সাজিদ এবারো কিছু বলো না। চুপ করে আছে।
স্যার বললেন, -‘কুরআনে বলা আছে-
“আর আমরা আকাশকে সৃষ্টি করেছি সুরক্ষিত ছাদ। অথচ, তারা আমাদের নির্দেশনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।’
“And we made the sky a protected ceiling, but they, from its signs are turning away – Al Ambia 32”
দেখলে তো বাবা আইনস্টাইন, তোমাদের আল্লাহ বলেছে, আকাশ নাকি সুরক্ষিত ছাদ। তা বাবা, এই ছাদে যাবার কোন সিঁড়ির সন্ধান কোরআনে আছে কি? হা হা হা হা।’
চুপ করে থাকতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু এই লোকটির মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে সাজিদকে মুখ খুলতে বাধ্য হল।
সে বলল, -‘স্যার আপনার সে ব্লগার অভিজিৎ আর আপনার প্রথম ভুল হচ্ছে, আকাশ নিয়ে আপনাদের দুজনের ধারণা মোটেও ক্লিয়ার না।’
-‘ও, তাই নাকি? তা আকাশ নিয়ে কিলিয়ার ধারাটি কি বল শুনি?’ -অবজ্ঞাভরে লোকটির প্রশ্ন।
সাজিদ বলল, -‘স্যার, আকাশ নিয়ে ইংরেজি অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে বলা আছে, –
The region of the atposphere and outer space seen from the earth, অর্থাৎ, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলের এবং তার বাইরে যা কিছু দেখা যায় সেটাই আকাশ। আকাশ নিয়ে আরও ক্লিয়ারলি বলা আছে উইকিপিডিয়াতে। আপনি নেট ঘেটে মুক্তমনা যেতে পেরেছেন, আরেকটু এগিয়ে উইকিপিডিয়া অবধি গেলেই পারতেন। আকাশ নিয়ে উইকিপিডিয়াতে বলা আছে, – The sky (or celestial dome) is everything that lies above the surface of the earth, including the atmosphere and outer space, অর্থাৎ, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের উপরে যা কিছু আছে, তা সবই আকাশের অন্তর্গত। এর মধ্যে বায়ুমণ্ডল এবং তার বাইরে সবকিছু আকাশের মধ্যে পড়ে।’
-‘হু, তো?’
-‘এটা হচ্ছে আকাশের সাধারণ ধারণা। এখন আপনার সেই আয়াতে ফিরে আসি। আপনি কোরআন থেকে উল্লেখ করেছেন-
“আর আমরা আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ। অথচ, তারা আমাদের নির্দেশনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। ”
আপনি বলেছেন মহাকাশকে কিভাবে ছাদ হয়, তাই না?
স্যার, বিংশ শতাব্দীতে বসে বিজ্ঞান জানা কিছু লোক যদি এরকম প্রশ্ন করে, তাহলে আমাদের উচিত বিজ্ঞান চর্চা বাদ দিয়ে গুহার জীবন যাপনে ফিরে যাওয়া।
-‘What do you mean?’
-‘বলছি স্যার। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর উপরিভাগে যে বায়ুমণ্ডল আছে, তাতে কিছু স্তরের সন্ধান পেয়েছেন। আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এসব পুরু স্তর দ্বারা গঠিত। এই স্তরগুলো হচ্ছে-
১। ট্রপোস্ফিয়ার
২। স্ট্রাটোস্ফিয়ার
৩। মেসোস্ফিয়ার
৪। থার্মস্ফিয়ার
৫। এক্সোস্ফিয়ার
এই প্রত্যেকটি স্তরের আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে। আপনি কি জানেন, বিজ্ঞানী Sir venn Allen প্রমাণ করিয়ে দিয়েছিলেন, আমাদের পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের চারিদিকে একটি শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড আছে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড আমাদের পৃথিবীর চারদিকে একটি বেল্ট এর মত বলয় সৃষ্টি করে রেখেছে। বিজ্ঞানী Sir venn Allen এর নামে এই জিনিসটা নাম রাখা হয় Venn Allen Belt……..
এই বেল্ট চারপাশে ঘিরে রেখেছে আমাদের বায়ুমন্ডলকে। আমাদের বায়ুমণ্ডলের স্তরটির নাম হচ্ছে স্ট্রাটোস্ফিয়ার। এই স্তরের মধ্যে আছে এক জাদুকরি উপস্তর। এর নাম হলো ওজোন স্তর।
এই ওজোন স্তরের কাজের কথায় পরে আসছি। আগে একটু সূর্যের কথা বলি। সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে যে বিস্ফোরণগুলো হয়, তা আমাদের চিন্তা কল্পনারও বাইরে। এই বিস্ফোরণগুলোর ক্ষুদ্র একটি বিস্ফোরণ তেজস্ক্রিয়তা এমন যে, তা জাপানের হিরোশিমায় যে অ্যাটমিক বোমা ফেলা হয়েছিল, সেরকম দশ হাজার বিলিয়ন অ্যাটমিক বোমার সমান। চিন্তা করুন স্যার, সেই বিস্ফোরণগুলোর একটু আঁচ যদি পৃথিবীতে লাগে, পৃথিবীর কি অবস্থা হতে পারে?
এখানেই শেষ নয়। মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে নিক্ষিপ্ত হয় মারাত্মক তেজস্ক্রিয় উল্কাপিণ্ড। এগুলোর একটি আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে পৃথিবী।
আপনি জানেন, আমাদের এই পৃথিবীকে এরকম বিপদের হাত থেকে কোন জিনিসটা রক্ষা করে? সেটা হচ্ছে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। আরো স্পেসিফিকলি বলতে গেলে, বলতে হয়, ‘ওজোনস্তর’।
শুধু তাই নয়, সূর্য থেকে যে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি আর গামা রশ্মি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, সেগুলো যদি পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারতো, তাহলে পৃথিবীতে কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারত না। এই অতি বেগুনি রশ্মির ফলে মানুষের শরীরে দেখা দিত চর্ম, ক্যান্সার, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ হতো না। আপনি জানেন, সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা এসব ক্ষতিকর জিনিসকে কোন জিনিসটা আটকে দেয়? পৃথিবীতে ঢুকতে দেয় না? সেটা হল বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর। এসব ক্ষতিকর উপাদানকে স্ক্যানিং করে পৃথিবীতে প্রবেশে বাধা দেয়।
মজার ব্যাপার কি জানেন? ওজোনস্তর সূর্য থেকে আসা কেবল সেসব উপাদান কেই পৃথিবীতে প্রবেশ করতে দেয়, যেগুলো পৃথিবীতে প্রাণের জন্য সহায়ক। যেমন বেতার তরঙ্গ আর সূর্যের উপকারী রশ্মি। এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যে তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়, তার সবটাই যদি মহাকাশে বিলীন হয়ে যেত, তাহলে রাতের বেলা পুরো পৃথিবী ঠান্ডা বরফে পরিণত হয়ে যেত। মানুষ আর উদ্ভিদ বাঁচতে পারত না। কিন্তু ওজন স্তর সব কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে মহাকাশে ফিরে যেতে দেয় না। কিছু কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে ধরে রাখে, যাতে পৃথিবি তাপ হারিয়ে একেবারে ঠান্ডা বরফ শীতল না হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা এটাকে ‘গ্রীন হাউস’ বলে।