মুন্সীগঞ্জ.কম : জাপানে আপনার তৃতীয় সফর৷ তিনবার সফরকালীন সময়ে বিভিন্ন পরিবেশে একাধিক প্রবাসীদের সাথে মিলিত হবার সুযোগ হয়েছে, তাদের কায_ক্রম পয_বেক্ষন করেছেন৷ এর মধ্যে কি কোন ভিন্নতা লক্ষ্য করেছেন? করে থাকলে সেটা কি রকম?
মিলন : আমি দেখছি যতোই দিন যাচ্ছে প্রবাসীরা ততোই দেশের কথা বেশী বেশী ভাবছে৷ দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করছে আপ্রান চেষ্টায় দেশকে পরিচিত করে তুলছে৷ জাপানের কথাই ধরা যাক, প্রবাসীরা সমবেত হয়ে টোকিও বৈশাখী মেলা নামে বাংলা নববর্ষ উত্সবকে জাপানে ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তুলছে৷ জাপান প্রবাসীরা শহীদ মিনার স্থাপিত করেছে৷ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের নামে সমবেত হেছ৷ এতে করে নিজ এলাকায় উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনা করছে৷ বিনিয়োগ বাড়ােছ৷ নিজ এলাকায় উন্নয়ন মানেই তো দেশের উন্নয়ন৷
আমি এর আগে ২০০৫ সালে বিবেক বার্তার আমন্ত্রনে বৈশাখী মেলায় এসেছিলাম৷ ২০০৬ সালে জাপান ফাউন্ডেশন এর আমন্ত্রনে এসেছিলাম তবে ঐ সফরটি ছিল জাপানীদের সাথে সংশ্লিষ্ট৷ চারটি আনজ_াতিক সেন্টারে লেকচার দিয়েছি৷ টোকিওতে মান্যবর রাষ্ট্রদুতও উপস্থিত ছিলেন৷
এবারের আমন্ত্রন অবশ্য প্রবাসীদের কাছ থেকেই আসে৷ ওআইঊ এখানে “বাংলামেলা” নামে একটি মেলার আয়োজন করে৷ গত ২ এবং ৩ আগষ্ট টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়৷ তারপর মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি, জাপান এর অভিষেক অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত হই৷ সব মিলিয়ে প্রবাসীদের দেশ প্রেম আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে৷
মুন্সীগঞ্জ.কম : প্রবাসে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে৷ আছে তার বিভিন্ন কার্যক্রম, এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
মিলন : অবশ্যই এর প্রয়োজনীয়তা আছে৷ আমিতো মনে করি এটি খুবই গুর্বত্বপূর্ণ৷ একত্রিত হয়ে নিজ অঞ্চলের জন্য কাজ করবে৷ আর নিজ অঞ্চল তো বাংলাদেশেরই একটি অংশ৷ দেশেরই উন্নয়ন৷
মুন্সীগঞ্জ.কম : আঞ্চলিক সংগঠনগুলির কি জাতীয় কর্মসূচী গ্রহণ করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মিলন : এলাকার শিক্ষা এবং হৃাস্থখাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত বলে মনে করি৷ শিক্ষার আলো না থাকিলে একটি জাতি উন্নতির চরম শিখরে পেুৗছতে পারে না৷ ছোট ছোট কলকারখানা গড়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উত্সাহিত করলে ভালো হয়৷
মুন্সীগঞ্জ.কম : মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরবাসী আপনাকে নিয়ে গর্ব করে৷ বিক্রমপুরের সনান হিসেবে আপনার অনুভূতি কি?
মিলন : দেশের বাইরে আমাকে যদি কেহ প্রশ্ন করে তুমি কোন দেশী? আমি খবু গৌরব সহকারে প্রথমেই বলি আমি বাংলাদেশী৷ এই গৌরব করার মতো অনেক ইতিহাস আছে৷ তারপরই বিক্রমপুরের সন্মান হিসেবে পরিচয় দিতে সম্মান বোধ করি৷ এরও অনেক কারণ আছে৷ বিক্রমপুর ছিল ভারত উপমহাদেশের একটি অতীব গুর্বত্বপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ স্থান৷ তার কারণ হচ্ বিক্রমপুরে বহু গুণী মনীষি জন্ম নিয়েছেন৷ শ্রীজ্ঞান অতীশ দিপংকর জন্মেছেন আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে এই বিক্রমপুরের ব্রজযোগীনি গ্রামে৷ স্যার জগদীশ চন্দ্র যিনি বিজ্ঞানে সারা পৃথিবী কাপিয়ে দিয়েছেলেন তিনিও জন্মেছিলেন এই বিক্রমপুরে৷ চিত্তরঞ্জন দাশ, সরোজিনি নাইডু কিংবা ব্রজেন দাস জন্মেছেন এই প্রসিদ্ধ স্থানে৷ এই রকম আরো অনেক কৃতি সনান জন্মেছিলেন এই বিক্রমপুরে৷ যেহেতু আমি সাহিত্যের মানুষ তাই সাহিত্যের কথাই বলব৷ বাংলা সাহিত্যকে যারা সম্মৃদ্ধ করেছেন তাদের অনেকেরই জন্ম বিক্রমপুরে৷ যেমন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মানব দিয়া গ্রামে তার জন্ম৷ গাওদিয়ায় পুতুল নাচের উপর তিনি একটি কালজয়ী উপন্যাস লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন৷ সমরেশ বসু, বুদ্ধদেব বসু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এই রকম অনেক কৃতিমান সাহিত্যিক জন্মেছেন এই বিক্রমপুরে৷ তাছাড়া জীবনানন্দ দাস এবং অমর্ত্য সেনের মায়ের বাড়ী ও এই বিক্রমপুরে৷ এই যে এত বড় বড় মানুষগুলি জন্মেছেন এই বিক্রমপুরে আমিও জন্মেছি এই বিক্রমপুরে এইটা আমার কাছে খুব গর্বের এবং গুর্বত্বপূর্ণ বলে মনে করি৷
মুন্সীগঞ্জ.কম : সাহিত্যাঙ্গনের প্রায় সব কয়টি পুরস্কারই আপনি অর্জন করেছেন দেশ বিদেশে আপনি বিভিন্ন সম্মামনা পুরস্কার সহ অনেক সম্মান পেয়েছেন৷ এবার জাপানে আপনাকে নিজ জেলার সংগঠন থেকে ক্রেষ্ট সহ সম্মামনা সনদ দেওয়া হয়৷ আপনার অনুভূতি কি?
মিলন : আমাকে জাপানে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড নামে একটি পুরস্কার দিয়েছে৷ মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি আমাকে এই যে পুরস্কারটি দিল তা আমার কাছে একটু বিশেষ গুর্বত্বপূর্ণ এই কারণে যে, আমরা একজন মানুষ সারা পৃথিবী জয় করে এসে ঘরে ঢুকে এবং ঘরে তার মা, বাবা, ভাই বোন, কিংবা প্রিয়তমা সী অথবা তার সনান, এমন কি পাড়া পড়শী তাকে বরন করে বলে যে, তুমি আমাদের সনান, তুমি একটি ভালো কাজ করেছ এই জন্য তোমাকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷ এই পুরস্কারটি আমার কাছে ওই রকমই লেগেছে৷ দেশের বাইরে এই প্রথম আমার নিজ এলাকার লোকজন বা সংগঠন আমাকে এইভাবে সম্মানিত করলো এইটা আমার কাছে অন্যরকম একটা অনুভূতি৷
মুন্সীগঞ্জ.কম : প্রবাসীদের কল্যানে প্রবাসীকল্যান মন্ত্রনালয় করা হয়েছে৷ তারপরও প্রবাসীরা বিমান বন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হেছ৷ প্রবাসী মন্ত্রনালয় সঠিক কাজ করছে বলে মনে করেন কি?