ও আচ্ছা, সঞ্জু বলল।
ক্রিশ্চিয়ানিটির বিরুদ্ধে তৈরি হলেও এই ইলুমিনাতি একপর্যায়ে এমন-সব মানুষের হাতে গিয়ে পড়ে, যারা আগাগোড়া নাস্তিক। তারা চায় পৃথিবীতে একটি নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার কায়েম করতে। তাদের মুঠোয় থাকবে পৃথিবী। এই লক্ষ্যে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদদের দলে। ভেড়ায় এবং অনেকের মতে বর্তমান বিশ্ব পরিচালনা করে এই ইলুমিনাতিরাই।
সঞ্জুর মাথা যেন গুলিয়ে গেল। সে বলল, কী সব ছাইপাঁশ বলছিস। একবার বলছিস তারা গোপনে আছে। আবার বলছিস তারা পৃথিবী পরিচালনা করছে। আগামাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি হো হো করে আরেকবার হেসে উঠলাম। জোবায়ের বলল, ইলুমিনাতির একটি নীতি হচ্ছে তারা নিজেদের কখনোই প্রকাশ করবে না। অর্থাৎ তারা কখনোই প্রকাশ্যে প্রচার করবে না যে—তারা ইলুমিনাতি। এই নিয়ম ইলুমিনাতির ভেতরে খুব কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। ইলুমিনাতির কোনো সদস্যই কখনো মুখ ফুটে বলবে না, সে ইলুমিনাতির সদস্য। মরে গেলেও না।
সাংঘাতিক ব্যাপার, বলল সঞ্জু। তাহলে তাদের অস্তিত্ব বোঝা যাবে কীভাবে?
তাদের নির্দিষ্ট কিছু সাইন আছে।
কী সেগুলো?, সঞ্জুর উৎসুক প্রশ্ন।
আমাদের ইলুমিনাতি সম্পর্কিত আলাপে বাগড়া দিল এতক্ষণ ধরে চুপ করে থাকা রাহাত। বলল, কী সব ফালতু ব্যাপারে আলাপ করছিস বল তো। এসব ইলুমিনাতি টিলুমিনাতি বলতে কিছু নেই। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আমার একদম ভালো লাগে না শুনতে। বাদ দে।
রাহাতের আপত্তির মুখে এতক্ষণ ধরে অনর্গল বলতে থাকা আমাদের ইলুমিনাতি বিশেষজ্ঞ রবার্ট ল্যাঙডন ওরফে জোবায়ের মুহূর্তেই হাওয়া ছেড়ে দেওয়া ফানুসের মতো টুস করে চুপসে গেল। তার চুপসে যাওয়ার নীরবতা ভেঙে সাজিদ বলল, আমরা তাহলে অন্য কিছু নিয়ে আলাপ করতে পারি।
আবারও কি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব?
না, বলল সাজিদ।
তাহলে?, রাহাতের প্রশ্ন।
সূরা ফাতিহার ব্যাপারে।
সূরা ফাতিহার ব্যাপারে সাজিদ কী আলোচনা করবে সেটাই ভেবে পেল না জোবায়ের। সাত আয়াতের এই সূরা সকলে মুখস্থ বলতে পারে। অর্থও মোটামুটি সবাই জানে। এরপরও এখানে আলোচনার কী থাকতে পারে?
আমি নীরবতা পালন করছি। সাজিদ যখন সেধে কোনো কিছু নিয়ে আলাপ করতে চায়, তার মানে সেখানে নিশ্চয়ই ভিন্নরকম কিছু আছে। গত দু-বছরে তার সাথে ওঠা-বসা করতে করতে এই আত্মবিশ্বাস আমার ভালোভাবেই জন্মেছে।
রাহাত বলল, এরকম আলোচনায় আমার আপত্তি নেই। শুরু করে দে।
সঞ্জু এবারও চুপ। সে সম্ভবত সবকিছুতেই আগ্রহী থাকে। এবার সাজিদ হালকা নড়েচড়ে বসল। কথা বলার আগে তার এরকম হাবভাব আমার কাছে পরিচিত। একটু পরেই গলা খাঁকারি দিয়ে বক্তৃতা শুরু করবে। এখানে কফির বন্দোবস্ত করা গেলে তার জন্যে আরও সুবিধে হতো; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রসুলপুরের এই গ্রামে কফির কোনো ব্যবস্থা নেই।
আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে সাজিদ কোনো প্রকার গলা খাঁকারি দেওয়া ছাড়াই বলা শুরু করল, কয়েকদিন আগে আমি সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করছিলাম।
সচরাচর যে-রকম করি, সে রকম। সেদিন হঠাৎ করে আমার মনে হলো, আমি মনে হয় সূরা ফাতিহার বিশেষ একটি দিক ধরতে পেরেছি।
কীরকম?, জোবায়ের জানতে চাইল।
সাজিদ বলল, সূরা ফাতিহায় রয়েছে সাতটি আয়াত, তাই না?
হু, বলল রাহাত।
এই সাতটি আয়াতকে দুই ভাগে ভাগ কর; কিন্তু মাঝের আয়াতকে কোনো ভাগেই ফেলিস না। অর্থাৎ একদম মাঝের আয়াতটিকে আলাদা রেখে দুই ভাগ করলে কীরকম দাঁড়ায় হিশেব কর।
রাহাত বলল, তাহলে সাত আয়াতের মধ্যে মাঝের আয়াত হলো আয়াত নম্বর চার। চার নম্বর আয়াতকে আলাদা রেখে দুই ভাগ করলে এক, দুই এবং তিন নম্বর আয়াত পড়ে এক ভাগে, এরপর পাঁচ, ছয় এবং সাত নম্বর আয়াত পড়ে অন্য ভাগে।
সাজিদ বলল, গুড।
সঞ্জু বলে উঠল, আমি বুঝি নাই রে দোস্ত। আরেকটু সহজ করে বল।
আচ্ছা, সহজ করেই বলছি,বলল সাজিদ।ধর, তোকে বললাম ১ থেকে ৭ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো দুই ভাগ করতে হবে, তবে মাঝের সংখ্যাটিকে কোনো ভাগে না ফেলে আলাদা রাখতে হবে। তুই কীরকম ভাগ করবি? সঞ্জু মাথা চুলকাতে লাগল। কথা বলে উঠল রাহাত। বলল, সঞ্জু, ১,২,৩,৪,৫,৬ এবং ৭ এর মধ্যে মাঝের সংখ্যা কোনটি হবে বল।
সঞ্জু এবারও বিভ্রান্ত। সাজিদ বলল, আমি আরও সহজ করি। ১-৭ এর মধ্যে ১,২,৩ এক ভাগে আর ৫,৬,৭ অন্য ভাগে। বাদ পড়ল কোন সংখ্যাটা?
চার, বলল সঞ্জু।
রাইট। এই চার সংখ্যাটাই মাঝের সংখ্যা এখানে। দেখ, চার সংখ্যাটার আগেও তিনটি সংখ্যা ১,২,৩ এবং চার সংখ্যাটার পরেও তিনটি সংখ্যা ৫, ৬ এবং ৭। এবার বুঝতে পেরেছিস?
সঞ্জু মাথা নেড়ে বলল, ফকফকা পরিষ্কার।
সঞ্জুর কথা শুনে আমরা সকলে হেসে উঠলাম। সাজিদ আবার বলতে লাগল, তাহলে সূরা ফাতিহাকেও যদি আমরা এরকম দুই ভাগ করি, তাহলে সূরাটার প্রথম তিন আয়াত চলে যাবে এক ভাগে, আর শেষের তিন আয়াত চলে যাবে অন্য ভাগে। মাঝে থাকবে আয়াত নম্বর চার। রাইট?
হুম।
এখানেই আসল রহস্যটা, বলল সাজিদ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই মাঝের আয়াতে এমন কিছু বলেছেন, যেটি সূরা ফাতিহার প্রথম অংশ এবং পরের অংশ, দুই অংশেরই প্রতিনিধিত্ব করে।
ইন্টারেস্টিং, বলল জোবায়ের।