐ নামের কোন ছেলের বিয়ে আমি দিইনি।
নিবারণবাবু বেশ মুষড়ে পড়লেন। বললেন, দেননি। কিন্তু পাড়ায় রটেছে…….
কী রটেছে?
আপনার এখানেই সমার সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে।
মিঃ সোম আবার ভাল করে রেজিস্ট্রার দেখে বললেন, রমা নামের কোন মেয়ের বিয়েও তো আমার এখানে হয়নি।
নিবারণবাবু মাথা নীচু করে কি যেন ভাবেন।
মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, কতদিন আগে ওদের বিয়ে হয়েছে বলতে পারেন?
কবে বিয়ে হয়েছে তা তো বলতে পারব না, তবে কবে পালিয়েছে তা বলতে পারি।
কবে পালিয়েছে?
গত রবিবার ভোরে।
মিঃ সোম রেজিস্ট্রার খুলে বললেন, গত শুক্রবার ওই মে আমার এখানে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মায়া বসুর বিয়ে হয়েছে।…….
দিলীপ ঘোষ? মেয়েটির নাম কী বললেন?
মায়া বসু।
না, না, ও না।
শিবনাথ কাকে নিয়ে পালিয়েছে?
সম্পর্কে আমার এক জ্ঞাতি বোন রমা মিত্তিরকে নিয়ে পালিয়েছে। নিবারণবাবু একটু থেমে বললেন, সব চাইতে বড় কথা সামনের জ্যৈষ্ঠে রমার বিয়ের ঠিক হয়েছে।
হঠাৎ রেজিস্ট্রারের দিকে দৃষ্টি পড়তেই মিঃ সোম বললেন, আচ্ছা সাক্ষীদের নাম বলছি। দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা। জ্যোতি চক্রবর্তী, নন্দদুলাল দে আর কমল রায়।
নিবারণবাবু ঠোঁট উল্টে বললেন, না, ওদের কাউকেই চিনতে পারলাম না।
এবার মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি শিবনাথ আর রমার হাতের লেখা চিনতে পারবেন?
শিবনাথের হাতের লেখা চিনতে পারব, কিন্তু রমার হাতের লেখা তো চিনতে পারব না।
মিঃ সোম বিয়ের নোটিশ দেবার ফর্মের বাণ্ডিলটা বের করে দিলীপ ঘোষের এ্যাপ্লিকেশনটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা।
নিবারণবার পকেট থেকে চশমা বের করে চোখে দিয়ে একটু ঝুঁকে পড়েই প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই ত শিবুর হাতের লেখা।
এবার মিঃ সোম হেসে বললেন, তাহলে আপনার ছেলে সবকিছু মিথ্যা বলে ঐ রমাকেই বিয়ে করেছে।
তাহলে উপায়?
পুলিশে রিপোর্ট করুন। বিচারে ওদের দুজনেরই জেল হবে।
কিন্তু……
কিন্তু কী?
তাতে তো আমি বাঁচতে পারব না। ঐ মেয়েটার বাবা-মাকে আমি কি বলব? নিবারণবাবু খুব জোরে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আপন মনেই বললেন, অত গহনাগাটি কোথা থেকে আমি পাবো?
মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, ওরা কী অনেক গহনা-টহনা নিয়ে গেছে।
আর বলবেন না। হারামজাদা আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এবার মুখ তুলে মিঃ সোমের দিকে তাকিয়ে বললেন, রমার মার পঁচিশ-তিরিশ ভরি গহনা আমার স্ত্রীর কাছে ছিল। তার একটাও ওরা রেখে যায়নি।
আপনি কি পুলিশে রিপোর্ট করতে চান না?
পুলিশে রিপোর্ট করে আর কি হবে? যে কেলেঙ্কারি, যে সর্বনাশ হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন উপরে থুথু ফেললে তো নিজের গায়ে এসেই পড়বে।
তা ঠিক।
নিবারণবাবুকে দেখলেই মনে হয়, অত্যন্ত সৎ ও সহজ সরল মানুষ। গলায় তুলসীর মালা প্রমাণ করছে, ভদ্রলোক বৈষ্ণব। ধার্মিক। চোখমুখের চেহারা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, ছেলের কাণ্ড কারখানায় উনি হতবাক হয়ে গেছেন। মিঃ সোম ওকে যত দেখেন, তত বিষণ্ণ হন মনে মনে। কিন্তু ওকে সাহায্য করতে না পেরে আরো বেশী বিষণ্ণ, আরো বেশী অসহায় বোধ করেন।
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর নিবারণবাবু কোন কথা না বলে চোরের মত মাথা নীচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আইন বড় নির্দয়। আইনের নির্দেশমত কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মনের মধ্যে আরো অনেকবার কালবৈশাখীর মাতলামি হয়েছে, কিন্তু কিছু করতে পারেননি। মুখ বুজে কর্তব্য পালন করেছেন।
৩. বেল বাজতেই মিঃ সোম
বেল বাজতেই মিঃ সোম দরজা খুলে দেখলেন, বাইশ-তেইশ বছরের একটি অত্যন্ত আধুনিক মেয়ে আর তার পিছনে চল্লিশ বিয়াল্লিশ বছরে একটি লোক। ভদ্রলোক বলতে যা মনে হয়, লোকটি তা নয়। মেয়েটির পরনে একটা জিন্স, উপরে একটা নটেড ব্লাউজ। তাও উপরের দিকের গোটা দুই বোম খোলা।
মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, একসকিউজ মী, আপনিই কি ম্যারেজ অফিসার মিঃ সোম?
প্রশ্নটি শুনেই উনি বুঝলেন, মেয়েটি আইন জানে। সাধারণ সবাই বলে, ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কিন্তু আইন বলে ম্যারেজ অফিসার। উনি বললেন, হ্যাঁ।
বিয়ের নোটিশ দিতে এসেছি। আপনার কী এখন সময় হবে?
নিশ্চয়ই। ভিতরে আসুন।
মিঃ সোম কথাটা শেষ করতে না করতেই মেয়েটি পিছন ফিরে, বললো, জন, কাম ইন।
তিনজনে ঘরে এসে বসতেই মেয়েটি ইংরেজীতে বললো, আমি মিস প্রীতি মজুমদার। আই ইনটে টু ম্যারি জন।
মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিশ্চয়ই আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে?
মিস মজুমদার সঙ্গে সঙ্গে কাঁধে ঝোলান ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে মিঃ সোমের সামনে খুলে ধরে বললো, আমার তেইশ বছর বয়স হলো। একটু পাশ ফিরে জনের দিকে তাকিয়ে বললো, জনের বয়স থার্টি-ফাইভ।
মিঃ জন বিবাহিত কি?
ওরা দুজনে একসঙ্গে উত্তর দিল,।
মিঃ সোম ফর্ম দেবার দু-তিন মিনিটের মধ্যেই মিস মজুমদার সব কিছু লিখে জনকে বললো, জন, প্লীজ সাইন হিয়ার।