এই গম্ভীর মার্চ পাস, হিটলারের সৌম্যস্মিত বদন (অবশ্য তাঁর টুথ ব্রাশ মুস্টাশ বাদ দিয়ে এফা ব্রাউনও ছিলেন এটির জন্মবৈরী–কিন্তু ভক্তের কাছে তো বিটকেল গোপো গুরু ট্যারা চোখে চায়। তথাপি সে মোর গুরু নিত্যানন্দ রায় ॥), স্বস্তিবাচক আশীর্বাদসূচক অভয়মুদ্রার উত্তোলিত দক্ষিণ বাহু তার পিছনের পূত শান্ত সজ্জন ভবন, যেখানে গুরু অহোরাত্র জর্মন-মঙ্গল-কামনায় অহরহ তপস্যামগ্ন তার পিছনে ছিল এত বড় ধাপ্পা! একটি রক্ষিতা রমণী নিয়ে সঙ্গোপনে ঢলাঢলি! তার জন্য অতিশয় সযত্নে জর্মনির সর্বশ্রেষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে নির্মিত হয়েছে ওই বাড়ির একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ আস্ত wing!
মার্কিনরা মেতে উঠেছে, এবং রুচিবিহীন একাধিক জর্মন যোগ দিয়েছে সেই ভূতের নৃত্যে (আমি দোষ দিচ্ছিনে, জর্মনি তখন চরমতম দৈন্যপঙ্কে এমনি নিমগ্ন যে বেটাবেটির দু মুঠো অন্ন যোগ করার জন্য অনেক কিছু করতে সে প্রস্তুত আমার আপন দেশের দৈন্য কি আমি চোখ মেলার সঙ্গে সঙ্গে দেখিনি, পরে বুঝিনি? এখন ঘাড় ফেরাই) হিটলারের ব্যক্তিগত জীবনের অন্তরঙ্গতম গোপন কথা বের করে রগরগে পর্নোগ্রাফি ছেড়ে টু ক্রোর পাইস্ কামাতে।
আর জর্মনি খায় শকের পর শক্। অবশ্য তখন জর্মনির এমনই দুরবস্থা যে প্রেস নেই, নির্জলা মিথ্যার বিরুদ্ধেও প্রকৃত সত্য দিবালোকে প্রকাশ করার উপায় নেই। এবং সমূহ বিপদও তাতে আছে। লেখককে যে কোনও মুহূর্তে বি-ওয়ারেন্টে যদিও সে নাৎসি ছিল না– ধরে নিয়ে যাবে denazification (of delousing) কোর্টে,(২) এবং অন্য কিছু সাক্ষীসাবুদ না নিয়ে, তুমি যে পাঁড় নাৎসি ছিলে সেইটে মার্কিন জংলি পদ্ধতি প্রমাণ করে পাঠিয়ে দেবে শ্রীঘরে (অবশ্য তখন সেই বীভৎস খাদ্যাভাবের করাল কালে জেলে ভালো হোক, মন্দ হোক দু মুঠো জুটত)।
কিন্তু সুইটজারল্যান্ডের বৃহত্তম অংশের ভাষা জর্মন। বহু নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প এবং জেলমুক্ত নাৎসিবৈরী লেখক সেখানে গিয়ে আপন আপন বই বের করতে লাগলেন। তখন পরিপূর্ণ সত্য জানার ফলে জর্মনরা ধীরে ধীরে আপন আপন শমুক্ত হতে লাগল। এদের অনেকেই যদ্যপি হিটলার-যুগে মানব-দুর্লভ সাহস দেখিয়ে নাৎসি-বিরোধিতা করার ফলে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ও জেলবরণ করেন, (এবং সেখানে প্রায় সকলেই অসহ্য যন্ত্রণা ভোগের পর মারা যান) আজ তারা সত্য বলতে গিয়ে অনেক স্থলে নাৎসিবিরোধী এবং মিথ্যা হিটলার কেলেঙ্কারি প্রচারের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আবার হিটলারের প্রাইভেট লাইফ সম্বন্ধে অনেক তথ্য ও তত্ত্ব বেরুল, 6706nosy American and peeping British- and some French thrown in the bargain for good measure- বহু পরিশ্রম করেও বের করতে পারেনি।
তারই অন্যতম, হিটলারের প্রেম সম্বন্ধে অনেক নতুন তথ্য বেরুল যা দিয়ে প্রকৃত সত্য আজ হয়তো কিছুটা নিরূপণ করা যেতে পারে। এই যে মৃত্যুর চল্লিশ ঘণ্টা পূর্বে ১৪-১৫ বছরের রক্ষিতাকে হিটলার বিয়ে করলেন, সেটা কেন? সত্যই কি তিনি তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, যাকে আমরা বাংলায় প্রেম বলতে পারি, কিংবা এফা কি নিম্নস্তরের হাপূগেরস্ত (দেমি মদেন), তাঁর সঙ্গে হিটলার কি প্ল্যাটনিক প্রেম করেছিলেন (When just nothing happens), তাদের যৌন-জীবন কি সম্পূর্ণ নরম্যাল ছিল, হিটলার পারভার্স ছিলেন না কি না, এফাঁকে যদি সত্যই ভালোবাসতেন তবে তাকে বহু পূর্বে বিয়ে করলেন না কেন এবং জর্মনির জনসাধারণ বিশেষ করে মাতারা তো চাইতেনই যে ফুরার হোন আর যাই হোন, ফুরার হলেই তো আর দেহ পাষাণ হয়ে যায় না। (এটা বিদ্যাসাগরের নকল; তিনি বলেছেন, বিধবা হলেই তো তার দেহ পাষাণে পরিণত হয় না. তার পূর্বের সমাজসংস্কারকরা বলতেন, বিধবা হইলেই তো আর হৃদয় পাষাণে পরিণত হয় না), অতএব তারও বিয়ে করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা উচিত। এস্থলে বলা বাহুল্য সেটা পূর্বেই বলেছি যে এফার সঙ্গে হিটলারের প্রকৃত সম্পর্ক এতই মাত্রাধিক মিলিটারি টপ সিক্রেটের মতো তিনি লুকিয়ে রাখতেন, এবং তাঁর নিত্যসঙ্গীদের এবং চাকর-বাকরদের হুশিয়ার করে দিয়েছিলেন যে তারাও প্রাণের ভয়ে এ বিষয়ে ঠোঁট সেলাই করে রাখতেন। এবং সর্বশেষ প্রশ্ন, এফাই কি তাঁর প্রথম প্রেম, না এ বিষয়ে তাঁর পূর্ব-অভিজ্ঞতাও ছিল? সেইটাই আজকার বিষয়বস্তু।
ন্যুরনবের্গের মোকদ্দমার সময় (মিত্রপক্ষ বনাম নাৎসি রাইষের প্রধান প্রধান প্রতিভূ, যেমন হিটলারের পরের সম্মানিত জন ফিল্ড মার্শেল গ্যোরিং– হিটলার হঠাৎ মারা গেলে হিটলারের ফরমান অনুযায়ী তিনি ফুরার হতেন; তাবৎ জঙ্গি বিভাগের বড়কর্তা– হিটলারের পরেই কাইটেল, তার পরের জন মোড়ল, ইত্যাদি ইত্যাদি সর্বসুদ্ধ ডজন দুই) আদালতের সামনে প্রাগুক্ত প্রশ্নগুলো আসামিরা দোষী না নির্দোষ সে বিচারে অল্পের চেয়ে বিস্তর অবান্তর ছিল বলে সেগুলো আদালত সাতিশয় সংক্ষেপে সারেন। (অথচ পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ কেন কোটি কোটি লোক বললেও আমি সংখ্যাটাকে অম্মদ্দেশীয় গঞ্জিকা-নিৰ্গত বলে পত্রপাঠ বাতিল করে দেব না– জানতে চেয়েছিল হিটলারের প্রেম সম্বন্ধে এবং আজও জর্মনির ভিতরে-বাইরে বিস্তর লোক এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন।) সৌভাগ্যক্রমে মার্কিনরা তাঁদের দেশের রীতি অনুযায়ী তাঁদেরই গুটিকয়েক সর্বোত্তম সাইক্রিয়াট্রিস্টকে সঙ্গে এনেছিলেন। আসামিদের একাধিকজন হিটলার ও এফাঁকে অন্তরঙ্গভাবে চিনতেন– হিটলারের বেৰ্ষটেশগাডেনের বাড়ি বেহফে এঁরা হিটলারের অতিথিরূপে একাধিকবার গিয়েছেন এবং নিতান্ত বাইরের (বেগানা) লোক না থাকলে তারা হিটলার ও এফার সঙ্গে খেয়েছেন, বেড়াতে গিয়েছেন, পিকনিক করেছেন, বাড়ির প্রাইভেট ফিল্ম শো প্রায় প্রতি সন্ধ্যায়ই একসঙ্গে বসে দেখেছেন।