সাপ্তাহিক : এখনকার প্রেম, সম্পর্ক অনেক বেশি অস্থির। ভাঙন বেশি। ব্যাখ্যা করবেন কেন?
মিলন : এখন যে জিনিসগুলো আমরা দেখি, সমাজ আধুনিক হওয়ার ফলে সম্পর্ক দ্রুত হচ্ছে, মানুষ দ্রুত প্রেমে পড়ছে, দ্রুত প্রেম ভেঙেও যাচ্ছে, দ্রুত বিয়ে হচ্ছে, বিয়েও ভেঙে যাচ্ছে। নির্দ্বিধায় একজন একজনের সঙ্গে ছয় মাস বা এক বছর প্রেম করার পরে দেখল যে, তার সঙ্গে অনেক কিছুই মিলছে না, তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেল। এই যে তাৎক্ষণিক পর্যায়ে চলে আসছে প্রেমের ব্যাপারটি, এই অবস্থাটা কিন্তু বাঙালি জাতির কখনো ছিল না। পশ্চিমা সংস্কৃতি যত আমাদের মধ্যে এসে ঢুকেছে, মানুষ যত বেশি আধুনিকতার দিকে গেছে, যত বেশি ইউরোপ আমেরিকার প্রভাব পড়েছে, প্রেমের ক্ষেত্রেও এই প্রজন্মকে সেই প্রভাবটি তত বেশি সেদিকে নিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এখনকার প্রেমের স্থায়িত্ব নিয়ে আমার অনেক বেশি সন্দেহ আছে। যখন-তখন এই প্রেমটি ভাঙতে পারে। আবার এটাও আমি পাশাপাশি বলব, এর মধ্যে একশ জন প্রেমিকের মধ্যে হয়ত দশ জন টিকেও গেছে। সেটাই বা কম কী?
সাপ্তাহিক : এই যে অস্থিরতা এতে কী পুঁজি এবং পাশ্চাত্য বড় একটা ফ্যাক্টর?
মিলন : আবেগ যে কমে গেছে সেটা আমি একশবার স্বীকার করি। আবেগ স্থায়ী হচ্ছে না। কিন্তু যেই মুহূর্তে এক জোড়া ছেলেমেয়ে প্রেমে পড়ছে সেই মুহূর্তের আবেগটা ঠিক আছে। তার পরেই যখন মেয়েটি তার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে। এখন সে তুলনা করছে যে, সে যে ছেলেটিকে পছন্দ করেছে সে কতটা তার উপযুক্ত? বাস্তব চিন্তা প্রেমের আবেগটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এখনকার সময়টা হয়ে গেছে এ রকম। আমি বারবারই বলছি যে, এই জিনিসগুলো বাঙালি প্রেমের মধ্যে কখনই ছিল না। বাঙালির প্রেম হয় এ রকম যে, মেয়েটি নির্দ্বিধায় ছেলেটির হাত ধরে বলছে, আমি আমার সবকিছু ছেড়ে তোমার সঙ্গে গাছতলায়ও থাকতে রাজি আছি। এই ছিল বাঙালির প্রেম। এটি এখন আর নেই।
সাপ্তাহিক : এখন আবার দেখা যাচ্ছে যে, নেটওয়ার্কিং লাভ। যেটাকে বলে পলিয়ামুরিয়া। দেখা যাচ্ছে একজন ছেলে তার পাঁচজন গার্ল ফ্রেন্ড। আবার সেই পাঁচজনের প্রত্যেকের ওরকম পাঁচজন করে সম্পর্ক রয়েছে। এ রকম নেটওয়ার্কিং লাভ তৈরি হচ্ছে। এগুলো কি অস্থিরতা তৈরি করবে না?
মিলন : এটা এক ধরনের অসুস্থতা। এটা তো ভয়ঙ্কর একটা জায়গায় নিয়ে যাবে মানবজাতিকে। এই প্রবণতাগুলোকে আমি প্রেম বলি না। আমি মনে করি অনাদিকাল থেকে মানুষ যখন মানুষের শরীরকে বুঝতে শিখেছে, মনকে বুঝতে শিখেছে এবং যতদিন পর্যন্ত নারী-পুরুষ থাকবে ততদিন পর্যন্ত শরীর এবং মনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কোনো না কোনোভাবে থাকবে। হয়ত পদ্ধতিটা বদলাবে। কিন্তু যে প্রেমের কথা আপনি বললেন, তা ভয়ঙ্কর ও বিকৃত।
সাপ্তাহিক : আসলে বিয়েটা কী? প্রেমের পরিণতিই কি বিয়ে?
মিলন : এটা কেবল আমাদের দেশেই। আমাদের দেশেই মেয়েরা বা ছেলেরা একটা বিশ্বাস নিয়ে থাকে যে, ভালোবাসলে বিয়ে করব। ছেলেটা না চাইলেও মেয়েটা টার্গেট করে যে আমি যেহেতু তাকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করব। আমাদের এই উপমহাদেশের মেয়েরা প্রেম করলে তারা মনে করে আমি তাকে বিয়ে করব, সে আমার স্বামী হবে। বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কটা বাঙালি বা এই উপমহাদেশের মানুষ পছন্দ করে না। এই প্রজন্ম হয়ত পছন্দ করছে। কেন করছে তা আমি আগেই বলেছি। কিন্তু আপনি যদি সামগ্রিক জনসমষ্টির দিকে তাকান তাহলে দেখবেন আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এখনো প্রেম করে বিয়ের কথাটা ভাবে। এটা আমি মনে করি।
সাপ্তাহিক : অনেকেই বলেন প্রেম জীবনে একবারই আসে। আসলেই কি তাই?
মিলন : না, জীবনের প্রতিটা বাঁকে এসে মানুষ প্রেমে পড়তে পারে। এটাই মানুষের নিয়তি। এক প্রেমিকা বা এক স্থির প্রেমেও মানুষ হাজার বার পড়তে পারে। আবার দশজন ভিন্ন মানুষের প্রেমেও মানুষ পড়তে পারেন এটাই মানুষের নিয়তি। এখানে কিছু করার নেই।
জেলাটির নাম করন করা হউক মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর জেলা
ইমদাদুল হক মিলন৷ বাংলা সাহিত্যে জীবন কিংবদনী একটি নাম৷ বাংলার আকাশে উজ্জল নক্ষত্র৷ জন্ম ৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৫ সালে বিক্রমপুরের মেদিনীমন্ডল নামক গ্রামে৷ প্রথম রচনা গল্প (ছোটদের) ”বন্ধু” ১৯৭৩ সালে৷ তারপরে একে একে অসংখ্য৷ তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টির মধ্যে যাবজ্জীবন, পরাধীনতা, ভূমিপুত্র, নদী উপাখ্যান, র্রপনগর, কালো ঘোড়া, রাজাকারতন্ত্র, কালাকাল, ও রাধা ও কৃষ্ণ, দুঃখ কষ্ট, উপনায়ক, নুরজাহান প্রধান৷
১৯৮৭ সালে ইকো সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ সালে হুমায়ুন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে বিশ্ব জ্যোতিষ পুরস্কার, ১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে নাট্যসভা পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে প রবী পদক, ১৯৯৪ সালে বিজয় পদক, ১৯৯৫ সালে মনু থিয়েটার পদক, ১৯৯৫ সালে যায় যায় দিন পত্রিকা পুরস্কার, ১৯৯৫ সালে টেনাশিনাস পদক, ১৯৯৮ সালে মাদার তেরেসা পদক, ১৯৯৯ সালে এস এম সুুলতান পদক, ২০০০ সালে অতীশ দিপংকর হৃণ_পদক, ২০০১ সালে চোখ সাহিত্য পুরস্কার (কলকাতা), ২০০২ সালে ট্রাব অ্যাওয়াররড, ২০০২ সালে টেলিভিশন দর্শক ফোরাম পুরস্কার, ২০০২ বাচসাস পুরস্কার, ২০০৪ সালে ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার সহ অসংখ্য পদক লাভকারী বিক্রমপুরের এই কৃতি সন্তান বহু দেশ ভ্রমন করেছেন৷ এক সময় নিজেও (১৯৭৯-১৯৮১) প্রবাস জীবন যাপন করেছেন৷ বর্তমানে তিনি জাপান কালচারাল ( JBCF) এবং মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি, জাপান এর আমন্ত্রনে জাপান ভ্রমন করছেন৷ জাপান প্রবাসী ও মুন্সীগঞ্জ.কমের কনট্রিভিউটর রাহমান মনি এ সময় তার সাক্ষাত্কারটি গ্রহণ করেন Munshigonj.com এর জন্য৷ নিচে সাক্ষাত্কারটি তুলে ধরা হল৷