তাই মার্কিন ডাক্তাররা মোকদ্দমায় অবান্তর হিটলারের যৌনজীবন সম্বন্ধে আপন আপন কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য এঁদের শুধিয়েছেন অনেক প্রশ্ন। যেমন ডাক্তার গিলবার্টের প্রশ্নের Tech Comp Cay fasters 267 766169a, Of course, he was normal like any one of us, অর্থাৎ হিটলার ছিলেন এসব বাবদে আর পাঁচজনের মতোই নর্মাল।
সেই সময়ই জর্মন জনগণ অবশ্য প্রধানত জর্মন সাক্ষীদেরই মারফতে একটি তরুণীর কথা জানতে পায়, নাম, গেলি (Angelika এবং Geli এঁর ডাকনাম) রাউবাল।
আমার ব্যক্তিগত মতে হিটলার ভালোবেসেছিলেন 1/2 + 1 + 1/2 হাফ প্লাস ওয়ান প্লাস হাফ) অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে দু-বার।
প্রথম হাফটা সচরাচর রোমান্টিক কাফ ল অর্থাৎ বাছুরের মতো করুণ নয়নে তাকানো, ম্যা-ম্যা রব ছাড়া যার অর্থ গোপনে অজস্র অশ্রু বর্ষণ করা, এবং সবচেয়ে বড় কথা বাছুর যে-রকম শিং গজাবার সময় যত্রতত্র ঢু মেরে নিজের মস্তকদেশই জখম করে, বেশি চ্যাংড়ার বেলাও অবিচারে যত্রতত্র প্রেমে পড়ে নাস্তানাবুদ হওয়া।
কিন্তু হিটলারের কাফ লভ প্রচলিত প্যাটার্ন নকল করেনি– এমনকি তার প্রায় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত বাল্যজীবনের একমাত্র জীবনীলেখক, হিটলারের অতি প্রিয় একমাত্র বাল্যসখা– তিনি যা লিখেছেন সেখানে অনেকগুলো লক্ষণ দেখা যায় যেগুলো স্পষ্ট প্রমাণ করে, এ স্থলের নায়ক কিন্তু অসাধারণ প্রেমিক। আমি আজ সে কাহিনী কীর্তন করব না, আমার উদ্দেশ্য সেই কাহিনী কিঞ্চিৎ শুনিয়ে দেওয়া যেটাকে হিটলারের স্যুনিক যুগের (১৯২০ থেকে ১৯৩৩) সর্ব অন্তরঙ্গ জন– সংখায় অতিশয় কম– এক বাক্যে হিটলারের ওয়ান অ্যান্ড গ্রেট লভ বলেছেন–গ্রেটেস্ট বলেননি কারণ তা হলে অন্যগুলো অর্থাৎ যেগুলোকে আমি উপরে প্রথম হাফ ও দ্বিতীয় হাফ রূপে চিহ্নিত করেছি, ও ওই একমাত্র গ্রেট লভের সঙ্গে একাসন না পেলেও একই শ্রেণিতে বসবার অনর্জিত সম্মানলাভ করে। কিন্তু সেই কাহিনীর নান্দী গাইবার পূর্বে, পাঠকের কৌতূহল কিঞ্চিৎ প্রশমিত করার জন্য উল্লেখ করি, হিটলার তার প্রথম প্রেমের নায়িকাকে চার বছর ধরে প্রায় প্রতিদিন রাস্তায় অন্তত দু বার করে দুরুদুরু বুকে ক্রস করেছেন, হ্যাট তুলে ভিয়েনার ভদ্রজনসম্মত পদ্ধতিতে গভীরতম বাও করেছেন তিনি (জীবনী-লেখক– সে মহিলা এখনও জীবিতা এবং বিধবা, এখন বয়স প্রায় পঁচাত্তর– তাই ছদ্মনামে তাঁর পরিচয় দিয়েছেন) যেদিন মৃদুহাস্য সহকারে প্রতিনমস্কার করেছেন সেদিন অষ্টাদশবর্ষীয় হিটলার
আশার বাতাসে করি ভর ফিরে যেত অ্যাডলফ কুটিরে।
আর যেদিন প্রিয়া সঙ্গের আর্মি-অফিসার উমেদার নাগরের প্রতি ঈষৎ সম্মোহিত বলে হিটলারের প্রতি ভ্রু-কুঞ্চিত করতেন সেদিন হিটলার–ইংরেজিতে যাকে বলে saw red, অর্থাৎ তিনি মহাপ্রলয় ডেকে এনে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বিনষ্ট করার জন্য সেই শিঙাটি খুঁজছেন। বাল্যবন্ধু বলছেন, আর সঙ্গে সঙ্গে সে কী চিৎকার! অভিসম্পাত দিচ্ছে সবাইকে, আর বিশেষ করেই ওই হতভাগা আর্মি-র পাপাত্মা অফিসারদের।(৩) বন্ধু বলছেন, বুর্জুয়া সম্প্রদায়ের প্রতি হিটলার অতি বাল্য বয়স থেকে সমস্ত সত্তা দিয়ে নিকৃষ্টতম ঘৃণা প্রকাশ করতেন এবং বিশেষ করে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সম্রাট-সেনাবাহিনীর অফিসারদের এবং তাদের উদ্ধত ভাব, দাম্ভিক আচরণের প্রতি যত্রতত্র সর্বোত্তম সর্বোক্তৃষ্ট বস্তু, আদর-আপ্যায়ন যেন তাদেরই সর্বপ্রথম প্রাপ্য, যেন স্বর্গ থেকে স্বয়ং সেন্ট পিটার স্বহস্তে তাদের জন্যে যে শাহ্-ই-শাহী। ফরমান লিখে দিয়ে নিজেই ধন্য হয়েছেন– এই ভাব। (৪)
পুষ্পোৎসবের প্রভাতে হিটলার তার সর্বোত্তম সজ্জা পরে পথপার্শ্বে অপেক্ষা করছেন, তাঁর প্রিয়ার জন্যে, তিনিও আসবেন শব্দার্থে, পুরথে, পুষ্পভরণ পরিধান করে। সময় যেন কিছুতেই কাটতে চায় না। অবশেষে তিনি এলেন। হিটলার হ্যাট তুলে অন্য দিনের তুলনায় প্রচুরতর সসম্ভ্রম অভিবাদন জানালেন। সেই ভিড়ের মধ্যেও প্রিয়া তাকে লক্ষ্য করে তার হাতের পুষ্পগুচ্ছ থেকে একটি ফুল তুলে নিয়ে তাঁর দিকে ছুঁড়ে ফেলে প্রসন্ন মৃদুহাস্য করলেন।
সপ্তম স্বর্গে আরোহণ করে– বরঞ্চ বলা ভালো সে মহালগনে তিনি সপ্তম স্বর্গেও যেতে সম্মত হতেন না। হিটলার বাড়ি ফিরলেন।
এই চার বছরের ভেতর হিটলার ওই তরুণীটির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাঁর সখার কাছে, তিনিও যতখানি পারেন উপদেশ দিয়েছেন, কিন্তু হিটলার তার কোনও উপদেশ, কিংবা নিজের বুদ্ধি অনুযায়ী কোনও কৌশলই হাতে-কলমে ফলপ্রসূ করার চেষ্টা দেননি! এ বড় আশ্চর্যের কথা। এ নিয়ে প্রাগুক্ত জীবনীকার বিস্তর গবেষণা, বিস্তর চিন্তা করেছেন, কিন্তু এস্থলে তার স্থানাভাব এবং ঈষৎ অবান্তর বলে বর্জন করতে অনিচ্ছায় বাধ্য হলুম। শান্তি, সময় ও সুযোগ পেলে পরে চেষ্টা করব। কারণ যদিও দু-জনাতে কোনও কথা হয়নি, পত্রবিনিময় পর্যন্ত হয়নি, তবু ঘটনাটি সত্যই চিত্তাকর্ষণ করে– কারণ হিটলার তার স্বর্গীয় প্রেমের অভিব্যক্তি, এই প্রিয়াকে এক শুভদিনে দাম্পত্যবন্ধনে বন্ধন করার শুভেচ্ছা, সবই বন্ধুকে বলতেন। গৃহনির্মাণের স্কেচ আঁকাতে হিটলার সেই তরুণ বয়সেই সিদ্ধহস্ত ছিলেন (ফুরার রূপে পরবর্তী জীবনে তিনি শতকর্মের মাঝখানে, এমনকি আত্মহত্যার কয়েকদিন পূর্বেও বহু অভূতপূর্ব বিরাট প্রাসাদ, সৈন্যদের জন্য য়ুনিফর্ম, মেডেল, নৌবহরের জন্য সাবমেরিন ইত্যাদি নানা ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর স্কেচ করেছেন এবং প্রায় সব স্কেচই কর্মে পরিণত করা হয়েছিল) এবং তাই বিবাহের পর যে ভবনে কপোত-কপোতী বাস করবেন তার অসংখ্য স্কেচ আঁকতেন হিটলার সমস্ত দিন ধরে।