Bala Hari…in his youth employed as a watchman in the service of local family of zeminders, and being very cruelly treated for alleged neglect of duty he severed his connection with them. After wandering about for some years, he set himself up as a religious teacher, and attracted round him more than twenty thousand desciples. The most important feature of his cult was the hatred that he taught his followers to entertain towards Brahmans. He was quite illiterate but he had a power of inventing puns by which he could astonish his audience whenever he talked or debated.
বলরামের বাক্শক্তি ও শব্দশ্লেষের যে উল্লেখ যোগেন্দ্রনাথ করেছেন তার কিছু ছাপা নমুনা পাওয়া গেছে পুরনো বই থেকে যেমন—
১. রাধুনি নেই তো রাঁধলে কে? রান্না নেই তো খেলেন কি?
যে রাঁধলে সেই খেলে এই দুনিয়ার ভেল্কি।
২. যেয়েও আছে থেকেও নাই
তেমনই তুমি আর আমি রে
আমরা মরে বেঁচে বেঁচে মরি।
৩. তিনি তাই তুমি যাই
যা তিনি তাই তুমি।
৪. যম বেটা ভাই দুমুখো থলি তাই জন্যে ওর আঁৎটা খালি
ও কেবল খাচ্ছে খাচ্ছে
ওর পেটে কি কিছু থাকচে থাকচে থাকচে?
৫. চক্ষু মেলিলে সকল পাই চক্ষু মুদিলে কিছুই নাই
দিনে সৃষ্টি রেতে লয় নিরন্তর ইহাই হয়।
বলরাম প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন সন্দেহ কী? কিন্তু নিছক ব্রাহ্মণ্যবিদ্বেষের জন্য তিনি একটা ধর্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছিলেন এ কথা ঠিক নয়। আসলে আঠারো শতকের শেষের দিকে এদেশের সাধারণ শূদ্রজাতি নানা কারণে অসহায় হয়ে পড়েছিল। তাদের জীবনে কোনও সামাজিক নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্ততা ছিল না। ফলে যে কোনও সময়ে নেমে আসত উচ্চবর্ণের দমনপীড়ন বা ফতোয়া। যেমন বলরামকে করতে হয়েছিল গ্রামত্যাগ। কল্যাণীর রামশরণ পাল, কুষ্টিয়ার লালন শাহ, হুদোর চরণ পাল, ভাগা গ্রামের খুশি বিশ্বাস, মেহেরপুরের বলরাম হাড়ি এঁরা সকলেই উচ্চবর্ণের ভ্রুকুটির বাইরে সাধারণ ব্রাত্যজনের বাঁচবার জন্য একটা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। নিছক প্রতিবাদ নয়, টিকে থাকাও। সংকীর্ণ শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে বাঁচা নয়, উদার মানবতা নিয়ে সহজ করে বাঁচা। তাই মূর্তিপূজা, অপদেবতা পূজা, অকারণ তীর্থভ্রমণ, দেবদ্বিজে বিশ্বাস, শাস্ত্র নির্ভরতা ও আচার সর্বস্বতার বিরুদ্ধে এঁদের অস্ত্র ছিল জাতিভেদহীন সমন্বয় এবং নতুন মানবতাবাদী সহজ ধর্মাচরণ। কিন্তু কর্তাভজা সাহেবধনীরা অবতারতত্ত্ব মানেন। বলরাম সেটাও মানেননি। তিনি যুগলভজনও মানেননি। বলরাম ছিলেন বৈষ্ণবতারও বিরোধী। এখানেই বলা হাড়ির অভিনবত্ব।
কিন্তু বলরাম কী বলতে চেয়েছিলেন তাঁর ধর্মমতে? তিনি অবতারতত্ত্ব না মেনে নিজেকে বলেছিলেন: ‘হাড়িরাম’। হাড়ি বলতে তিনি কোনও জাতি বোঝাননি। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, যিনি হাড়ের স্রষ্টা তিনিই হাড়ি। হাড় মানে স্ট্রাকচার, তাতে চামড়ার ছাউনি। ভেতরে বল অর্থাৎ রক্ত। এই হল মানবদেহ। তার মধ্যে হাড্ডি, মণি, মগজ, গোস্ত, পোস্ত। সব মিলিয়ে আঠারো মোকাম।
‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ বইতে বলরামী সম্পর্কে এক বিচিত্র প্রশ্নোত্তর পাওয়া যায় বলরামের জবানিতে। তা এইরকম:
প্রশ্ন: পৃথিবী কোথা থেকে এলো?
উত্তর: ক্ষয় হতে।
প্রশ্ন: ক্ষয় থেকে কিরূপে?
উত্তর: আদিকালে কিছুই ছিল না। আমি আমার শরীরের ‘ক্ষয়’ করে এই পৃথিবী সৃষ্টি করি সেইজন্য এর নাম ক্ষিতি। ক্ষয় ক্ষিতি ও ক্ষেত্র একই পদার্থ। আমি কৃতদার গড়নদার হাড়ি। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঘর প্রস্তুত করে সে যেমন ঘরামী সেইরূপ আমি হাড়ের সৃষ্টি করিয়াছি বলিয়া আমার নাম হাড়ি।
হাড়িরাম তত্ত্ব শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক এর ভেতরের মৌলিক চিন্তার রহস্যটুকু খুব চিত্তাকর্ষক।
১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে আমি মেহেরপুর যাই বলরামী তত্ত্বের খোঁজে। এতদিন সে দেশ পাকিস্তান থাকায় আমার কৌতুহল মেটাতে হচ্ছিল পুঁথির পাতা থেকে। অবশেষে সেই ভৈরব নদীর ধারের মেহেরপুর গিয়ে সেই মল্লিকবাড়ি দেখে, মালোপাড়ায় বলরামের মন্দিরের সামনে বসি। সম্প্রদায়ের লোক এখনও আছে কিছু। বৃন্দাবন এখনও নিত্য সেবাপূজা করে হাড়িরামের। তাদের এখনকার নেতা বা ‘সরকার’ আমাকে বোঝাতে লাগলেন: শুনুন আজ্ঞে, আমাদের বিশ্বাসে বলছে—
হাড় হাড্ডি মণি মগজ গোস্ত পোস্ত গোড়তালি।
এই আঠারো মোকাম ছেপে আছেন আমার বলরামচন্দ্র হাড়ি ॥
আমি জিজ্ঞেস করলাম: আপনাদের এই আঠারোর তত্ত্বটা কী?
: আজ্ঞে গুণে ন্যান। মানবদেহ গড়ে উঠেছে একুনে আঠারোটা পদার্থ নিয়ে। তার মধ্যে কারিগরের দেওয়া দশ পদার্থ, যেমন দুই নাক, দুই কান, দুই চোখ এই ছয়—আর মুখ, এক নাভি, এক পায়ু, এক উপস্থ এই হল দশ। এবার শুনুন পিতা দেন চার পদার্থ— হাড়, হাড্ডি (মানে মজ্জা) মণি (মানে বীর্য) আর মগজ। আর জননী দেন চার পদার্থ— কেশ, ত্বক, রক্ত আর মাংস। এই হল আঠারো মোকাম। আর এই সব ছাপিয়ে রয়েছেন আমাদের হাড়িরাম।
: হাড়িরাম কি কারুর অবতার?
: তিনি বলে গেছেন, সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি এই চার যুগের আগে ছিল দিব্যযুগ। সেই সময়ে তেনার জন্ম। তার মানে সব অবতারের আগে তিনি। আমাদের সদানন্দের গানে বলছে—