এতোটুকু বলে বিপ্লব দা থামলেন। সাজিদ বলল’ ‘ what’s wrong with this verses?’
বিপ্লব দা বললেন, -‘দেখো, এখানে বলছে কাফিরদের হৃদয়ে আর কানে তোমাদের আল্লাহ মোহর আই মিন দিল মেরে দেয়। সিল মারা মানে, তালাবদ্ধ করে দেওয়া। তাই না?’
-‘হু’
-‘এখন কাফিরদের হৃদয় আর কানে যদি সিল মারা থাকে, তারা তো সত্যের বাণী আই মিন তোমরা যেটাকে ধর্মের বাণী বলো আর কি সেটা বুঝতে পারবে না। উপলব্ধি করতে পারবে না। আল্লাহ যেহেতু তাদের হৃদয় আর কানে সিল মেরে দিচ্ছে, তাই তারা ধর্মের বাণীগুলো বুঝতে পারছে না। তাই তারা কাফির থেকে যাচ্ছে, নাস্তিক হচ্ছে। তাদের কি দোষ বল? আল্লাহ চান না তারা আস্তিক হোক। চাইলে নিশ্চয়ই তিনি হৃদয় আর কানে সীল মেরে দিত না। আবার, শেষে এসে বলছে, তাদের জন্য আজাব অপেক্ষা করছে। এটা কেমন কথা? এদিকে সিল মেরে দিয়ে সত্য বোঝার থেকে দূরে রাখছেন, আবার ঐদিকে আজাব প্রস্তুত করে রাখছেন। ব্যাপারটা কি ঠিক, বল?’
বিপ্লবদার কথাগুলো আমার কাছে খুব যৌক্তিক মনে হল। আসলেই তো। এই আয়াত গুলো নিয়ে তো এভাবে কোনোদিন ভাবি নি। আল্লাহ একদিকে বলছেন কাফিরদের অন্তরে মোহর মেরে দেন, আবার তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ব্যাপারটা কী?
সাজিদ মুচকি হাসলো। চায়ের কাপে শেষ চুমুকটুকু দিয়ে বলল, – ‘দাদা ইসলামের ইতিহাস পড়লে আপনি একশ্রেণীর মীরজাফরদের কথা জানতে পারবেন। এরা করতো কী জানেন? রাসূল সাঃ এর কাছে আসতো। হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে বলতো, ‘মুহাম্মদ, আমার হাতে কি আছে বলতে পারলে আমি এক্ষুনি ইসলাম কবুল করব। দেখি তুমি কেমন নবী?’
রাসুল সাঃ হাসতেন। হেসে বলতেন, ‘তোমার হাতের জিনিসই বলুক সেগুলো কি।’ তখন পাথরগুলো কথা বলতে শুরু করত। এটা দেখে সেই লোক গুলো খুব অবাক হতো। অবাক হয়ে বলতো, এ সাক্ষাৎ জাদুকর। এই বলে পালাতো। অথচ, তারা বলেছিল হাতে কি আছে বলতে পারলে ইসলাম কবুল করবে। কিন্তু রাসূল সাঃ তাদের পরীক্ষায় পাশ করে গেলে তারা তাকে জাদুকর, জ্যোতিষী ইত্যাদি বলে চলে যেতো। মুনাফিকি করত। এসব আয়াতে মূলত এই শ্রেণীর কাফিরদের কথাই বলা হয়েছে। যাদের সামনে সত্য উদঘাটিত হওয়ার পরও তারা তা অস্বীকার করে।’
বিপ্লব দা বললেন, -‘কিন্তু অন্তরে মোহর মেরে দিয়ে তাদের সত্য জানা থেকে বঞ্চিত করে, আবার তাদের শাস্তি দেওয়া টা কি ঠিক?’
-‘মোহর আল্লাহ ইচ্ছা করে মেরে দেন না। এটা সিস্টেমেটিক্যালি হয়ে যায়।’
বিপ্লব দা হাসা শুরু করলেন। বললেন, ‘ভেরি ইন্টারেস্টিং’ সিস্টেমেটিক্যালি পড়ে যায়? হা হা হা।
সাজিদ এই কথাটা আমার কাছেও শিশুসুলভ মনে হলো। সিস্টেমেটিক্যালি সিল পড়ে যায়? আল্লাহ মারেন না। এটা কেমন কথা? আয়াতে তো স্পষ্টই আছে, -‘আল্লাহ তাদের হৃদয় মোহর মেরে দেন।’
সাজিদ বলল, -‘দাদা ধরুন, আমি বললাম যারা খাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, আপনি তাদের খেতে বলুন আর না বলুন, তারা কোনোভাবেই খাবে না। আল্লাহ তাদের দেহ শুকিয়ে দেন। তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেন। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন অসুখ।
খেয়াল করুন, -এখানে তারা অসুস্থ হচ্ছে, তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তারা কঠিন অসুখে পড়তে যাচ্ছে। কেনো এসব হচ্ছে? আল্লাহ ইচ্ছা করেই তাদের সাথে এগুলো করছে না। এগুলো তাদের কর্মফল। তাদের যতই জোর করা হোক, তারা যখন কোনোভাবেই খাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তখন সে সিস্টেম্যাকালি না খাওয়ার ফলে তাদের শরীর শুকিয়ে যাবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। তারা কঠিন রোগে পতিত হবে। এসব কিছুর জন্য তারাই দায়ী। এখানে আল্লাহর ইচ্ছে অনিচ্ছে কিছুই নেই। কিন্তু সিস্টেমটা আল্লাহু চালাচ্ছেন। আল্লাহ একটি সিস্টেম রেডি করে দিয়েছেন। আপনি না খেলে আপনার শরীর আল্লাহ শুকিয়ে দেবেন। আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবেন। দিন শেষে আপনার একটি কঠিন রোগ হবে। এটা একটা সিস্টেম। এই সিস্টেমে আপনি তখনই পরবেন- যখন আপনি নিজ থেকে খাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন।
ঠিক সেভাবেই- যারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে, তাদের সামনে যত প্রমাণ, যত দলিলই আসুক, তারা সত্যকে মেনে নিবে না, অস্বীকার করবেই করবে, তাদের অন্তরে আর কানে সিস্টেমেটিক্যালি একটি সীল পড়ে যাচ্ছে। না খাওয়ার ফলে আপনি যেভাবে শুকিয়ে যান, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, আপনার কঠিন অসুখ হয়, ঠিক সেভাবে, বিশ্বাস করবেন না বলে সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছেন- তখন আপনার অন্তরে, কানে সেই পরে যাচ্ছে, আর দিনশেষে, আপনার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন অসুখ আই মিন আজাব। এর জন্য আল্লাহকে ব্লেইম করা হবে কেন?’
সাজিদ একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল। বিপ্লবদার মুখ খানিকটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তিনি সম্ভবত বুঝে গেছেন ব্যাপারটা।
আমি বললাম, -‘বাব্বা, কি দিয়ে কি বুঝিয়ে দিলি রে ভাই। আমি হলে তো হ-য-ব-র-ল’ করে ফেলতাম।’
সাজিদ মুচকি হাসলো।
অনেকক্ষণ আগেই বৃষ্টি থেমে গেছে। আমরা বিপ্লব দা’র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম সেদিন।
তোমরা মুশরিকদের যেখানেই পাও, হত্যা করো
‘তোমরা মুশরিকদের যেখানেই পাও, হত্যা করো’