*** *** ***
বাচ্চার মা একদিন আবিষ্কার করল–বাড়ির নার্সটা ঠিকঠাকমত বাচ্চার দেখাশোনা করতে পারছে না। বাচ্চাকে খাওয়ানোর মত যথেষ্ট বুকের দুধ তার নেই; অথচ, চাকরি হারানোর ভয়ে এ-কথা সে এতদিন গোপন রেখেছে। অগত্যা, একদিনের ছুটি নিতে হল। নতুন নার্স খোঁজ করা হল। কিন্তু তেমন সুবিধা করা গেল না। সবগুলো আসলে একই রকম–শুধু নিজের স্বার্থ বোঝে। অন্যের বাচ্চাকে যত্ন নিয়ে খাওয়াতে চায় না। এগুলোর কোনটার ওপরই আস্থা রাখা যায় না।
“না, মোটেই আস্থা রাখা যায় না” বাচ্চার বাবাও সহমত পোষণ করলো। “এক্ষেত্রে একমাত্র নিজে ছাড়া অন্য কাউকেই ভরসা করা যায় না।”
বাচ্চার মা সরু চোখে তাকালো–“মানে কী? তুমি কি আমাকে চাকরি ছাড়ার ইঙ্গিত করছ?”
–উঁহু, তোমার যেমন ভালো মনে হয় তুমি তেমনই করবে।
–সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে তোমার দাসী হয়ে যাই সেটাইতো সবচেয়ে ভালো, তাই না?
–মোটেও না, আমি মোটেই সে রকম কিছু বলিনি।
বাবা-মায়ের কথা কাটাকাটির মধ্যে পরে বাচ্চার অবস্থা দিন-দিন আরও খারাপ হতে থাকলো। নানান অসুখবিসুখে ভুগতে লাগলো।
ও কিছু না, সব বাচ্চাই অসুখে ভোগে।
কিন্তু এসব বলে মনকে আর কতক্ষণ প্রবোধ মানানো যায়? অতএব, বাচ্চার মাকে প্রায়ই ছুটি নিতে হয়। সম্প্রতি বাচ্চার মাড়ি ব্যথা হয়েছে।
ব্যথায় জ্বর এসে গেছে। ফলে, আরও একদিন ছুটি নিতে হল। ব্যথা তেমন। কমছে না। রাত জেগে নানা কায়দা করে ওকে ঘুম পাড়াতে হয়, তারপর দিনে আবার অফিস: ক্লান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, দুঃশ্চিন্তা এবং …
আরও একটা দিন ছুটি নেয়া।
বাচ্চার বাবা তার সাধ্যমত বাচ্চার দেখাশোনা করে। অর্ধেক রাত পর্যন্ত বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রাখে, ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কখনোই মালামাল বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে কোন কথা বলে না।
তারপরও স্ত্রীর মনে হয়, সে জানে স্বামী আসলে ঠিক কী চায়–স্বামী চায়, চাকরিটা সে ছেড়ে দিক। স্বামী যদিও ঘুণাক্ষরেও কখনো এ ধরনের কোন কথা তাকে বলেনি, তবুও কেন যেন তার মনে অশান্তি বাড়তে থাকে: “উফ! পুরুষ মানুষগুলো কী পরিমাণ বিশ্বাসঘাতক!” স্বামীকে সে ঘৃণা করে। সে আত্মঘাতী হবে, তবু চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বামীর দাসী হবে না।
ওদিকে, মুখে কিছু না বললেও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে একটা ব্যাপার স্বামী খুব ভালো বুঝতে পেরেছে–“যত যাই বলা হোক না কেন, প্রকৃতির অলঙ্ঘনীয় আইন থেকে কারোরই মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।”
*** *** ***
দিনদিন সংসার খরচ বাড়ছে। বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস পড়ল, তখন খরচ সামলাতে স্বামীকে আবারও মেয়েদের স্কুলে পড়ানোর কাজটা শুরু করতে হল। আর, এর মধ্যেই স্ত্রী একদিন নিজেকে পরাজিত ঘোষণা করলো–“আমি এখন থেকে তোমার দাসী হয়ে গেলাম”, চাকরিচ্যুতির কাগজটা তার হাতে ধরা ছিল। “আমাকে এখন থেকে তোমার ইচ্ছামত চলতে হবে।” যদিও পুরো বাড়ির কত্রী সে-ই!
স্বামী নিজের উপার্জিত প্রতিটি টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দেয়। সিগারেট খাওয়া বা অন্য যেকোন কাজের জন্য টাকা দরকার হলে স্ত্রীর কাছে টাকা চাইবার আগে সে এক বিশাল ফিরিস্তি দেয়। স্ত্রী অবশ্য কখনোই টাকা দিতে অমত করে না। তবুও, কোন রকম ফিরিস্তি না-দিয়ে টাকা চাইতে তার অস্বস্তি লাগে।
স্বামী এখন মিটিংয়ে যেতে পারে, তবে রাতে সেখানে খাওয়ার অনুমতি নেই, এবং মেয়েদের উদ্ভিদবিদ্যা শেখানোর সবরকম ক্লাস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ! সে অবশ্য এখন এমনিতেই ওগুলো আর মিস করে না। কারণ, ছেলের সাথে খেলা করতেই এখন তার বেশি ভালো লাগে। সহকর্মীরা স্ত্রৈণ বললেও কিছু মনে করে না; বরং, হাসিমুখে মেনে নেয়; আর মনে মনে ভাবে স্ত্রীর মধ্যে চমৎকার একজন বন্ধু খুঁজে পাওয়া গেছে।
ওদিকে, স্বামী যত যা-ই বলুক-না-কেন, স্ত্রী কিন্তু একগুয়েভাবে বলতেই থাকে–“আমি তোমার দাসী হয়ে গেলাম!”
হোক, বা না-হোক, অন্তত কথা শোনাতেই আনন্দ!
হায়রে নারীমুক্তি!
ফিনিক্স
ছেলেটা যখন প্রথমবার পাদ্রির বাড়িতে মেয়েটাকে দেখল তখন সময়টা খুব সুন্দর ছিল। বুনো স্ট্রবেরিগুলোতে সবেমাত্র রং ধরেছে। এর আগেও ও অনেক মেয়ে দেখেছে; কিন্তু এমন কখনো মনে হয়নি। কেমন বুকের মধ্যে ধুকপুক করা, কেমন শিহরণ বয়ে যাওয়া–একেই বোধহয় প্রেম’ বলে! মুখ ফুটে বলার মত সাহস তখনো হয়নি, অথচ মেয়েটা কিন্তু ঠিকই ওকে ‘স্কুলবয়’ বলে খ্যাপাত।
দ্বিতীয়বার যখন দেখা হল, ছেলেটা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আগের চেয়ে সাহস বেড়েছে। ফলে দূরত্ব কমেছে। মেয়েটাকে ও জড়িয়ে ধরল, চুম্বন করল। তখন মনে হল, যেন চারপাশে আতশবাজি ফুটছে, ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজছে, বিউগলের সুরে চারদিক মুদ্রিত হচ্ছে, পায়ের নিচের দুনিয়া যেন থরথর করে কাঁপছে।
মেয়েটার বয়স ১৪। শরীরে সবেমাত্র যৌবনের আনাগোনা। তার নিটোল কটিদেশ, ছন্দোবদ্ধ চলন, চারপাশে এক যাদুকরী মোহময়তা সৃষ্টি করে। বিশুদ্ধ মধুর মত স্বর্ণালী চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যখন বুক আর মুখের ওপর ছড়িয়ে পড়ে, মনে হয় যেন জ্যোতিষ্কের উজ্জ্বলতা ঠিকরে বেড়ুচ্ছে। চোখদুটো যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, যে-কেউ সে চোখে চোখ রাখলে মতিভ্রম হতে বাধ্য। মোলায়েম ত্বক যেন ঘুঘু পাখির মতই কোমল। ছেলেটার মনে হয়, ও যেন কোনো মর্তবাসী অপ্সরী।